প্রকৃত এক আল্লাহ ভিরু নারীর উদাহরণ

বছর ৩ আগের এক রাতে বোরকা পরা এক
মেয়ে আমার কাছে রাতে থাকার জন্য
আশ্রয় চায়।ব্যাপারটা গুছিয়ে বলা
দরকার।গুছানো সব জিনিস মানুষ
পছন্দ করে।
অফিস থেকে একটু লেট করে বাড়িতে
ফিরছিলাম।কলিগ নতুন বিয়ে করেছে
তাই আভিজাত্য একটা হোটেলে ডিনার
করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।হেটে
হেটে বাড়ি ফিরা আমার পুরোনো
অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটা।বর্ষাকাল
চলছিল তাই বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি
পরছিল।আশে পাশের সব দোকান বন্ধ।
আমি হেটে হেটে এলাকায় আসতেই
লক্ষ্য করলাম জনি ভাইয়ের চায়ের
দোকানের বেঞ্চে বোরকা পরা কে যেন
বসে ছিল।
এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে একটা বোরকা
পরা মেয়ে বসে থাকা নজরে লাগার
মতো।আমি থমকে গিয়ে ছোট চোখ
করে উচ্চস্বরে জিজ্ঞাস করলামঃ
>কে?কে ওখানে?
মেয়ে টি আমার আওয়াজ শুনে আমার
উদ্দেশ্যে উঠে এসে সামনে দাঁড়িয়ে
বললঃ
>আস সালামুয়ালাইকুম।
সালামের আওয়াজ যেন সরাসরি বুকে
লাগল।এত সুন্দর কন্ঠ আমি আগে
কখনো শুনি নি।আমি বুঝতে পারলাম
বোরকার পিছনে একজন মেয়ে
আছে,পর্দাবতী মেয়ে। আমি ভ্রু-কুচকে
মেয়েটার সালামের উত্তর না দিয়েই
জিজ্ঞাসা করলামঃ
>কে আপনি?আর এত রাতে এখানে কি
করছেন?
মেয়েটাও আমার কথার উত্তর না দিয়ে
আমাকে জিজ্ঞাস করলঃ
>আপনি কি মুসলিম?
প্রশ্ন শুনে মেজাজ খারাপ হলো।ভ্রু-
কুচকে মেয়েটাকে বললামঃ
>হ্যাঁ মুসলিম।কিন্তু আমার প্রশ্নের
সাথে আপনার প্রশ্নের কোন মিল
নেই।
>মিল নেই আমিও জানি কিন্তু শুরুতে
আমি আপনাকে সালাম প্রদান
করেছিলাম যার জবাব দেওয়া আপনার
উপর ওয়াজিব করা হয়েছে। আপনি কি
এই ব্যাপারে অজ্ঞ?
কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল।আমি
হা করে বোরকার আড়ালের মেয়েটার
দিকে তাকিয়ে ছিলাম।নজরটা নিচে
নামিয়ে প্রথমে মেয়েটার সালামের
জবাব দিলামঃ
>ওয়ালাইকুম আস সালাম।
মেয়েটা মনেহয় সন্তুষ্ট হয়েছিল।
তারপর বোরকার আড়াল থেকে আবার
মেয়েটা বলতে শুরু করেঃ
>আপনি কি আমাকে একটু সাহার্য্য
করতে পারবেন?
>কি সাহার্য্য?
মেয়েটার নিকাবের কালো পর্দা তার
মুখ থেকে একটু দূরে সরে গেল।বুঝতে
পারলাম সে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেছেঃ
>আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি
আপনি কি আমাকে আজ রাত আপনার
বাড়িতে থাকার সুযোগ দেবেন ?সকাল
হলেই চলে যাবো।
এই সাহার্য্যের কথা শুনে প্রথমেই
আমার মহিলা জঙ্গির কথা মনে পরল।
এই মেয়েও যদি মহিলা জঙ্গি হয়
তাহলে বাড়িতে গিয়ে আমাকে মেরেই
বের হবে।
>দেখুন আমি দুঃখিত এই ধরনের কোন
সাহার্য্য আমি করতে পারবো না।
মেয়েটা যেন আমার বলা কথাটার জন্য
প্রস্তুত ছিল। তাই বলার সাথে সাথেই
গিয়ে আবার বেঞ্চটাতে বসে পরল।এমন
মনে হলো আমার আগেও অনেকের কাছে
সাহার্য্য প্রার্থনা করেছে সবাই আমার
মতোই না করে দিয়েছে।বৃষ্টিতে
মেয়ের বোরকা সহ ভিজে গিয়েছিল
তবুও মুখের নিকাব খোলার কোন
প্রয়াস ছিল না।এই অবস্থা দেখে
আমার মায়া লেগে গেল,আসলে এমন
মেয়েদের প্রতি মায়া বেশি কাজ করে।
আমার ভাবনা আবার উল্টে গেল।মনে
মনে ভাবলাম “বিপদে পরেই তো মেয়েটা
সাহার্য্য চেয়েছে।আর শালা আমি কি
দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি যে আমাকে
মারতে কেউ ঘরে প্রবেশ করবে?রাতের
ব্যাপার এখণ তো নিয়ে যাই। বাড়িতে
গিয়ে সব শুনা যাবে।তাছাড়া মা তো
আছেই।
আমি পিছনে গিয়ে মেয়েটাকে ডাক
দিলামঃ
>এই যে শুনছেন!!চলুন আমার সাথে।
মেয়েটা আমার দিকে চেয়ে বেঞ্চ থেকে
উঠে আসলো।আমরা দুজন হাটতে শুরু
করলাম।মেয়েটা একদম স্তব্দ
হাটছে,মুখ দিয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার নাম
গন্ধও নেই।না দেওয়াটাই স্বাভাবিক
কারন মানুষ হিসেবে সাহার্য্য করা
আমার কর্তব্য।কিছুক্ষণের মধ্যেই
আমরা বাড়িতে পৌঁছে যাই।বাবা 5বছর
আগেই মারা গেছে তাই বাড়িতে মা একা
আর আমার জানা আছে সে এখনো ঘুমায়
নি।ঘরের কলিং বেল টিপতেই মা এসে
দরজা খুলল।প্রথমে আমার দিকে চেয়ে
পরে মেয়েটার দিকে চেয়ে কে জানে কি
বুঝে একটা ছোট চিৎকার দিয়ে উঠে
বললঃ
>ওহিদুর তুই আমাকে না জানিয়েই
বিয়ে করে ফেললি?কত আশা ছিল তোর
বিয়ে নিজ হাতে দেবো ।তুই একা একাই
এই কাজ সেরে ফেললি?
মেয়েটা এখনো চুপ করে আছে।ঝাড়ি
দিতে দিতে ঘরে ঢুকলামঃ
>আরে ধুর!!কিসের বিয়ে করেছি?উনার
সাহার্য্যের দরকার ছিল তাই বাড়িতে
নিয়ে এলাম।
মা আমার দিকে ভ্রু-কুচকে চায় আর
জিজ্ঞাস করেঃ
>বাড়িতে আবার কিসের সাহার্য্য?
>ভিজে গেছি।কাপড়টা পাল্টে নিই।
এতক্ষণে তুমি উনার কাপড় পাল্টে
তাকেই জিজ্ঞাস করো।
আমি আমার রুমে যাওয়ার আগে মেয়েটার
দিকে চাই,দেখলাম দরজার সামনে
মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।মাকে
মেয়েটাকে ঘরে আসার আমন্ত্রণ জানায়।
মেয়েটা ঘরে ঢুকে আমিও নিজের রুমে
চলে যাই।আমি যখন কাপড় পাল্টে
বিছানায় ক্লান্তভাবে শুয়ে পরি তখন
ঘরের মেঝে থেকে মায়ের গলার আওয়াজ
শুনা যাচ্ছিল।মা মেয়েটাকে গোয়েন্দার
মতো প্রশ্ন করছিল আর মেয়েটা মনে
হয় খুব নিচু স্বরে উত্তর দিচ্ছিল
কারন মেয়েটার গলার আওয়াজ আমার
কান পর্যন্ত আসছিল না।

আমি ক্লান্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে
পরি,দুনিয়া ভুলে যাওয়ার মতো ঘুম।
সেই ঘুম ভাঙ্গে ভোরে,ঠিক কটা বাজে
আমার খেয়াল নেই।আমার খুব পানির
পিপাসা পেয়েছিল,আমি বিছানা থেকে
উঠে ড্রেসিং টেবিলের উদ্দেশ্যে যাই
পানি পান করব বলে।বাইরের আলো ঘর
খানিকটা আলোকিত করে রেখেছে।আমি
পানি গ্লাসে ঢেলে পান করব এমন সময়
দেখলাম যেই মেয়েটাকে রাতে নিয়ে
এসেছি সে নামাজে পড়ছে ।আজব
ব্যাপার এই জমানার মেয়েরা ফজর
নামাজও পড়ে নাকি?আমি কৌতুহলবশত
এক পা দু পা করে মেয়েটার সামনে যেতে
থাকি।মেয়েটা সালাম ফিরিয়ে হুট
করেই আমার উদ্দেশ্যে বলেঃ
>আমার সামনে আসবেন না প্লিজ,আমি
এখন নিকাব পরিহিতা নই।আপনি
আমার চেহারা দেখে ফেললে আমাকে পর্দা
না করার কারনে আল্লাহর কাছে জবাব
দিতে হবে।
আমি থমকে দাঁড়ালাম।মেয়েটাকে ছোট
করার জন্য আমি তাকে একটা প্রশ্ন
করলামঃ
>এতই যখন ধর্ম মানেন তাহলে বাড়ি
থেকে পালালেন কেন?বাড়ি থেকে কি
ভাল মেয়েরা পালায় নাকি?
আমি মেয়েটাকে পেছন থেকেই
দেখছিলাম।মেয়েটার ঘাড় নিচের
দিকে নেমে গেল আর দীর্ঘনিশ্বাস
ছাড়ল।তারপর বললঃ
>কাল রাতে আমার বিয়ে ছিল।আমি
সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
কথাটা শুনে মনে আনন্দ লাগলো।
মেয়েটাকে ছোট করার আরেকটা সুযোগ
পেয়ে গেলাম।আমি সোফার উপর বসে
হাসতে হাসতে জিজ্ঞাস করলামঃ
>প্রেমের কাহিনী নিশ্চই?তো জানেন
না ইসলামে প্রেম হারাম?
নিজের একটু ইসলামিক জ্ঞান ঝাড়লাম
আরকি।মেয়েটা হয়ত মুচকি হাসি
দিয়ে বললঃ
>কে বলল ইসলামে প্রেম হারাম?
আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে প্রেম
করা কি হারাম?…
মেয়েটাকে ছোট করতে গিয়ে নিজেই
বোকা হয়ে গেলাম।তারপর আসতে আসতে
করে বললামঃ
>তা অবশ্য ঠিক।তাহলে বিয়ে বাড়ি
থেকে পালালেন কেন?
>আমার বিয়েটা একটা ধনী পরিবারের
ছেলের সাথে হতে যাচ্ছিল।
আমি মেয়েটার কথার মাঝখানে থামিয়ে
বললামঃ
>তাহলে তো সুখেই দিন পার করতে
যাচ্ছিলেন।পালালেন কেন?
মেয়েটা হয়ত বিরক্তবোধ করল ।আবার
বলতে শুরু করলঃ
>বড়লোকের বিয়ে মানে তো
জানেনই,ধুমধাম করে বিয়ে করিয়ে
সবাইকে জানাতে হবে।বউ স্টেজে সেজে
বসে থাকবে আর সবাই তাকে দূর থেকেও
দেখতে পারবে।মাঝে মাঝে কয়েকজন
ছবি তুলবে।আর এটাই আমার পছন্দ
ছিল না।
ব্যস এতটুকু কারন?স্টেজে আপনার বসতে
সমস্যা কি ছিল?
মেয়েটা আমার প্রশ্নের পরিবর্তে
আমাকে প্রশ্ন করলঃ
>আপনি কি কখনো কুমারী পূজা
দেখেছেন?
আমি উত্তরে জানালামঃ
>হ্যা অবশ্যই দেখেছি।
>কি হয় ওইখানে?
>একটা মেয়ে স্টেজে বসে থাকে আর তাকে
সকলেই পূজা করে ভক্তি করে।
মেয়েটা হয়ত মুচকি হাসলো আর বললঃ
>আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।
মেয়েটার কথা শুনে আমার চোখ বড় বড়
হয়ে গেল।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন
করলাম “মেয়েটা কি এই ধরনের
বিয়েকে কুমারী পূজার সাথে তুলনা
করল?
চুপ করে ভেবে নিজেই নিজেকে উত্তর
দিলাম “ঠিকই তো,এই ধরনের বিয়ে
আর কুমারী পূজার মধ্যে সম্পূর্ন মিল
আছে।
আমি মেয়েটাকে আবার বললামঃ
>তাহলে হিজাব পরে স্টেজে বসতেন।
হিজাব তো পর্দারই অংশ।
মেয়েটা হয়ত রেগে গেল।গলার স্বরটা
একটু ভারি করে বললঃ
>আপনাকে কে বলেছে হিজাব পর্দার
অংশ?
>সবাই তো এখন হিজাব পরেই পর্দা
করে।আমি কত হাজি সাহেবদেরকেও
দেখেছি তাদের বউ ও মেয়েকে হিজাব
পরিয়ে রাখে।
>মাথায় টুপি আর পাঞ্জাবি লাগানো
সুন্নত জেনে হজ্ব করলেই হাজি হওয়া
যায় না।যারা পর্দার মূল অর্থই জানে
না তারা হজ্ব করে কিভাবে আর হাজিই
বা হয় কিভাবে?

কথা শুনে বুঝতে পারলাম মেয়েটার
ইসলাম সম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে।
জ্ঞানী লোক ভয়ংকর হয় আর মেয়েরা
যদি জ্ঞানী হয় তাহলে তো ভয়ংকরের
বাপ হয়ে যায়।আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞাস
করলামঃ
>তাহলে পর্দার মূল অর্থ কি?
মেয়েটা কোরআন থেকে দুটি আয়াত
শুনালঃ
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা
ও মুসলিম রমণীগণকে বল, তারা যেন
তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের
(মুখমন্ডলের) উপর টেনে নেয়। এতে
তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে
তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।
(লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।
’’সূরা আহযাব ৩৩:৫৯
‘‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন
নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে ও
লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যা
প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের(অন্যান্য)
আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা
ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (উড়না
অথবা চাদর) দ্বারা আবৃত করে। সূরা
আন-নূর ২৪:৩১
আয়াত বলার পর মেয়েটা প্রশ্ন
রাখলোঃ
>এই আয়াত দ্বারা পর্দার ব্যাপারে বুঝা
যায়। যারা এই আয়াত মানে না অবশ্যই
তারা পর্দার ব্যাপারে অজ্ঞ।
পর্দার আলোচনা পুরোপুরি বুঝতে
পারলাম।এবার মেয়েটাকে বললামঃ
>তাহলে আপনি আপত্তি করেন নি
কেন?
করেছি কিন্তু খালা শুনে নি।
আমি ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করলামঃ
>খালা মানে? মা-বাবা কোথায়?
>মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছে ।
খালার কাছে বড় হয়েছি।
>তাহলে উনি আপনার সাথে এমন
করছিলেন কেন?
>আপনি কি কখনো অন্যের ঋন নিজের
কাধে নিয়েছেন?
>না।
>তাহলে বুঝবেন না।মেয়ে মানুষ ঋনের
মতো হয়।যত তারাতারি শোধ করা
যায় তত ভাল।আর অন্যের ঋন যদি
ঘাড়ে চেপে বসে তাহলে তো শ্বাস
নেওয়াও মুশকিল।
মেয়েটার প্রতিটা কথায় যুক্তি
ভরাআমার মেয়েটার প্রতি কৌতুহল
বেড়ে গেল।আমি পর্দার ব্যাপারে আরো
কিছু জিজ্ঞাস করলামঃ
>আচ্ছা পর্দা করতে শুধু কালো বোরকাই
কেন পরেন অন্য কোন কালারের সাথে
কি দুশমনি আছে?
মেয়েটা হয়ত মুচকি হাসলো আর বললঃ
>দুশমনি নেই কিন্তু আপনি কি কখনো
লাল,নীল,হলুদ,সবুজ আকাশে চাঁদকে
উঠতে দেখেছেন।চাঁদের সৌন্দর্য কি
সেখানে প্রকাশ পাবে?
আমি মেয়েটার যুক্তি বুঝতে পেরে উল্টা
প্রশ্ন করলামঃ
>আপনি কি নিজেকে চাঁদের মতো
সুন্দর দাবি করছেন?এটা কিন্তু
অহংকারের পর্যায়ে চলে গেল।
>দাবি করার কি আছে,প্রতিটা
মানুষকে আল্লাহ চাঁদ-সূর্য্য এমনকি
সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে সুন্দর করে
সৃষ্টি করেছেন।
বুঝা গেল মেয়েটার সাথে পেরে উঠা খুব
কঠিন ।সব কথার পরে যুক্তি দেয়।
আমি জানতাম নাস্তিকরা ভাল যুক্তি
জানে কিন্তু ধার্মিকরা যে এত যুক্তি
জানে জানা ছিল না।মেয়েটার প্রতি
আমার শ্রদ্ধা বাড়তে থাকল।হয়ত
মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।
আমি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললামঃ
>আমি যদি এখন আপনাকে প্রেম
নিবেদন করি?
মেয়েটা হয়ত আঁতকে উঠলঃ
>আল্লাহ মাফ করুক।এমন কাজের কথা
ভাববেনও না।প্রেমগুলো এখন সরু হয়ে
গেছে অথচ প্রেমগুলো ত্রিভুজাকৃতির
হওয়া উচিত ছিল।
>মানে?
>আমার দোয়াটি আল্লাহ পর্যন্ত যাবে
মানে একটি রেখা।আমাকে পাওয়ার
জন্য যে দোয়া করবে তার থেকে আল্লাহ
পর্যন্ত আরেকটা রেখা।আর আল্লাহ
আমাদের মাঝে যে রেখাটি টানবেন সেটা
দিয়ে একটা ত্রিভুজ হওয়া দরকার
ছিল কিন্তু এখন তেমন কিছু হয় না।

আমি সত্যিই মেয়েটার প্রতি আসক্ত
হয়ে গেলাম।সকাল হয়ে গেছে,বাইরে সব
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।আমার জন্য
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সকাল।আমি
মায়ের সাথে কথা বলে মেয়েটাকে আর ঘর
থেকে বের হতে দিইনি।একজন মায়ের
কথা একটা মেয়ে অমান্য করতে পারে না
এটা মেয়েদের দুর্বলতা।আমি মেয়েটার
ব্যাপারে কিছুই জানতাম না এমনকি
নামও না তবুও মেয়েটাকে সেইদিনই
বিয়ে করে ফেলি।মধুচন্দ্রিমার রাতে
যখন বৈধভাবে মেয়েটার চেহারা
দেখলাম বুঝতে পারলাম কেন আল্লাহ
বলেছেন,তিনি মানুষকে সবথেকে সুন্দর
করে সৃষ্টি করেছেন।আমার ঘরে যেন
চাঁদের থেকে সুন্দর একটা মুখ প্রবেশ
করেছে।আমি আল্লাহর শুকরিয়া না
করে পারলাম না।
মেয়েটাকে বিয়ে করার পর আমি তার
নাম জিজ্ঞাস করেছিলাম উত্তরে সে
বলেছিল “জোবাঈদা ইসলাম ভাবনা”।
ভাবনা পবিত্র ভাবনা।ওর নামটাই
যেন আমার ভাবনাগুলো পবিত্র করে
দিয়েছে।আসলেই যে আল্লাহর উপর
বিশ্বাস রাখে তার জন্য আল্লাহই
যথেষ্ট।ওই যে একটা আয়াত আছে না
“মুমিন পুরুষের জন্য পতিতা নারী
হারাম”এখানে এটা দ্বারা শুধু মুমিন
আর পতিতা অর্থে বুঝায় নি।এটার মূল
অর্থ হলো যে যেমন সে তেমনই পাবে।
আমি কখনো কারো সাথে প্রেম করি
নি।ভাবনাও কারো সাথে প্রেম করে
নি।আজ একটা কথা ভাবি আর আর বুঝতে
পারি কেন আল্লাহ বলেছেনঃ নেককার
স্ত্রী একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে
বড় পুরুষ্কার।

আমার আরেকটা ধারনা পাল্টে গেছে
ইসলাম হয়ত রোমান্টিক না।কিন্তু
বিয়ের পর দেখা গেল যেটাকে আমরা
রোমান্টিকতা মনে করি ওইগুলা আসলে
নোংরামি আর ইসলাম রোমান্টিকতার
বাপ।ভাবনা প্রতিদিন ভোরে আমার
কপালে চুমু দিয়ে ফজর নামাজ পরতে
ডাক দেয়।জুম্মার দিনে পাগড়ী বেধে
দেয় চোখে সুরমা লাগিয়ে দেয়।
বর্তমানের কয়জন স্ত্রী তার স্বামীর
সাথে এমন আচরন করে?আর বৃষ্টিতে
ভিজাকে আমরা রোমান্টিকতা বলি না
এইখানেও ইসলাম রোমান্টিক।আসলে
বৃষ্টিতে ভেজাও সুন্নত।কয়েকদিন আগে
ভাবনা আমাকে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য
ছাদে টানতে লাগল।আমি যেতে মানা
করায় আমাকে ও একটা হাদিস শুনালঃ
আনাস ইবনে মালিক রাঃ বর্ণনা করে
“আমরা একদিন বৃষ্টিপাতের সময়
রাসূল সাঃ এর সাথেই ছিলাম এমন
সময় তিনি তাঁর গায়ের জামা খানিক
আলগা করে দিলেন।পতিত বৃষ্টি তার
ত্বক ভিজিয়ে দিল।আমরা জিজ্ঞাস
করলাম “হে আল্লাহর নবী আপনি এমন
কেন করলেন?উত্তরে তিনি বললেন
“এটা মাত্রই আমার রবের নিকট থেকে
পতিত হয়েছে। (সহীহ মুসলিম)
ইসলাম যে মানুষকে এত রোমান্টিক
বানায় আগে জানা ছিল না।ধর্মের কথা
মারাত্মক কথা।আগেই একটা কথা
বলেছিলাম মানুষ সাজানো গুছানো
জিনিস পছন্দ করে,তো ইসলাম
এতটাই গুছানো যে কেউ এটার একটা
জিনিসও অস্বিকার করতে পারবে না।
আমার গর্ব হচ্ছিল এই ভেবে যে আমি
একজন পর্দাবতীর স্বামী।রূপবতীর
রূপ,মায়াবতীর মায়া,লজ্জাবতীর লজ্জা
সব জায়গায় সমান নাও হতে পারে
কিন্তু একজন পর্দাবতীর পর্দা সব
জায়গায় সব সময় সমান।
Collected

তাওহীদের গুরুত্ব/হাকিকত

লেখক : কাউসার বিন খালিদ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর
রহমান
মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে শিরক ও
বিদআতের বিস্তার লাভ করেছে।
তাওহীদ বর্তমান যুগের এই ভয়াবহ
সময়ে অত্যন্ত দুর্লভ। যারা
তাওহীদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী বলে
দাবী করেন, দেখা যায়, তাদের নেই এর
অর্থ কিংবা মর্ম সম্পর্কে সঠিক
ধারণা। মুসলমান শিরকের মাঝে
আকণ্ঠ নিমজ্জিতএমন দৃশ্য আজ
কোনভাবেই অসম্ভব নয়। সুতরাং
প্রথমে তাওহীদের অর্থ ও মর্ম
অনুধাবন সকলের জন্য আবশ্যক। যাতে
কোরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষের
সামনে মন্দ ও ভালোর প্রকৃত চিত্রটি
ফুটে উঠে স্বার্থকভাবে।
সমাজে যারা পীর নামে প্রসিদ্ধ
তাদেরকে, এবং পয়গম্বর, শহীদ ও
ইমামদেরকে মানুষ এখন ভক্তি করে
থাকে আল্লাহর অনুরূপ, তাদের সম্মুখে
অর্পণ করে বিভিন্ন উপঢৌকন-
নৈবেদ্য। তাদের কাছে প্রার্থনা করে
বিভিন্ন বিষয়ে। মান্নত মানা,
তাদের নামে বিভিন্ন প্রকার ওরস
পালন করা ইত্যাদি হল এ জাতীয়
বিদআদের লক্ষণ। যখন সন্তান হয়,
তখন তাদের নামে শিশুর নাম রাখা
হয়। এবং এতে তাদের বিশ্বাস, শিশুর
ভবিষ্যত জীবন হবে অত্যন্ত সুন্দর ও
সুস্থ-সবল। কোন পাপ, এর ফলে, তাকে
স্পর্শ করতে পারবে না। আব্দুন নবী,
আলী বখশ, হোসাইন বখশ, পীর বখশ,
মাদার বখশ ইত্যাদি নামগুলো সমাজে
প্রচলিত এই ধারণাকে ভিত্তি করে।
সালারে বখশ, গোলাম মহিউদ্দীন, এবং
গোলাম মুঈনউদ্দীন নামগুলোও
প্রচলিত পীরের প্রতি ভক্তি
প্রদর্শনার্থে। এই কুসংস্কারের
রয়েছে বিভিন্ন প্রকার। কেউ চুলের
খোপা বাধে নির্দিষ্ট কারো নামে,
মানুষকে কাপড় দান করে অথবা ফুল
প্রদান করে পীরের নামে, বেড়ী বাধে
ভক্তি জানিয়ে, উৎসর্গ করে পশু, এবং
কেউ কেউ সর্বদা একজনের নাম ধরে
চিৎকার-চেচামেচি করে থাকে, এবং
এতে তার ধারণা, তার প্রিয় ব্যক্তি
খুশী হবেন, তার কল্যাণ হবে।
অমুসলিমদের মাঝে দেব-দেবীকে ভক্তি
জানানোর জন্য প্রচলিত রয়েছে যে
কুসংস্কার, তাই তারা পালন করে থাকে
মুসলমানদের নবীদের সাথে। তাদের
ইমাম, আউলিয়া, শহীদ ও পীরদের
সাথে আচরণ করে অনুরূপ। এতসত্ত্বেও
নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবী
করতে তাদের কোন প্রকার লজ্জা-দিধা
নেই।
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে
বর্ণনা করেছেন
ﺎَﻣَﻭ ُﻦِﻣْﺆُﻳ ْﻢُﻫُﺮَﺜْﻛَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺎِﺑ ﺎَّﻟِﺇ
ْﻢُﻫَﻭ َﻥﻮُﻛِﺮْﺸُﻣ 106﴿ ﴾
‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু তারা তাঁর
শরীক স্থিরকারী।’ (সূরা ইউসূফ :
১০৬)
ঈমানের দাবীদার অধিকাংশ লোক কোন
না কোন ভাবে অবশ্যই শিরকে
নিপতিত। তাদের যদি বলা হয়,
তোমরা ঈমানের দাবী করছ সত্য,
কিন্তু এভাবে শিরকের মাঝে
চূড়ান্তরূপে নিমজ্জিত হয়ে আছ কেন ?
এবং এর মাধ্যমে কেন তোমরা শিরক ও
ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি পথকে
এক করে ফেলছ ? তাহলে তাদের জবাব
হবেসাধারণত তাই হয়ে থাকেআমরা
শিরক করছি না, বরং নবীদের প্রতি
আমরা মনে মনে পোষণ করি যে অসীম
শ্রদ্ধা, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
আমরা তাদের প্রতি পোষণ করি যে
অকাট বিশ্বাস, এ হল তারই নিদর্শন।
আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করি, তাদের
অনুসরণে অটুট থাকার চেষ্টা করি।
শিরক তখনই হবে, যখন আমরা
তাদেরকে শক্তি ও ক্ষমতায় আল্লাহর
অনুরূপ মর্যাদা দিব। আমরা তাদেরকে
আল্লাহর বান্দা ও তার সৃষ্ট বলেই
জানি। তবে, আল্লাহ তাদেরকে
পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন বিশেষ
কিছু ক্ষমতা ও মু’জেযা দিয়ে। তারা
আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই পৃথিবীতে
ব্যয় করেন আপন ক্ষমতা। তাদেরকে
ডাকা প্রকারান্তরে আল্লাহকে ডাকা।
তাদের কাছ থেকে কোন কিছুর প্রার্থনা
করা আল্লাহর কাছ থেকে প্রার্থনারই
নামান্তর। তারা আল্লাহর প্রিয়
বান্দা, নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে তারা
অন্যদের বিভিন্ন কিছু দান করতে
সক্ষম। তাদের সে শক্তি আল্লাহ
প্রদত্ত। তারা আমাদের জন্য
সুপারিশকারী ও সাহায্যকর্তা।
তাদের সাথে সাক্ষাতে লাভ হয় আল্লাহ
তা‘আলার সাক্ষাত। তাদের ডাকলে
আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যলাভ সহজ
হয়। যে পরিমাণ আমরা তাদের মান্য
করব, এবং তাদের আদেশ-নিষেধ অনুরণ
করব, ঠিক সে পরিমাণ আমরা আল্লাহ
তা‘আলার নৈকট্য লাভে ধন্য হব।
মোটকথা, এ জাতীয় অনর্থক
প্রলাপোক্তি করা হয় সর্বদা তাদের
পক্ষ থেকে, নিজেদের অপকর্ম ঢাকার
জন্য। এর একমাত্র কারণ, তারা
কোরআন-হাদীস ও তার শিক্ষা
সম্পূর্ণরূপে ভুলে বসেছে। ঐশীজ্ঞানের
সাথে তাদের বিন্দু পরিমাণ সম্পর্ক
নেই। কোরআন ও হাদীসের
ঐশীজ্ঞানের ব্যাখ্যায় উদ্ধত হয় তারা
নিজেদের অসম্পূর্ণ ও অনির্ভরযোগ্য
বুদ্ধি নিয়ে। বিভিন্ন অসার গল্প ও
মিথ্যা রটনা তাদের এই পথের সিদ্ধি
লাভের একটি বড় মাধ্যম। অনর্থক
কুসংস্কার তাদের জন্য একটি
শক্তিশালী হাতিয়ার। যদি বাস্তবেই
তাদের থাকত কোরআন-হাদীসের
নির্ভুল জ্ঞান, তবে নিশ্চয় তাদের
জানা থাকত, ইসলামের পয়গম্বরগণ
যখন মুশরিকদের সামনে আল্লাহ
তা‘আলার প্রবর্তিত ধর্ম নিয়ে
উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন তাদের
পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল অবিকল এই
সব কুসংস্কারপূর্ণ ও সম্পূর্ণরূপে
পরিত্যাজ্য যুক্তিগুলো। আল্লাহ
তা‘আলা তাদের এ অপকর্মে অসন্তুষ্ট
হলেন, তিনি তাদের এই কর্মের
সমালোচনা কোরআনে অবতীর্ন
করলেন-
َﻥﻭُﺪُﺒْﻌَﻳَﻭ ْﻦِﻣ ِﻥﻭُﺩ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣ ﺎَﻟ
ْﻢُﻫُّﺮُﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ ْﻢُﻬُﻌَﻔْﻨَﻳ َﻥﻮُﻟﻮُﻘَﻳَﻭ
ِﺀﺎَﻟُﺆَﻫ ﺎَﻧُﺅﺎَﻌَﻔُﺷ َﺪْﻨِﻋ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻞُﻗ
َﻥﻮُﺌِّﺒَﻨُﺗَﺃ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ ﺎَﻟ ُﻢَﻠْﻌَﻳ ﻲِﻓ
ِﺕﺍَﻭﺎَﻤَّﺴﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ ﻲِﻓ ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍ
ُﻪَﻧﺎَﺤْﺒُﺳ ﻰَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ ﺎَّﻤَﻋ َﻥﻮُﻛِﺮْﺸُﻳ ﴿
18﴾
অর্থ : ‘তারা আল্লাহর ইবাদত
পরিত্যাগ করে এমন বস্ত্তগুলোর পূঁজা
আরম্ভ করেছে, যা তাদের জন্য বয়ে
আনতে পারে না কোন অকল্যাণ কিংবা
কল্যাণ, আর তারা বলছে, এরা আল্লাহর
নিকট আমাদের জন্য সুপারিশকারী।
আপনি তাদের বলে দিন, তোমরা কি
আল্লাহকে সংবাদ দিচ্ছ এমন কিছুর,
আসমান ও জমিনে যার সংবাদ তিনি
জানেন না ? নিশ্চয় তিনি তাদের
শরিকদের থেকে পবিত্র ও
উত্তম।’ (সূরা ইউনুস : ১৮)
অর্থাৎ, মুশরিকরা যে-অসার বস্তুর
পূজোয় নিমজ্জিত, তা চূড়ান্তভাবে
শক্তিহীন, নিজেদের কল্যাণ করার
মত ক্ষমতা তাদের নেই। কারো উপকার
বয়ে আনার, কিংবা কারো ক্ষতি বৃদ্ধি
করার সামর্থ্য নেই তাদের। তাদের এই
উপাস্যের ব্যাপারে যে কল্পনা ও আশা
তারা মনে মনে পোষণ করে যে, এগুলো
আল্লাহর কাছে তাদের হয়ে সুপারিশ
করবে―সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ, এ
ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে
কোন প্রমাণ-দলীল নেই। এমন নয়
যে, এ ব্যাপারে তারা আল্লাহ তা‘আলার
তুলনায় আসমান ও জমীনের বিষয়
সম্পর্কে অধিক অবগত। তারা বলে
অথবা ঘোষণা করে যে, তাদের
উপাস্যগুলো তাদের জন্য
সুপারিশকারী হবে। তাদের জন্য
এতটুকু জানাই যথেষ্ট। পৃথিবীতে এমন
কোন বস্ত্ত নেই, যা কারো জন্য
কল্যাণ অথবা অকল্যাণের সুপারিশ
করতে সক্ষম। এমনকি, নবী ও
রাসূলদের সুপারিশও আল্লাহ তা‘আলার
ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। মানুষকে এ
ব্যাপারে অবশ্যই অবগতি লাভ করতে
হবে, যে কাউকে নিজের জন্য
সুপারিশকারী হিসেবে উপাসনা করবে,
সে স্পষ্টরূপে মুশরিক। আল্লাহ
তা‘আলা কোরআনে এরশাদ করেছেন :
ﺎَﻟَﺃ ِﻪَّﻠِﻟ ُﻦﻳِّﺪﻟﺍ ُﺺِﻟﺎَﺨْﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍَﻭ ﺍﻭُﺬَﺨَّﺗﺍ ْﻦِﻣ ِﻪِﻧﻭُﺩ
َﺀﺎَﻴِﻟْﻭَﺃ ﺎَﻣ ْﻢُﻫُﺪُﺒْﻌَﻧ ﺎَّﻟِﺇ
ﺎَﻧﻮُﺑِّﺮَﻘُﻴِﻟ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَﻔْﻟُﺯ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﺍ ُﻢُﻜْﺤَﻳ ْﻢُﻬَﻨْﻴَﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻣ ْﻢُﻫ
ِﻪﻴِﻓ َﻥﻮُﻔِﻠَﺘْﺨَﻳ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻟ ﻱِﺪْﻬَﻳ
ْﻦَﻣ َﻮُﻫ ٌﺏِﺫﺎَﻛ ٌﺭﺎَّﻔَﻛ 3﴿ ﴾
অর্থ: জেনে রেখ, খালেস আনুগত্য
আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর
পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে
গ্রহন করে তারা বলে, আমরাতো এদের
পূজা এ জন্যেই করি যে, তারা
আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে
দিবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে
মতবিরোধ করছে আল্লাহ তার ফায়সালা
করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির
আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত
করেন না। (সূরা যুমার : ৩)
প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের
অতি নিকটবর্তী। বান্দা চাওয়া
মাত্রই তাকে লাভ করতে পারে। কিন্তু,
আফসোসের বিষয়, মানুষ আল্লাহ
তা‘আলার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য
দ্বারস্থ হল তাদের নির্ধারিত কিছু
পূজনীয়ের। তাদের ধারণায়, এগুলো
তাদেরকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে
দিবে। এগুলোকে তারা নিজেদের জন্য
রক্ষাকবচ হিসেবে স্বীকৃতি দিল।
আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু শোনেন, এবং
মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে তাকে ধন্য
করেন। আল্লাহর এই নেয়ামতকে তারা
সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে বসল।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত এবং
তার কাছে আশা-আকাঙ্খা পূরণে দাবী
জানানো। এই হয়ে দাঁড়াল তাদের
নিত্যদিনের কর্ম। আল্লাহকে তারা
তাদের নিজস্ব পন্থায় ও নিজেদের
উপাস্যগুলোর মাধ্যম করে চাইত এবং
তার নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা চালাত।
যারা প্রতিপালকের অসীম নেয়ামত ও
তার ইহসানকে ভুলে যায় সম্পূর্ণরূপে,
তাদের কীভাবে হেদায়েত লাভ সম্ভব ?
এই বাঁকা ও ভুল পথে তারা যতটা চলবে,
ঠিক ততটাই নিজেদের ক্ষেত্রে
নিয়তির অবশ্যম্ভাবি পরিণতিকে
দ্রুত বয়ে আনবে। কোরআন ও হাদীসের
বিভিন্ন প্রমাণ দ্বারা যেগুলো
অবশ্যই সর্বতোভাবে স্বচ্ছ ও
সর্বসাধরণের বোধগম্য। এ বিষয়টি
সাব্যস্ত, আল্লাহ তা‘আলার
নৈকট্যলাভের জন্য ভিন্ন উপাস্যের
দ্বারস্থ হওয়ার অর্থ হল, স্পষ্ট
শিরক ও বহুত্ববাদে লিপ্ত হওয়া।
মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, এবং আল্লাহ
তা‘আলার নেয়ামতকে সম্পূর্ণরূপে
অস্বীকার করা।
অর্থাৎ, মুশরিকদের যদি প্রশ্ন করা
হয়, মহাজগতের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা
কার হাতে, এবং কার নির্দেশনায় এ-
জগৎ নিয়ত সন্তরনশীল, যার
প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ণ হতে পারে
না কোন শক্তি, তবে তাদের উত্তর হবে,
এই শক্তি আছে কেবল আল্লাহ
তা‘আলার। এই অভিব্যক্তির পর
অন্যের পূজা করা উম্মদনা বৈ কিছু
নয়। আল্লাহ কোন শক্তির হাতে
পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণভার প্রদান করেন
নি, মানুষ অথবা অপর কোন প্রাণীর
জন্য কেউ রক্ষাকারী হতে পারে না।
এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগেও মুশরিকরা তাদের
নির্ধারিত মুর্তিগুলোকে শক্তিতে
আল্লাহ তা‘আলার সমপর্যায়ের হিসেবে
স্বীকৃতি দিত না। বরং এগুলোকে তারা
আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও তার সৃষ্টি
হিসেবে মানত। তাদের মাঝে নেই
প্রতিপালকের অসীম শক্তির
উপস্থিতি। এতে তাদের বিন্দুমাত্র
অবিশ্বাস ছিল না। কিন্তু তাদের
এবাদত করা, তাদের নামে মান্নত মানা,
পশু বলি দেয়া, তাদেরকে প্রতিপালকের
প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি
প্রদান। ইত্যাদির প্রতি তাদের
বিশ্বাস ছিল, এবং এগুলো ছিল তাদের
কৃত শিরক। এ থেকে প্রমাণিত হয়,
মানুষের মাঝে যে কেউ তাদের মত এই
বিশ্বাস মনে মনে পোষণ করবে।
শক্তিতে আল্লাহ তা‘আলার সমস্তরের
হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করলেও,
মুশরিক আবু জাহেল ও তার মাঝে কোন
পার্থক্য থাকবে না। শিরকের পরিচয়
কেবল এই নয়। মানুষ কোন শক্তিকে
আল্লাহ তা‘আলার সমস্তরের এবং তার
প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে, বরং যে বস্তুকে
আল্লাহ তার নিজস্ব গুণ হিসেবে
বিশিষ্ট করেছেন, এবং বান্দাদের জন্য
তাদের এবাদতের ও দাসত্বের নিদর্শন
বলে ঘোষণা করেছেন, তা অন্য কারো
জন্য নির্ধারিত করা। উদাহরণত
সেজদা, আল্লাহর নামে কোরবানী
প্রদান, তাকে সর্বদা উপস্থিত কল্পনা
করা, এবং ক্ষমতা ও রক্ষণাবেক্ষণ
শক্তি ইত্যাদি। সেজদা একমাত্র
আল্লাহ তা‘আলার আপন সত্ত্বার জন্য
বিশিষ্ট। তাতে অন্য কারো অধিকার
তিনি প্রদান করেন নি। কোরবানী
তার জন্য বান্দাদের পক্ষ হতে
উৎসর্গিত-সমর্পিত। তিনি
সর্বস্থানে উপস্থিত এবং তার হাতেই
সকল ক্ষমতার উৎস ও রক্ষণাবেক্ষণ
শক্তি। এই সকল বৈশিষ্টের
একটিমাত্র যদি অন্য কারো জন্য
বিশিষ্ট করা হয় তাকে শক্তিতে
আল্লাহ তা‘আলার সমস্তরের হিসেবে
স্বীকৃতি প্রদান না করা কিংবা তাকে
আল্লাহর বান্দা হিসেবে মানলেও তা
হবে স্পষ্ট শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
এক্ষেত্রে নবী, ওলী, শয়তান, ভূত-
প্রেত, পরী ইত্যাদি একই বিধানের
অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর জন্য বিশিষ্ট
বিষয়গুলোকে যদি তাদের জন্য
নির্ধারণ অথবা পালন করা হয়, তবে
তা হবে শিরক। এগুলো পালনকারী হবে
মুশরিক। মুর্তিপূজকদের সাথে আল্লাহ
তা‘আলা পবিত্র কোরআনে ইহুদি ও
খৃষ্টানদের সমালোচনা করেছেন, অথচ
তারা মুর্তিপূজক বা অন্য কোন
উপাস্যকে নিজেদের জন্য নির্ধারিত
করে নি। এর কারণ হল, তারা নবী ও
তাদের সম্প্রদায়ের বড় বড় ব্যক্তিদের
ক্ষেত্রে একই পথ অনুসরণ করেছিল।
কোরআনে এসেছে :
ﺍ ﺍﻭُﺬَﺨَّﺗ ْﻢُﻫَﺭﺎَﺒْﺣَﺃ ْﻢُﻬَﻧﺎَﺒْﻫُﺭَﻭ
ﺎًﺑﺎَﺑْﺭَﺃ ْﻦِﻣ ِﻥﻭُﺩ ِﻪَّﻠﻟﺍ َﺢﻴِﺴَﻤْﻟﺍَﻭ
َﻦْﺑﺍ َﻢَﻳْﺮَﻣ ﺎَﻣَﻭ ﺍﻭُﺮِﻣُﺃ ﺎَّﻟِﺇ
ﺍﻭُﺪُﺒْﻌَﻴِﻟ ﺎًﻬَﻟِﺇ ﺍًﺪِﺣﺍَﻭ ﺎَﻟ َﻪَﻟِﺇ
ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُﻪَﻧﺎَﺤْﺒُﺳ ﺎَّﻤَﻋ َﻥﻮُﻛِﺮْﺸُﻳ ﴿
31﴾
অর্থ: ‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে
নিজেদের জ্ঞানী ও সংসারবিরাগী
সম্প্রদায়কে প্রতিপালক হিসেবে
গ্রহণ করে নিয়েছে। মাসীহ বিন
মারইয়ামকেও। অথচ, তাদেরকে
নির্দেশ করা হয়েছিল এক আল্লাহর
এবাদত করার। যিনি ব্যতীত
এবাদতের উপযোগী কেউ নেই। তিনি
মুশরিকদের শিরক থেকে পবিত্র ও
সম্মানিত।’ (সূরা তওবা : আয়াত :৩১)
উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হল, আল্লাহকে
তারা স্বীকৃতি দেয় বড় সৃষ্টিকর্তা ও
প্রতিপালক হিসেবে। কিন্তু, সাথে
সাথে তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত জ্ঞানী ও
সংসার বিরাগী ব্যক্তিদের মনে করে
ছোট প্রতিপালক, যে তাদেরকে
আল্লাহর দরবারে সফলতা এনে দিবে।
কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এক ও একক
সত্ত্বা। ছোট হোক কিংবা বড়, তার
কোন শরিক নেই। পৃথিবীর সব কিছুই
তার সৃষ্ট বান্দা, সকল বান্দা শক্তিতে
ও ক্ষমতায় একই শ্রেণীর
অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে এসেছে :
ْﻥِﺇ ُّﻞُﻛ ْﻦَﻣ ﻲِﻓ ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍَﻭ ِﺕﺍَﻭﺎَﻤَّﺴﻟﺍ
ﺎَّﻟِﺇ ﻲِﺗَﺁ ِﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺍ ﺍًﺪْﺒَﻋ ﴿
﴾93 ْﺪَﻘَﻟ ْﻢُﻫﺎَﺼْﺣَﺃ ْﻢُﻫَّﺪَﻋَﻭ ﺍًّﺪَﻋ ﴿
﴾94 ْﻢُﻬُّﻠُﻛَﻭ ِﻪﻴِﺗَﺁ َﻡْﻮَﻳ ِﺔَﻣﺎَﻴِﻘْﻟﺍ
ﺍًﺩْﺮَﻓ 95﴿ ﴾
অর্থ : ‘আকাশ ও জমীনের প্রতিটি
ব্যক্তি এক এক করে রহমানের সামনে
দাস হিসেবে উপস্থিত হবে,
প্রতিপালক তাদের হিসেব করে
রেখেছেন, এবং এক এক করে গণনা করে
রেখেছেন। সকলে প্রতিপালকের সামনে
এক এক করে অবশ্যই আসবে। (সূরা
মারইয়াম : ৯৩-৯৫)
অর্থাৎ মানুষ হোক অথবা ফেরেশতা
সকলে আল্লাহর দাস। প্রতিপালকের
সামনে এর ঊর্ধ্বে তাদের জন্য কোন
স্তর নির্ধারিত নেই। সে
সর্বতোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কব্জার
অধীন। অক্ষম ও দুর্বল। তার
ক্ষমতায় কিছু নেই। সব কিছু একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তা‘আলা
সব কিছুর উপর আপন ক্ষমতা ও কতৃত্ব
প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছেন। কাউকে
তিনি ভিন্ন কারো ক্ষমতায়
হস্তান্তর করেন নি। তার দরবারে
কেয়ামত দিবসে প্রতিটি ব্যক্তি
এমনকি পশু হিসাব-নিকাশ ও
জবাবদিহিতার জন্য অবশ্য উপস্তিত
হবে। তথায় কেউ কারো উপাস্য হিসেবে
কিংবা কারো রক্ষাকারী অথবা
দায়িত্বশীল রূপে উপস্থিত হবে না।
কোরআনে কারীমে এ বিষয়ে অসংখ্য
আয়াত ও বর্ণনা আছে। কিন্তু আমরা
এস্থলে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি
আয়াত উপস্থাপন করেছি। আশা করি,
গভীর মনোযোগের সাথে যে তা
অধ্যয়ন করবে, তার সাথে শিরকের
কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। সে
অবশ্যই তাওহীদকে আপন করে নিবে,
বিশুদ্ধভাবে গ্রহণ করে নিবে।
আমাদের জ্ঞাতব্য হল, আল্লাহ তা‘আলা
কোন কোন বস্ত্তকে নিজের জন্য
বিশিষ্ট ও তার বৈশিষ্ট্য হিসেবে
গ্রহণ ও ঘোষণা করেছেন। এবং তাতে
কাউকে শরিক বা অংশ প্রদান করেন
নি। এমন বস্ত্ত রয়েছে অসংখ্য।
আমরা এখানে কয়েকটি উল্লেখ করব,
এবং কোরআন-হাদীসের মাধ্যমে
প্রমাণিত করার প্রচেষ্টা চালাব,
যাতে তা শাস্ত্রীয় গ্রহণযোগ্যতা
লাভে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে
অন্যান্য বিষয়গুলো-আশা করি,
পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।
প্রথমত : আল্লাহ সর্বস্থানে উপস্থিত
এবং পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় তার
দৃষ্টির আয়ত্বে। অর্থাৎ তিনি অবগত
প্রতিটি বস্ত্ত সম্পর্কে। তার ইলম
বেষ্টন করে আছে মহাবিশ্বের প্রতিটি
অনু-পরমানু। এর ফলে তিনি প্রতিটি
বিষয়ে মুহূর্তে অবগতি লাভ করেন।
দূরে অথবা নিকটে, সামনে অথবা
পিছনে, প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে,
মহাকাশে কিংবা পৃথিবীতে, গহীন
পর্বতের গোপন কুঠুরীতে অথবা
সমুদ্রের গভীর তলদেশে-কোথাও মানুষ
আল্লাহ তা‘আলার অবগতির বেষ্টন
অতিক্রম করতে সক্ষম নয়। ব্যক্তি
যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো
উপসনা করে, এবং তার সর্বজ্ঞতা
হওয়ার ব্যপারে কাউকে আল্লাহ
তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করে, তবে,
সন্দেহ নেই, সে লিপ্ত হল স্পষ্ট
শিরকে। তাকে বলা হবে মুশরিক।
আল্লাহর সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা
হওয়ার ব্যাপারে কাউকে শরিক করার
অর্থ হবে, মানুষ কাউকে তার
রক্ষাকারী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান
করে ভাববে, আমি যেখানেই উপস্থিত
হই, আমার উপাস্য আমাকে লক্ষ করছে।
তাকে এড়ানো সম্ভব নয়, তাকে ডাকলে
অবশ্যই তিনি আমার বিপদ-আপদ দূর
করে দিবেন। কিংবা সে শত্রুর সাথে
যখন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তখন তার
নামে উপস্থিত হয়। তার নাম
উচ্চারণ করে ঝাপিয়ে পড়ে শত্রুর
উপর। তার উদ্দেশ্যে কোরআন খতম
পড়া হয়। কিংবা কল্পনায় সর্বদা এই
বিশ্বাসে তার একটি প্রতিচ্ছবি এঁকে
নেয় যে, যে সময় আমি তার নাম
উচ্চারণ করি, কিংবা অন্তরে তার
কল্পনা এঁকে নেই, অথবা তার
প্রতিচ্ছবি স্মরণ করি, তার কবর
আমার কল্পনায় ভেসে উঠে, তখন তিনি
আমাকে দেখতে পান, এবং আমার সাহায্যে
অবশ্যই এগিয়ে আসেন। আমার কোন
বিষয়ই তার অজ্ঞাতে নেই। আমার সুখ-
দু:খ, সুস্থতা-অসুস্থতা, আনন্দ-বেদনা,
সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা-কোন কিছুই তার
অনবগতিতে ঘটে না। আমি মনে মনে
পোষণ করি যে-কল্পনা ও বিশ্বাস-সব
কিছু সম্পর্কে তিনি অবগত। কোন
কিছুই তার অনায়ত্বে নেই। আল্লাহ
তা‘আলার সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা
হওয়ার ব্যাপারে শিরকের প্রকাশ্যরূপ
এটিই। সন্দেহহীনভাবে এই
বিশ্বাসগুলো মানুষকে মুসলমান থেকে
মুশরিকে পরিণত করে। বিশ্বাস কোন
বড় ব্যক্তি অথবা কোন মহান
ফেরেশতাকে কেন্দ্র করেই হোক না
কেন। মানুষ যদি এই শক্তিকে তার
একান্ত অথবা আল্লাহ প্রদত্ত ভাবে,
তাতেও কোন পার্থক্য আসবে না। উভয়
অবস্থায় তা শিরক হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বিতীয়ত : সৃষ্টিজগতে আপন ইচ্ছা
প্রয়োগ করা, হুকুম প্রদান করা, আপন
ইচ্ছায় জীবন ও মরণ দান, স্বচ্ছলতা-
দারিদ্র্য, সুস্থতা-অসুস্থতা, জয়-
পরাজয়, অগ্রগামিতা ও অনগ্রসরতা,
কঠিন অবস্থা অতিক্রম করার মত
মনোবল ও মানসিক শক্তি দান, সময়
বোঝার জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি-ইত্যাদি
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দান। এতে
কারো অংশিদারিত্ব নেই। মানুষ অথবা
ফেরেশতা যত শক্তিশালীই হোক না
কেন, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কারো
সত্ত্বায় এ প্রকার শক্তি প্রদান করা
হয় নি। মানুষ যদি আল্লাহ ব্যতীত
অপর কারো ক্ষেত্রে এমন শক্তির
স্বীকৃতি প্রদান করে, তবে স্পষ্ট
শিরকে নিপতিত হল। কারো ক্ষেত্রে
এই শক্তির উপস্থিতির ব্যাপারে
স্বীকৃতি প্রদান করে যদি তার কাছ
থেকে কোন কিছু প্রার্থনা করা হয়,
এবং এই উদ্দেশ্যে তার নামে ‘মান্নত’
করা হয়, কিংবা করা হয় কোরবানী,
এবং সর্বদা তার নামে অব্যহত থাকে
জয়গান, তাহলে তাকে বলা হবে ‘শিরক
ফীত তাছাররুফ’ বা ক্ষমতা প্রয়োগের
ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অপর
কাউকে তার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি
প্রদান করা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা
যে ক্ষমতাকে নিজের জন্য বিশিষ্ট
করে নিয়েছেন, তা অপর কারো জন্য
বিশিষ্ট করে নেয়া। এই শক্তিকে তার
সত্ত্বাগত বৈশিষ্ট্য অথবা আল্লাহ
প্রদত্ত হিসেবে মেনে নেয়া হোক অথবা
না, উভয় অবস্থায় একে শিরকের
অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে। এর প্রতি যার
বিশ্বাস থাকবে, তাকে বলা হবে
মুশরিক।
তৃতীয়ত : আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কিছু
শারীরিক ও মানসিক কাজকে নিজের
জন্য, এবং তার এবাদত প্রকাশের জন্য
বিশিষ্ট করে নিয়েছেন। একে
শরীয়তের পরিভাষায় নামকরণ করা
হয়েছে ‘এবাদত’ হিসেবে। সেজদা, রুকু,
হাত বেধে দাঁড়ানো, আল্লাহ তা‘আলার
নামে প্রার্থনা করা, তার উদ্দেশ্যে
রোযা রাখা এবং তার পবিত্র গৃহ
প্রাঙ্গনে দূর-দূরান্ত থেকে এমনভাবে
উপস্থিত হওয়া, মানুষ তাদের দর্শনেই
বুঝে নিতে পারে তারা আল্লাহর
মেহমানইত্যাদি আল্লাহ তার
এবাদতের জন্য বিশিষ্ট করে
দিয়েছেন। এতে তিনি কারো অংশ
সাব্যস্ত করেন নি। হজ্বের সফরে
মানুষ পথে আল্লাহ তা‘আলার নামে
তসবীহ পাঠ করে, তাকে স্মরণ করে,
অনর্থক আলোচনা, অথবা পশু শিকার
থেকে বেঁচে থাকে। পুরোপুরি সতর্কতার
সাথে তারা আল্লাহ তা‘আলার দরবারে
উপস্থিত হয়, তার গৃহে চতুর্দিক হতে
তাওয়াফ করে নিজের মনের আকুতির
প্রকাশ করে। তার অভিমুখে সেজদা
করে, তাকে উদ্দেশ্য করে কোরবানীর
পশু উৎসর্গ করে। কাবার অঙ্গনে সে
বিভিন্নভাবে নিজের মনের আবেগকে
ঢেলে দেয়। কখনো কা’বার আবরনী
আকড়ে ধরে, তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে,
তাতে ঝুলে পড়ে আল্লাহর কাছে একান্ত
বিষয়ে প্রার্থনা করে, কিংবা কাবাকে
ঘিরে বারম্বার তাওয়াফ করে, যমযম
পান করে, তাতে গোসল অথবা ওযু ও
চোখে-মুখে দিয়ে সে আল্লাহ তা‘আলার
কাছে সাহায্য ও আখেরাতে আশ্রয়লাভের
প্রার্থনা জানায়। এগুলো সব কিছুউ
শরীয়ত সম্মত, কিন্তু একমাত্র
আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্ধারিত।
অন্য কারো ক্ষেত্রে এরূপ আচরণ করার
অনুমতি মানুষকে শরীয়ত দেয় নি।
ভিন্ন কোন মানুষ অথবা শক্তির জন্য
মানুষ যদি এগুলোকে এবাদত বা নৈকট্য
লাভের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়,
এবং পালন করে, তবে অবশ্যই শিরক
হিসেবে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি
হয়ে যাবে মুশরিক। মানুষ যদি কোন
নবী কিংবা ওলীকে, অথবা ভুত-প্রেত,
জীন-পরীকে, কিংবা কবর, নিজেদের
বানান ও স্বীকৃত পবিত্র স্থানের
সাথে এরূপ আচরণ করে, এবং তাতে
সেজদা, রুকু, এবং তার সামনে হাত বেধে
দাঁড়ায়, এবং তার উদ্দেশ্যে রোযা রাখে,
তবে তা শিরক হিসেবে গণ্য হবে।
কারো কবরকে অতি সম্মান প্রদান
কিংবা তাকে পূজনীয় হিসেবে মানা এই
প্রকার শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কবরের
সামনে অতিক্রমের সময় জুতো খুলে
নেয়া, কবরকে চুম্বন করা, কিংবা কবর
দর্শনে দূর-দূরান্ত থেকে আগমন করা,
আলোকসজ্জা করা, কবরের দেয়ালে আবরন
দেয়া, শামিয়ানা টানানো, কিংবা
কবরের চৌখাট স্পর্শ করার রীতির
প্রচলন, হাত বেধে প্রার্থনা, কিংবা
সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে তাতে
খেদমতের নামে থেকে যাওয়া, তথাকার
পাড়া-প্রতিবেশিদের সম্মান জানান,
এমনকি আশপাশের অনাবাদ
জমিগুলোকেও পবিত্র বলে মান্য
করাইত্যাদি, সন্দেহ নেই, শিরকের
অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় অপকর্মে যে
ব্যক্তি অংশ নিবে, তাকে শরীয়তের
পরিভাষায় মুশরিক বলা হবে। সে
ইসলামের সম্প্রদায়ভুক্ত বলে
স্বীকৃতি পাবে না। শাস্ত্রীয়
পরিভাষায় একে বলা হয়, ‘শিরক ফীল
এবাদাত’ বা এবাদতের ক্ষেত্রে শিরক।
অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে
তার সমপর্যায়ের সম্মান জানান। এ
সম্মান তাকে সত্ত্বাগতভাবে কিংবা
আল্লাহ প্রদত্ত বলে দান করা হোক,
তাতে কোন পার্থক্য আসবে না। উভয়
অবস্থায় একে শিরক হিসেবেই সাব্যস্ত
করা হবে।
চতুর্থত : আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এই
আচরণের শিক্ষা প্রদান করেছেন, সে
পার্থিব কাজে-কর্মেও আল্লাহ
তা‘আলাকে স্মরণ রাখবে। তাকে সর্বদা
সম্মান জানাবে, যাতে তার ঈমানের
সংশোধন হয়, এবং তার কর্মে ভাল
ফলাফল লাভ হয়। যেমন, বিপদ-আপদ ও
প্রতিকূল পরিবেশে তাকে স্মরণ করা,
ভাল কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তার নাম
নিয়ে আরম্ভ করা। সন্তান-সন্ততি
হলে তার নামে একটি প্রাণী উৎসর্গ
করা, সন্তানের নাম আল্লাহর সাথে
সম্পর্কিত করে রাখা। যেমন,
আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) আব্দুর
রহমান (রহমানের বান্দা)ইত্যাদি।
ফসলের একটি অংশ তার নামে দান
করা। গাছে যে ফল হবে, তার থেকে কিছু
অংশ তার নামে গরীব ও দরিদ্রদের
দিয়ে দেয়া। পোষা প্রাণীর কয়েকটি
তার নামে নির্দিষ্ট করে দিবে। এবং
হজ্বের সময় মানুষ বাইতুল্লাহ
অভিমুখে যে প্রাণী নিয়ে যাবে, তার
প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।
(অর্থাৎ তার উপর সওয়ার হবে না)।
দৈনন্দিন যে কাজে-কর্মে মানুষ অংশ
নেয়, আল্লাহ তাদেরকে শিক্ষা
দিয়েছেন যে, তাতে অবশ্যই আল্লাহ ও
তার ইহসানের কথা স্মরণ রাখবে। তার
প্রণীত বিধি-বিধান মেনে চলবে
পূর্ণরূপে। যে-সকল বস্ত্ত ব্যবহারের
বৈধতা তার পক্ষ থেকে স্বীকৃত, তাই
কেবল ব্যবহার করবে। এবং যার প্রতি
তার পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত
হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে
চলবে। পার্থিব জীবনে মানুষ
মুখোমুখি হয় যে সুস্থতা-অসুস্থাতা,
জয়-পরাজয়, অগ্রসরতা-অনগ্রসরতা,
এবং আনন্দ-বেদনার, কিংবা নিপতিত
হয় যে আপদ-বিপদের, সব কিছুকে সে
আল্লাহ প্রদত্ত বলে মেনে নিবে।
প্রতিটি কাজ করার পূর্বে
‘ইনশাআল্লাহ’ বলে নিবে। অর্থাৎ
এভাবে সে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাকে
স্বীকৃতি দিবে। আল্লাহর নাম
এমনভাবে উচ্চারণ করবে, যাতে ফুটে
উঠে তাতে তার প্রতি অসীম সম্মান ও
মর্যাদা। এবং প্রকাশ করবে তার
সামনে নিজের দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব।
নমনীয় স্বরে বলবে, ‘আমার প্রভু’,
‘আমার প্রতিপালক’, ‘আমার রব’, ‘আমার
মালিক’, ‘আমার মা’বুদ’-ইত্যাদি। কোন
পরিস্থিতিতে যদি কসম বা শপথ
করার প্রয়োজন পড়ে, তবে তার নামকেই
সম্মানের সাথে বেছে নিবে।
এগুলো এবং এ জাতীয় অনেক কিছু
আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি সম্মান
প্রদর্শনের জন্যই মানুষের জন্য
বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। মানুষ
আল্লাহ ব্যতীত যদি অন্য কারো
প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন করে, তবে,
তা হবে নীতিবিরুদ্ধ। এতে মানুষের
শিরক সাব্যস্ত হবে। উদাহরণত: কোন
কাজ বাধাগ্রস্ত অথবা নষ্ট হয়ে গেলে
তা সংশোধন অথবা পূণরায় চালু করার
পূর্বে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে
কিছু মানা, সন্তান-সন্ততির নাম
আব্দুন নবী, ইমাম বখশ, পীর বখশ-
ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে
মিলিত করে রাখা, বাগান বা উদ্যানের
একটি অংশ তার নামে উৎসর্গ করে
দেয়া, বা তার জন্য নির্ধারিত রাখা,
যখন ফসল উৎপন্ন হয়, তখন তার
নামে একটি অংশ ভিন্ন করে রাখা,
এবং বাকীগুলো কেবল তারপরেই
ব্যবহার করা, এগুলো সবই এর
প্রকাশ্যরূপ। এর মাধ্যমে মানুষ
আল্লাহর জন্য নির্ধারিত সম্মান
অন্যের জন্য ব্যবহার করে যাচ্ছে।
গৃহপালিত পশুর একটি অংশ তাদের
উপাস্যের নামে ভিন্ন করে রাখা হয়।
এবং এগুলোকে প্রদান করা হয় বিশেষ
সম্মান ও মর্যাদা। পানি পান অথবা
খাদ্য গ্রহণের সময় এদেরকে দেয়া হয়
বিশেষ গুরুত্ব, কারণ এগুলো
উৎসর্গিত বিশেষ ব্যক্তির নামে,
তাদেরকে তাড়ানো হয় না কখনো।
কিংবা অন্যান্য প্রাণীর মত তাদেরকে
লাঠি অথবা পাথর দ্বারা আঘাত করা হয়
না। পানাহার, এবং পরিধেয় বস্ত্রর
ক্ষেত্রে বিশেষ সংস্কারের প্রতি
লক্ষ্য রাখা হয় কঠোরভাবে। বর্জন
করা হয় বিশেষ বিশেষ পরিধেয় এবং
বিশেষ বিশেষ খাবার। কারো বিপদ-
আপদের ক্ষেত্রে বলা হয়, সে অমুক
মহান ব্যক্তির লা’নতে নিপতিত, তাই
তার কাজ পূর্ণ হচ্ছে না, বা তার কাজে
বারবার বাঁধা আসছে। এবং বলা হয় অমুক
ব্যক্তির উপর তার পীরের বদ-নজর
বা অদৃষ্টি পড়েছে, তাই সে পাগলে
পরিণত হয়েছে। এবং ক্রমাগত বিপদ-
আপদ তাকে ঘিরে ধরেছে। পক্ষান্তরে
যার সুসময় আগত, তার ক্ষেত্রে বলা
হয়, তার প্রতি তার পীরের সুদৃষ্টি
রয়েছে, তাই তার কাজে-কর্মে এ-বিপুল
পরিমাণ সফলতা। সফলতা ও সৌভাগ্য
তার পদচুম্বন করছে। তার পায়ের কাছে
লুটিয়ে পড়ছে পৃথিবীর যাবতীয়
সৌভাগ্য-সম্মান। আমরা বিভিন্ন
পরিবেশে দেখতে পাই, সেখানে
কুসংস্কার হিসেবে প্রচলিত আছে এমন
অনেক কিছু, শরীয়তের দৃষ্টিতে যার
কোনরূপ ভিত্তি নেই। মানুষ বলে, এবং
বিশ্বাস করে, অমুক তারকার কারণে
ছড়িয়ে পড়েছে প্লেগ বা অকল্যাণ ও
দুর্যোগ। কাজ আরম্ভ করার জন্যও
রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সময়। মানুষ
বলে-অমুক ঘন্টায়-মুহূর্তে, এবং অমুক
দিনে সূচনা করা হবে, এবং এতে
সফলতার সম্ভবনা শতভাগ। কিংবা বলা
হয়, অমুক দিন সূচনা করার ফলে এতে
সফলতা লাভ হয় নি। এবং বলা হয়,
আল্লাহ ও তার রাসূল চান তো আমি
আসব। পীরের মর্জি হলে আমার আসতে
কোন বাঁধা নেই। মানুষ অপরের
সম্বোধনে মহান, শাহানশাহ,
খোদাওন্দ, খোদায়েগাঁ, ইত্যাদি
প্রভুসূচক শব্দ প্রয়োগ করে। কসম বা
শপথের প্রয়োজন হলে নবী, ওলী,
অথবা ইমাম ও তার কবরের নামে শপথ
করা হয়। এ জাতীয় কাজের ফলে
মানুষের মনে সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে
থাকে শির্ক। শরীয়তের পরিভাষায়
একে বলা হয় ‘শির্ক ফীল আদাত’ বা
অভ্যাস ও আচরণীয় শিরক। অর্থাৎ
অভ্যাস ও আচরণে আল্লাহ তা‘আলাকে
পরিত্যাগ করে অন্যের প্রতি সম্মান
জানান। শিরকের এই চার প্রকারকে
পবিত্র কোরআনে বিস্তারিতভাবে
প্রকাশ করা হয়েছে, এবং তার প্রতি
কঠোর সাবধনতা অবলম্বনের নির্দেশ
প্রদান করে আল্লাহ তা‘আলা
মুসলমানদেরকে এ থেকে বেঁচে থাকার
আদেশ প্রদান করেছেন।

নিয়মিত আপডেট পোষ্ট পেতে এই লিংকটিতে প্রবেশ করুন

http://www.abdurrakib77.wordpress.com

জাজাকাল্লাহু খইরান

বেনামাজি কে বিবাহ করা যাবে কি

বে-নামাযীকে বিয়ে করা যাবে কি না?
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন ঃ
ِﻞُﺟَّﺮﻟﺍ َﻦْﻴَﺑ ِﻙْﺮِّﺸﻟﺍﻭ ِﺮْﻔُﻜْﻟﺍﻭ ُﻙْﺮَﺗ ِﺓَﻼَّﺼﻟﺍ
অর্থ ঃ “মুসলিম বান্দা এবং কাফির ও
মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত
পরিত্যাগ করা।”
তিনি সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে আরও
বলেছেন ঃ
ُﺪْﻬَﻌْﻟﺍ ْﻱِﺬَّﻟﺍ ْﻢُﻬَﻨْﻴَﺑَﻭ َﺎﻨَﻨْﻴّﺑ ُﺓَﻼّﺼﻟﺍ ْﻦَﻤَﻓ
َﺎﻬَﻛِﺮَﺗ ْﺪَﻘَﻓ َﺮَﻔَﻛ
অর্থ ঃ “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি
হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ
করবে সে কাফির হয়ে যাবে।”
(আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
মুসলিম নারীদের বিবাহের ব্যাপারে আল্লাহ্
পাক বলেছেন ঃ
ﺍﻮُﺤِﻜﻨَﺗ َﻻَﻭ ِﺕﺎَﻛِﺮْﺸُﻤْﻟﺍ ﻰّٰﺘَﺣ َّﻦِﻣْﺆُﻳ
َﻷَﻭদ্ধ ٌﺔَﻣ ٌﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ٌﺮْﻴَﺧ ٍﺔَﻛِﺮْﺸُﻣ ْﻦِﻣ ْﻮَﻟَﻭ
ْﻢُﻜْﺘَﺒَﺠْﻋَﺃ
“আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো
না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে।
অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী
অপেক্ষা উত্তম যদিও তাদেরকে তোমাদের ভাল
লাগে।” (সূরা বাক্বারা ঃ ২২১)
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক আরও বলেছেন ঃ
ْﻥِﺈَﻓ ٍﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻣ َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘْﻤِﻠَﻋ َﻼَﻓ َّﻦُﻫﻮُﻌِﺟْﺮَﺗ
ﻰَﻟِﺇ ِﺭﺎَّﻔُﻜْﻟﺍ َﻻ َّﻦُﻫ ٌّﻞِﺣ ْﻢُﻬَﻟ َﻻَﻭ ْﻢُﻫ َﻥﻮُّﻠِﺤَﻳ
َّﻦُﻬَﻟ
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর
তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিও না।
এরা কাফিরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফিররা
এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনা ঃ
১০)
নবী কারীম (সাঃ) এর সাহাবীগণ সালাত্
ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে
কাউকে কাফির মনে করতেন না। এই দলীলগুলো
থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যারা সালাত্
পরিত্যাগ করল বা সালাত্ কায়েম করল না- তারা
মুশরিক বা কাফির। মুশরিকদের জন্য বেহেশত
হারাম।
উল্লিখিত বিষয়ে রাসূলে করীম (সাঃ) আরও
বলেছেন :
ﻦﻣ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻙﺮﺗ ﺍﺪﻤﻌﺘﻣ ﺪﻘﻓ ﺮﻔﻛ
ﺍﺭﺎﻬﺟ.
অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে সালাত ছেড়ে
দিল, সে কুফরী করল, অর্থাৎ সে কাফির হয়ে
গেল।” (সহীহ নামায পৃঃ ১২)
এ আয়াতগুলোর ভিত্তিতে মুসলমানগণ ঐকমত্য
পোষণ করেছেন যে, কোন মুসলিম নারীর সাথে
কাফিরদের বিবাহ বৈধ নয়। অতএব কোন
অভিভাবক যদি নিজ মেয়ে বা নিজের অধীনের
কোন মেয়ের বিবাহ সালাত্ ত্যাগকারী ব্যক্তির
সাথে সম্পন্ন করে তবে সূরা মুমতাহিনার ১০
আয়াত অনুযায়ী সে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। এ
বিবাহের মাধ্যমে উক্ত নারী তার জন্য বৈধ
হবে না। সে ক্ষেত্রে জন্ম নেয়া সন্তানও বৈধ
সন্তান হবে না। আল্লাহ পাক আল কুরআনে
বলেছেন ঃ
অর্থঃ “মুমিন নারী মুমিন পুরুষের জন্য
বৈধ।”
সূরা বাকারাহ- ২২১ নং আয়াতে স্পষ্ট বলা
হয়েছে যে মুশরিক নারী ও মুশরিক পুরুষকে
ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী অপেক্ষা খারাপ বলে
আখ্যায়িত করা হয়েছে। এবং তারা যত
মনোমুগ্ধকরই হোকনা কেন তাদের সাথে
মুমিনের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত বানী থেকে
পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, বেনামাযীর
সাথে নামাযী সন্তানের বিবাহ দেয়া যাবে না।
কারণ, যেহেতু সূরা ‘রূম’ ৩১ নম্বর আয়াতে
স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে ঃ
{ ﺍﻮُﻤﻴِﻗَﺃَﻭ َﺓﻼَّﺼﻟﺍ ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﺗ ﻻَﻭ َﻦِﻣ
َﻦﻴِﻛِﺮْﺸُﻤْﻟﺍ}
অর্থ ঃ সলাত কায়েম কর, মুশরিকদের সঙ্গে
গণ্য হয়ো না।”
(সহীহ নামায, পৃঃ ১২)
এ আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সালাত
কায়িম করলে মুসলমান থাকবে, না কায়িম করলে
মুশরিক হয়ে যাবে।
হাদীসে বলা হয়েছে ঃ
অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে সালাত্ ছেড়ে
দিবে, সে কুফরী করল, অর্থাৎ সে কাফির হয়ে
গেল।” (তাবারানী)
উল্লিখিত বর্ণনা থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে
পারি যে, যারা সালাত্ আদায় করে না, তারা
কাফির ও মুশরিক। এছাড়াও, বুখারী, মুসলিমে
স্পষ্ট রূপে বলা আছে ঃ
َﻻ ُﺙِﺮَﻳ َﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ ُﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻻَﻭ ُﺙِﺮَﻳ ُﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ
َﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ.
“কোন মুসলিম কাফিরের মীরাস লাভ করতে
পারবে না। কোন কাফিরও কোন মুসলিমের
মীরাস লাভ করতে পারবে না।” (বুখারী ও
মুসলিম)
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার ভাবে প্রতীয়মাণ হয়
যে, কোন মুমিন পিতা-মাতা যদি মারা যায়
তাহলে তার বে-নামাযী সন্তানরা তার
সম্পত্তির ভাগ পাবে না। এমনকি কোন মুমিন
সন্তান যদি মারা যায় তবে তার সে-নামাযী
পিতা-মাতা বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজন তার
সম্পত্তির কোন ভাগ পাবে না। কেননা উপযুক্ত
আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, বে-নামাযী কাফির ও
মুশরিক এবং কোন কাফির কোন মুসলিমের
মীরাস লাভ করতে পারবে না। যদি বে-নামাযী
সন্তান বা বে-নামাযী পিতা-মাতাকে সম্পত্তি
দেওয়া হয়, তাহলে মীরাস সমূহের অন্যান্য
অধিকারীদের হক নষ্ট করা হবে। আল্লাহ পাক
বলেছেন ঃ
অর্থ ঃ “কারো হক কেউ নষ্ট করলে, পরকালে
তার নিজের পুণ্য দিয়ে এবং হকের অধিকারীর
পাপ নিজে নিয়ে হক আদায় করতে হবে।”
তাই, ফারায়েযের সময় এই হক সম্পর্কে আমাদের
সচেতন থাকা বিশেষ জরুরী।