মুনাজাত করার আদব হচ্ছেঃ-
১. যেকোন সময় মুনাজাত
করা যায়, দিনে রাতে,
দাঁড়ানো, শুয়ে-বসে, ওযু
ছাড়া বা ওযু করে।
এমনকি গোসল ফরয এমন অবস্থায়
বা নারীদের ঋতু অবস্থাতেও
দুয়া করতে পারবেন। তবে ফরয
নামাযের পরপরই মুনাজাত
করবেন না। আগে কিছু
সুন্নতী যিকির করে এর
পরে ইচ্ছা হলে একাকী
মুনাজাত করতে পারেন।
অথবা ফরয, সুন্নত সব নামায
শেষ করে এর পরে মুনাজাত
করবেন। উল্লেখ্য, অনেক
মনে করেনঃ নামাযের
পরে মুনাজাত করতেই হবে।
এটা ঠিকনা, নামাযের
পরে আপনার
ইচ্ছা হলে মুনাজাত করবেন,
না হলে করবেন না – আপনার
ইচ্ছা। মুনাজাত করা নামাযের
অংশ না। সালাম ফেরানোর
মাধ্যমেই নামায শেষ
হয়ে যায়।
২. ওযু অবস্থায় পশ্চিম
দিকে ফিরে দুয়া করা
মুস্তাহাব বা উত্তম।
তবে এটা জরুরী নয়, ওযু
ছাড়া অন্য দিকে ফিরেও
মুনাজাত করা যাবে।
৩. মুনাজাতে দুই হাত
তোলা মোস্তাহাব, আল্লাহ
এটা পছন্দ করে যে মানুষ
ভিক্ষুকের মতো তাঁর
দরবারে বিনীতভাবে হাত
তুলে দুয়া করবে।
এইভাবে দুয়া করলে সেটা
আল্লাহ কবুল করে নেন।
সালমান আল-
ফারসী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“তোমাদের রব লজ্জাশীল ও
দানশীল।। তাঁর বান্দা যখন
তাঁর নিকট দুই হাত
তুলে প্রার্থনা করে, তখন
তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে
দিতে লজ্জাবোধ করেন।”
মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবু
দাউদ, ইবনে মাজাহ, বুলুগুল
মারা’মঃ ১৫৮১।
৪. মুনাজাত করতে হবে বিনীত
ভাবে, নিচু স্বরে, মন দৃঢ়
আশা নিয়ে যে আল্লাহ সব কিছু
করতে পারেন আর তিনি অবশ্যই
আমার দুয়া কবুল করবেন।
আমি এতো পাপী আল্লাহ কবুল
করেন কিনা এইরকম সন্দেহ
থাকলে বা আল্লাহ কবুল করবেন
না, আমাকে ক্ষমা করবেন না –
আল্লাহ সম্পর্কে এমন খারাপ
ধারণা নিয়ে দুয়া করলে আল্লাহ
সেই দুয়া কবুল করেন না।
বান্দা যতই পাপী হোক
সে আন্তরিক
তোওবা করে জান্নাতুল
ফিরদাউসের আশা রেখেই
দুয়া করবে, বিপদ যত বড়ই হোক
আল্লাহ সব ইচ্ছা পূরণ
করতে পারেন এই আশা নিয়েই
দুয়া করতে হবে। আর
যে দুয়া করা হচ্ছে সেইদিকে
মনোযোগ রেখে বুঝে আল্লাহর
কাছে চাইতে হবে। উদাসীন
হয়ে অন্তর থেকে না চেয়ে শুধু
মুখে উচ্চারণ
করে গেলে বা আন্তরিক
দুয়া নাকরে দেখানো দুয়া
করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল
করেন না। কান্নাকাটি করে
বিনীতভাবে দুয়া করলে
আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন।
৫. মুনাজাতের প্রথমে আল্লাহর
প্রশংসা দিয়ে শুরু করতে হবে।
এই
বলে প্রশংসা করা যেতে পারে
–
ُﺕﺎَّﻴِﺤَّﺘﻟﺍ ،ِﻪَّﻠِﻟ ،ُﺕﺍﻮَﻠَّﺼﻟﺍَﻭ
ُﺕﺎﺒِّﻴَّﻄﻟﺍَﻭ
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যা-তু
লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু
ওয়াত্তায়্যিবা-তু।
অর্থঃ সমস্ত অভিবাদন, সকল
সালাত ও পবিত্র কাজ একমাত্র
আল্লাহ্র জন্য।
অথবা এটা বলে আল্লাহর
প্রশংসা করা যাবে –
ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ِﻪَّﻠِﻟ ﺍًﺮﻴِﺜَﻛ ﺍًﺪْﻤَﺣ ﺎًﺒِّﻴَﻃ
ﺎًﻛَﺭﺎَﺒُﻣ ِﻪﻴِﻓ
উচ্চারণঃ আলহা’মদুলিল্লাহি
হা’মদান কাসীরান
ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান
ফীহি।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
জন্য, যে প্রশংসা পবিত্রতা ও
বরকতপূর্ণ।
অথবা এটা বলে আল্লাহর
প্রশংসা করা যাবে –
ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ِﻪَّﻠِﻟ ِّﺏَﺭ َﻦﻴِﻤَﻟﺎَﻌْﻟﺍ
উচ্চারণঃ আলহা’মদু
লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
জন্য যিনি জগতসমূহের
প্রতিপালক।
***এইরকম যেকোন এক
বা একাধিক, বা এইরকম
আল্লাহর জন্য প্রশংসামূলক
অন্যবাক্য বলা যাবে।
৬. আল্লাহর প্রশংসার
পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
প্রতি দুরুদ পড়তে হবে। ছোট বড়
যেকোন দুরুদ পড়া যাবে –
আপনার যেটা ভালো লাগে।
সর্বোত্তম দুরুদ
হচ্ছে দুরুদে ইব্রাহীম,
যেটা আমরা নামাযে পড়ি।
এটা না পড়ে ছোট অন্য দুরুদও
পড়া যাবে। যেমন –
َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ِّﻞَﺻ ْﻢِّﻠَﺳَﻭ ﺎَﻨِّﻴَﺒَﻧ ﻰَﻠَﻋ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ
উচ্চারণঃ আল্লা-
হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম
আ’লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ!
আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ
এর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ
করুন।
সহীহুত তারগীব ওয়াত
তারহীবঃ ১/২৭৩
“একদিন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দেখলেন এক ব্যক্তি দুআ
করছে কিন্তু সে দুআতে আল্লাহর
প্রশংসা ও রাসুলের প্রতি দরূদ
পাঠ করেনি। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তাকে লক্ষ্য করে বললেন,
সে তাড়াহুড়ো করেছে। অতঃপর
সে আবার প্রার্থনা করল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তাকে অথবা অন্যকে বললেন,
যখন তোমাদের কেউ দুআ
করে তখন সে যেন
প্রথমে আল্লাহ তাআ’লার
প্রশংসা ও তার গুণগান
দিয়ে দুআ শুরু করে। অতঃপর
রাসুলের প্রতি দুরুদ পাঠ করে।
এরপর তার যা ইচ্ছা আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করে।”
আবু দাউদঃ ১৪৮১,
তিরমিজীঃ ৩৪৭৭, শায়খ
আলবানীর
মতে হাদীসটি সহীহ।
৭. এর পরে নিজের
পছন্দমতো নিজের জন্য
বা অন্যের জন্য,
দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোন
কল্যানের জন্য দুয়া করতে হবে।
সবচাইতে কম কথায়
সবচাইতে বেশি প্রার্থনা
করার এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব
বেশি বেশি করতেন।
“নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অধিকাংশ দো‘আ হতঃ
ﺎَﻨِﺗﺁ ﻢﻬﻠﻟَﺍ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ﻲِﻓ ،ًﺔَﻨَﺴَﺣ
ِﺓَﺮِﺧﻵﺍ ﻲِﻓَﻭ ،ًﺔَﻨَﺴَﺣ ﺎَﻨِﻗَﻭ َﺏﺍَﺬَﻋ
ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ-
তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও
-ওয়াফিল আ-
খিরাতি হাসানাতাও ওয়া-
ক্বিনা আযাবান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ!
আমাদেরকে দুনিয়ার
জীবনে কল্যাণ দাও
এবং পরকালে জীবনেও কল্যাণ
দান করো। আর
আমাদেরকে জাহান্নামের
আযাব থেকে বাঁচাও।
বিঃদ্রঃ আল্লাহুম্মা আতিনা…
অথবা রাব্বানা আতিনা…এই
দুইভাবেই পড়া যায়।
সহীহ মুসলিমের অন্য
হাদীসে আছে, “আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন
একটি দো‘আ করার
ইচ্ছা করতেন, তখন ঐ দো‘আ
করতেন। আবার যখন (বিভিন্ন)
দো‘আ করার ইচ্ছা করতেন, তখন
তার মাঝেও ঐ দো‘আ করতেন”।
সহীহুল বুখারী ৪৫২২, মুসলিম
২৬৮৮, তিরমিযী ৩৪৮৩, আবূ
দাউদ ১৫১৯, আহমাদ ১১৫৭০।
এছাড়া জীবিত বা মৃত
পিতা মাতার জন্য এই
দুয়া বেশি করতে হবেঃ
ﺎَﻤُﻬْﻤَﺣْﺭﺍ ِّﺏَّﺭ ﻲِﻧﺎَﻴَّﺑَﺭ ﺎَﻤَﻛ ﺍًﺮﻴِﻐَﺻ
উচ্চারণঃ রাব্বির হা’ম-
হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি
সাগিরা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার
পিতা-মাতার
প্রতি তেমনি দয়া করো
যেইরকম
দয়া তারা আমাকে শিশু
অবস্থায় করেছিল।
৮. দুয়া করে আমিন অথবা আমিন
ইয়া রাব্বাল আ’লামীন বলবেন।
দুয়া শেষ মুখে হাত
মোছা বা লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ বলা, এইগুলো সহীহ
হাদীসে নাই।
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই
কাজগুলো করতেন এটা বিশুদ্ধ
বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত হয়নি।
তাই এইগুলো করবেন না। আমিন
বলে মুখে হাত না মুছে হাত
সরাসরি নামিয়ে ফেলবেন