স্বামীর ভালোবাসার পরশে বদলে গেল স্ত্রীর জীবন

নাম তার আব্দুল ওয়াহ্হাব। আমেরিকান এক
মুসলমান। কয়েকদিন পূর্বে বিয়ে করেছেন।
স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলেছেন এক
ষোড়শী যুবতীকে। যুবতীর নাম রাইহানা।
যুবতী বেশ সুন্দরী। অনিন্দ্য সুন্দরী। ওর
বাইরের রূপটা যে কোনো পুরুষকে মুগ্ধ করলেও
ভিতরটা তার ঘোর অন্ধকারে ঢাকা। কারণ
ইসলামের আলো এখনো তার অন্তর জগতে প্রবেশ
করেনি। কালেমায়ে শাহদাত পড়ে মুসলমান
হয়নি। ধর্মে ছিল সে খৃস্টান। আর এ
অবস্থায়ই নববধূ হয়ে চলে আসে জনাব আব্দুল
ওয়াহ্হাবের স্ত্রী হয়ে।
রাইহানা ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত আব্দুল
ওয়াহ্হাব সাহেবকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন
হতে হয়েছে। মোকাবেলা করতে হয়েছে মারাত্মক
পরিস্থিতির। পাঠকবৃন্দ! চলুন, জনাব আব্দুল
ওয়াহ্হাব সাহেবের মুখ থেকেই তাদের কাহিনীটা
হৃদয়ঙ্গম করি। সেই সাথে নিজেরা শিক্ষা
গ্রহণ করে তদানুযায়ী নিজেদের জীবনকে ঢেলে
সাজাতে চেষ্টা করি।
জনাব আব্দুল ওয়াহ্হাব সাহেব বলেন, রাইহানাকে
বিয়ে করার সময় আমি ছিলাম নামে মুসলমান।
ইসলামী বিধি-বিধান পালনের কোনো গুরুত্ব
আমার মধ্যে ছিল না। তাই সেগুলো রীতিমত
পালনও করতাম না। এমনকি কোনো খৃস্টান
মেয়ের সাথে কোনো মুসলমান ছেলের বিয়ে
সহীহ হয় না একথাটিও আমার জানা ছিল না।
রাইহানার অবস্থাও ছিল আমার মতো। সেও তার
ধর্মের প্রতি আন্তরিক ছিল না। বরং বলা
যায়, ধর্ম কিংবা ধর্মীয় বিধি-বিধান
পালনের ব্যাপারে তার কোনো মনোযোগই ছিল
না। আমি অবশ্য মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম।
নামাজ পড়তাম। কিন্তু সে কখনো চার্চে যেতো
না।
কিছুদিন পর আমাদের একটা সন্তান হলো।
তখন আমি সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায়
বিভোর হলাম। ভাবলাম, আমি ও আমার স্ত্রী
যদি একই ধর্মের অনুসারী না হতে পারি, তবে
সন্তান বড় হয়ে কোন্ ধর্মের অনুসারী হবে।
তাই আমি রাইহানাকে মসজিদে যাওয়ার দাওয়াত
দিলাম। কিন্তু আমার দাওয়াত সে স্পষ্ট ভাষায়
কেবল অস্বীকারই করল না, উল্টো চার্চে যেতে
শুরু করল। এমনকি এটি একটি অলিখিত
নিয়মই হয়ে গেল যে, তাকে আমি যখনই
মসজিদে যাওয়ার কথা বলি তখনই সে চার্চে
ছুটে যায়।
এবার আমার বোধদোয় হলো। আমি ভাবলাম,
আমি মুসলমান, আমার স্ত্রী খৃস্টান। হায়, এ
আমাদের কেমন জিন্দেগী? মুসলমানের ঘরে
খৃস্টান বউ! তাছাড়া এতদিন তো অবস্থাটা এমন
ছিল যে, সে চার্চে যেত না। কিন্তু এখন? এখন
তো সে চার্চেও যায়!
আমি বিষয়টি নিয়ে খুব ফিকির করলাম।
তাকে মুসলমান বানানোর জন্য কী কৌশল
অবলম্বন করা যায়, এ নিয়ে গভীর চিন্তায়
মগ্ন হলাম। অবশেষে তাকে এই প্রস্তাব দিলাম
যে, চলো এক রবিবারে আমরা উভয়ে চার্চে
যাবো, আর আরেক রবিবারে যাব মসজিদে। সে
খানিকটা চিন্তা করে আমার প্রস্তাবে রাজী
হয়ে গেল। এই প্রস্তাব দ্বারা আমার উদ্দেশ্য
ছিল, আমি চাছিলাম যে কোনোভাবে ইসলামের
পরিচয় তার সামনে প্রকাশিত হোক। সে
ইসলামের কাছে আসুক।
আমি যখন আমার স্ত্রীকে মুসলমান বানানোর
ফিকির করছিলাম তখন আমার মাঝেও আত্ম
সচেতনতা সৃষ্টি হলো। আমি মনে মনে নিজকে
ধিক্কার দিয়ে বললাম, আমি কেমন ঈমানদার
যে, মুসলমান হয়েও ইসলামী বিধি-বিধান
ঠিকমত পালন করি না? ইসলামের রঙে রঙিন
হই না? তাছাড়া আমি নিজে ইসলাম পালন না
করে, আরেকজনকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তা
কতটুকুই বা কার্যকর হবে? না, আমাকে আর এভাবে
চললে হবে না। আমাকে পুরোপুরি মুসলমান হতে
হবে। আমলদার হতে হবে। ইসলামের যাবতীয়
বিধান একশ ভাগ পালন করতে হবে। তখন হয়তো
আমার স্ত্রীকে আর ইসলাম গ্রহণের জন্য
পীড়াপীড়ি করতে হবে না। কারণ সে যখন তার
স্বামীর মধ্যে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য
অবলোকন করবে, অতি সহজে তখন ইসলামের
প্রকৃতরূপ তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠবে।
ফলে তখন সে নিজেই ইসলামের প্রতি আগ্রহী
হবে এবং আল্লাহ চাহেত ইসলামের সুশীতল
ছায়ায় আশ্রয়ও নিবে।
যে কথা সে কাজ। সেদিন থেকে আমি আমার জীবন
বদলাতে শুরু করলাম। আলেম-উলামাদের
সান্নিধ্যে যেতে লাগলাম। একান্ত নিষ্ঠার
সাথে পালন করতে লাগলাম, ইসলামের যাবতীয়
বিধি-বিধান। প্রত্যেক কথা ও কাজে অনুসরণ
করতে লাগলাম, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত। ঘরে
বাইরে সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে
চলতে লাগলাম। মোট কথা ইসলামী আচার-
আচরণে রাঙিয়ে তুললাম আমার জীবনের
প্রতিটি অঙ্গন।
আমি যখন ধর্মের প্রতিটি বিধান একান্ত
নিষ্ঠার সাথে পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে
পড়লাম, তখন আমি মনের মধ্যে এমন এক
প্রশান্তি অনুভব করলাম, যা কেবল অনুভব করা
যায়, অন্যকে বলে বুঝানো যায় না। আর সে
প্রশান্তি ছুঁয়ে গেল রাইহানার কোমল
হৃদয়কেও। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই সে
ইসলামী আচার-আচরণ ও সভ্যতার সাথে
পরিচিত হয়ে ওঠে। দুর্বল হয়ে পড়ে ইসলামের
প্রতি। তাছাড়া ঘরে ইসলামী পরিবেশ, আর
মসজিদ থেকে ইসলাম সম্পর্কে মূল্যবান
আলোচনা শ্রবন এ দুই বস্তু ইসলামের প্রতি
তার দুর্বলতা ও আগ্রহকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে
তুলে। ফলে বেশিদিন আমাকে অপো করতে হয়নি।
ইসলামের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে একদিন সে
কালিমায়ে শাহাদত পড়ে মুসলমান যায়।
আলহামদুলিল্লাহ।
আরো খুশি ও শুকরিয়ার ব্যাপার হলো, ইসলাম
গ্রহণের পর রাইহানা আশ্চর্য রকমভাবে বদলে
যায়। মুসলমান হয়ে ইসলামকে সে গ্রহণ করে
প্রাণখুলে, পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও ভালোবাসার
সাথে। সে তার জীবনের প্রতিটি কাজকে
ইসলামের রঙে রঙিন করে তুলতে প্রয়াসী হয়ে
ওঠে। পর্দা করতে শুরু করে। তাও আবার
অসম্পূর্ণ পর্দা নয়। অর্থাৎ মুখ কিংবা চোখ
বের করা ‘ফ্যাশনী পর্দা’ নয়। রাইহানা
প্রায়ই বলে, মুসলমানের ঘরে জন্ম হওয়া
সত্ত্বেও মুসলিম নারীরা কেন পর্দা করে না?
আর করলেও কেন পুরোপুরি করে না? কেন তারা
ইসলামী কায়দায় মাথা ঢাকে না?। কেন তারা
শরীরটা ঢেকে সৌন্দর্যের উৎস ‘মুখখানা’
খোলা রাখে? তাদের কি কোনো অনুভূতি নেই?
তারা কি বুঝে না যে, মুখ কিংবা চোখ খোলা
রেখে পর্দা করলে পর্দার বিধান সম্পূর্ণরূপে
পালিত হয় না? তবে কি তারা আল্লাহকে ভয়
করে না? তাদের কি চিন্তা নেই যে, উত্তমরূপে
পর্দার বিধান পালন না করলে মৃত্যুর পর কঠিন
শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে তাদেরকে? এমনকি
দুনিয়াতেও সম্মুখীন হতে পারে নানাবিধ
পেরেশানীর? তাছাড়া ইসলামী পোষাক তো
নারীর ব্যক্তিত্ব বাড়িয়ে তোলে। তার
মর্যাদাকে বিকশিত করে। আহা! ওরা না বুঝেই
অন্যদের রঙ চড়াতে চাচ্ছে নিজেদের গায়ে!
ইসলামের প্রতি রাইহানার বিশ্বাস ছিল পরম
শাণিত। ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামী
শিক্ষার প্রতি তার ঝোঁক অতিমাত্রায় বেড়ে
যায়। সে এখন অন্য ধর্মের কোনো বই-পুস্তক
পড়ে না। বরং ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বই-পুস্তক
এনে দেওয়ার জন্য আমাকে সে বারবার অনুরোধ
জানাতে থাকে। আমিও সানন্দে দেশের বিভিন্ন
নামকরা লাইব্রেরীগুলো খোঁজে ইসলামের
বিভিন্ন দিক নিয়ে নামকরা লেখকদের লেখা
বই-পুস্তক কিনে ওর হাতে তুলে দেই। এসব বই
হাতে পেয়ে রাইহানা যেমন আনন্দিত হয়,
তেমনি দারুণ পুলকিত হই আমিও। কারণ, আমি
তো এমনটিই চাচ্ছিলাম। বড় কথা হলো,
ইসলাম সম্পর্কে রাইহানা যা-ই জানতো, যা-ই
শিখতো তার উপরই সে আমল শুরু করে দিত। আর
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতো আপনার প্রতি আমি
চিরকৃতজ্ঞ। আপনার পরশ পেয়েই আমি এ
পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি। আল্লাহ পাক আপনাকে
উত্তম প্রতিদান দান করুন।
সন্তানের ব্যাপারে রাইহানার বক্তব্য ছিল
অসম্ভব স্বচ্ছ। সে তার সন্তানকে ইসলামী
স্কুলেই পড়াবে এ যেন তার কঠিন প্রতিজ্ঞা।
তার কথা হলো ইসলামী শিক্ষা ছাড়া কেউ
পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারে না। সে প্রায়ই
বলত, পার্থিব শিায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা
পরবর্তিকালে পুষিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু
ধর্মীয় শিায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা আর
পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আব্দুল ওয়াহ্হাব সাহেব ও
রাইহানার দাম্পত্য জীবন আজ পরম আনন্দের,
পরম সুখের। ইসলামের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় তারা
লাভ করে অপূর্ব প্রশান্তি। ইসলাম ধর্ম জানা
ও মানার মধ্যে যে এত শান্তি আছে, এত সুখ আছে
তা যদি তারা আরো আগে জানতো, আরো আগে
বুঝতো, তবে শান্তি-সুখের এই সুন্দরতম
জীবনকে আরো আগেই তারা গ্রহণ করত।
হে আল্লাহ! ওরা যে কথাটি বুঝতে পেরেছিল,
দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি বসন্ত পেরিয়ে
যাওয়ার পর সে কথাটি আমাদেরকে বুঝার এবং সে
অনুপাতে জীবন যাপন করার তাওফীক দাও আজই
এখন থেকেই। আমীন।

নারীর যৌন অধিকার

image

ইসলামের সমালোচকরা অনেকে বুঝাতে চান যে
ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য
নাই, বরং এই ব্যাপারে পুরুষকে একতরফা
অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুরুষ যখন ইচ্ছা তখন
যৌন চাহিদা পূরণ করবে আর স্ত্রী সেই
চাহিদা পূরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এই
ধারণার পেছনে কুরআন আয়াত এবং হাদিসের
অসম্পূর্ণ পাঠের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বস্তুত
কুরআনের কিছু আয়াত বা কিছু হাদিস দেখে কোন
বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে পুরোপুরি
উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, বরং তা অনেক
ক্ষেত্রেই পাঠককে বিভ্রান্ত করতে পারে। কোন
বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে সঠিকভাবে
উপলদ্ধি করতে হলে সেই সংক্রান্ত কুরআনের
সবগুলো আয়াত এবং সবগুলো হাদিসকে সামনে
রাখতে হবে। যা হোক, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য
শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন
চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। আসুন
চলে যাই মূল আলোচনায়।
পরিচ্ছেদ ১
কেন এই দাবি?
সূরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
ْﻢُﻜَﺛْﺮَﺣْﺍﻮُﺗْﺄَﻔْﻤُﻜَّﻠٌﺛْﺮَﺤْﻤُﻛُﺅﺂَﺴِﻨْﻤُﺘْﺌِﺸﻯَّﻧَﺃ
Your wives are a tilth for you, so go to
your tilth, when or how you will
তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য
ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে
ব্যবহার কর।
হঠাৎ করে এই আয়াতাংশ কারো সামনে পেশ করা
হলে মনে হতে পারে যে এখানে পুরুষকে যখন
ইচ্ছা তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌনাচার অবাধ
অনুমতি দেওয়া হচ্ছে- এমনকি স্ত্রীর সুবিধা-
অসুবিধার দিকেও তাকানোর কোন প্রয়োজন যেন
নেই। যারা এই ধরণের ধারণার প্রচারণা
চালান তারা সাধারণত এই আয়াতটি উল্লেখ
করার পর তাদের ধারণার সাপোর্টে কিছু
হাদিসও পেশ করেন, যেমন-
কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা
পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল
পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। (মুসলিম,
হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ-৩৩৬৬)
উপরিউক্ত আয়াতাংশ এবং এই ধরণের কিছু
হাদিস পেশ করে অনেকই এটা প্রমাণ করতে চান
ইসলাম কেবল পুরুষের যৌন অধিকারকে
প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নারীকে যৌন মেশিন
হিসেবে যখন তখন ব্যবহারের ফ্রি লাইসেন্স
দিয়ে রেখেছে। সোজা কথায় ইসলামে যৌন
অধিকার যেন একতরফাভাবে পুরুষের! আসলেই
কি তাই?
পরিচ্ছেদ ২
২.১ কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদকারি কুরআনের
২:২২৩ আয়াত সংক্রান্ত বিভ্রান্তির নিরসন
মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার এই
ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে পেছন
দিক থেকে যোনিপথে সঙ্গম করত তবে বিশ্বাস
করা হতো যে এর ফলে ট্যারা চোখবিশিষ্ট
সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসাররা
ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট
প্রভাবিত ছিল। ফলে আনসারগণও এই
কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন। মক্কাবাসিদের
ভেতর এই কুসংস্কার ছিল না। মক্কার
মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর,
জনৈক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর
সাথে পেছন দিক থেকে সঙ্গম করতে গেলেন,
তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী
এই পদ্ধতিকে ভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতিত এই কাজ তিনি
কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত
পৌঁছে গেল। এ প্রসঙ্গেই কুরআনের আয়াত
(২:২২৩) নাযিল হয়, যেখানে বুঝানো হচ্ছে-
সামনে বা পেছনে যেদিক দিয়েই যোনিপথে গমন
করা হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই।
শস্যক্ষেত্রে যেদিক দিয়ে বা যেভাবেই গমন
করা হোক না কেন তাতে শস্য উত্পাদনে যেমন
কোন সমস্যা হয় না, তেমনি স্বামী তার
স্ত্রীর যোনিপথে যেদিক দিয়েই গমন করুক
না কেন তাতে সন্তান উত্পাদনে কোন সমস্যা হয়
না এবং এর সাথে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তান
হবার কোন সম্পর্ক নেই। বিস্তারিত তাফসির
পড়ে দেখতে পারেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে
পায়ুপথে গমন (Anal Sex) করা হারাম।
বিস্তারিত এই লিংক ক্লিক করুন।
কাজেই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ইহুদিদের
প্রচারিত একটি কুসংস্কারের মূলোত্পাটন,
স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ না রেখে
যখন তখন অবাধ যৌনাচারের অনুমোদন নয়।
যারা মনে করেন কুরআনে ইহুদি খৃষ্টানদের
কিতাব থেকে ধার করা হয়েছে বা মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদি
খৃষ্টানদের থেকে শুনে শুনে কুরআন রচনা
করেছেন, এই আয়াত তাদের জন্য বেশ
অস্বস্তিকর বটে! প্রকৃত মুক্তচিন্তার
অধিকারীদের বরং এই আয়াতের প্রশংসা করার
কথা ছিল, কিন্তু প্রশাংসার যোগ্য আয়াতটিকে
সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
২.২ ফেরেশতাদের অভিশাপ সংক্রান্ত
হাদিসটির বিশ্লেষণ
এবার ফেরেশতাদের অভিশাপ করা সংক্রান্ত
ওপরের হাদিসটার কথায় আসি। এই হাদিসটা
বুখারিতেও এসেছে আরেকটু পূর্ণরূপে এভাবে:
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে
(যেমন- সঙ্গম করার জন্য), আর সে প্রত্যাখান
করে ও তাকে রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য
করে, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ
করতে থাকে। [বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি- ৪/
বুক-৫৪/৪৬০]
একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন,
স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী
রাগান্বিত হয়ে কী করছে?
স্ত্রীর ওপর জোর-জবরদস্তি করে নিজের
যৌন অধিকার আদায় করে নিচ্ছে?
নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে?
এই হাদিসে নারী কর্তৃক স্বামীর ডাকে সাড়া
না দেওয়ার কারণে স্ত্রীর সমালোচনা করা
হলেও পুরুষকে কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে নিজ
অধিকার আদায়ে উত্সাহিত করা হচ্ছে না।
আবার স্ত্রী যদি অসুস্থতা বা অন্য কোন সঙ্গত
ওজরের কারণে যৌনাচার হতে বিরত থাকতে
চান, তবে তিনি কিছুতেই এই সমালোচনার
যোগ্য হবেন না, কেননা ইসলামের একটি
সর্বস্বীকৃত নীতি হচ্ছে:
আল্লাহপাক কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত
বোঝা চাপান না।
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার
দেন না [২:২৮৬]
আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন
করি না। [২৩:৬২]
২.৩ ইসলাম কি শুধু নারীকেই সতর্ক করেছে?
এটা ঠিক যে ইসলাম স্ত্রীদেরকে স্বামীর
যৌন চাহিদার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে,
কিন্তু স্বামীকে নিজ চাহিদা আদায়ের ব্যাপারে
উগ্র হবার কোন অনুমতি যেমন দেয়নি তেমনি
স্বামীকেও স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি
যত্মবান হবার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম
স্ত্রীকে বলেছে যদি রান্নরত অবস্থায়ও
স্বামী যৌন প্রয়োজনে ডাকে তবে সে যেন সাড়া
দেয়, অন্য দিকে পুরুষকে বলেছে সে যেন তার
স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে, স্ত্রীর কাছে
ভালো সাব্যস্ত না হলে সে কিছুতেই পূর্ণ
ঈমানদার বা ভালো লোক হতে পারবে না। এই
কথা জানার পরও কোন পুরুষ কি স্ত্রীর
সুবিধার প্রতি কোনরূপ লক্ষ না রেখেই যখন
তখন তাকে যৌন প্রয়োজনে ডাকবে? ইসলাম
পুরুষকে এব্যাপারেও সাবধান করে দিয়েছে যে
নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে স্ত্রীর
যৌন চাহিদার কথাকে সে যেন ভুলে না যায়।
অনেকে হয়ত ভাবছেন, কী সব কথা বলছি,
কোথায় আছে এসব?
চলুন সামনে এগিয়ে দেখি।
পরিচ্ছেদ ৩
৩.১ ইসলামে স্ত্রীর সাথে সদাচরণের গুরুত্ব
নিচের হাদিসগুলো একটু ভালো করে লক্ষ করুন:
হাদিস-১
আবুহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ
মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার-আচরণ উত্তম।
আর তোমাদের মাঝে তারাই উত্তম যারা আচার-
আচরণে তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম।
[তিরমিযি, হাদিস নং ১০৭৯]
হাদিস-২
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন, মুমিন মু’মিনা(স্ত্রী)র
প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না। যদি তার একটি
অভ্যাস অপছন্দনীয় হয় তবে আরেকটি অভ্যাস
তো পছন্দনীয় হবে। [মুসলিম হাদিস নং-
১৪৬৯, ২৬৭২]
হাদিস-৩
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ
মুমিন সেই ব্যক্তি যার আচার-আচরণ উত্তম
এবং নিজ পরিবারের জন্য অনুগ্রহশীল।
[তিরমিযি, হাদিস নং- ২৫৫৫]
৩.১.১ তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলামের
শিক্ষা হচ্ছে:
৩.১.১.১ মু’মিন পুরুষ তার মু’মিনা স্ত্রীর
প্রতি বিদ্বেষ রাখতে পারবে না।
৩.১.১.২ সদাচারী এবং স্ত্রী-পরিবারের
প্রতি কোমল, নম্র, অনুগ্রহশীল হওয়া
ঈমানের পূর্ণতার শর্ত।
৩.১.১.৩ কোন পুরুষ যদি উত্তম হতে চায় তাকে
অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।
একজন মুসলিমের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে
বিষয় সেটা হচ্ছে তার ঈমান- যে ঈমানের জন্য
সে নিজের প্রাণ বিসর্জন করতেও কুন্ঠিত হয়
না- সেই ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য স্ত্রীর
সাথে সদাচারী, নমনীয় এবং অনুগ্রহশীল
হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কোন মুসলিম উত্তম
বলে বিবেচিত হতেই পারবে না যদি না স্ত্রীর
সাথে তার আচার-আচরণ উত্তম হয়।
৩.১.২ এখন প্রশ্ন হলো-
৩.১.২.১ যে স্বামী তার স্ত্রীর যৌন
চাহিদার প্রতি কোন লক্ষ্য রাখে না, সে কি
তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?
৩.১.২.২ অথবা যে স্বামী তার স্ত্রীর সুবিধা
অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য না রেখে যখন তখন
তার স্ত্রীর সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হয় সে কি
তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?
৩.১.৩ উত্তর হচ্ছে, পারে না। একজন ভালো
মুসলিম যেমন স্ত্রীর জৈবিক চাহিদার
প্রতি যত্নবান হবে, তেমনি নিজের জৈবিক
চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এমন অবস্থার
সৃষ্টিও করবে না যা তার স্ত্রীর জন্য কষ্টকর
হয়। স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ করে কেউ তার
স্ত্রীর কাছে ভালো হতে পারে না আর পরিপূর্ণ
মু’মিনও হতে পারে না।
৩.২ ইসলামে স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি
গুরত্ব
ইসলাম নারীর যৌন অধিকারকে শুধু স্বীকৃতিই
দেয় না বরং এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন নিচের
হাদিসটি তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস
করে তখন সে যেন পরিপূর্ণভাবে (সহবাস) করে।
আর তার যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায়
(শুক্রস্খলন হয়) অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ
থাকে, তখন সে যেন তাড়াহুড়া না করে।
[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-১০৪৬৮]
কী বলা হচ্ছে এখানে? সহবাসকালে পুরুষ তার
নিজের যৌন চাহিদা পুরো হওয়া মাত্রই যেন
উঠে না যায়, স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ হওয়া
পর্যন্ত যেন বিলম্ব করে। এরকম একটা হাদিস
চোখ দিয়ে দেখার পরও কারো জন্য এমন দাবি
করা কি ঠিক হবে যে ইসলামে নারীদের যৌন
চাহিদার কোন স্বীকৃতি নেই!
এসব তো গেল উপদেশ। কিন্তু বাস্তবে কেউ যদি
এসব উপদেশ অনুসরণ না করে তাহলে এই ধরণের
পুরুষদের সতর্ক করা তার অভিভাবক এবং
বন্ধুদের যেমন দায়িত্ব তেমনিস্ত্রীরাও
তাদের স্বামিদের বিরূদ্ধে ইসলামি রাষ্ট্রের
কাছে নালিশ করার অধিকার রাখে। এধরণের
কিছু ঘটনা পরিচ্ছেদ চারে আসছে।
এছাড়া সঙ্গমকালে স্ত্রীকে যৌনভাবে
উত্তেজিত না করে সঙ্গম করাকে ইসলামে
নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তাতে স্বামীর
চাহিদা পূরণ হলেও স্ত্রীর চাহিদা পূরণ হয়
না এবং স্ত্রীর জন্য তা কষ্টকর হয়।
পরিচ্ছেদ পাঁচে এই ব্যাপারে আলোকপাত করা
হবে।
পরিচ্ছেদ ৪
এই পরিচ্ছেদে আমরা কিছু দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা
নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে স্ত্রীর যৌন
অধিকারের প্রতি অবহেলা করার কারণে
স্বামীকে সতর্ক করা হয়েছে, এমনকি স্বামীর
বিরূদ্ধে ইসলামি শাসকের কাছে নালিশ
পর্যন্ত করা হয়েছে।
দৃষ্টান্ত-১
আবু মুসা আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত:
হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (রা.) এর স্ত্রী
মলিন বদন এবং পুরাতন কাপড়ে নবী করিম
(সা.) এর বিবিদের কাছে এলেন। তাঁরা তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার এই অবস্থা কেন?
কুরাইশদের মাঝে তোমার স্বামী থেকে ধনী কেউ
নেই। তিনি বললেন, এতে আমাদের কি হবে?
কেননা আমার স্বামীর রাত নামাযে কাটে ও দিন
রোযায় কাটে। তারপর নবী করিম (সা.)প্রবেশ
করলেন। তখন নবীজীর স্ত্রীগণ বিষয়টি
তাকে বললেন। অত:পর হযরত ওসমান ইবনে
মাযউন (রা.) এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি
তাকে বললেন,-“আমার মধ্যে কি তোমার জন্য
কোন আদর্শ নাই?”হযরত ওসমান (রা.) বললেন,
কী বলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ? আমার পিতামাতা
আপনার জন্য উৎসর্গিত! তখন তিনি
বললেন-“তবে কি তোমার রাত নামাযে আর দিন
রোযায় কাটে না? অথচ তোমার উপর তোমার
পরিবারের হক রয়েছে, আর তোমার উপর তোমার
শরীরেও হক রয়েছে, তুমি নামাযও পড়বে, আবার
ঘুমাবেও, আর রোযাও রাখবে আবার ভাঙ্গবেও”।
তিনি বললেন তারপর আরেকদিন তার স্ত্রী
পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিত অবস্থায় এলেন যেন
নববধু। [মাজমায়ে জাওয়ায়েদ, হাদিস নং ৭৬১২;
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৩১৬]
দৃষ্টান্ত-২:
আবু জুহাইফা (রা.) বলেন:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সালমান (রা.) এবং আবু দারদা (রা.) এর মধ্যে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছিলেন। সালমান
(রা.) আবু দারদা (রা.) এর সাথে সাক্ষাত করতে
গেলেন আর উম্মে দারদা (রা.) [আবু দারদা (রা.)
এর স্ত্রী]-কে ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায়
দেখতে পেলেন এবং তাকে তার ঐ অবস্থার কারণ
জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, “আপনার ভাই
আবু দারদার দুনিয়ার চাহিদা নাই”। এর মধ্যে
আবু দারদা এলেন এবং তার (সালমানের) জন্য
খাবার তৈরি করলেন আর বললেন, “খাবার
গ্রহণ করো কারণ আমি রোযা আছি”। সালমান
(রা.) বললেন, “তুমি না খেলে আমি খাচ্ছি না”।
কাজেই আবু দারদা(রা.) খেলেন। যখন রাত হলো,
আবু দারদা (রা.) উঠে পড়লেন (রাতের নামায
পড়ার জন্য)। সালমান (রা.) বললেন, “ঘুমাও”;
তিনি ঘুমালেন। পুনরায় আবু দারদা উঠলেন
(নামাযের জন্য), আর সালমান (রা.) বললেন,
“ঘুমাও”। রাতের শেষ দিকে সালমান (রা.) তাকে
বললেন, “এখন ওঠো (নামাযের জন্য)”। কাজেই
তারা উভয়ে নামায পড়লেন এবং সালমান (রা.)
আবু দারদা (রা.)কে বললেন, “তোমার ওপর
তোমার রবের হক রয়েছে; তোমার ওপরে তোমার
আত্মার হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার
পরিবারের হক রয়েছে; কাজেই প্রত্যেককে তার
প্রাপ্য হক প্রদান করা উচিত”। পরে আবু দারদা
(রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
-এর সাথে সাক্ষাত করলেন এবং একথা তার কাছে
উল্লেখ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন, “সালমান সত্য
বলেছে।” [বুখারি, হাদিস নং -১৮৬৭]
দৃষ্টান্ত-৩:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমার
পিতা একজন কুরাইশি মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে
করিয়ে দিলেন। উক্ত মেয়ে আমার ঘরে আসল।
আমি নামায রোযা ইত্যাদি এবাদতের প্রতি
আমার বিশেষ আসক্তির দরুণ তার প্রতি কোন
প্রকার মনোযোগ দিলাম না। একদিন আমার
পিতা- আমর ইবনে আস (রা.) তার পুত্রবধুর কাছে
এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামীকে কেমন
পেয়েছ? সে জবাব দিল, খুবই ভালো লোক অথবা
বললো খুবই ভালো স্বামী। সে আমার মনের কোন
খোঁজ নেয় না এবং আমার বিছানার কাছেও আসে
না। এটা শুনে তিনি আমাকে খুবই গালাগাল
দিলেন ও কঠোর কথা বললেন এবং বললেন, আমি
তোমাকে একজন কুরাইশি উচ্চ বংশীয়া মেয়ে
বিয়ে করিয়েছি আর তুমি তাকে এরূপ ঝুলিয়ে
রাখলে? তিনি নবী করিম (সা.) এর কাছে
গিয়ে আমার বিরূদ্ধে নালিশ করলেন। তিনি
আমাকে ডাকালেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি দিনভর রোযা রাখ?
আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি কি রাতভর নামায পড়? আমি বললাম
হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিন্তু আমি রোযা রাখি
ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও ঘুমাই, স্ত্রীদের
সাথে মেলামেশা করি। যে ব্যক্তি আমার
সুন্নতের প্রতি আগ্রহ রাখে না সে আমার
দলভুক্ত না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-
৬৪৪১]
দৃষ্টান্ত-৪:
কাতাদাহ (রহ.) বলেন, একজন মহিলা উমর (রা.)
-এর কাছে এসে বললেন, আমার স্বামী রাতভর
নামায পড়েন এবং দিনভর রোযা রাখেন। তিনি
বললেন, তবে কি তুমি বলতে চাও যে, আমি তাকে
রাতে নামায পড়তে ও দিনে রোযা রাখতে নিষেধ
করি? মহিলাটি চলে গেলেন। তারপর আবার
এসে পূর্বের ন্যায় বললেন। তিনিও পূর্বের
মতো উত্তর দিলেন। কা’ব বিন সূর (রহ.)
বললেন, আমিরুল মু’মিনিন, তার হক রয়েছে।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কীরূপ হক? কা’ব
(রহ.) বললেন, কা’ব (রহ.) বললেন, আল্লাহ
তাআলা তার জন্য চার বিবাহ হালাল করেছেন।
সুতরাং তাকে চারজনের একজন হিসেব করে
প্রত্যেক চার রাতের এক রাত তার জন্য
নির্ধারিত করে দিন। আর প্রত্যেক চার
দিনের একদিন তাকে দান করুন। উমর(রা.) তার
স্বামীকে ডেকে বলে দিলেন যে, প্রতি চার
রাতের একরাত তার কাছে যাপন করবে এবং
প্রতি চারদিনের একদিন রোযা পরিত্যাগ
করবে। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং:
১২৫৮৮]
পরিচ্ছেদ ৫
ইসলামে শৃঙ্গারের গুরুত্ব
ইসলাম সঙ্গমের পূর্বে স্ত্রীর সাথে
অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি বা শৃঙ্গার করার প্রতি
যথেষ্ঠ গুরুত্ব আরোপ করে। স্ত্রীর যৌনাঙ্গকে
সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত না করেই তার ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়াকে- যা স্ত্রীর জন্য অত্যন্ত
কষ্টকর- ইসলামে ‘পশুর ন্যায় সঙ্গম করা’ বলে
অভিহিত করা হয়েছে এবং সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার
এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করাকে সুন্নাতে
মু্ওয়াক্কাদাহ বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছদে জনৈক
মহিলা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে দারুল-ইফতা,
Leicester, UK থেকে প্রদানকৃত একটি ফতোয়ার
অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করবো যাতে ইসলামে
শৃঙ্গারের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে:
ইমাম দাইলামি(রহ.) আনাস বিন মালিক(রা.)
এর বরাতে একটি হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন যে
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “কেউ যেন পশুর
মতো তার স্ত্রী হতে নিজের যৌন চাহিদাকে
পূরণ না করে, বরং তাদের মধ্যে চুম্বন এবং
কথাবার্তার দ্বারা শৃঙ্গার হওয়া
উচিত।” (দাইলামি’র মুসনাদ আল-ফিরদাউস,
২/৫৫)
ইমাম ইবনুল কাউয়্যিম(রহ.) তাঁর বিখ্যাত
‘তিব্বে নববী’তে উল্লেখ করেছেন যে
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
শৃঙ্গার করার আগে সঙ্গম করতে নিষেধ
করেছেন।(দেখুন: ‘তিব্বে নববী’, ১৮৩, জাবির
বিন আবদুল্লাহ হতে)
আল্লামা আল-মুনাবি(রহ.) বলেন:
“সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন
করা সুন্নাতে মু্ওয়াক্কাদাহ এবং এর অন্যথা করা
মাকরূহ।” (ফাইজ আল-ক্বাদির, ৫/১১৫,
দ্রষ্টব্য: হাদিস নং ৬৫৩৬) [সূত্র]
শেষের কথা:
শুরুতেই বলেছিলাম, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য
শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন
চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। কাজেই
ইচ্ছা করেই কুরআন এবং হাদিসের উল্লেখযোগ্য
অনেক কিছুই এখানে যোগ করি নাই। কিন্তু
যতটুকু উল্লেখ করেছি তা জানবার পরও
‘ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য
নেই’, ‘ইসলামে পুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ
যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে’,
‘ইসলামে যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে
দেওয়া হয়েছে’ এই জাতীয় অভিযোগ
সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ আশা করি করবেন না।
বইঃ বাসর রাতের আদর্শ

স্বামী স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক

প্রথম পর্ব
রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে
কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়?
লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়।
পর্দার
ভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ
নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের সময় বা
প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের
সময়
লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ওয়াজেব। নাবি (সঃ)
বলেছেন,
“তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া
অন্যের
নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।” সাহাবী
বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসুল! লোকেরা আপসে
এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য
চেষ্টা
করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না
পায়।” সাহাবী বললেন, ‘ হে আল্লহর রাসুল! কেউ
যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, “মানুষ
অপেক্ষা
আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা
হবে।” ৬১৪ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে
মাজাহ,
মিশকাত ৩১১৭ নং)
এখানে “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী
ছাড়া
অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর”—
এর
মানে এই নয় যে, স্ত্রী ও ক্রীতদাসীর কাছে
সর্বদা নগ্ন থাকা যাবে। উদ্দেশ্য হল, তাদের
মিলনের সময় অথবা অন্য প্রয়োজনে
লজ্জাস্থান
খোলা যাবে, অপ্রয়োজনে নয়।
তাছাড়া উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমালে আকস্মিক
বিপদের
সময় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং
সতর্কতাই
বাঞ্ছনীয়।
স্বামী স্ত্রী একে অপরের গোপন অঙ্গ
দেখতে পারবে কি?
শরীয়তে তাতে কোন বাধা নেই। স্বামী স্ত্রী
উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নবস্থায় দেখতে
পারে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৭৬৬) এতে
স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। ‘স্বামী
স্ত্রীর
একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা
হযরত আয়েশা (রঃ) কখনও স্বামীর গুপ্তাঙ্গ
দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো
না,
বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হবে।
সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা
বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা
করা
হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়। (দেখুন,
তুহফাতুল আরুশ ১১৮ – ১১৯ পৃঃ)
শুনেছি, সহবাসের সময় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতে
নেই,
রুম অন্ধকার রাখতে হয়, একে অপরের
লজ্জাস্থান
দেখতে নেই ইত্যাদি। তা কি ঠিক?
এ হল লজ্জাশীলতার পরিচয়। পরন্ত শরীয়তে
তা
হারাম নয়। অর্থাৎ রুম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে
এবং
সেখানে স্বামী স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না
থাকলে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। স্বামী
স্ত্রী একে অন্যের লেবাস। উভয়ে উভয়ের
সব কিছু দেখতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“(সফল মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন
অঙ্গকে সংযত
রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত
দাসী
ব্যাতিত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং
কেউ
এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে
সীমালংঘনকারী। (মু’মিনূনঃ ৫-৬, মাআরিজঃ
২৯-৩১)”
নবী (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও
ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের
হেফাযত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্র
রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’
তিনি
বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা
মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে।’
তিনি
বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লহ এর বেশী
হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।” ৬১৭ (আবূ
দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত
৩১১৭ নং)
সুতরাং রুম অন্ধকার না করলে এবং উভয়ে
সম্পূর্ণ
উলঙ্গ হলে কোন দোষ নেই। (ইবনে
উষাইমীন)
কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিসিদ্ধ?
শুনেছি
অমবশ্যা ও পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করতে
হয় না। এ
কথা কি ঠিক?
দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়,
তখনই
সহবাস বৈধ। তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত
কয়েকটি
নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ
নয়।
১। স্ত্রীর মাসিক অথবা প্রসবোত্তর খুন
থাকা
অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকে
রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল,
তা অশুচি।
সুতরাং তোমরা রাজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ
বর্জন কর
এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের
জন্য)
তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন
তারা
পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে
গমন
কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ
দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে
এবং
যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ
করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তার
ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে
অথবা কোন স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে,
অথবা কোন গনকের নিকট উপস্থিত হয়ে (সে যা
বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ
(সঃ) এর
অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী
করে।” (অর্থাৎ কুরআনকে সে অবিশ্বাস ও
অমান্য
করে। কারণ, কুরআনে এ সব কুকর্মকে নিসিদ্ধ
ঘোষণা করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬,
তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
২। রমযানের দিনের বেলায় রোযা অবস্থায়।
মহান
আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের
জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা
তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের
পোশাক।” (বাকারাহঃ ১৮৭)
আর বিদিত যে, রমযানের রোযা অবস্থায় সঙ্গম
করলে যথারীতি তার কাফফারা আছে। একটানা
দুইমাস
রোযা রাখতে হবে, নচেৎ অক্ষম হলে ষাট জন
মিসকীন খাওয়াতে হবে।
৩। হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়। মহান
আল্লাহ
বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ

যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস
গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন
হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার
যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না
করে।” (বাকারাহঃ
১৯৭)
এ ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে
সহবাস বৈধ। (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-
মুনাজ্জিদ)
হাদিসে এসেছে, “যদি তোমরা কেউ স্ত্রী
সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন দুআ পড়ে, তাহলে
তাঁদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন
ক্ষতি করতে পারে না।” (বুখারী-মুসলিম)
বাহ্যতঃ এ
নির্দেশ স্বামীকে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল,
স্ত্রীর জন্যও কি দুআ পড়া বিধেয়?
আসলে সহবাসের দুআ স্বামীর জন্যই বিধেয়।
স্ত্রী পড়লেও দোষ নেই। যেহেতু এক কাজ
উভয়ের, সে কাজের নির্দেশ পুরুষকে দেওয়া
হলেও মহিলাও শামিল হয়। (লাজনাহ দায়েমাহ)
সহবাসের আগে দুআ পড়লে শয়তান ক্ষতি করতে
পারে না। ক্ষতি করতে না পারার অর্থ কি?
এর অর্থ এই যে, (ক) ‘বিসমিল্লাহ’র বরকতে
সেই
সন্তান নেক হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ শয়তান
কে
বলেছেন, “আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর
তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।” (হিজরঃ
৪২)
(খ) সন্তানের স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি হয় না।
(গ) সন্তান শিরক ও কুফুরমুক্ত হয়।
(ঘ) কাবীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম
হয়।
(ঙ) ঐ সহবাসে শয়তান শরীক হতে পারেনা।
আমি বিবাহিত। আমার সন্তান হয় না।
টিউবের মাধ্যমে
সন্তান নেব ইচ্ছা করেছি। আমি চাই আমার
সন্তানকে
যেন শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত না করে। কিন্তু তার
জন্য
পাঠিতব্য দুআটি কখন পড়ব?
যখন টিউবে রাখার জন্য বীর্য দেবেন,
বীর্যপাতের আগে প্রস্তুতির সময় দুআটি পড়ে
নেবেন।
স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও কি সহবাসের
সময়
দু’আ পড়তে হবে?
সহবাসের সময় দু’আ পড়ায় দুটি লাভ আছে।
শয়তানের
শরীক হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা এবং
তার ক্ষতি থেকে ঐ মিলনে সৃষ্ট সন্তানকে
রক্ষা
করা। সুতরাং যখন আমরা জানি যে, সন্তান
আগের
মিলনে এসে গেছে, অথবা সন্তান হবে না, অথবা
সন্তান চাই না, তখনও যদি আমরা দু’আ পড়ি,
তাহলে
তাতে আমরা নিজেদেরকে আমাদের যৌনআনন্দে
শয়তানের শরীক হওয়া থেকে রক্ষা করতে
পারব। বলা বাহুল্য, সহবাসের দু’আ সর্বাবস্থায়
পঠনীয়। যেহেতু হাদিসের নির্দেশ ব্যাপক।
(ইবনে বায)
সহবাসের সময় হাঁচি হলে নির্দিষ্ট যিকির
পড়া যাবে কি?
এই সময় মুখে যিকির পড়া যাবে না। মনে মনে
পড়লে দোষ নেই। পেশাব পায়খানা করা অবস্থায়
নবী (সঃ) সালামের জবাব দেননি। (মুসলিম
৩৭০ নং)
শরীয়তে সমমৈথুন প্রসঙ্গে বিধান কি?
সমমৈথুনঃ পুরুষ সঙ্গম বা পুরুষ-পুরুষে পায়ুপথে
কুকর্ম
করাকে বলে। আর এরই অনুরূপ স্ত্রীর মলদ্বারে
সঙ্গম করাও। এটা সেই কুকর্ম, যা লুত (আঃ)
এর
সম্প্রদায় করেছিল। যেমন মহান আলাহ বলেন,“
মানুষের মধ্যে তোমরা তো কেবল পুরুষদের
সাথেই উপগত হও। ” (সূরা শূআরা ১৬৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, “তোমরা তো কাম তৃপ্তির
জন্য
নারী ত্যাগ করে পুরুষদের নিকট গমন
কর!” (সূরা
আ’রাফ ৮১ আয়াত)
আল্লাহ তাঁদেরকে এই কুকাজের শাস্তি স্বরূপ
তাঁদের ঘর বাড়ী উল্টে দিয়েছিলেন এবং আকাশ
থেকে তাঁদের উপর বর্ষণ করেছিলেন পাথর।
তিনি
বলেন, “(অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো) তখন
আমি (তাঁদের নগরগুলোকে) ঊর্ধ্বভাগকে
নিম্নভাগে পরিণত করেছিলাম এবং আমি
তাঁদের উপর
ক্রমগত কঙ্কর বর্ষণ করেছিলাম।” (সূরা
হিজর ৭৪
আয়াত)
সুতরাং উক্ত সম্প্রদায়ের মতো কুকর্মে যে
লিপ্ত
হবে সেও উপর্যুক্ত শাস্তির উপযুক্ত। তাই
এমন
দুরাচার প্রসঙ্গে কিছু সাহাবা (রাঃ) এর
ফতোয়া হল,
তাকে জ্বালিয়ে মারা হবে। কেউ কেউ বলেন,
উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে
তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে। ৬২৬
(ইবনে জিবরীন)
এ বিষয়ে একাধিক হাদীসেও নবী (সঃ) হতে
বর্ণিত হয়েছে; এক হাদীসে তিনি বলেছেন,
“যাকে লুত সম্প্রদায়ের মত কুকর্মে লিপ্ত পাবে,
তাকে এবং যার সাথে এ কাজ করা হচ্ছে, তাঁকেও
তোমরা হত্যা করে ফেল।” (তিরমিজী, ইবনে
মাজাহ, মিশকাত ৩৫৭৫ নং)
ধন্যবাদান্তে – সংকলনে: সাজ্জাদ সালাদীন।

স্বামী স্ত্রীর মধুর দ্বন্দ্ব

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি
আমাদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত
করেছেন এবং আমাদেরকে তার অনুসারী
বানিয়েছেন; আল্লাহ যদি আমাদেরকে
হেদায়াত না করতেন, তাহলে আমরা
হেদায়াত পেতাম না; আমি আল্লাহ
সুবহানাহু তা‘আলার প্রশংসা করছি এবং
তাঁর নি‘য়ামতের ব্যাপারে তাঁর কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করছি; আর তাঁর নিকট তাঁর অনুগ্রহ ও
করুনা বৃদ্ধির আবেদন করছি; আর আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো
ইলাহ নেই, যিনি একক, যাঁর কোনো শরীক
নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
বান্দা ও রাসূল, যাঁকে তিনি হেদায়েত ও
সত্য দীনসহ সুসংবাদ বাহক ও ভীতি
প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন;
তিনি সত্যের দিকে আহ্বান করেছেন এবং
কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন; আল্লাহ
তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন,
সাহাবীগণ ও কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যে
ব্যক্তি তাঁর হেদায়েতের অনুসরণ করবে
তার উপর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।
অতঃপর
হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর, তোমাদের রবের নির্দেশকে
সমীহ কর, তোমাদের দীন ও আমানতসমূহকে
হেফাযত (সংরক্ষণ) কর এবং তোমরা
তোমাদের দায়িত্বসমূহ পালন কর; আর
তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে ও
তোমাদের পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে
আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং
তোমাদের নিজেদের মধ্যকার বিরোধ
মীমাংসা করে নাও।
অনেক মানুষ সৌভাগ্যের অনুসন্ধান করে;
আর অন্বেষণ করে শান্তি, স্থিতি এবং দেহ
ও মনের প্রশান্তি; যেমনিভাবে সে
দুর্ভাগ্য ও অস্থিরতার কারণসমূহ, দুশ্চিন্তার
উদ্দীপকসমূহ এবং বিশেষ করে
পারিবারিক কলহ থেকে দূরে থাকার
ব্যাপারে চেষ্টাসাধনা করে।
তবে তাদের জানা উচিত যে, এক আল্লাহর
প্রতি বিশ্বাস, তাঁর উপর ভরসা এবং সকল
বিষয় তাঁর প্রতি সোপর্দ করা ব্যতীত এসব
বাস্তবায়ন করা যাবে না, আর সাথে সাথে
তিনি যেসব নিয়মনীতি ও উপায় প্রণয়ন
করেছেন, সেগুলোকে গ্রহণ করতে হবে।
· পরিবার গঠন ও দাম্পত্য জীবনে
সৌহার্দ্যের গুরুত্ব:
এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উপর যে
বিষয়টি সবচেয়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে
তা হলো পরিবার গঠন ও তাকে সত্যের উপর
প্রতিষ্ঠিত রাখা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা তাঁর প্রজ্ঞায় পরিবারকে পুরুষ ও
নারী নির্বিশেষ সকল মানুষের জন্য তৈরি
করেছেন প্রত্যাবর্তনস্থল হিসেবে; যাতে
সে অবস্থান করবে এবং সেখানে প্রশান্তি
অনুভব করবে; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি এ অনুগ্রহ
প্রকাশ করে বলেন:
﴿ ۡﻦِﻣَﻭ ٓۦِﻪِﺘَٰﻳﺍَﺀ ۡﻥَﺃ َﻖَﻠَﺧ ﻢُﻜَﻟ ۡﻢُﻜِﺴُﻔﻧَﺃ ۡﻦِّﻣ
ﺎٗﺟَٰﻭۡﺯَﺃ ْﺍٓﻮُﻨُﻜۡﺴَﺘِّﻟ ﺎَﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻞَﻌَﺟَﻭ ﻢُﻜَﻨۡﻴَﺑ
ٗﺓَّﺩَﻮَّﻣ ًۚﺔَﻤۡﺣَﺭَﻭ َّﻥِﺇ ﻲِﻓ َﻚِﻟَٰﺫ ٖﺖَٰﻳٓﺄَﻟ ٖﻡۡﻮَﻘِّﻟ
َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ ٢١ ﴾ ‏[ :ﻡﻭﺮﻟﺍ ٢١ ‏]
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে,
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য
থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া;
যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও
এবং সৃজন করেছেন তোমাদের মধ্যে
ভালবাসা ও সহমর্মিতা। নিশ্চয় এতে বহু
নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা
চিন্তা করে।” – (সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১ )।
হ্যাঁ, আল্লাহ বলেছেন: ‘যাতে সে তার
কাছে শান্তি পায়’; তিনি বলেন নি:
‘যাতে সে তার সাথে বাস করে’, সুতরাং
আল্লাহর এ বাণীর দাবী হচ্ছে যে,
পরিবারের আচার-আচরণ হবে স্থিতিশীল
আর অনুভূতি হবে প্রশান্তির কেন্দ্রবিন্দু।
সেখানে সর্বোচ্চ অর্থে শান্তি ও
নিশ্চিন্ততা প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং
স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকেই তার সঙ্গীর
মধ্যে অস্থিরতার সময় প্রশান্তি এবং
সঙ্কটময় মুহূর্তে আনন্দ অনুভব করবে।
দাম্পত্য জীবনের সম্পর্কের মূলভিত্তি হল:
ভালোবাসা, ঘনিষ্টতা ও সখ্যতার উপর
প্রতিষ্ঠিত সাহচর্য ও মিলন। এ সম্পর্কের
শিকড় অনেক গভীরে, বিস্তৃতি অনেক দূর
ব্যপ্ত, স্বয়ং ব্যক্তির সাথে তার আত্মার
যে সম্পর্ক, এটা তার সাথে খুব
চমৎকারভাবে তুলনাযোগ্য, যা আমাদের
প্রতিপালকের কিতাব বর্ণনা করেছে,
তিনি বলেছেন:
﴿ َّﻦُﻫ ٞﺱﺎَﺒِﻟ ۡﻢُﻜَّﻟ ٞﺱﺎَﺒِﻟ ۡﻢُﺘﻧَﺃَﻭ َّۗﻦُﻬَّﻟ
﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٨٧‏]
“ তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং
তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” – ( সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭ )।
তাছাড়া এই সম্পর্ক ছেলে ও মেয়েদের
শিক্ষা এবং লালনপালন দায়িত্ব পালনের
মধ্য দিয়ে যা গঠন করে, তা স্নেহপূর্ণ
মাতৃত্ব ও শ্রমনির্ভর পিতৃত্বের ছায়াতল
ছাড়া হতে পারে না।
এ সম্মানিত পারিবারিক পরিবেশের
চেয়ে আর কোন পরিবেশ অধিক পবিত্র
হতে পারে?
* * *
মুসলিম পরিবার প্রতিষ্ঠার খুঁটিসমূহ
সম্মানিত পাঠক:
এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার উপর মুসলিম
পরিবারের অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে;
যার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় স্বামী-
স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক এবং যা মেনে
চললে তা থেকে দূরে থাকে বিচ্ছিন্নতার
ঝড়ো হাওয়া ও ভঙ্গ ও কর্তিত হওয়ার
তুফান। সে সব খুঁটিসমূহের অন্যতম হচ্ছে:
১. আল্লাহর উপর পূর্ণ ঈমান ও তাঁর তাকওয়া
অবলম্বন:
যে সব খুঁটির উপর মুসলিম পরিবার দাঁড়িয়ে
থাকে, তন্মধ্যে সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: ঈমানের রশিকে
শক্তভাবে আকড়ে ধরা … আল্লাহ ও
পরকালের প্রতি ঈমান; অন্তর যা লুকিয়ে
রাখে, সে বস্তু সম্পর্কে যিনি জানেন
তাকে ভয় করা; তাকওয়া ও
আত্মপর্যবেক্ষণকে অপরিহার্য করে নেয়া;
আর যুলুম থেকে এবং সত্য অনুসন্ধানের
ক্ষেত্রে অন্যায়ের আশ্রয় নেওয়া থেকে
দূরে থাকা। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ … ۡﻢُﻜِﻟَٰﺫ ُﻆَﻋﻮُﻳ ۦِﻪِﺑ ﻦَﻣ َﻥﺎَﻛ ُﻦِﻣۡﺆُﻳ
ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ ِﻡۡﻮَﻴۡﻟﭐَﻭ ِۚﺮِﺧٓﺄۡﻟﭐ ﻦَﻣَﻭ ِﻖَّﺘَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ
ﻞَﻌۡﺠَﻳ ۥُﻪَّﻟ ﺎٗﺟَﺮۡﺨَﻣ ٢ ُﻪۡﻗُﺯۡﺮَﻳَﻭ ۡﻦِﻣ ُﺚۡﻴَﺣ ﺎَﻟ
ُۚﺐِﺴَﺘۡﺤَﻳ ﻦَﻣَﻭ ۡﻞَّﻛَﻮَﺘَﻳ ﻰَﻠَﻋ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻮُﻬَﻓ
ۚٓۥُﻪُﺒۡﺴَﺣ … ٣ ﴾ ‏[ :ﻕﻼﻄﻟﺍ ،٢ ٣ ‏]
“ … এর দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে,
তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর যে কেউ
আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ
তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, আর
তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান
করবেন রিযিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর
উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই
যথেষ্ট। …” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২ –
৩)।
আর এই ঈমানকে শক্তিশালী করবে:
আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের ব্যাপারে
চেষ্টা করা, তার ব্যাপারে যত্নবান থাকা
এবং সে ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
পরস্পরকে উপদেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা;
তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের বাণীটি নিয়ে ভেবে দেখ,
তিনি বলেছেন:
‏« ﻢﺣﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻼﺟﺭ ﻡﺎﻗ ﻦﻣ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﻰﻠﺼﻓ
ﻆﻘﻳﺃﻭ ﻪﺗﺃﺮﻣﺍ , ﺖﻠﺼﻓ ﻥﺈﻓ ﺖﺑﺃ ﺢﻀﻧ ﻲﻓ
ﺀﺎﻤﻟﺍ ﺎﻬﻬﺟﻭ ‏( ﻲﻨﻌﻳ : ﺎﻬﻴﻠﻋ ﺵﺭ ﺀﺎﻤﻟﺍ
ﺎﺷﺭ ﺎﻘﻴﻓﺭ ‏) , ﻢﺣﺭﻭ ﻪﻠﻟﺍ ﺓﺃﺮﻣﺍ ﺖﻣﺎﻗ
ﻦﻣ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﺖﻠﺼﻓ ﺖﻈﻘﻳﺃﻭ ﺎﻬﺟﻭﺯ ﻰﻠﺼﻓ ,
ﻥﺈﻓ ﻰﺑﺃ ﺖﺤﻀﻧ ﻲﻓ ﻪﻬﺟﻭ ﺀﺎﻤﻟﺍ ‏» .
‏(ﻩﺍﻭﺭ ﺪﻤﺣﺃ ﻭ ﻮﺑﺃ ﺩﻭﺍﺩ ﻭ ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍ ﻭ
ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺎﻣ ‏) .
“আল্লাহ রহম করুন এমন পুরুষ ব্যক্তির প্রতি,
যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে, অতঃপর
সালাত আদায় করে এবং সে তার স্ত্রীকে
জাগিয়ে দেয়, তারপর সেও সালাত আদায়
করে; অতঃপর সে (স্ত্রী) যদি ঘুম থেকে
উঠতে আপত্তি করে, তাহলে তার
মুখমণ্ডলের উপর হালকাভাবে পানি
ছিটিয়ে দেয়। আর আল্লাহ রহম করুন এমন
নারীর প্রতি, যে রাতে ঘুম থেকে উঠে,
অতঃপর সালাত আদায় করে এবং সে তার
স্বামীকে জাগিয়ে দেয়, তারপর সেও
সালাত আদায় করে; অতঃপর সে (স্বামী)
যদি ঘুম থেকে উঠতে আপত্তি করে, তাহলে
তার মুখমণ্ডলের উপর হালকাভাবে পানি
ছিটিয়ে দেয়।”[1]
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটি
পার্থিব ও বস্তুগত কোনো সম্পর্ক নয়; নয়
চতুষ্পদ জন্তুর প্রবৃত্তির মত কোনো সম্পর্ক;
বরং তা হল আত্মীক ও সম্মানজনক একটি
সম্পর্ক; আর যখন এই সম্পর্কটি নির্ভেজাল
ও যথাযথ হবে, তখন তা মৃত্যুর পর পরকালীন
জীবন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে; আল-
কুরআনের ভাষায়:
ُﺖَّٰﻨَﺟ﴿ ٖﻥۡﺪَﻋ ﺎَﻬَﻧﻮُﻠُﺧۡﺪَﻳ ﻦَﻣَﻭ َﺢَﻠَﺻ ۡﻦِﻣ
ۡﻢِﻬِﺋٓﺎَﺑﺍَﺀ ۡﻢِﻬِﺟَٰﻭۡﺯَﺃَﻭ ۖۡﻢِﻬِﺘَّٰﻳِّﺭُﺫَﻭ ﴾ ‏[ :ﺪﻋﺮﻟﺍ
٢٣ ‏]
“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ
করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-
পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা
সৎকাজ করেছে তারাও।” – ( সূরা আর-রা‘দ,
আয়াত: ২৩ )।
২. সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপন করা:
যে জিনিসটি এ পবিত্র দাম্পত্য সম্পর্ককে
হেফাযত ও তত্ত্বাবধান করে, তা হল পরস্পর
সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপন করা;
আর এটা ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত
হবে না, যতক্ষণ না প্রত্যেক পক্ষ তার ভাল-
মন্দ সম্পর্কে বুঝতে পারবে। বস্তুত ঘর ও
পরিবারের ব্যাপারে সার্বিক পূর্ণতার
বিষয়টি সুদূর পরাহত, তাই পরিবারের সদস্য
কিংবা অন্যদের মধ্যে সকল বৈশিষ্ট্যের
পরিপূর্ণতা লাভ করার আশা করাটা মানব
স্বভাবে নাগালের বাইরের বিষয়।
· দাম্পত্য জীবন তথা পরিবার সংরক্ষণ ও
সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দর জীবন যাপনে
স্বামীর ভূমিকা:
সুস্থ বিবেক এবং পরিপক্ক চিন্তার দাবী
হচ্ছে, কতিপয় অসহিষ্ণুতাকে গ্রহণ করা
এবং অসুখকর বিষয় থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে
রাখার ব্যাপারে মনকে তৈরী করে রাখা।
কারণ, পুরুষ হল পরিবারের কর্তা, তার
নিজের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা নারীর চেয়ে
অধিক হবে এটাই দাবি। কেননা, পুরুষ
জানে যে, নারী তার সৃষ্টিগত ও স্বভাব-
প্রকৃতির দিক থেকে দুর্বল; যখন তাকে
প্রত্যেক বিষয়ে জবাবদিহির সম্মুখীন করা
হবে, তখন সে সব বিষয়ে জবাব দিতে অক্ষম
হয়ে পড়বে; আর তাকে সোজা করার
ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করার বিষয়টি
তাকে ভেঙ্গে ফেলার দিকে নিয়ে যাবে,
আর তার ভেঙ্গে যাওয়া মানে তাকে
তালাক দেওয়া; নবী মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি খেয়াল-
খুশির অনুসরণ করে কোনো কথা বলেন না,
(বরং যা বলেন আল্লাহর পক্ষ থেকেই
বলেন) তিনি বলেন,
‏« ﺀﺎﺴﻨﻟﺎﺑ ﺍﻮﺻﻮﺘﺳﺍ ﺓﺃﺮﻤﻟﺍ ﻥﺈﻓ ﺖﻘﻠﺧ
ﻦﻣ ﻊﻠﺿ ﻥﺇﻭ ﺝﻮﻋﺃ ﺀﻲﺷ ﻲﻓ ﻊﻠﻀﻟﺍ , ﻩﻼﻋﺃ
ﻥﺈﻓ ﺖﺒﻫﺫ ﻪﻤﻴﻘﺗ ﻪﺗﺮﺴﻛ , ﻥﺇﻭ ﻪﺘﻛﺮﺗ
ﻢﻟ ﻝﺰﻳ ﺝﻮﻋﺃ ﺍﻮﺻﻮﺘﺳﺎﻓ ﺀﺎﺴﻨﻟﺎﺑ ‏» .
‏( ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﻭ ﻢﻠﺴﻣ ‏) .
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম
উপদেশ গ্রহণ কর। কারণ, নারী জাতিকে
পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে;
আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের
হাড়টি অধিক বাঁকা; সুতরাং তুমি যদি তা
সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে
ফেলবে; আর যদি এমনি ছেড়ে দাও, তাহলে
সব সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে; কাজেই
নারীদের সাথে কল্যাণমূলক কাজ করার
উপদেশ গ্রহণ কর।”[2]
সুতরাং নারীর মধ্যে বক্রতার বিষয়টি
মৌলিকভাবেই সৃষ্টিগত; অতএব, আবশ্যক
হলো সহজসুলভ আচরণ করা এবং ধৈর্য ধারণ
করা।
তাই পুরুষের উপর কর্তব্য হল, তার
পরিবারের পক্ষ থেকে যে অসহিষ্ণু
আচরণের প্রকাশ ঘটবে, সে ক্ষেত্রে তার
সাথে দীর্ঘ বিতর্কে জড়িয়ে না পড়া; আর
সে যেন তাদের মধ্যকার বিভিন্ন ত্রুটি-
বিচ্যুতির দিকসমূহ থেকে দৃষ্টি এড়িয়ে
চলে এবং তার কর্তব্য হল তাদের মধ্যকার
ভাল দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা, আর
এর মধ্যে সে অনেক ভালো কিছু পাবে।
অনুরূপ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‏« َﻻ ْﻙَﺮْﻔَﻳ ٌﻦِﻣْﺆُﻣ ًﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ‏( ﻱﺃ : ﻻ ﺾﻐﺒﻳ ﻭ
ﻻ ﻩﺮﻜﻳ ‏) ْﻥِﺇ َﻩِﺮَﻛ ﺎَﻬْﻨِﻣ ﺎًﻘُﻠُﺧ َﻰِﺿَﺭ ﺎَﻬْﻨِﻣ
َﺮَﺧﺁ ‏» . ‏( ﻩﺍﻭﺭ ﻢﻠﺴﻣ ‏) .
“কোন মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীকে
ঘৃণা ও অপছন্দ করবে না; যদি সে তার
কোনো স্বভাবকে অপছন্দ করেও, তাহলে
সে তার অপর একটি স্বভাবকে পছন্দ
করবে।”[3]
আর সে যেন এ ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে
ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করে; সে যদি তার
অপছন্দনীয় কোনো কিছু দেখে, তাহলে
এটাই শেষ কথা হিসেবে গ্রহণ না করে,
কারণ সে জানে না কোথায় রয়েছে
কল্যাণের মাধ্যম ও ভালোর উৎস।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ … َّﻦُﻫﻭُﺮِﺷﺎَﻋَﻭ ِۚﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ﻥِﺈَﻓ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻫِﺮَﻛ ٰٓﻰَﺴَﻌَﻓ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﻫَﺮۡﻜَﺗ ﺎٗٔۡﻴَﺷ
َﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ ﺍٗﺮﻴِﺜَﻛ ١٩
﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٩ ‏]
“ … আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে
জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে
অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে,
আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন,
তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” – (সূরা আন-
নিসা, আয়াত: ১৯ )।
আর শান্তি কিভাবে হবে? আর প্রশান্তি ও
হৃদ্যতা কোত্থেকে আসবে? যখন পরিবারের
কর্তা কঠোর প্রকৃতির, দুর্ব্যবহারকারী ও
সংকীর্ণমনা হন; যখন তাকে নির্বুদ্ধিতা
পরাভূত করে; আর তাড়াহুড়া, সন্তুষ্টির
ক্ষেত্রে ধীরতা ও রাগের ক্ষেত্রে
দ্রুততার বিষয়টি তাকে অন্ধ করে তুলে;
যখন সে প্রবেশ করে, তখন বেশি বেশি
খোটা দেয়; আর যখন বের হয়, তখন সে
কুধারণা করে? অথচ এটা জানা কথা যে,
উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপন এবং
সৌভাগ্যের উপায়-উপকরণসমূহ কেবল
উদারতা এবং ভিত্তিহীন যাবতীয়
ধ্যানধারণা ও সন্দেহ থেকে দূরে থাকার
মধ্য দিয়েই অর্জিত হতে পারে। আর
আত্মমর্যাদা বা ব্যক্তিত্বের অহংবোধ
কখনও কখনও কিছু সংখ্যক মানুষকে কুধারণা
পোষণ করার দিকে নিয়ে যায়… তাকে
নিয়ে যায় বিভিন্ন কথাবার্তার
অপব্যাখ্যা কিংবা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের
মধ্যে সন্দেহ তৈরী করতে। আর তখন তা
কোনো নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়াই ব্যক্তির
জীবনকে বিস্বাদ করে দেয় এবং মনকে
অস্থির করে তুলে। আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ْﺍﻮُﻘِّﻴَﻀُﺘِﻟ َّﻦُﻫﻭُّﺭٓﺎَﻀُﺗ ﺎَﻟَﻭ َّۚﻦِﻬۡﻴَﻠَﻋ
﴾ ‏[ :ﻕﻼﻄﻟﺍ ٦ ‏]
“আর তাদেরকে উত্যক্ত করবে না সংকটে
ফেলার জন্য।” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত:
৬)।
আর কিভাবে এ কাজটি একজন লোক তার
স্ত্রী সম্পর্কে করতে পারে, অথচ নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏« ﻢﻛﺮﻴﺧ ﻢﻛﺮﻴﺧ ﻪﻠﻫﻷ ﺎﻧﺃﻭ ﻢﻛﺮﻴﺧ
ﻲﻠﻫﻷ ‏» . ‏( ﻩﺍﻭﺭ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ ﻭ ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺎﻣ ‏)
.
“তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম,
তোমাদের মধ্যে যে তার স্ত্রীর নিকট
উত্তম; আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার
স্ত্রীর নিকট উত্তম।”[4]
· দাম্পত্য জীবন তথা পরিবার সংরক্ষণ ও
সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দর জীবন যাপনে
স্ত্রীর ভূমিকা:
মুসলিম নারীর জেনে রাখা উচিত যে,
সৌভাগ্য, ভালোবাসা ও অনুকম্পা তখনই
পরিপূর্ণতা লাভ করবে, যখন সে
সচ্চরিত্রবান ও দ্বীনদার হবে; সে তার
নিজের জন্য উপকারী ইতিবাচক দিকগুলো
জেনে নিবে; যাতে সে তার সীমা
অতিক্রম ও লঙ্ঘন না করে; সে তার স্বামীর
আহ্বানে সাড়া দিবে; কারণ, তাকে
পরিচালনার ব্যাপারে স্বামীর উপর
দায়িত্ব রয়েছে, স্বামী তাকে হেফাযত
করবে, সংরক্ষণ করবে এবং তার জন্য ব্যয়
করবে; সুতরাং স্ত্রীর উপর আবশ্যক হলো,
স্বামীর আনুগত্য করা, স্বামীর জন্য সে তার
নিজকে সংরক্ষণের নিশ্চয়তা বিধান করা
এবং স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা;
আর স্ত্রী তার নিজের কাজ-কর্ম
সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিবে ও তা
যথাযথভাবে পালন করবে এবং সে তার
নিজের ও সংসারের প্রতি যত্নবান হবে;
সে হবে পবিত্রা স্ত্রী, মমতাময়ী মাতা,
তার স্বামীর সংসারের
রক্ষণাবেক্ষণকারিনী দায়িত্বশীলা, যে
দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে তাকে
জবাবদিহী করতে হবে। সে তার স্বামীর
ভালো ও সৌন্দর্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডের
স্বীকৃতি দিবে, তার অবদান ও উত্তম
ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপনের
বিষয়টিকে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করবে না;
এই ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অস্বীকার
করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন,
তিনি বলেছেন:
‏« ﺖﻳﺭﺃ ﺭﺎﻨﻟﺍ ﺍﺫﺈﻓ ﺮﺜﻛﺃ ﺎﻬﻠﻫﺃ
ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ﻥﺮﻔﻜﻳ ‏» . ﻞﻴﻗ : ﻥﺮﻔﻜﻳﺃ
ﻪﻠﻟﺎﺑ ؟ ﻝﺎﻗ : ‏« ﻥﺮﻔﻜﻳ ﺮﻴﺸﻌﻟﺍ
ﻥﺮﻔﻜﻳﻭ ﻥﺎﺴﺣﻹﺍ ؛ ﻮﻟ ﺖﻨﺴﺣﺃ ﻰﻟﺇ
ﻦﻫﺍﺪﺣﺇ ﺮﻫﺪﻟﺍ ﻢﺛ ﺕﺃﺭ ﻚﻨﻣ ﺎﺌﻴﺷ ﺖﻟﺎﻗ
: ﺎﻣ ﺖﻳﺃﺭ ﻚﻨﻣ ﺮﻴﺧ ﻂﻗ ‏» . ‏( ﻩﺍﻭﺭ
ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ‏) .
“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়; (তখন
আমি দেখি) তার অধিবাসীদের
অধিকাংশই স্ত্রীলোক, যারা কুফরী করে।
জিজ্ঞাসা করা হল: তারা কি আল্লাহর
সঙ্গে কুফরী করে? তিনি বললেন: “তারা
স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান (সদ্ব্যবহার)
অস্বীকার করে; তুমি যদি দীর্ঘকাল
তাদের কারও প্রতি ইহসান করে থাক,
এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা
দেখলেই বলে, আমি কখনও তোমার কাছ
থেকে ভাল ব্যবহার পাইনি।”[5]
সুতরাং আবশ্যক হল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা
করা এবং অপরাধ বা ভুল-ভ্রান্তির প্রতি
ভ্রূক্ষেপ না করা … স্বামী উপস্থিত
থাকলে তার প্রতি দুর্ব্যবহার করবে না, আর
স্বামী অনুপস্থিত থাকলে, স্বামীর সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।
এর মাধ্যমেই পারস্পরিক সন্তুষ্টি অর্জিত
হবে, সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব স্থায়ী হবে এবং
আন্তরিকতা, ভালবাসা ও সহমর্মিতা
প্রাধান্য বিস্তার করবে। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায়:
‏« ﺎﻤﻳﺃ ﺓﺃﺮﻣﺍ ﺖﺗﺎﻣ ﺎﻬﺟﻭﺯﻭ ﺎﻬﻨﻋ ﺽﺍﺭ
ﺖﻠﺧﺩ ﺔﻨﺠﻟﺍ ‏» . ‏( ﻩﺍﻭﺭ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ ﻭ ﻦﺑﺍ
ﻪﺟﺎﻣ‏) .
“যে নারীই তার প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট
থাকা অবস্থায় মারা যাবে, সে নারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[6]
সুতরাং হে মুসলিম জাতি! তোমরা
আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে
রাখ যে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও একতা
অর্জন করার মাধ্যমে সৌভাগ্য পরিপূর্ণতা
লাভ করবে, শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ
তৈরি হবে এবং তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে
এমন এক মর্যাদাবান ঘরে, যা ভালাবাসার
দ্বারা পরিপূর্ণ, পারস্পরিক বুঝাপড়ার
দ্বারা সমৃদ্ধ … মাতৃত্বের সহানুভূতিশীলতা
ও পিতৃত্বের করুণার মাঝে (বিদ্যমান) …
তারা অবস্থান করবে অনেক দূরে দ্বন্দ্ব-
সংঘাত ও বিতর্কের শোরগোল এবং একে
অন্যের সাথে বাড়াবাড়ি থেকে; যাতে
করে সেখানে থাকবে না কোনো প্রকার
অনৈক্য, মতবিরোধ ও দুর্ব্যবহার, কাছে
কিংবা দূরে। আল-কুরআনের ভাষায়:
…﴿ ﺎَﻨَّﺑَﺭ ۡﺐَﻫ ﺎَﻨَﻟ ۡﻦِﻣ ﺎَﻨِﺘَّٰﻳِّﺭُﺫَﻭ ﺎَﻨِﺟَٰﻭۡﺯَﺃ
َﺓَّﺮُﻗ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤۡﻠِﻟ ﺎَﻨۡﻠَﻌۡﺟﭐَﻭ ٖﻦُﻴۡﻋَﺃ ﺎًﻣﺎَﻣِﺇ ٧٤
﴾ ‏[ :ﻥﺎﻗﺮﻔﻟﺍ ٧4 ‏]
“ … হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন
স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা
হবে আমাদের জন্য চোখজুড়ানো। আর আপনি
আমাদেরকে করুন মুত্তাকীদের জন্য
অনুসরণযোগ্য।”- (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত:
৭৪)।
* * *
উপসংহার
পরিশেষে- আমার মুসলিম ভাই ও বোন!
আল্লাহ তোমাদেরকে তাওফীক দিন:
নিশ্চয়ই পরিবারের সংস্কার হল গোটা
সমাজের নিরাপত্তার উপায়; এমন সমাজকে
সংস্কার করা অসম্ভব, যাতে পারিবারিক
বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়েছে; কিভাবেই বা
সম্ভব, অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা
পারিবারকে নিয়ামত হিসেবে আমাদের
কাছে অনুগ্রহ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যে
নেয়ামতটি হচ্ছে পরিবারের পরস্পর বন্ধন,
মিলন ও চিরাচয়িত সম্পর্ক ..। আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ُﻪَّﻠﻟﭐَﻭ َﻞَﻌَﺟ ﻢُﻜَﻟ ۡﻦِّﻣ ۡﻢُﻜِﺴُﻔﻧَﺃ ﺎٗﺟَٰﻭۡﺯَﺃ
َﻞَﻌَﺟَﻭ ﻢُﻜَﻟ ۡﻦِّﻣ ﻢُﻜِﺟَٰﻭۡﺯَﺃ َﻦﻴِﻨَﺑ ٗﺓَﺪَﻔَﺣَﻭ
ﻢُﻜَﻗَﺯَﺭَﻭ َﻦِّﻣ ِۚﺖَٰﺒِّﻴَّﻄﻟﭐ َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻳ ِﻞِﻄَٰﺒۡﻟﭑِﺒَﻓَﺃ
ِﺖَﻤۡﻌِﻨِﺑَﻭ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﻭُﺮُﻔۡﻜَﻳ ۡﻢُﻫ ٧٢ ﴾ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ
٧٢ ‏]
“আর আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের
জোড়া সৃষ্টি করেছেন; আর তোমাদের যুগল
থেকে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি
সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম
জীবণোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি ওরা
মিথ্যাতে বিশ্বাস করবে এবং ওরা
আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?” – ( সূরা
আন-নাহল, আয়াত: ৭২ )।
নিশ্চয়ই স্বামী-স্ত্রী ও তাদের মধ্যকার
মজবুত সম্পর্ক এবং পিতা-মাতা ও তাদের
কোলে বেড়ে উঠা সন্তান-সন্ততি- এ বিষয়
দু’টি বর্তমান জাতি ও ভবিষ্যৎ জাতি
হিসেবে বিবেচ্য। তাই এটা বলা যায় যে,
শয়তান যখন পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করার
ব্যাপারে সফল হবে, তখন এর মাধ্যমে সে
কেবল একটি সংসারকেই ধ্বংস করবে না,
কোনো সীমাবদ্ধ অনিষ্টতাই সংঘটিত
করবে না বরং তা গোটা জাতিকে বড়
ধরনের ক্ষতি ও দ্রুততর অনিষ্টতার মধ্যে
নিক্ষেপ করবে। আর বর্তমান বাস্তবতা তার
সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ।
সুতরাং আল্লাহ ঐ পুরুষ ব্যক্তিকে রহম করুন,
যিনি প্রশংসনীয় চরিত্র ও উৎকৃষ্ট মনের
অধিকারী, উদার, কোমল, দয়ালু, তার
পরিবারের প্রতি স্নেহপরায়ণ এবং তার
কাজের ব্যাপারে বিচক্ষণ; যিনি
অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না,
কঠোরতা আরোপ করে যুলুম করেন না এবং
দায়িত্বের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয়
দেন না।
আর আল্লাহ ঐ নারীর প্রতি রহম করুন, যিনি
ভুল-ত্রুটি খোঁজে বেড়ান না, বেশি
শোরগোল করেন না, সততাপরায়ণা,
আনুগত্যপরায়ণা এবং অদৃশ্য অংশের
হেফাজতকারিনী, যেভাবে আল্লাহ
হেফাজত করেছেন।
সুতরাং হে স্বামী ও স্ত্রীগণ! তোমরা
আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; আর হে
মুসলিমগণ! তোমরাও আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর; কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন করবে, তিনি তার জন্য
তার কাজকে সহজ করে দিবেন।
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন তাঁর
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আমাদের নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর
পবিত্র স্ত্রীগণের প্রতি; আরও রহমত ও
শান্তি বর্ষণ করুন তাঁর সাহাবীগণ এবং
কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা তাঁদেরকে
উত্তমভাবে অনুসরণ করবে তাদের প্রতি)।
ﻚﻧﺎﺤﺒﺳ ﻢﻬﻠﻟﺍ ﻭ , ﻙﺪﻤﺤﺑ ﺪﻬﺷﺃ ﻥﺃ ﻻ
ﻪﻟﺇ ﻻﺇ ﻙﺮﻔﻐﺘﺳﺃ ﺖﻧﺃ ﻭ ﺏﻮﺗﺃ ﻚﻴﻟﺇ .
(হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসাসহ তোমার
পবিত্রতা বর্ণনা করছি; আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই,
আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি
এবং তোমার নিকট তাওবা করছি)।
* * *
দ্বিতীয় প্রবন্ধ
(স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব)
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি
করেন, অতঃপর সুঠাম করেন, যিনি নির্ধারণ
করেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেন; আমি
তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
তিনি শেষে ও প্রথমে সকল প্রশংসার
প্রাপ্য মালিক। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য
ইলাহ নেই, যাঁর কোনো শরীক নেই; আমি
আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি
নির্বাচিত নবী ও বান্দা; আল্লাহ তাঁর উপর
এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং
যে ব্যক্তি তাঁর দা‘ওয়াতের মাধ্যমে
দা‘ওয়াত দান করে ও যে ব্যক্তি তাঁর
পদ্ধতির অনুসরণে জীবনযাপন করে, সে
ব্যক্তিসহ উল্লেখিত সকলের উপর রহমত,
শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।
অতঃপর:
জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে তাওফীক
দিন— আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম মহান
নিয়ামত ও নিদর্শন হল ঘর-সংসার, যা
আশ্রয়স্থল ও শান্তি নিকেতন; তার
ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালবাসা ও
অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ
জীবন ও শালীনতা লাভ করবে … তার
কোলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ বেড়ে
উঠবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তার লাভ
করবে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতা
শক্তিশালী হবে। অন্তরের সাথে অন্তর
যুক্ত হবে … এবং মনের সাথে মনের
আলিঙ্গন হবে; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ َّﻦُﻫ ٞﺱﺎَﺒِﻟ ۡﻢُﻜَّﻟ ٞﺱﺎَﺒِﻟ ۡﻢُﺘﻧَﺃَﻭ َّۗﻦُﻬَّﻟ
﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٨٧‏]
“ তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং
তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” – ( সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭ )।
এই মজবুত সম্পর্ক ও উন্নত সংসারের মধ্যে
উত্তম বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটবে এবং ঐসব
পুরুষ ব্যক্তিগণ বেড়ে উঠবে, যাদেরকে
আমানতস্বরূপ মহান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে;
আর ঐসব নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে,
যারা বংশমূল তথা জাতির ভবিষ্যতকে
দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের
কতিপয় কারণ
জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষ (যেমনটি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে
সৃষ্টি করেছেন; আর যা তিনি সৃষ্টি
করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে
বেশি ভাল জানেন) সে মানুষের স্বভাব-
প্রকৃতিতে কখনও কখনও (জীবনের
বাস্তবতায়) এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়,
যাতে দিক-নির্দেশনা কাজ করে না এবং
ভালবাসা ও প্রশান্তি সুদৃঢ় হয় না; যার
কারণে কখনও কখনও দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট
রাখা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে যায়। ফলে
তাতে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য
বাস্তবায়িত হয় না এবং তার দ্বারা নবীন
সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হয় না। আর
এ বিশৃঙ্ল ও অনৈক্যের অবস্থা বা
পরিস্থিতিসমূহের কারণসমূহ কখনও কখনও
হয়ে থাকে আভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও
হয় বহিরাগত।
যেমন কখনও কখনও এ সমস্যার উত্থান হয়:
স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের
আত্মীয়-স্বজনের মধ্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তির
হস্তক্ষেপ, অথবা স্বামী-স্ত্রীর সকল ছোট
বড় কর্মকাণ্ডের পশ্চাদ্ধাবন; আবার কখনও
কখনও পরিবারের কোনো কোনো
অভিভাবক এবং পরিবারের বড়দের পক্ষ
থেকে তাদের অধিনস্থদের উপর এত বেশি
নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তা কখনও
কখনও বিচারকের নিকট বিচার নিয়ে
যাওয়ার পর্যন্ত গড়ায়; ফলে আড়ালে ঢাকা
রহস্যসমূহ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং গোপন
বিষয়সমূহ উম্মোচন হয়ে যায়, আর এগুলো হয়
নিছক ছোট-খাট বিষয় অথবা তুচ্ছ কিছু
কারণে; যার উৎপত্তি হয়ত অনুপযুক্ত অথবা
প্রজ্ঞাশূন্য হস্তক্ষেপ অথবা তাড়াহুড়া ও
দ্রুততা অবলম্বন বা গুজব ও আজে-বাজে
কথায় কান দেওয়া ও সেটাকে সত্য বলে
বিশ্বাস করা।
আর কখনও কখনও সমস্যার উৎসস্থল হয়:
দীনের ব্যাপারে দূরদর্শিতার স্বল্পতা ও
মহানুভব শরী‘য়তের বিধিবিধানসমূহের
ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং পুঞ্জীভূত কুঅভ্যাস
ও দুর্বল চিন্তাধারা লালন করা।
ফলে কোনো কোন স্বামী বিশ্বাস করে
বসে যে, তালাকের দ্বারা হুমকি দেওয়া
অথবা তা উচ্চারণ করা হল দাম্পত্য বিরোধ
ও পারিবারিক সমস্যার একটি সঠিক
সমাধান; সুতরাং সে তার প্রবেশ ও বের
হওয়ার সময় এবং তার নির্দেশ প্রদান ও
নিষেধাজ্ঞার সময়ে, এমনকি তার সকল
অবস্থায় (স্ত্রীর সাথে) কথাবার্তার
ক্ষেত্রে তালাকের শব্দগুলো ব্যতীত অন্য
কিছু জানে না বা বুঝে না; আর সে এও
জানে না যে, এর দ্বারা সে প্রকারান্তরে
আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাস হিসেবে
গ্রহণ করেছে; সে তার কর্মকাণ্ডে
অপরাধী বা পাপী হচ্ছে, তার সংসার
ধ্বংস করছে এবং তার পরিবার-পরিজন
হারাচ্ছে।
হে মুসলিমগণ! এটাই কি দীনের ফিকহ তথা
সুক্ষ্ম জ্ঞান হতে পারে?!
নিশ্চয়ই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত
পদ্ধতি যে তালাকের বিধান রয়েছে তার
উদ্দেশ্য দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন বা রশি
কর্তন করা নয়, বরং বলা যায় যে, এ পদ্ধতির
তালাক হচ্ছে এই সম্পর্ক সাময়িকভাবে
আটকে রাখা এবং প্রতীক্ষা,
চিন্তাভাবনা ও সংশোধনের একটি পর্যায়;
আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ … ﺎَﻟ َّﻦُﻫﻮُﺟِﺮۡﺨُﺗ ۢﻦِﻣ َّﻦِﻬِﺗﻮُﻴُﺑ ﺎَﻟَﻭ
َﻦۡﺟُﺮۡﺨَﻳ ٓﺎَّﻟِﺇ ﻥَﺃ َﻦﻴِﺗۡﺄَﻳ ٖﺔَﺸِﺤَٰﻔِﺑ ٖۚﺔَﻨِّﻴَﺒُّﻣ
َﻚۡﻠِﺗَﻭ ُﺩﻭُﺪُﺣ ِۚﻪَّﻠﻟﭐ ﻦَﻣَﻭ َّﺪَﻌَﺘَﻳ َﺩﻭُﺪُﺣ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ۡﺪَﻘَﻓ َﻢَﻠَﻇ ۚۥُﻪَﺴۡﻔَﻧ ﺎَﻟ ﻱِﺭۡﺪَﺗ َّﻞَﻌَﻟ َﻪَّﻠﻟﭐ
ُﺙِﺪۡﺤُﻳ َﺪۡﻌَﺑ َﻚِﻟَٰﺫ ﺍٗﺮۡﻣَﺃ ١ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻦۡﻐَﻠَﺑ
َّﻦُﻬَﻠَﺟَﺃ َّﻦُﻫﻮُﻜِﺴۡﻣَﺄَﻓ ٍﻑﻭُﺮۡﻌَﻤِﺑ َّﻦُﻫﻮُﻗِﺭﺎَﻓ ۡﻭَﺃ
ٖﻑﻭُﺮۡﻌَﻤِﺑ … ﴾ ‏[ :ﻕﻼﻄﻟﺍ ،١ ٢ ‏]
“ … তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি
থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও বের
হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট
অশ্লীলতায়। আর এগুলো আল্লাহর
নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন
করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে।
আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর
কোনো উপায় করে দেবেন। অতঃপর
তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে
তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে
দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি
পরিত্যাগ করবে। …” – (সূরা আত-তালাক,
আয়াত: ১-২)।
এটাই হচ্ছে শরী‘য়ত। বরং বিষয়টি এর
মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; নিশ্চয়ই সুন্নাত
পদ্ধতিতে তালাক প্রদানের বিধানটি
প্রতিকারের সর্বশেষ অস্ত্র এবং এর পূর্বে
অনেকগুলো উপায় রয়েছে।
* * *
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব
নিরসনের কতিপয় উপায়
আমার মুসলিম ভাই ও বোন:
যখন বিরোধের আলামত, অবাধ্যতা,
মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন
তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা
তার প্রতিকার নয়।
প্রতিকারের জন্য যা দাবি করা হয়, তার
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ধৈর্য,
সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে
বিভিন্নতা এবং স্বভাব-প্রকৃতির ক্ষেত্রে
ভিন্নতার বিষয়টি অনুধাবন করা; সাথে
আরও জরুরি হল অনেক বিষয়ে উদারতার
পরিচয় দেওয়া এবং দেখেও না দেখার
ভান করা; কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও
কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ হয়
না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা
করে না, তার মধ্যেই কল্যাণ হয়; আল-
কুরআনের ভাষায়:
﴿ … َّﻦُﻫﻭُﺮِﺷﺎَﻋَﻭ ِۚﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ﻥِﺈَﻓ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻫِﺮَﻛ ٰٓﻰَﺴَﻌَﻓ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﻫَﺮۡﻜَﺗ ﺎٗٔۡﻴَﺷ
َﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ ﺍٗﺮﻴِﺜَﻛ ١٩
﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٩ ‏]
“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন
যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে
অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে,
আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন,
তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” – (সূরা আন-
নিসা, আয়াত: ১৯ )।
কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশ পাবে,
পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা
দেখা দিবে এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে
অবাধ্যতা, তার স্বভাব চরিত্রে অহমিকা
এবং তার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার
প্রবণতা প্রকাশ পাবে; যেমন- ঘৃণার
প্রকাশ পাওয়া, স্বামীর অধিকারের
ব্যাপারে কমতি করার বিষয় এবং স্বামীর
মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার বিষয় প্রকাশ
করা, তখন ইসলামে এর চিকিৎসা বা
প্রতিকার সুস্পষ্ট; তাতে প্রত্যক্ষ কিংবা
পরোক্ষ কোনোভাবেই তালাক প্রসঙ্গ
আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা
সুস্পষ্ট কিতাবে বলেন:
﴿ … ﻲِﺘَّٰﻟﭐَﻭ َﻥﻮُﻓﺎَﺨَﺗ َّﻦُﻫَﺯﻮُﺸُﻧ َّﻦُﻫﻮُﻈِﻌَﻓ
َّﻦُﻫﻭُﺮُﺠۡﻫﭐَﻭ ِﻊِﺟﺎَﻀَﻤۡﻟﭐ ﻲِﻓ َّۖﻦُﻫﻮُﺑِﺮۡﺿﭐَﻭ ۡﻥِﺈَﻓ
ۡﻢُﻜَﻨۡﻌَﻃَﺃ ﺎَﻠَﻓ ْﺍﻮُﻐۡﺒَﺗ َّﻦِﻬۡﻴَﻠَﻋ ۗﺎًﻠﻴِﺒَﺳ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﺎَﻛ ﺎّٗﻴِﻠَﻋ ﺍٗﺮﻴِﺒَﻛ ٣٤ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ
٣٤ ‏]
“ … আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার
আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও,
তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং
তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা
তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে
কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয়
আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” – (সূরা আন-নিসা,
আয়াত: ৩৪ )।
তাই বুঝা গেল যে, উক্ত অবস্থার প্রতিকার
হবে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের
মাধ্যমে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার
মাধ্যমে, অধিকারসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার
মাধ্যমে এবং আল্লাহর গজব ও ঘৃণা থেকে
ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে; সাথে আরও
প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার
জন্য উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা।
আর কখনও কখনও অহমিকা ও অবাধ্যতার
মোকাবিলায় শয্যা বর্জন ও বয়কট করা
হচ্ছে এর প্রতিকার; আপনারা লক্ষ্য করুন
যে, শয্যা বর্জন করার অর্থ শয়নকক্ষ বর্জন
করা নয়; … তা হল শয্যা বর্জন করা, ঘর
বয়কট করা নয় … পরিবার বা সন্তান বা
অপরিচিত লোকজনের সামনে নয়।
উদ্দেশ্য হল প্রতিকার করা, ঘোষণা করা
অথবা অপমান করা অথবা গোপন বিষয়
প্রকাশ করা নয়; বরং উদ্দেশ্য হল বর্জন ও
বয়কটের মাধ্যমে অবাধ্যতা ও অহংকারের
মোকাবিলা করা, যা পারস্পরিক ঐক্য,
সংহতি ও সমতার দিকে পরিচালিত করে।
আর কখনও কখনও কিছু কঠোর ও রূঢ়
মনোভাবের মাধ্যমে প্রতিকার হতে
পারে; কারণ, কিছু মানুষ এমনও রয়েছে,
যাদেরকে সোজা করার ক্ষেত্রে উত্তম
ব্যবহার ও ভদ্র কথায় কোনো কাজ হয় না;
বরং তারা এমন শ্রেণীর মানুষ যাদেরকে
অধিকাংশ সময় নম্র ব্যবহার ও সহিষ্ণুতা
অবাধ্য করে তোলে … সুতরাং যখন
কঠোরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন
অবাধ্য ব্যক্তি থেমে যাবে এবং বিক্ষুব্ধ
ব্যক্তি শান্ত হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, কখনও কখনও কিছু চাপ প্রয়োগের
আশ্রয় নেয়াটাও কার্যকর প্রতিষেধক হতে
পারে; আর কেনই বা সে তার আশ্রয় নিবে
না, অথচ দায়িত্বের প্রতি বৈরী ভাব ও
স্বভাব-প্রকৃতি থেকে বের হওয়ার মত
পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে যাচ্ছে?
আর সকল বিবেকবান ব্যক্তির নিকট বিদিত
যে, কঠোরতা যখন সংসারের জন্য তার
শৃঙ্খলা ও মজবুত বন্ধনকে ফিরিয়ে দিবে
এবং পরিবারকে ফিরিয়ে দিবে ভালবাসা
ও হৃদ্যতা, তখন তা নিঃসন্দেহে তালাক ও
বিচ্ছেদের চেয়ে উত্তম; তা হবে
ইতিবাচক, শিক্ষামূলক ও অর্থবহ সমাধান;
ঘায়েল করা ও প্রতিশোধ গ্রহণের
উদ্দেশ্যে নয়; বরং তার দ্বারা
অবাধ্যতাকে দমন করা হয় এবং
বিশৃঙ্খলাকে সংযত করা করা হয়।
আর যখন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে
দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করবে, তখন
আল-কুরআনুল কারীম তার প্রতিকারের দিক
নির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বাণীর
মাধ্যমে, আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ ِﻥِﺇَﻭ ٌﺓَﺃَﺮۡﻣﭐ ۡﺖَﻓﺎَﺧ ۢﻦِﻣ ﺎَﻬِﻠۡﻌَﺑ ﺍًﺯﻮُﺸُﻧ
ۡﻭَﺃ ﺎٗﺿﺍَﺮۡﻋِﺇ ﺎَﻠَﻓ َﺡﺎَﻨُﺟ ٓﺎَﻤِﻬۡﻴَﻠَﻋ ﻥَﺃ
ﺎَﺤِﻠۡﺼُﻳ ﺎَﻤُﻬَﻨۡﻴَﺑ ۚﺎٗﺤۡﻠُﺻ ُﺢۡﻠُّﺼﻟﭐَﻭ ۗٞﺮۡﻴَﺧ …
﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٢٨ ‏]
“আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর
দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা
করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে
চাইলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং
আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়।” – (সূরা আন-
নিসা, আয়াত: ১২৮ );
প্রতিকার হবে আপোস-নিষ্পত্তি ও শান্তি
স্থাপনের মাধ্যমে, তালাক ও সম্পর্ক
বাতিলের মাধ্যমে নয়। আবার কখনও কখনও
বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষার জন্য আর্থিক অথবা
ব্যক্তিগত অধিকারের কিছু কিছু বিষয় ছাড়
দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে।
﴿ ُﺢۡﻠُّﺼﻟﭐَﻭ ۗٞﺮۡﻴَﺧ ﴾ [ আপোস-নিষ্পত্তি
উত্তম ]। অবাধ্যতা, দুর্ব্যবহার, বিদ্বেষ ও
তালাকের চেয়ে আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম।
আমার মুসলিম ভাই ও বোন:
এটা একটা গতিশীল আবেদন এবং আল্লাহর
দীনের ফিকহের দিক থেকে ও তাঁর
বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে আচার-
আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক; সুতরাং
তার থেকে মুসলিমগণ কোথায় যাচ্ছে?
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের
ব্যাপারে কেন সালিস নিয়োগ করা হয়
না? এ সমাধান থেকে কেন সংস্কারকগণ
বিরত থাকে? সে কি প্রকৃত সংশোধনের
ব্যাপারে অমনোযোগী, নাকি পরিবার
ভাঙ্গন ও সন্তানদেরকে বিভক্ত করার
ব্যাপারে উৎসাহী?
নিশ্চয়ই আপনি তাকে নির্বুদ্ধিতা,
বাড়াবাড়ি, আল্লাহর ভয় ও তাঁর নজরদারী
থেকে দূরুত্বে অবস্থান, তাঁর
বিধিবিধানের অধিকাংশকে প্রত্যাখ্যান
এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা রেখার
ব্যাপারে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া অন্য
কিছু মনে করবেন না।
ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান প্রমূখ
গ্রন্থকারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেছেন:
‏« ﺎﻣ ﻝﺎﺑ ﻥﻮﺒﻌﻠﻳ ﻡﺍﻮﻗﺃ ﺩﻭﺪﺤﺑ ﻪﻠﻟﺍ .
ﻝﻮﻘﻳ ﻢﻫﺪﺣﺃ : ﺪﻗ ﻚﺘﻘﻠﻃ . ﺪﻗ ﻚﺘﻌﺟﺍﺭ .
ﺪﻗ ﻚﺘﻘﻠﻃ ؟ ﺐﻌﻠﻳﺃ ﺩﻭﺪﺤﺑ ﻪﻠﻟﺍ ﻭ ﺎﻧﺃ
ﻦﻴﺑ ﻢﻛﺮﻬﻇﺃ ‏» . ‏( ﻩﺍﻭﺭ ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺎﻣ ﻭ ﻦﺑﺍ
ﻥﺎﺒﺣ ‏) .
“কিছু লোকের কি হল যে তারা আল্লাহর
নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি
খেলছে; তাদের কেউ কেউ বলে: আমি
তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে
ফিরিয়ে আনলাম, আমি তোমাকে তালাক
দিলাম? সে কি আল্লার নির্ধারিত
সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অথচ
আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি?”[7]
* * *
দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায়
দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে যখন সকল উপায়
ব্যর্থ হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা
যখন কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে, এমনকি যখন
তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক
নির্ধারিত অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহান তাৎপর্য
বাস্তবায়ন করা না যায়, তখন শরী‘য়তের
উদারতা ও তার বিধানসমূহের পরিপূর্ণতার
প্রমাণ হচ্ছে যে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের
জন্য উপায় রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমগণের
অনেকেই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত
পদ্ধতির তালাকের সম্পর্কে অজ্ঞ এবং
আল্লাহর সীমারেখা ও তাঁর শরী‘য়তের
প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়াই তালাক শব্দটি
উচ্চারণ করে থাকে।
ঋতুবর্তীকালীন সময়ে তালাক দেয়া
হারাম, (একসাথে) তিন তালাক প্রদান
করা হারাম এবং এমন ঋতুমুক্তকালীন সময়ে
তালাক প্রদান করাও হারাম, যাতে উভয়ের
মাঝে মিলন (সহবাস) হয়েছে; সুতরাং এ
ধরনের সকল তালাক বিদ‘আত ও হারাম
(নিষিদ্ধ)। এ ধরনের তালাকদাতার পাপ
হবে; কিন্তু আলেমগণের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী
তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে।
যে সুন্নাত পদ্ধতির তালাক সম্পর্কে
অবহিত হওয়া মুসলিমগণের উপর ওয়াজিব,
তা হলো: ঋতুমুক্তকালীন সময়ে মাত্র এক
তালাক প্রদান করা যাতে উভয়ের মিলন
(সহবাস) হয়নি, অথবা গর্ভকালীন সময়ের
মাঝে তালাক প্রদান করা।
এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক
প্রদান করা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিকার
হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এতে স্বামী-
স্ত্রী উভয়েই বেশ কিছু সময় পায়, সে সময়ে
তারা চিন্তা-ভাবনা কিংবা পর্যালোচনা
করতে পারে।
আর এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক
প্রদানকারীকে ঋতুমুক্তকালীন সময়ের
আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; আর
হতে পারে যে, তখন তার মন পরিবর্তন হবে,
হৃদয় জগ্রত হবে এবং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা
অনুযায়ী তাদের জন্য নতুন কোনো উপায়
করে দেবেন, ফলে তাদের সম্পর্ক তালাক
পর্যন্ত গড়াবে না।
আর ইদ্দতের সময়কাল, — চাই তা মাসিক
জনিত ইদ্দত হউক, অথবা নির্দিষ্ট
মাসসমূহের ইদ্দত হউক, অথবা গর্ভস্থ
সন্তানের প্রসব সংশ্লিষ্ট ইদ্দত হউক— এ
সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে
আনা ও আত্মপর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ
থাকে; যা কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে
যাওয়া ভালবাসার বন্ধন ও দাম্পত্য
সম্পর্ককে মিলিয়ে দিতে পারে।
আর মুসলিমগণ যা জানে না তন্মধ্যে অন্যতম
হল: স্ত্রীকে যখন রেজ‘য়ী
(প্রত্যাবর্তনযোগ্য) তালাক দেওয়া হবে,
তখন তার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল স্বামীর
ঘরে অবস্থান করা; সে বের হবে না এবং
তাকে বের করে দেওয়া হবে না।
বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকে (স্বামীর
ঘরকে) তার (স্ত্রীর) জন্য ঘর হিসেবে
বরাদ্দ দিয়ে দিলেন; আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ َّﻦُﻫﻮُﺟِﺮۡﺨُﺗ ﺎَﻟ َّﻦِﻬِﺗﻮُﻴُﺑ ۢﻦِﻣ ﴾ ‏[ :ﻕﻼﻄﻟﺍ ١‏]
“তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি
থেকে বহিষ্কার করো না” – (সূরা আত-
তালাক, আয়াত:১);
এই আয়াতটি (ঘরে) অবস্থান করার
বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে তাদের অধিকার
বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তার স্বামীর
ঘরে তার অবস্থান করার মানে তার পুনরায়
প্রত্যাবর্তনের একটা পথ, ভালবাসার
সহনুভূতি উত্থাপন করার ক্ষেত্রে আশার
সূচনা এবং সম্মিলিত জীবনযাপনের
বিষয়টি স্মরণ করানো। ফলে এই অবস্থায়
তালাকের হুকুমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর
অবস্থান দূরে প্রতীয়মান হলেও চোখের
দৃশ্যপট থেকে তার অবস্থান স্বামীর
নিকটে।
আর এর দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হল তাদের
মধ্যে ঘটে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে শান্ত
করা, হৃদয়ে নাড়া দেওয়া, অবস্থানসমূহ পুণ
পর্যালোচনা এবং ধীরে-সুস্থে নিজ
সংসার, শিশু ও পরিবারের সার্বিক অবস্থা
সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ লাভ।
আল-কুরআনের ভাষায়:
﴿ … ﺎَﻟ ﻱِﺭۡﺪَﺗ َّﻞَﻌَﻟ َﻪَّﻠﻟﭐ ُﺙِﺪۡﺤُﻳ َﺪۡﻌَﺑ َﻚِﻟَٰﺫ
ﺍٗﺮۡﻣَﺃ ١ ﴾ ‏[ :ﻕﻼﻄﻟﺍ ١ ‏]
“ … আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর
কোনো উপায় করে দেবেন।” – ( সূরা আত-
তালাক, আয়াত: ১ )।
সুতরাং হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন কর … এবং তোমাদের
ঘর-সংসারসমূহকে হেফাযত কর; আর
তোমাদের দীনের বিধানসমূহ জানতে ও
বুঝতে শিখ … আর আল্লাহর সীমারেখা
যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তা লঙ্ঘন
করো না; আর তোমারা তোমাদের
নিজেদের মাঝে (সম্পর্কের) সংশোধন ও
সংস্কার করে নাও।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দীনের
ব্যাপারে সঠিক বুঝ এবং শরী‘য়তের
ব্যাপারে দূরদর্শিতা দান করুন; হে
আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার
কিতাবের হিদায়াতের মাধ্যমে উপকৃত
করুন; আর আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপর
ভিত্তি করে গড়ে উঠা আচার-আচরণ
আমাদেরকে দান করুন।
* * *
বিষয়সমূহ সূচিপত্র
বিষয়সমূহ
(প্রথম প্রবন্ধের সূচীপত্র)
প্রথম প্রবন্ধ
সৌভাগ্যময় ঘর
* পরিবার গঠন ও দাম্পত্য জীবনে বন্ধুত্বপূর্ণ
সম্পর্কের গুরুত্ব
* পরিবারের অবকাঠামোর খুঁটিসমূহ
১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাঁকে
ভয় করা
২. পরস্পর সদ্ব্যবহার করা
* দাম্পত্য জীবন তথা পরিবার সংরক্ষণ ও
সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বামীর ভূমিকা
* দাম্পত্য জীবন বা পরিবার সংরক্ষণ ও
সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকা
উপসংহার
(দ্বিতীয় প্রবন্ধের সূচীপত্র)
স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব
* স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কতিপয়
কারণ
* স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের
কতিপয় উপায়
* দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায় এবং
তাতে আছে তালাকের কতিপয়
বিধিবিধানের ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণ
বিষয়সমূহ সূচিপত্র
* * *
[1] হাদিসটি সহীহ, যা বর্ণনা করেছেন:
আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/২৫০, ৪৩৬; আবূ দাউদ:
১৩০৮; নাসায়ী: ৩/২০৫; ইবনু মাজাহ: ১৩৩৬;
আর ইবনু খুযাইমা হাদিসটিকে বিশুদ্ধ
বলেছেন (১১৪৮); হাকেম: ১/৩০৯; আর
যাহাবী র. তা সমর্থন করেছেন।
[2] বুখারী, আল-জামে‘উস সহীহ (৫১৮৬);
মুসলিম, আস-সহীহ (১৪৬৮)
[3] মুসলিম, আস-সহীহ (১৪৬৯);
ফায়দা: হাফেয ইবনু হাজার র. যা বলেছেন,
তার সারকথা হল: হাদীসের মধ্যে
সহানুভূতির মাধ্যমে স্ত্রীকে পুনর্গঠনের
ইঙ্গিত রয়েছে; সুতরাং সে তাতে
অতিরঞ্জন করবে না, যাতে সংসার
ভেঙ্গে যায়; আর সে তাকে একেবারে
ছেড়ে দেবে না; যাতে সে তার বক্রতার
উপরেই চলতে থাকবে। আর এর বিধিবদ্ধ
নিয়ম হল: যখন স্ত্রী তার স্বভাবগত ত্রুটিটি
বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে, আর তা তাকে
সরাসরি অবাধ্যতাকে গ্রহণ করার দিকে
অথবা আবশ্যকীয় বিষয় বর্জন করার দিকে
নিয়ে যাবে; এমতাবস্থায় সে তাকে
বক্রতার উপর ছেড়ে দেবে না। পক্ষান্তরে
যখন তার বক্রতাটি কোনো বৈধ
কর্মকাণ্ডের বিষয়ে হয়, তখন সে তাকে
তার উপর ছেড়ে দেবে। – দেখুন: ফাতহুল
বারী, ৯/২৫৪।
[4] হাদিসটি সহীহ; তা বর্ণনা করেছেন
তিরমিযী (৩৮৯২); ইবনু মাজাহ (১৯৭৭); ইবনু
হিব্বান, আস-সহীহ (১৩১২)
[5] বুখারী, আল-জামে‘উস সহীহ (৫১৯৭)
[6] হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী
(১১৬১) এবং তিনি তাকে ‘হাসান’ বলেছেন;
ইবনু মাজাহ (১৮৫৪); হাকেম, ৪/১৭৩ এবং
তিনি বলেছেন: হাদিসটির সনদ সহীহ
(বিশুদ্ধ)।
[7] সুনানু ইবনে মাজাহ: ২০১৮; সহীহু ইবনে
হিব্বান: ৪২৬৫
___________________________________________
______________________________________
সংকলন: ড. সালেহ ইবন আবদিল্লাহ ইবন
হুমাইদ
অনুবাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব

Mohammad Abdur Rakib

স্ত্রীর সাথে সুন্দর ব্যবহারের অসিয়ত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ َّﻦُﻫﻭُﺮِﺷﺎَﻋَﻭ ِۚﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٩ ‏]
অর্থাৎ “তোমরা তাদের সাথে
সৎভাবে জীবন যাপন কর।” (সূরা নিসা ১৯
আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ﻦَﻟَﻭ ْﺍٓﻮُﻌﻴِﻄَﺘۡﺴَﺗ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﻟِﺪۡﻌَﺗ َﻦۡﻴَﺑ
ِﺀٓﺎَﺴِّﻨﻟﭐ ۡﻮَﻟَﻭ ۖۡﻢُﺘۡﺻَﺮَﺣ ﺎَﻠَﻓ ْﺍﻮُﻠﻴِﻤَﺗ َّﻞُﻛ
ِﻞۡﻴَﻤۡﻟﭐ ﺎَﻫﻭُﺭَﺬَﺘَﻓ ِۚﺔَﻘَّﻠَﻌُﻤۡﻟﭑَﻛ ﻥِﺇَﻭ
ْﺍﻮُﺤِﻠۡﺼُﺗ ْﺍﻮُﻘَّﺘَﺗَﻭ َّﻥِﺈَﻓ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﺎَﻛ ﺍٗﺭﻮُﻔَﻏ
ﺎٗﻤﻴِﺣَّﺭ ١٢٩ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٢٩‏]
অর্থাৎ “তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা
কর না কেন, স্ত্রীদের প্রতি সমান
ভালোবাসা তোমরা কখনই রাখতে পারবে
না। তবে তোমরা কোন এক জনের দিকে
সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে
ঝুলন্ত অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আর যদি
তোমরা নিজেদের সংশোধন কর ও সংযমী
হও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।” (সূরা নিসা ১২৯ আয়াত)
1/278. ْﻦَﻋَﻭ ﻲِﺑَﺃ َﺓَﺮﻳَﺮُﻫ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ
،ﻪﻨﻋ َﻝﺎَﻗ : َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ :ﷺ
‏«ﺍﻮُﺻْﻮَﺘْﺳﺍ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎﺑ ًﺍﺮْﻴَﺧ ؛ َّﻥِﺈَﻓ
َﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ ْﺖَﻘِﻠُﺧ ْﻦِﻣ ،ٍﻊﻠِﺿ َّﻥﺇَﻭ َﺝَﻮْﻋﺃ ﺎَﻣ
ﻲﻓ ِﻊَﻠِّﻀﻟﺍ ،ُﻩﻼْﻋﺃ ْﻥﺈَﻓ َﺖﺒَﻫَﺫ ُﻪُﻤﻴﻘُﺗ
،ُﻪَﺗْﺮَﺴَﻛ ْﻥﺇَﻭ ،ُﻪَﺘْﻛَﺮَﺗ ْﻢَﻟ ْﻝَﺰَﻳ ،َﺝﻮْﻋﺃ
ﺍﻮُﺻﻮَﺘْﺳﺎَﻓ ِﺀﺎﺴِّﻨﻟﺎﺑ‏» ٌﻖَﻔَّﺘُﻣ . ِﻪﻴَﻠَﻋ
ﻲﻓﻭ ﺔﻳﺍﻭﺭ ﻲﻓ :ﻦﻴﺤﻴﺤﺼﻟﺍ
‏«ُﺓﺃﺮَﻤﻟﺍ ِﻊَﻠِّﻀﻟﺎﻛ ْﻥﺇ ﺎَﻬَﺘْﻤَﻗﺃ ،ﺎَﻬَﺗْﺮَﺴَﻛ
ﻥﺇَﻭ َﺖْﻌَﺘﻤَﺘْﺳﺍ ،ﺎَﻬِﺑ َﺖْﻌَﺘﻤَﺘْﺳﺍ ﺎَﻬﻴِﻓﻭ
ٌﺝَﻮﻋ‏» .
ﻲﻓﻭ ﺔﻳﺍﻭﺭ :ﻢﻠﺴﻤﻟ ‏« َّﻥﺇ َﺓﺃﺮَﻤﻟﺍ
ﺖَﻘِﻠُﺧ ْﻦِﻣ ،ﻊَﻠِﺿ ْﻦَﻟ َﻢﻴِﻘَﺘْﺴَﺗ َﻚَﻟ ﻰَﻠَﻋ
،ﺔﻘﻳﺮَﻃ ﻥﺈﻓ َﺖْﻌَﺘْﻤَﺘْﺳﺍ ﺎَﻬِﺑ َﺖْﻌَﺘْﻤَﺘْﺳﺍ
ﺎَﻬِﺑ ﺎَﻬﻴﻓَﻭ ،ٌﺝَﻮﻋ ْﻥﺇﻭ َﺖْﺒَﻫَﺫ ﺎَﻬُﻤﻴِﻘُﺗ
ﺎَﻫُﺮْﺴَﻛَﻭ ،ﺎﻬَﺗْﺮَﺴَﻛ ﺎَﻬُﻗَﻼَﻃ‏» .
১/২৭৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের
জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে
পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা
হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে
বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি
তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে
ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে
দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই
তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [1]
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায়
আছে, ‘‘মহিলা পাঁজরের হাড়ের মত। যদি
তুমি তাকে সোজা করতে চাও, তবে তুমি
তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার
দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তাহলে তার এ
বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে,
‘‘মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে
সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই একভাবে
তোমার জন্য সোজা থাকবে না। এতএব
তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও,
তাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে
হবে। আর যদি তুমি তা সোজা করতে চাও,
তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে
ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক দেওয়া।’’
(বুখারী ও মুসলিম)
2/279. ﻦَﻋَﻭ ِﺪﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦﺑ َﺔَﻌْﻣَﺯ ﻲﺿﺭ
ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻨﻋ : ُﻪَّﻧﺃ َﻊِﻤَﺳ َّﻲﺒَّﻨﻟﺍ ﷺ ،ُﺐُﻄْﺨَﻳ
َﺮَﻛَﺫَﻭ َﺔَﻗﺎَّﻨﻟﺍ ﻱِﺬَّﻟﺍَﻭ ،ﺎَﻫَﺮَﻘَﻋ َﻝﺎَﻘَﻓ
ﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ :ﷺ ‏« ﴿ ِﺫِﺇ َﺚَﻌَﺒۢﻧﭐ ﺎَﻬٰﻯَﻘۡﺷَﺃ ١٢
﴾ ‏[ :ﺲﻤﺸﻟﺍ ١٢‏] َﺚَﻌَﺒْﻧﺍ ﺎَﻬَﻟ ٌﻞُﺟَﺭ ،ٌﺰﻳﺰَﻋ
ٌﻡِﺭﺎَﻋ ٌﻊﻴﻨَﻣ ﻲﻓ ِﻪِﻄْﻫَﺭ ‏» ، َّﻢُﺛ َﺮَﻛَﺫ
،َﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻆَﻋﻮَﻓ ،َّﻦﻬﻴِﻓ :َﻝﺎَﻘَﻓ ‏« ُﺪِﻤْﻌَﻳ
ْﻢُﻛُﺪَﺣﺃ ُﺪِﻠْﺠَﻴَﻓ ُﻪَﺗﺃَﺮْﻣﺍ َﺪْﻠَﺟ ِﺪْﺒَﻌﻟﺍ
ُﻪَّﻠَﻌَﻠَﻓ ﺎَﻬُﻌِﺟﺎَﻀُﻳ ْﻦِﻣ ِﺮِﺧﺁ ِﻪِﻣﻮَﻳ‏» َّﻢُﺛ.
ْﻢُﻬَﻈَﻋَﻭ ﻲﻓ ْﻢﻬِﻜِﺤَﺿ َﻦِﻣ ،ِﺔَﻃْﺮَّﻀﻟﺍ :َﻝﺎﻗَﻭ
‏« َﻢِﻟ ُﻚَﺤْﻀَﻳ ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ﺎَّﻤِﻣ ُﻞَﻌْﻔَﻳ !؟‏» . ٌﻖَﻔَّﺘُﻣ
ِﻪﻴَﻠَﻋ
২/২৭৯। আব্দুল্লাহ ইবনে যামআহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ দিতে
শুনলেন। তিনি (খুৎবার মাধ্যমে) (সালেহ
নবীর) উটনী এবং ঐ ব্যক্তির কথা আলোচনা
করলেন, যে ঐ উঁটনীটিকে কেটে
ফেলেছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘যখন তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য
ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্স ১২
আয়াত) (অর্থাৎ) উঁটনীটিকে মেরে ফেলার
জন্য নিজ বংশের মধ্যে এক দুরন্ত
চরিত্রহীন প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে
উঠেছিল।’’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের কথা
আলোচনা করলেন এবং তাদের ব্যাপারে
উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন,
‘‘তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে
দাসদের মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত
দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়।
(এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায় তিনি তাদেরকে
বাতকর্মের ব্যাপারে হাসতে নিষেধ
করলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন
কাজে কেন হাসে, যে কাজ সে নিজেও
করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [2]
3/280. ْﻦَﻋﻭ ﻲِﺑَﺃ َﺓَﺮﻳَﺮُﻫ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ
،ﻪﻨﻋ : َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ﻝﻮُﺳَﺭ ﻪﻠﻟﺍ :ﷺ ‏« َﻻ ْﻙَﺮْﻔَﻳ
ٌﻦِﻣْﺆُﻣ ًﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ْﻥﺇ َﻩِﺮَﻛ ﺎَﻬْﻨِﻣ ًﺎﻘُﻠُﺧ َﻲِﺿَﺭ
ﺎَﻬْﻨِﻣ َﺮَﺧﺁ‏» ، ْﻭَﺃ :َﻝﺎَﻗ ‏« ُﻩَﺮْﻴَﻏ‏» ﻩﺍﻭﺭ
ﻢﻠﺴﻣ
৩/২৮০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন
ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী
(স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার
একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য
আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম) [3]
4/281. ﻦَﻋَﻭ ﻭِﺮﻤَﻋ ِﻦﺑ ِﺹَﻮﺣﻷﺍ
ﻲِﻤَﺸُﺠﻟﺍ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻨﻋ : ُﻪَّﻧﺃ َﻊِﻤَﺳ
ّﻲﺒَّﻨﻟﺍ ﷺ ﻲﻓ ِﺔَّﺠَﺣ ِﻉﺍَﺩَﻮﻟﺍ ُﻝﻮُﻘَﻳ َﺪْﻌَﺑ ْﻥﺃ
َﺪِﻤَﺣ ﻪﻠﻟﺍ ،ﻰَﻟﺎَﻌَﺗ ﻰَﻨْﺛﺃَﻭ ِﻪﻴَﻠَﻋ َﺮَّﻛَﺫَﻭ
،َﻆﻋَﻭَﻭ َّﻢُﺛ :َﻝﺎَﻗ ‏« ﻻﺃ ﺍﻮُﺻﻮَﺘْﺳﺍَﻭ
ِﺀﺎﺴِّﻨﻟﺎﺑ ،ًﺍﺮْﻴَﺧ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ َّﻦُﻫ ٍﻥﺍَﻮَﻋ
ْﻢُﻛَﺪْﻨِﻋ َﺲْﻴَﻟ َﻥﻮُﻜِﻠْﻤَﺗ َّﻦُﻬْﻨِﻣ ًﺎﺌْﻴَﺷ َﺮْﻴَﻏ
َﻚِﻟﺫ َّﻻﺇ َﻦﻴِﺗﺄَﻳ ْﻥﺃ ٍﺔَﺸِﺣﺎَﻔِﺑ ،ٍﺔَﻨِّﻴَﺒُﻣ ْﻥﺈَﻓ
َﻦْﻠَﻌَﻓ َّﻦُﻫﻭُﺮُﺠْﻫﺎَﻓ ﻲﻓ ،ﻊِﺟﺎَﻀَﻤﻟﺍ
َّﻦُﻫﻮُﺑِﺮْﺿﺍَﻭ ًﺎﺑﺮَﺿ َﺮْﻴَﻏ ،ٍﺡِّﺮَﺒُﻣ ْﻥﺈﻓ
ْﻢُﻜَﻨْﻌَﻃﺃ ﻼَﻓ ﺍﻮُﻐْﺒَﺗ َّﻦﻬﻴَﻠَﻋ ًﻼﻴﺒَﺳ ؛ َﻻﺃ
َّﻥﺇ ْﻢُﻜَﻟ ﻰَﻠَﻋ ْﻢُﻜِﺋﺎَﺴِﻧ ،ًﺎّﻘَﺣ ْﻢُﻜِﺋﺎَﺴِﻨِﻟَﻭ
ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ ًﺎّﻘَﺣ ؛ ْﻢُﻜُّﻘَﺤَﻓ َّﻦِﻬﻴَﻠَﻋ ْﻥﺃ ﻻ
َﻦْﺌِﻃﻮُﻳ ْﻢُﻜَﺷُﺮُﻓ ،َﻥﻮُﻫَﺮْﻜَﺗ ْﻦَﻣ ﻻَﻭ َّﻥَﺫْﺄَﻳ ﻲﻓ
ْﻢُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ْﻦَﻤِﻟ َﻥﻮُﻫَﺮْﻜَﺗ ؛ َﻻﺃ َّﻦُﻬُّﻘَﺣَﻭ
ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ ْﻥﺃ ﺍﻮُﻨِﺴْﺤُﺗ َّﻦِﻬْﻴَﻟِﺇ ﻲﻓ َّﻦﻬِﺗَﻮْﺴِﻛ
َّﻦﻬِﻣﺎَﻌَﻃَﻭ ‏» ﻩﺍﻭﺭ ،ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ :َﻝﺎﻗَﻭ
‏«ﺚﻳﺪﺣ ﻦﺴﺣ ﺢﻴﺤﺻ‏»
৪/২৮১। ‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস জুশামী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি
বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি
সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি
বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত
করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো!
তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।
কেননা, তারা তোমাদের নিকট কয়েদী।
তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী
হওয়া, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং
তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি)
ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ
না। হ্যাঁ, সে যদি কোন প্রকাশ্য
অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা
তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখ)।
সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে, তবে
তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও
এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার যেন
যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি
তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের
জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না।
মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের উপর
তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ
তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের
অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হল,
তারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব
লোককে আসতে না দেয়, যাদেরকে
তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব
লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার
অনুমতি না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ
কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের
অধিকার এই যে, তাদেরকে ভালোরূপে
খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী, হাসান
সূত্রে) [4]
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী। স্বামীর
হুকুম পালনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীকে বন্দিনীর সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ তাতে
কেটে-ফুটে না যায় এবং কঠিন ব্যথা না
হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো নাঃ
অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান করো না, যাতে
তাদেরকে নাজেহাল করে কষ্ট দাও।
(অথবা তালাক ইত্যাদি দেওয়ার কথা
ভেবো না।)
5/282. ﻦَﻋَﻭ َﺔَﻳِﻭﺎَﻌُﻣ ِﻦﺑ َﺓَﺪﻴَﺣ ﻲﺿﺭ
ﻪﻠﻟﺍ ،ﻪﻨﻋ َﻝﺎَﻗ : ُﺖْﻠُﻗ : ﺎَﻳ َﻝﻮُﺳَﺭ ،ﻪﻠﻟﺍ
ﺎَﻣ ُّﻖَﺣ ِﺔَﺟﻭَﺯ ﺎَﻧِﺪَﺣَﺃ ِﻪﻴَﻠَﻋ ؟ :َﻝﺎَﻗ ‏« ْﻥﺃ
ﺎَﻬَﻤِﻌْﻄُﺗ ﺍَﺫِﺇ ،َﺖْﻤِﻌﻃ ﺎَﻫﻮُﺴْﻜَﺗَﻭ ﺍَﺫِﺇ
،َﺖْﻴَﺴَﺘْﻛﺍ َﻻَﻭ ِﺏِﺮْﻀَﺗ ،َﻪْﺟَﻮﻟﺍ ﻻَﻭ ،ْﺢِّﺒَﻘُﺗ
ﻻَﻭ ْﺮُﺠْﻬَﺗ َّﻻﺇ ﻲﻓ ِﺖْﻴَﺒﻟﺍ‏» ٌﺚﻳﺪﺣ. ٌﻦﺴﺣ
ﻩﺍﻭﺭ ﻮُﺑَﺃ ﺩﻭﺍﺩ َﻝﺎﻗَﻭ : ﻰﻨﻌﻣ ‏« ﻻ
ْﺢِّﺒَﻘُﺗ ‏» : ﻱﺃ ﻻ ﻞﻘﺗ ِﻚﺤﺒﻗ : .ﻪﻠﻟﺍ
৫/২৮২। মুআবিয়াহ ইবনে হাইদাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! আমাদের কারো স্ত্রীর অধিকার
স্বামীর উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি
খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে
তাকে পরাবে। (তার) চেহারায় মারবে
না, তাকে ‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার
থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই
থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য
করার জন্য বিছানা পৃথক করতে পারা
যাবে, কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ
দাউদ, হাসান সূত্রে) [5]
* ‘কুৎসিত হ’ বলবে নাঃ অর্থাৎ
‘আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুক’ বলে
অভিশাপ দেবে না।
6/283. ْﻦَﻋَﻭ ﻲِﺑَﺃ َﺓَﺮﻳَﺮُﻫ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ
،ﻪﻨﻋ َﻝﺎَﻗ : َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ :ﷺ ‏« ُﻞَﻤْﻛﺃ
َﻦﻴِﻨِﻣﺆُﻤﻟﺍ ًﺎﻧﺎَﻤﻳﺇ ْﻢُﻬُﻨَﺴْﺣﺃ ،ًﺎﻘُﻠُﺧ
ْﻢُﻛُﺭﺎَﻴِﺧﻭ ﻢُﻛُﺭﺎَﻴِﺧ ْﻢِﻬِﺋﺎَﺴِﻨِﻟ‏» . ﻩﺍﻭﺭ
،ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ :َﻝﺎﻗَﻭ ‏« ﺚﻳﺪﺣ ﻦﺴﺣ ﺢﻴﺤﺻ‏» .
৬/২৮৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মু’মিন ঐ
ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দর, আর
তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে
নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’
(তিরমিযী) [6]
7/284. ﻦَﻋَﻭ ِﺱﺎَﻳِﺇ ِﻦﺑ ِﺪﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦﺑ
ﻲﺑَﺃ ٍﺏﺎَﺑِﺫ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ،ﻪﻨﻋ :َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ :ﷺ ‏« َﻻ ﺍﻮُﺑِﺮْﻀَﺗ ﺀﺎَﻣﺇ ﻪﻠﻟﺍ ‏»
ﺀﺎﺠﻓ ُﺮَﻤُﻋ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻨﻋ ﻰَﻟِﺇ ِﻝﻮﺳﺭ
ﻪﻠﻟﺍ ،ﷺ َﻝﺎَﻘَﻓ : َﻥْﺮِﺋَﺫ ُﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ
،َّﻦِﻬِﺟﺍَﻭْﺯﺃ َﺺَّﺧَﺮَﻓ ﻲﻓ ،َّﻦِﻬِﺑْﺮَﺿ َﻑﺎَﻃﺄَﻓ
ِﻝﺂﺑ ِﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﷺ ٌﺀﺎَﺴِﻧ ٌﺮﻴﺜَﻛ َﻥﻮُﻜْﺸَﻳ
،َّﻦُﻬَﺟﺍﻭْﺯﺃ َﻝﺎَﻘَﻓ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ :ﷺ ‏« ْﺪَﻘَﻟ
َﻑﺎَﻃﺃ ِﻝﺂِﺑ ِﺖﻴَﺑ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ٌﺀﺎَﺴِﻧ ٌﺮﻴﺜﻛ َﻥﻮُﻜْﺸَﻳ
َّﻦُﻬَﺟﺍَﻭْﺯﺃ َﺲْﻴَﻟ َﻚﺌَﻟﻭﺃ ْﻢُﻛِﺭﺎَﻴﺨﺑ ‏». ﻩﺍﻭﺭ
ﻮُﺑَﺃ ﺩﺎﻨﺳﺈﺑ ﺩﻭﺍﺩ ﺢﻴﺤﺻ
৭/২৮৪। ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে
প্রহার করবে না।’’ পরবর্তীতে উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে
বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের উপর
বড় দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’ সুতরাং নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার
করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পরিবারের নিকট বহু মহিলা এসে নিজ নিজ
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের
পরিবারের নিকট প্রচুর মহিলাদের সমাগম,
যারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে
অভিযোগ করছে। (জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ
(স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ
নয়।’’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [7]
8/285. ﻦَﻋَﻭ ِﺪﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦﺑ ﻭِﺮﻤَﻋ ِﻦﺑ
ِﺹﺎَﻌﻟﺍ َﻲِﺿَﺭ ُﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻤُﻬﻨَﻋ : َّﻥﺃ َﻝﻮُﺳَﺭ
ِﻪﻠﻟﺍ ،ﷺ :َﻝﺎَﻗ ‏«ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ،ٌﻉﺎَﺘَﻣ ُﺮﻴَﺧَﻭ
ﺎَﻬِﻋﺎَﺘَﻣ ُﺔَﺤِﻟﺎَّﺼﻟﺍ ُﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ‏» . ﻩﺍﻭﺭ ﻢﻠﺴﻣ
৮/২৮৫। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য
সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ
সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’ (মুসলিম) [8]
[1] সহীহুল বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬০১৮,
৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮,
তিরমিযী ১১৮৮
[2] সহীহুল বুখারী ৩৩৭৭, ৪৯৪২,৫২০৪, ৬০৪২,
মুসলিম ২৮৫৫, তিরমিযী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ
১৯৮৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০
[3] মুসলিম ১৪৬৯, আহমাদ ৮১৬৩
[4] তিরমিযী ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১
[5] আবূ দাউদ ২১৪২, ২১৪৩, ২১৪৪, ইবনু মাজাহ
১৮৫০
[6] তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬,
১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২
[7] আবূ দাউদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, দারেমী
২২১৯
[8] মুসলিম ১৪৬৭, নাসায়ী ৩২৩২, ইবনু মাজাহ
১৮৫৫, আহমাদ ৬৫৩১
______________________________________________
___________________________________________
___________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া
ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ
নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সূত্র : ইসলামহাউজ

আদর্শ স্বামী সহিহ্ হাদিসের আলোকে

হাদীসের আলোকে আদর্শ স্বামী
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
ۡﻦِﻣَﻭ﴿ ٓۦِﻪِﺘَٰﻳﺍَﺀ ۡﻥَﺃ َﻖَﻠَﺧ ﻢُﻜَﻟ ۡﻦِّﻣ ۡﻢُﻜِﺴُﻔﻧَﺃ
ﺎٗﺟَٰﻭۡﺯَﺃ ْﺍٓﻮُﻨُﻜۡﺴَﺘِّﻟ ﺎَﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻞَﻌَﺟَﻭ ﻢُﻜَﻨۡﻴَﺑ
ٗﺓَّﺩَﻮَّﻣ ًۚﺔَﻤۡﺣَﺭَﻭ َّﻥِﺇ ﻲِﻓ َﻚِﻟَٰﺫ ٖﺖَٰﻳٓﺄَﻟ ٖﻡۡﻮَﻘِّﻟ
َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ ٢١ ﴾ ‏[ :ﻡﻭﺮﻟﺍ ٢١‏]
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে
রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য
তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি
করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে
প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের
মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।
নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে
কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে” । [সূরা :
আর্-রূম: ২১]
হাদীসে এসেছে,
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ،ٍﺱﺎَّﺒَﻋ ِﻦَﻋ ِّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ :َﻝﺎَﻗ ‏«ْﻢُﻛُﺮْﻴَﺧ ْﻢُﻛُﺮْﻴَﺧ
،ِﻪِﻠْﻫَﺄِﻟ ْﻢُﻛُﺮْﻴَﺧ ﺎَﻧَﺃَﻭ ﻲِﻠْﻫَﺄِﻟ‏»
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম
যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি
তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট
সর্বোত্তম ব্যক্তি” ।[1]
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের
অর্ধাঙ্গ। মানুষ যেমন তার অর্ধেক অঙ্গ
নিয়ে পূর্ণ জীবনের সাধ পেতে পারে না,
তেমনি একজন লোক একজন ভাল স্বামী বা
স্ত্রী ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে
না। একে অপরকে যতটা বুঝতে পারবে
তাদের জীবন ততটাই সুন্দর ও মধুময় হবে।
একজন পুরুষের জীবনে যেমন অন্যতম আশা
থাকে ভালো একজন স্ত্রী পাওয়া,
তেমনিভাবে একজন মেয়েরও জীবনে
সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া হলো ভালো
একজন স্বামী ভাগ্যে জুটা । একমাত্র একজন
আদর্শ স্বামীই পারে তার স্ত্রীর জীবনকে
পূর্ণ করে দিতে। স্বামীর বাড়ির লোকজন
যতই খারাপ হোক, যতই নিষ্ঠুর হোক, স্বামী
যদি তার স্ত্রীকে বুঝতে পারে, তাকে
ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে পারে,
তবে তাদের সংসার জীবন অনাবিল সুখে
ভরপুর হয়ে যাবে। সেখানে পাওয়া যাবে
জান্নাতের সন্ধান। এজন্য একজন ভাল
স্বামী পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সমগ্র মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ । তিনি
একদিকে যেমন একজন নবী-রাসূল,
সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, অন্যদিকে তিনি
তার স্ত্রীদের নিকট সবচেয়ে
ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। একজন স্বামী
হিসেবে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি আপনার
আদর্শ বানাতে পারেন তবে পৃথিবীর সব
স্ত্রীরাই সুখী হবেন, আপনার সংসারটা
কানায় কানায় ভরে যাবে ভালোবাসায়।
আপনি পাবেন আপনার স্ত্রীর সীমাহীন
ভালোবাসা, আপনার স্ত্রী আপনাকে
নিয়ে সকলের কাছে গর্ব করবে। বলবে,
এমনই একজন স্বামী তার জীবনে স্বপ্ন
ছিল। স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর
শ্রেষ্ট মহামানব। কি কি কাজ করলে
আপনি একজন আদর্শ স্বামী হবেন এবং
স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তা
নিম্নে আলোচনা করা হলো:
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা:
আপনি বাইরের কাজ করে এসে
দেখলেন আপনার স্ত্রীর রান্না বা অন্যান্য
কাজে বিলম্ব হচ্ছে, এতে আপনি ভ্রূকুটি
না করে তার কাজে সহযোগিতা করুন,
দেখবেন আপনাকে সে কত ভালোবাসে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর স্ত্রীদের ঘরের কাজে সহযোগিতা
করতেন।
ِﻦَﻋ ،ِﺩَﻮْﺳَﻷﺍ :َﻝﺎَﻗ ُﺖْﻟَﺄَﺳ ،َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ ﺎَﻣ َﻥﺎَﻛ
ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻊَﻨْﺼَﻳ ﻲِﻓ
؟ِﻪِﻠْﻫَﺃ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ‏«َﻥﺎَﻛ ﻲِﻓ ِﺔَﻨْﻬِﻣ ،ِﻪِﻠْﻫَﺃ
ﺍَﺫِﺈَﻓ ُﺓَﻼَّﺼﻟﺍ ِﺕَﺮَﻀَﺣ َﻡﺎَﻗ ﻰَﻟِﺇ ِﺓَﻼَّﺼﻟﺍ‏»
আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী
কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি
বললেন, “তিনি স্ত্রীদের কাজে
সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময়
হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন”। [2]
সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতাপ দেখানোর
মত লোক ছিলেন না । বরং নিজের কাজ
নিজেই করতেন। এ হাদীস দ্বারা তিনি
উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে,
স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে,
তাদের সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করা যাবে না।
বাড়িতে নিজের কাজ নিজেই করা:
আপনার স্ত্রী বাড়িতে সন্তান
সন্ততি লালন পালন, সাংসারিক কাজ
ইত্যাদি ঝামেলায় সব সময় ব্যস্ত থাকেন।
ফলে অনেক সময় আপনাকে সময় দিতে
পারেন না। তাতে আপনি তার উপর রাগ না
করে আপনার ছোট খাট কাজ আপনি নিজেই
সেরে ফেলতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাই করতেন।
َﻝَﺄَﺳ :َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ ٌﻞُﺟَﺭ ُﻝﻮُﺳَﺭ َﻥﺎَﻛَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻞَﻤْﻌَﻳ ﻲِﻓ ؟ِﻪِﺘْﻴَﺑ
:ْﺖَﻟﺎَﻗ ‏«ْﻢَﻌَﻧ َﻥﺎَﻛ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻒِﺼْﺨَﻳ ،ُﻪَﻠْﻌَﻧ ،ُﻪَﺑْﻮَﺛ ُﻂﻴِﺨَﻳَﻭ
ُﻞَﻤْﻌَﻳَﻭ ﻲِﻓ ِﻪِﺘْﻴَﺑ ﺎَﻤَﻛ ُﻞَﻤْﻌَﻳ ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ﻲِﻓ
ِﻪِﺘْﻴَﺑ ‏»
এক লোক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলো, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে
কি কাজ করতেন? উত্তরে আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “হ্যাঁ, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের
কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা
মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে
তিনি তা করতেন” ।[3]
স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া ও
পারিবারিক কাজে তার পরামর্শ
নেওয়া:
আপনার পরিবারের সব ছোট বড়
সিদ্ধান্তে আপনার স্ত্রীর মতামত গ্রহণ
করুন। তাকে সম্মান দেখান, দেখবেন সেও
আপনাকে অনেক সম্মান করবে। কেননা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উম্মতের নানা সমস্যা তাঁর স্ত্রীদের
কাছে জানাতেন। তাঁরা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
পরামর্শ দিতেন। যেমন: হুদাইবিয়ার সন্ধির
সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে চুক্তি শেষ
করে সাহাবাদেরকে হাদির পশু যবাই
করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা রাসূলের
হিকমত বুঝতে না পেরে যবাই করতে
বিলম্ব করেন, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে
উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহার
নিকট প্রবেশ ঘটনা জানান। তিনি এ সমস্যা
সমাধানে সুন্দর মতামত দেন।
َﻝﺎَﻗ ُﺮَﻤُﻋ :- ُﺖْﻠِﻤَﻌَﻓ َﻚِﻟَﺬِﻟ ،ﺎًﻟﺎَﻤْﻋَﺃ :َﻝﺎَﻗ
ﺎَّﻤَﻠَﻓ َﻍَﺮَﻓ ْﻦِﻣ ِﺔَّﻴِﻀَﻗ ،ِﺏﺎَﺘِﻜﻟﺍ َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ
ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ :ِﻪِﺑﺎَﺤْﺻَﺄِﻟ
‏«ﺍﻮُﻣﻮُﻗ ﺍﻭُﺮَﺤْﻧﺎَﻓ َّﻢُﺛ ﺍﻮُﻘِﻠْﺣﺍ‏» ، :َﻝﺎَﻗ
ِﻪَّﻠﻟﺍَﻮَﻓ ﺎَﻣ َﻡﺎَﻗ ْﻢُﻬْﻨِﻣ ٌﻞُﺟَﺭ ﻰَّﺘَﺣ َﻝﺎَﻗ
َﻚِﻟَﺫ َﺙَﻼَﺛ ،ٍﺕﺍَّﺮَﻣ ﺎَّﻤَﻠَﻓ ْﻢَﻟ ْﻢُﻘَﻳ ْﻢُﻬْﻨِﻣ
ٌﺪَﺣَﺃ َﻞَﺧَﺩ ﻰَﻠَﻋ ِّﻡُﺃ ،َﺔَﻤَﻠَﺳ َﺮَﻛَﺬَﻓ ﺎَﻬَﻟ ﺎَﻣ
َﻲِﻘَﻟ َﻦِﻣ ،ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ ْﺖَﻟﺎَﻘَﻓ ُّﻡُﺃ :َﺔَﻤَﻠَﺳ ﺎَﻳ
َّﻲِﺒَﻧ ،ِﻪَّﻠﻟﺍ ُّﺐِﺤُﺗَﺃ ،َﻚِﻟَﺫ ْﺝُﺮْﺧﺍ َّﻢُﺛ َﻻ
ْﻢِّﻠَﻜُﺗ ﺍًﺪَﺣَﺃ ْﻢُﻬْﻨِﻣ ،ًﺔَﻤِﻠَﻛ ﻰَّﺘَﺣ َﺮَﺤْﻨَﺗ
،َﻚَﻧْﺪُﺑ َﻮُﻋْﺪَﺗَﻭ َﻚَﻘِﻟﺎَﺣ ،َﻚَﻘِﻠْﺤَﻴَﻓ َﺝَﺮَﺨَﻓ
ْﻢَﻠَﻓ ْﻢِّﻠَﻜُﻳ ﺍًﺪَﺣَﺃ ْﻢُﻬْﻨِﻣ ﻰَّﺘَﺣ َﻞَﻌَﻓ َﻚِﻟَﺫ
َﺮَﺤَﻧ ،ُﻪَﻧْﺪُﺑ ﺎَﻋَﺩَﻭ ُﻪَﻘِﻟﺎَﺣ ،ُﻪَﻘَﻠَﺤَﻓ ﺎَّﻤَﻠَﻓ
ﺍْﻭَﺃَﺭ َﻚِﻟَﺫ ،ﺍﻮُﻣﺎَﻗ ﺍﻭُﺮَﺤَﻨَﻓ َﻞَﻌَﺟَﻭ
ْﻢُﻬُﻀْﻌَﺑ ُﻖِﻠْﺤَﻳ ﺎًﻀْﻌَﺑ ﻰَّﺘَﺣ َﺩﺎَﻛ ْﻢُﻬُﻀْﻌَﺑ
ُﻞُﺘْﻘَﻳ ﺎًﻀْﻌَﺑ ﺎًّﻤَﻏ
“(এ ঘটনাটি উল্লেখ করে) উমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, আমি এর
জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফফারা
হিসাবে) অনেক নেক আমল করেছি।
বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ
হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন,
তোমরা উঠ এবং যবাই কর ও মাথা কামিয়ে
ফেল। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ
উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না
দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে লোকদের
এ আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর
নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি
বাইরে যান ও তাদের সাথে কোনো কথা
না বলে আপনার উট আপনি নাহর (যবেহ)
করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে
নিন। সে অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন
এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে
নিজের পশু যবাই করলেন এবং ক্ষুরকার
ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেকে
সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু
কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা
কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হলো যে,
ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে
লাগলেন” । [4]
স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে বদান্যতা
ও সুন্দর আচরণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার
পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন,
তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন,
মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের
সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে
আচরণ করতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে
পূর্ণাংগ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম
চরিত্রের ও তার পরিবারের সাথে
সদব্যবহার করে” । (তিরমিযী)
ইবনে সা‘দ রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তাকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে
একান্তে অবস্থানকালীন সময়ের স্বভাব
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি
বলেনঃ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে কোমল
ব্যক্তি, সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল, তিনি
কখনও তার সঙ্গীদের সামনে (তার
শিষ্টাচারিতা ও পরিপূর্ণ সম্মানবোধের
কারনে) পা প্রসারিত করে বসতেন না” ।
স্ত্রীর উপর অযথা রাগ না করা, তারা
রেগে গেলে ধৈর্য্য ধারণ করা:
ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ َﻲِﺿَﺭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ،ﺎَﻬْﻨَﻋ :ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ﻲِﻟ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ
‏«ﻲِّﻧِﺇ ُﻢَﻠْﻋَﺄَﻟ ﺍَﺫِﺇ ِﺖْﻨُﻛ ﻲِّﻨَﻋ ،ًﺔَﻴِﺿﺍَﺭ
ﺍَﺫِﺇَﻭ ِﺖْﻨُﻛ َّﻲَﻠَﻋ ﻰَﺒْﻀَﻏ‏» :ْﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺖْﻠُﻘَﻓ ْﻦِﻣ
َﻦْﻳَﺃ ُﻑِﺮْﻌَﺗ ؟َﻚِﻟَﺫ :َﻝﺎَﻘَﻓ ” ﺎَّﻣَﺃ ﺍَﺫِﺇ ِﺖْﻨُﻛ
ﻲِّﻨَﻋ ،ًﺔَﻴِﺿﺍَﺭ ِﻚَّﻧِﺈَﻓ :َﻦﻴِﻟﻮُﻘَﺗ َﻻ ِّﺏَﺭَﻭ
،ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ﺍَﺫِﺇَﻭ ِﺖْﻨُﻛ َّﻲَﻠَﻋ ،ﻰَﺒْﻀَﻏ :ِﺖْﻠُﻗ َﻻ
ِّﺏَﺭَﻭ َﻢﻴِﻫﺍَﺮْﺑِﺇ ” :ْﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺖْﻠُﻗ ْﻞَﺟَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺍَﻭ
ﺎَﻳ َﻝﻮُﺳَﺭ ،ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣ ُﺮُﺠْﻫَﺃ ﺎَّﻟِﺇ َﻚَﻤْﺳﺍ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি
আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন
রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কি করে
আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন,
তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব-
এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ
থাকলে বল, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের
রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই
বলেছেন। আল্লাহর্ কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক
উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। [5]
প্রেম ও রোমান্টিকতা:
আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে
সবসময় ভালোবাসার কথা বলবেন, তাকে
রোমান্টিকতা দিয়ে ভরপুর করে রাখবেন।
আপনার স্ত্রী হয়ত ঘুরতে পছন্দ করেন,
তাকে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও
বেড়াতে নিয়ে যান, হারিয়ে যান কোনো
অজানা প্রান্তে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরকে
অনেক সফরে নিয়ে যেতেন।
ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ‏« ُﺖْﻨُﻛ ُﺏَﺮْﺷَﺃ ﺎَﻧَﺃَﻭ
،ٌﺾِﺋﺎَﺣ َّﻢُﺛ ُﻪُﻟِﻭﺎَﻧُﺃ َّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻊَﻀَﻴَﻓ ُﻩﺎَﻓ ﻰَﻠَﻋ ِﻊِﺿْﻮَﻣ ،َّﻲِﻓ
،ُﺏَﺮْﺸَﻴَﻓ ُﻕَّﺮَﻌَﺗَﺃَﻭ َﻕْﺮَﻌْﻟﺍ ﺎَﻧَﺃَﻭ ،ٌﺾِﺋﺎَﺣ
َّﻢُﺛ ُﻪُﻟِﻭﺎَﻧُﺃ َّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ
َﻢَّﻠَﺳَﻭ ُﻊَﻀَﻴَﻓ ُﻩﺎَﻓ ِﻊِﺿْﻮَﻣ ﻰَﻠَﻋ َّﻲِﻓ‏»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়েজ
অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে দিতাম। আমার মুখ
লাগানো স্থানে তিনি তাঁর মুখ লাগিয়ে
পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের
টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি
আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ
লাগাতেন। [6]
ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ُﺖْﺟَﺮَﺧ َﻊَﻣ ِﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﺎﻧﺃَﻭ ُﺔَﻔﻴِﻔَﺧ
ِﻢْﺤَّﻠﻟﺍ ﺎَﻨْﻟَﺰَﻨَﻓ ﺎًﻟِﺰْﻨَﻣ َﻝﺎَﻘَﻓ :ِﻪِﺑﺎَﺤْﺻَﺄِﻟ
‏«ﺍﻮُﻣَّﺪَﻘَﺗ‏» َّﻢُﺛ َﻝﺎَﻗ :ﻲِﻟ ‏«ْﻲَﻟﺎَﻌَﺗ ﻰَّﺘَﺣ
ِﻚَﻘِﺑﺎَﺳُﺃ ﻲِﻨَﻘَﺑﺎَﺴَﻓ ُﻪُﺘْﻘَﺒَﺴَﻓ‏» َّﻢُﺛ ُﺖْﺟَﺮَﺧ
ُﻪَﻌَﻣ ﻲِﻓ ٍﺮَﻔَﺳ ،َﺮَﺧﺁ ْﺪَﻗَﻭ ُﺖْﻠَﻤَﺣ َﻢْﺤَّﻠﻟﺍ
ﺎَﻨْﻟَﺰَﻨَﻓ ﺎًﻟِﺰْﻨَﻣ َﻝﺎَﻘَﻓ :ِﻪِﺑﺎَﺤْﺻَﺄِﻟ
‏«ﺍﻮُﻣَّﺪَﻘَﺗ‏» َّﻢُﺛ َﻝﺎَﻗ :ﻲِﻟ ْﻲَﻟﺎَﻌَﺗ ” ِﻚُﻘِﺑﺎَﺳُﺃ
ﻲِﻨَﻘَﺑﺎَﺴَﻓ ﻲِﻨَﻘَﺒَﺴَﻓ َﺏَﺮَﻀَﻓ ِﻩِﺪَﻴِﺑ ﻲِﻔِﺘَﻛ
:َﻝﺎَﻗَﻭ ‏« ِﻩِﺬَﻫ َﻚْﻠِﺘِﺑ‏»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
বলেন, “একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক
অভিযানে বের হলাম, তখন আমি অল্প বয়সী
ছিলাম, শরীর তেমন মোটা ছিল না। তিনি
তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে
চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল । অতঃপর
তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌঁড়
প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায় আমি
এগিয়ে গেলাম। এরপরে আমার শরীরে
মেদ বেড়ে গেল, একটু মোটা হলাম । একদা
এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আবার সাথীদেরকে বললেন,
তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে
গেল। অতঃপর আমাকে বললেন, এসো আমরা
দৌড় প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায়
তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। তিনি হেসে
হেসে বললেন, এটা তোমার পূর্বের
প্রতিযোগিতার উত্তর (অর্থাৎ তুমি আগে
প্রথম হয়েছিলে, এবার আমি প্রথম হলাম,
তাই মন খারাপ করোনা)। [7]
ইমাম তিরমিযী তার সুনান
কিতাবের অধ্যায়ের শিরোনাম রচনা
করেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর রাত্রিকালীন খোশগল্প
গুজব সম্পর্কে যা বর্ণিত ।’
কাযী ‘ইয়াদ রহ. বলেন, বর্ণিত
আছে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
“তোমরা এ অন্তরকে কিছুক্ষন পরপর
শান্তনা দাও, কেননা তা লোহার
প্রতিধধনির মত আওয়াজ করতে থাকে” ।
তিনি আরো বলেন, “মানুষের অন্তরকে
যখন তার অপছন্দ কাজ করতে বলা হয় তখন
সে অন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ সে আর কাজ
করতে পারে না” ।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তোমরা
ফিকহের মাসলা মাসায়েল শুনতে শুনতে
একটু বিরক্তবোধ করবে তখন তোমরা
কবিতা ও আরবদের কিচ্ছা কাহিনী শুনো” ।
স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া ও বুঝানো:
আপনার পরিবারের কে কি রকম
তা আপনি আপনার স্ত্রীকে আগেই
জানিয়ে দিন। তাকে সবার স্বভাব চরিত্র
সম্পর্কে ধারণা দিলে সে অনুযায়ী তাদের
সাথে মিলে মিশে চলতে সহজ হবে। মাঝে
মধ্যে আপনি তাকে বিভিন্ন সদুপদেশ দেন,
তাকে আপনার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে
বুঝান। এতে সে আপনাকে আরো বেশী
ভালোবাসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে
নারীদেরকে সদুপদেশ দিতেন। বুখারী ও
মুসলিমে এসেছে,
ْﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ َﻲِﺿَﺭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ،ُﻪْﻨَﻋ :َﻝﺎَﻗ
َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ
‏«ﺍﻮُﺻْﻮَﺘْﺳﺍ ،ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎِﺑ َّﻥِﺈَﻓ َﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ
ْﺖَﻘِﻠُﺧ ْﻦِﻣ ،ٍﻊَﻠِﺿ َّﻥِﺇَﻭ َﺝَﻮْﻋَﺃ ٍﺀْﻲَﺷ ﻲِﻓ
ِﻊَﻠِّﻀﻟﺍ ،ُﻩَﻼْﻋَﺃ ْﻥِﺈَﻓ َﺖْﺒَﻫَﺫ ُﻪُﻤﻴِﻘُﺗ
،ُﻪَﺗْﺮَﺴَﻛ ْﻥِﺇَﻭ ُﻪَﺘْﻛَﺮَﺗ ْﻢَﻟ ْﻝَﺰَﻳ ،َﺝَﻮْﻋَﺃ
ﺍﻮُﺻْﻮَﺘْﺳﺎَﻓ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎِﺑ‏»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে
উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ করবে।
কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড়
দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের
হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক
বাঁকা । তুমি যদি তা সোজা করতে যাও,
তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে
দাও, তাহলে সব সময় তা বাকাই থেকে
যাবে । কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণ
করার উপদেশ গ্রহণ কর।[8]
স্ত্রীর পরিবার ও বান্ধবীদেরকে
ভালোবাসা:
স্বামীর পরিবার ও প্রিয়জনকে
আদর আপ্যায়ন ও ভালোবাসা যেমন স্ত্রীর
দায়িত্ব তেমনিভাবে স্ত্রীর পরিবার ও
বন্ধু বান্ধবকে উত্তমরূপে আতিথেয়তা ও
আদর যত্ন করাও স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বান্ধবীর খোঁজ খবর
নিতেন ও তার জন্য খাবার পাঠাতেন।
ْﻦَﻋ ،َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ﺎَﻣ ُﺕْﺮِﻏ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِﻧ
ِّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ،َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﺎَّﻟِﺇ ﻰَﻠَﻋ
َﺔَﺠﻳِﺪَﺧ ﻲِّﻧِﺇَﻭ ْﻢَﻟ ،ﺎَﻬْﻛِﺭْﺩُﺃ :ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻥﺎَﻛَﻭ
ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﺍَﺫِﺇ
َﺢَﺑَﺫ ،َﺓﺎَّﺸﻟﺍ :ُﻝﻮُﻘَﻴَﻓ ‏« ﺍﻮُﻠِﺳْﺭَﺃ ﺎَﻬِﺑ ﻰَﻟِﺇ
ِﺀﺎَﻗِﺪْﺻَﺃ َﺔَﺠﻳِﺪَﺧ‏» ُﻪُﺘْﺒَﻀْﻏَﺄَﻓ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ،ﺎًﻣْﻮَﻳ
:ُﺖْﻠُﻘَﻓ َﺔَﺠﻳِﺪَﺧ :َﻝﺎَﻘَﻓ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪﻠﻟﺍ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ‏« ﻲِّﻧِﺇ ْﺪَﻗ ُﺖْﻗِﺯُﺭ ﺎَﻬَّﺒُﺣ‏»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি
খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছাড়া নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
পত্নীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও
আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন
বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের
পাঠিয়ে দাও । একদিন আমি তাঁকে
রাগান্বিত করলাম, আর বললাম,
খাদীজাকে এতই ভালোবাসেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তার ভালোবাসা
আমার অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে”। [9]
সন্তানের প্রতি যত্ন নেয়া:
আপনি তখনই একজন প্রিয় স্বামী
হবেন যখন আপনার স্ত্রীকে সন্তানদের
লালন পালনের কাজে সহযোগিতা করবেন।
আপনি সারা রাত নাক ডেকে ঘুমাবেন আর
আপনার স্ত্রী একটু পর পর বাচ্চার ভিজা
কাপড় পাল্টাবে, এভাবে হলে আপনার
স্ত্রী আপনাকে একজন স্বার্থপর ভাববেন।
আপনিও তার কাজে যতটুকু পারেন
সহযোগিতা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদেরকে খুব
ভালোবাসতেন।
ْﻦَﻋ ِﺲَﻧَﺃ ِﻦْﺑ ٍﻚِﻟﺎَﻣ “َﻝﺎَﻗ ﺎَﻣ ُﺖْﻳَﺃَﺭ ﺍًﺪَﺣَﺃ
ُﻢَﺣْﺭَﺃ ِﻝﺎَﻴِﻌْﻟﺎِﺑ ْﻦِﻣ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ِﻪْﻴَﻠَﻋ
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে, তিনি বলেন, “পরিবার
পরিজনের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত এত দয়াবান
কাউকে দেখিনি” । [10]
বুখারি ও মুসলিমে আনাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি নামায শুরু
করে লম্বা করতে চাই, তবে শিশুর কান্না
শুনে হালকা করে শেষ করি, কারণ আমি
মায়ের কষ্টের তীব্রতা জানি” ।
বাচ্চাদেরকে আনন্দ দেওয়ার
জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যে তাদেরকে আদর করতেন
এবং ভালো বাসতেন এর আরও প্রমাণ হল,
ْﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ ،َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ َّﻥَﺃ َﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﻥﺎَﻛ ﻰَﺗْﺆُﻳ ِﻝَّﻭَﺄِﺑ
،ِﺮَﻤَّﺜﻟﺍ :ُﻝﻮُﻘَﻴَﻓ ‏« َّﻢُﻬﻠﻟﺍ ْﻙِﺭﺎَﺑ ﺎَﻨَﻟ ﻲِﻓ
،ﺎَﻨِﺘَﻨﻳِﺪَﻣ ﻲِﻓَﻭ ،ﺎَﻧِﺭﺎَﻤِﺛ ﻲِﻓَﻭ ،ﺎَﻧِّﺪُﻣ
ﻲِﻓَﻭ ﺎَﻨِﻋﺎَﺻ ًﺔَﻛَﺮَﺑ َﻊَﻣ ٍﺔَﻛَﺮَﺑ ‏» ، َّﻢُﺛ ِﻪﻴِﻄْﻌُﻳ
َﺮَﻐْﺻَﺃ ْﻦَﻣ ُﻩُﺮُﻀْﺤَﻳ ِﻥﺍَﺪْﻟِﻮْﻟﺍ َﻦِﻣ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মৌসুমের
প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হত। তিনি তখন
বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের মদীনায়
আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) আমাদের
মুদ্দ-এ ও আমাদের সা‘-এ বরকত দান করুন,
বরকতের উপর বরকত দান করুন।” অতপর তিনি
ফলটি তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে ছোট
শিশুকে দিয়ে দিতেন” । [11]
স্ত্রীকে পর্দায় রাখা:
পর্দা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ এবং
তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা। কেননা
তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয
করা হয়েছে। তাই একজন আদর্শ স্বামী
হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো
স্ত্রীকে পর্দায় রাখা।
আল্লাহ্ তা‘আলা নারীদেরকে পর্দার
নির্দেশ দিয়ে বলেন:
ﻞُﻗَﻭ﴿ ِﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ َﻦۡﻀُﻀۡﻐَﻳ ۡﻦِﻣ َّﻦِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺃ
َﻦۡﻈَﻔۡﺤَﻳَﻭ َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺪۡﺒُﻳ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ ۖﺎَﻬۡﻨِﻣ َﻦۡﺑِﺮۡﻀَﻴۡﻟَﻭ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ
ٰﻰَﻠَﻋ َّۖﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺪۡﺒُﻳ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ۡﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋٓﺎَﺑﺍَﺀ ۡﻭَﺃ ِﺀٓﺎَﺑﺍَﺀ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ ۡﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋٓﺎَﻨۡﺑَﺃ ۡﻭَﺃ ِﺀٓﺎَﻨۡﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ ۡﻭَﺃ َّﻦِﻬِﻧَٰﻮۡﺧِﺇ ۡﻭَﺃ ٓﻲِﻨَﺑ َّﻦِﻬِﻧَٰﻮۡﺧِﺇ
ۡﻭَﺃ ٓﻲِﻨَﺑ َّﻦِﻬِﺗَٰﻮَﺧَﺃ ۡﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋٓﺎَﺴِﻧ ۡﻭَﺃ ﺎَﻣ
ۡﺖَﻜَﻠَﻣ َّﻦُﻬُﻨَٰﻤۡﻳَﺃ ِﻭَﺃ َﻦﻴِﻌِﺒَّٰﺘﻟﭐ ِﺮۡﻴَﻏ ﻲِﻟْﻭُﺃ
ِﺔَﺑۡﺭِﺈۡﻟﭐ َﻦِﻣ ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﭐ ِﻭَﺃ ِﻞۡﻔِّﻄﻟﭐ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ
ۡﻢَﻟ ْﺍﻭُﺮَﻬۡﻈَﻳ ٰﻰَﻠَﻋ ِﺕَٰﺭۡﻮَﻋ ِۖﺀٓﺎَﺴِّﻨﻟﭐ ﺎَﻟَﻭ
َﻦۡﺑِﺮۡﻀَﻳ َّﻦِﻬِﻠُﺟۡﺭَﺄِﺑ َﻢَﻠۡﻌُﻴِﻟ ﺎَﻣ َﻦﻴِﻔۡﺨُﻳ ﻦِﻣ
َّۚﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗَﻭ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ َﻪُّﻳَﺃ
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻥﻮُﺤِﻠۡﻔُﺗ ٣١
﴾ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٣١ ‏]
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা
তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা
সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের
সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা
যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত
করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর
ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের
ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার
মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত
পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে
অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের
সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন
নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য
সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ,
তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার” । [সূরা :
আন্-নূর: ৩১]
তিনি আরো বলেন:
﴿ َﻥۡﺮَﻗَﻭ ﻲِﻓ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﺎَﻟَﻭ َﻦۡﺟَّﺮَﺒَﺗ
َﺝُّﺮَﺒَﺗ ِﺔَّﻴِﻠِﻬَٰﺠۡﻟﭐ ٰۖﻰَﻟﻭُﺄۡﻟﭐ َﻦۡﻤِﻗَﺃَﻭ َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ
َﻦﻴِﺗﺍَﺀَﻭ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ َﻦۡﻌِﻃَﺃَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ ۚٓۥُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ
ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﺪﻳِﺮُﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ َﺐِﻫۡﺬُﻴِﻟ ُﻢُﻜﻨَﻋ َﺲۡﺟِّﺮﻟﭐ
َﻞۡﻫَﺃ ِﺖۡﻴَﺒۡﻟﭐ ۡﻢُﻛَﺮِّﻬَﻄُﻳَﻭ ﺍٗﺮﻴِﻬۡﻄَﺗ ٣٣
﴾ ‏[ :ﺏﺍﺰﺣﻻﺍ ٣٣ ‏]
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে
এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য
প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত
কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী
পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান
তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত
করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে
পবিত্র করতে” । [সূরা : আল-আহযাব: ৩৩]
সুতরাং নারী নিজেকে ঢেকে
রাখবে। এতে সে পবিত্রা থাকবে ও
সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট
দেওয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ
লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ
পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে,
নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ
হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের
সম্মুখীন হতে হয়।
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিতকতার
সর্বোত্তম উদাহরণ:
আপনি যদি আপনার স্ত্রীর জন্য এ
হাদীসে বর্ণিত আবু যার‘য় হতে পারেন, আর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যেভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে
ভালোবাসতেন সেভাবে ভালোবাসতে
পারেন তবে আপনিই হবেন আপনার স্ত্রীর
উত্তম স্বামী ও ভালোবাসার পাত্র।
ْﻦَﻋ ،َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ :ْﺖَﻟﺎَﻗ َﺲَﻠَﺟ ﻯَﺪْﺣِﺇ َﺓَﺮْﺸَﻋ
،ًﺓَﺃَﺮْﻣﺍ َﻥْﺪَﻫﺎَﻌَﺘَﻓ َﻥْﺪَﻗﺎَﻌَﺗَﻭ ْﻥَﺃ َﻻ
َﻦْﻤُﺘْﻜَﻳ ْﻦِﻣ ِﺭﺎَﺒْﺧَﺃ َّﻦِﻬِﺟﺍَﻭْﺯَﺃ ،ﺎًﺌْﻴَﺷ
ِﺖَﻟﺎَﻗ :ﻰَﻟﻭُﻷﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ ُﻢْﺤَﻟ ٍﻞَﻤَﺟ ،ٍّﺚَﻏ ﻰَﻠَﻋ
ِﺱْﺃَﺭ :ٍﻞَﺒَﺟ َﻻ ٍﻞْﻬَﺳ ﻰَﻘَﺗْﺮُﻴَﻓ َﻻَﻭ ٍﻦﻴِﻤَﺳ
،ُﻞَﻘَﺘْﻨُﻴَﻓ ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ َﻻ ُّﺚُﺑَﺃ
،ُﻩَﺮَﺒَﺧ ﻲِّﻧِﺇ ُﻑﺎَﺧَﺃ ْﻥَﺃ َﻻ ،ُﻩَﺭَﺫَﺃ ْﻥِﺇ
ُﻩْﺮُﻛْﺫَﺃ ْﺮُﻛْﺫَﺃ ُﻩَﺮَﺠُﻋ ،ُﻩَﺮَﺠُﺑَﻭ ِﺖَﻟﺎَﻗ
:ُﺔَﺜِﻟﺎَّﺜﻟﺍ َﻲِﺟْﻭَﺯ ،ُﻖَّﻨَﺸَﻌﻟﺍ ْﻥِﺇ ْﻖِﻄْﻧَﺃ
ْﻖَّﻠَﻃُﺃ ْﻥِﺇَﻭ ْﺖُﻜْﺳَﺃ ،ْﻖَّﻠَﻋُﺃ :ُﺔَﻌِﺑﺍَّﺮﻟﺍ ِﺖَﻟﺎَﻗ
ﻲِﺟْﻭَﺯ ِﻞْﻴَﻠَﻛ ،َﺔَﻣﺎَﻬِﺗ َﻻ ٌّﺮَﺣ َﻻَﻭ ،ٌّﺮُﻗ َﻻَﻭ
َﺔَﻓﺎَﺨَﻣ َﻻَﻭ ،َﺔَﻣﺂَﺳ ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﺴِﻣﺎَﺨﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ
ْﻥِﺇ َﻞَﺧَﺩ ،َﺪِﻬَﻓ ْﻥِﺇَﻭ َﺝَﺮَﺧ ،َﺪِﺳَﺃ َﻻَﻭ ُﻝَﺄْﺴَﻳ
ﺎَّﻤَﻋ ،َﺪِﻬَﻋ ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﺳِﺩﺎَّﺴﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ ْﻥِﺇ
َﻞَﻛَﺃ ،َّﻒَﻟ ْﻥِﺇَﻭ َﺏِﺮَﺷ ،َّﻒَﺘْﺷﺍ ِﻥِﺇَﻭ َﻊَﺠَﻄْﺿﺍ
،َّﻒَﺘﻟﺍ َﻻَﻭ ُﺞِﻟﻮُﻳ َّﻒَﻜﻟﺍ َﻢَﻠْﻌَﻴِﻟ .َّﺚَﺒﻟﺍ
ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﻌِﺑﺎَّﺴﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ ُﺀﺎَﻳﺎَﻴَﻏ – ْﻭَﺃ
ُﺀﺎَﻳﺎَﻴَﻋ – ،ُﺀﺎَﻗﺎَﺒَﻃ ُّﻞُﻛ ٍﺀﺍَﺩ ُﻪَﻟ ،ٌﺀﺍَﺩ
ِﻚَّﺠَﺷ ْﻭَﺃ ِﻚَّﻠَﻓ ْﻭَﺃ َﻊَﻤَﺟ ﺎًّﻠُﻛ ،ِﻚَﻟ ِﺖَﻟﺎَﻗ
:ُﺔَﻨِﻣﺎَّﺜﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ ُّﺲَﻤﻟﺍ ُّﺲَﻣ ،ٍﺐَﻧْﺭَﺃ
ُﺢﻳِّﺮﻟﺍَﻭ ُﺢﻳِﺭ ،ٍﺐَﻧْﺭَﺯ ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﻌِﺳﺎَّﺘﻟﺍ
ﻲِﺟْﻭَﺯ ُﻊﻴِﻓَﺭ ،ِﺩﺎَﻤِﻌﻟﺍ ُﻞﻳِﻮَﻃ ،ِﺩﺎَﺠِّﻨﻟﺍ
ُﻢﻴِﻈَﻋ ،ِﺩﺎَﻣَّﺮﻟﺍ ُﺐﻳِﺮَﻗ ِﺖْﻴَﺒﻟﺍ َﻦِﻣ
،ِﺩﺎَّﻨﻟﺍ ِﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺓَﺮِﺷﺎَﻌﻟﺍ ﻲِﺟْﻭَﺯ ٌﻚِﻟﺎَﻣ
ﺎَﻣَﻭ ،ٌﻚِﻟﺎَﻣ ٌﻚِﻟﺎَﻣ ٌﺮْﻴَﺧ ْﻦِﻣ ،ِﻚِﻟَﺫ ُﻪَﻟ ٌﻞِﺑِﺇ
ُﺕﺍَﺮﻴِﺜَﻛ ،ِﻙِﺭﺎَﺒَﻤﻟﺍ ُﺕَﻼﻴِﻠَﻗ ،ِﺡِﺭﺎَﺴَﻤﻟﺍ
ﺍَﺫِﺇَﻭ َﻦْﻌِﻤَﺳ َﺕْﻮَﺻ ،ِﺮَﻫْﺰِﻤﻟﺍ َّﻦَﻘْﻳَﺃ َّﻦُﻬَّﻧَﺃ
،ُﻚِﻟﺍَﻮَﻫ ِﺖَﻟﺎَﻗ َﺔَﻳِﺩﺎَﺤﻟﺍ :َﺓَﺮْﺸَﻋ ﻲِﺟْﻭَﺯ
ﻮُﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻣَﻭ ﻮُﺑَﺃ َﺱﺎَﻧَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ْﻦِﻣ ٍّﻲِﻠُﺣ
،َّﻲَﻧُﺫُﺃ َﺄَﻠَﻣَﻭ ْﻦِﻣ ٍﻢْﺤَﺷ ،َّﻱَﺪُﻀَﻋ ﻲِﻨَﺤَّﺠَﺑَﻭ
ْﺖَﺤِﺠَﺒَﻓ َّﻲَﻟِﺇ ،ﻲِﺴْﻔَﻧ ﻲِﻧَﺪَﺟَﻭ ﻲِﻓ ِﻞْﻫَﺃ
ٍﺔَﻤْﻴَﻨُﻏ ،ٍّﻖِﺸِﺑ ﻲِﻨَﻠَﻌَﺠَﻓ ﻲِﻓ ِﻞْﻫَﺃ ٍﻞﻴِﻬَﺻ
،ٍﻂﻴِﻃَﺃَﻭ ٍﺲِﺋﺍَﺩَﻭ ،ٍّﻖَﻨُﻣَﻭ ُﻩَﺪْﻨِﻌَﻓ ُﻝﻮُﻗَﺃ َﻼَﻓ
،ُﺢَّﺒَﻗُﺃ ُﺪُﻗْﺭَﺃَﻭ ،ُﺢَّﺒَﺼَﺗَﺄَﻓ ُﺏَﺮْﺷَﺃَﻭ
،ُﺢَّﻨَﻘَﺗَﺄَﻓ ُّﻡُﺃ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻤَﻓ ُّﻡُﺃ ﻲِﺑَﺃ
،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻬُﻣﻮُﻜُﻋ ،ٌﺡﺍَﺩَﺭ ﺎَﻬُﺘْﻴَﺑَﻭ ،ٌﺡﺎَﺴَﻓ
ُﻦْﺑﺍ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻤَﻓ ُﻦْﺑﺍ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ
ُﻪُﻌَﺠْﻀَﻣ ِّﻞَﺴَﻤَﻛ ،ٍﺔَﺒْﻄَﺷ ُﻪُﻌِﺒْﺸُﻳَﻭ ُﻉﺍَﺭِﺫ
،ِﺓَﺮْﻔَﺠﻟﺍ ُﺖْﻨِﺑ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻤَﻓ ُﺖْﻨِﺑ ﻲِﺑَﺃ
،ٍﻉْﺭَﺯ ُﻉْﻮَﻃ ،ﺎَﻬﻴِﺑَﺃ ُﻉْﻮَﻃَﻭ ،ﺎَﻬِّﻣُﺃ ُﺀْﻞِﻣَﻭ
،ﺎَﻬِﺋﺎَﺴِﻛ ُﻆْﻴَﻏَﻭ ،ﺎَﻬِﺗَﺭﺎَﺟ ُﺔَﻳِﺭﺎَﺟ ﻲِﺑَﺃ
،ٍﻉْﺭَﺯ ﺎَﻤَﻓ ُﺔَﻳِﺭﺎَﺟ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ َﻻ ُّﺚُﺒَﺗ
ﺎَﻨَﺜﻳِﺪَﺣ ،ﺎًﺜﻴِﺜْﺒَﺗ َﻻَﻭ ُﺚِّﻘَﻨُﺗ ﺎَﻨَﺗَﺮﻴِﻣ
،ﺎًﺜﻴِﻘْﻨَﺗ َﻻَﻭ ُﺄَﻠْﻤَﺗ ﺎَﻨَﺘْﻴَﺑ ،ﺎًﺸﻴِﺸْﻌَﺗ
:ْﺖَﻟﺎَﻗ َﺝَﺮَﺧ ﻮُﺑَﺃ ٍﻉْﺭَﺯ ُﺏﺎَﻃْﻭَﻷﺍَﻭ ،ُﺾَﺨْﻤُﺗ
َﻲِﻘَﻠَﻓ ًﺓَﺃَﺮْﻣﺍ ﺎَﻬَﻌَﻣ ِﻥﺍَﺪَﻟَﻭ ﺎَﻬَﻟ
،ِﻦْﻳَﺪْﻬَﻔﻟﺎَﻛ ِﻥﺎَﺒَﻌْﻠَﻳ ْﻦِﻣ ِﺖْﺤَﺗ ﺎَﻫِﺮْﺼَﺧ
،ِﻦْﻴَﺘَﻧﺎَّﻣُﺮِﺑ ﻲِﻨَﻘَّﻠَﻄَﻓ ،ﺎَﻬَﺤَﻜَﻧَﻭ ُﺖْﺤَﻜَﻨَﻓ
ُﻩَﺪْﻌَﺑ ﺎًﻠُﺟَﺭ ،ﺎًّﻳِﺮَﺳ َﺐِﻛَﺭ ،ﺎًّﻳِﺮَﺷ َﺬَﺧَﺃَﻭ
،ﺎًّﻴِّﻄَﺧ َﺡﺍَﺭَﺃَﻭ َّﻲَﻠَﻋ ﺎًﻤَﻌَﻧ ،ﺎًّﻳِﺮَﺛ
ﻲِﻧﺎَﻄْﻋَﺃَﻭ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ٍﺔَﺤِﺋﺍَﺭ ،ﺎًﺟْﻭَﺯ :َﻝﺎَﻗَﻭ
ﻲِﻠُﻛ َّﻡُﺃ ٍﻉْﺭَﺯ ﻱِﺮﻴِﻣَﻭ ،ِﻚَﻠْﻫَﺃ :ْﺖَﻟﺎَﻗ ْﻮَﻠَﻓ
ُﺖْﻌَﻤَﺟ َّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ ،ِﻪﻴِﻧﺎَﻄْﻋَﺃ ﺎَﻣ َﻎَﻠَﺑ َﺮَﻐْﺻَﺃ
ِﺔَﻴِﻧﺁ ﻲِﺑَﺃ ،ٍﻉْﺭَﺯ ْﺖَﻟﺎَﻗ :ُﺔَﺸِﺋﺎَﻋ َﻝﺎَﻗ
ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ‏« ُﺖْﻨُﻛ
ِﻚَﻟ ﻲِﺑَﺄَﻛ ٍﻉْﺭَﺯ ِّﻡُﺄِﻟ ٍﻉْﺭَﺯ‏»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার
(জাহেলী যুগে) এগারজন মহিলা একত্রিত
হয়ে এ প্রতিজ্ঞা করল যে, তারা তাদের
স্বামীদের কোনো ভাল-মন্দ ও দোষ-ত্রুটির
কথা গোপন করবে না। (অর্থাৎ তারা এ সব
কথা বৈঠকে আলোচনা করবে)।
প্রথমজন বলল: আমার স্বামী উটের
গোস্তের মত কঠোর; পাহাড়ের চুড়ার ন্যায়
উঁচু, তার কাছে যাওয়া অনেক কঠিন
(অহংকার ও অসদচরিত্রের কারণে), তার
স্ত্রীরা ও অন্যান্যরাও তার সাথে
মেলামেশায় কোনো লাভবান হয় না।
দ্বিতীয়জন বলল: আমার স্বামীর খবর
আমি কাউকে জানাই না; কেননা যদি
আমি তার দোষ বর্ণনা করি তবে সে
আমাকে তালাক দিয়ে দিবে, ফলে আমি
আমার সন্তান সন্তুতি হারাবো। অন্য কথায়
বলা যায় যে, যদি আমি তার দোষ ত্রুটি
বর্ণনা করতে বসি তবে তার ছোট বড়
কোনো দোষই বাদ দিব না। তাই না বলাই
ভালো।
তৃতীয়জন বলল: আমার স্বামী একজন
নির্বোধ (দুশ্চরিত্র), যদি তার দোষ ত্রুটি
বলি তবে সে আমাকে তালাক দিবে, আর
যদি আমি চুপ থাকি তবে সে আমাকে
তালাক না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতন
করবে।
চতুর্থজন বলল: আমার স্বামী গভীর
জলের মাছ নয়, অর্থাৎ তিনি মক্কার
নিম্নভূমির মত সহজ সরল মানুষ, বেশি গরম ও
না আবার বেশী ঠাণ্ডাও না, আবার বেশী
পছন্দও না ও বেশী অপছন্দও না। অর্থাৎ
মধ্যপন্থী স্বভাবের।
পঞ্চমজন বলল: আমার স্বামী যুদ্ধের
ময়দানে শক্তি ও বীরত্বে বাঘের মত, তার
দানশীলতা ও অতিথিপরায়ণতায় তিনি ঘরে
কি আছে বা নেই সে বিষয়ে জিজ্ঞেস
করে না।
ষষ্ঠজন বলল: আমার স্বামী যদি খায়
তবে পরিবারের কারো জন্য আর কিছু বাকি
থাকে না, আর পরিবারের কেউ অসুস্থ বা
অন্য কারণে কিছু চাইলে তারা পায় না।
সপ্তমজন বলল: আমার স্বামী অক্ষম,
পথভোলা, বোকা ও রোগাটে। যদি সে
মারে তবে তোমাকে আহত বা শরীরের
কোনো অংশ ভেঙ্গে ফেলবে বা দু’টাই
করবে।
অষ্টমজন বলল: আমার স্বামীর স্পর্শ
খরগোশের স্পর্শের ন্যায় নরম ও তুলতুলে,
আর তার সুগন্ধী জারনাব (একপ্রকার সুগন্ধী
বৃক্ষ) গাছের মত।
নবমজন বলল: আমার স্বামী সম্ভ্রান্ত
পরিবারের, উচ্চভূমির ন্যায় সে গঠনে লম্বা,
অধিক দানশীল ও অতিথিপরায়ণ।
দশমজন বলল: আমার স্বামী একজন
সম্রাট; তিনি সম্রাটেরও সম্রাট, কেননা
তার অনেকগুলো উট আছে যাতে আল্লাহ
পাক অনেক বরকত দিয়েছেন, চারণক্ষেত্রে
তেমন পাঠাতে হয় না, আর তারা যখনই
বীণার আওয়াজ শুনে তখনই বুঝতে পারে যে
তাদেরকে যবাই করা হবে, অর্থাৎ তিনি
একজন  অতিথিপরায়ণ।
একাদশতম বলল: আমার স্বামী আবু
যার‘য় । তার কথা আমি কি বলব । সে
আমাকে এত বেশী গহনা দিয়েছে যে,
আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার
বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট
যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে
আমাকে অত্যন্ত গরির পরিবার থেকে
এনেছে, যে পরিবার ছিল শুধু কয়েকটি
বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী
পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার
হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ
এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা
যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে
রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম সে বিদ্রূপ
করত না, আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে
দেরী করে উঠতাম। আমি যখন পানি পান
করতাম, তখন তৃপ্তি সহকারে পান করতাম।
আর আবু যার‘য়ের মার কথা কি বলব!
তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার
ঘর ছিল প্রশান্ত। আবু যার‘য়ের পুত্রের কথা
কি বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত
সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ
তরবারি অর্থাৎ সে খুব হালকা- পাতলা
দেহের অধিকারী ছিল। তার খাদ্য হচ্ছে
ছাগলের একখানা পা। আর আবু যার‘য়ের
কন্যার কথা বলতে হয় যে, সে কতই না
ভালো। সে বাপ-মায়ের খুব বাধ্যগত
সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের
অধিরারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে
হিংসা করে। আবু যার‘য়ের ক্রীতদাসীরও
অনেক গুণ । সে আমাদের গোপন কথা কখনো
ফাঁস করত না, সে আমাদের সম্পদের
মিতব্যয়ী ছিল এবং আমাদের বাসস্থানকে
আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না।
সে মহিলা আরও বলল: একদিন দুধ
দোহনের সময়ে আবু যার‘য় বাইরে এমন
একজন মহিলাকে দেখতে পেল যে, যার
দু’টি পুত্র সন্তান আছে। ওরা মায়ের স্তন্য
নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান
করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল
এবং আমাকে তালাক দিয়ে তাকে শাদী
করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে
শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে অরোহণ
করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে
অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক
প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক
জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে: হে
উম্মে যার‘য়! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও,
পরিধান কর ও উপহার দাও।
মহিলা আরো বলল: সে আমাকে যা
কিছু দিয়েছে, তা আবু যার‘য়ের একটি ক্ষুদ্র
পাত্রও পূর্ণ করতে পারবে না
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরপর বলেন, “হে আয়েশা! আমি তোমার
জন্য উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো” ।
হাইসাম ইবনে ‘আদিয়ের বর্ণনায়
এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে আয়েশা! আমি
তোমার জন্য ভালোবাসা ও ওয়াদাপূরণে
উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো, তবে
বিচ্ছিন্নতা ও দেশান্তরে তার মত হবো
না” ।
তাবরানীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“তবে সে (আবু যার‘য়) তার স্ত্রীকে
তালাক দিয়েছে, আমি তোমাকে কখনও
তালাক দিবো না” ।
নাসাঈ ও তাবরানীর অন্য বর্ণনায়
এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং আপনি আবু
যার‘য়ের চেয়ে অধিক উত্তম” । [12]
স্বামীর জন্য কতিপয় উপদেশ:
স্ত্রীদের সাথে সাদাচরণ করা পুরুষের
উপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ্ সে দিকে
ইঙ্গিত করে বলেন:
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ ﺎَﻟ ُّﻞِﺤَﻳ
ۡﻢُﻜَﻟ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﺛِﺮَﺗ َﺀٓﺎَﺴِّﻨﻟﭐ ۖﺎٗﻫۡﺮَﻛ ﺎَﻟَﻭ
َّﻦُﻫﻮُﻠُﻀۡﻌَﺗ ْﺍﻮُﺒَﻫۡﺬَﺘِﻟ ِﺾۡﻌَﺒِﺑ ٓﺎَﻣ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻴَﺗﺍَﺀ ٓﺎَّﻟِﺇ ﻥَﺃ َﻦﻴِﺗۡﺄَﻳ ٖﺔَﺸِﺤَٰﻔِﺑ
ٖۚﺔَﻨِّﻴَﺒُّﻣ َّﻦُﻫﻭُﺮِﺷﺎَﻋَﻭ ِۚﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ﻥِﺈَﻓ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻫِﺮَﻛ ٰٓﻰَﺴَﻌَﻓ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﻫَﺮۡﻜَﺗ ﺎٗٔۡﻴَﺷ
َﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ ﺍٗﺮﻴِﺜَﻛ ١٩
﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٩ ‏]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয়
যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ
হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে
রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা
থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য,
তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত
হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে
বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে
অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে,
তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর
আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন”।
[সূরা আন-নিসা: ১৯]
সুতরাং প্রত্যেক পুরুষের উপর অবশ্য
কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর অধিকারসমূহ
যথাযথভাবে আদায় করা। অবশ্য এই
অধিকার প্রদানের পরও নারীদের থেকে
কোনো কোনো সময় বক্রতা লক্ষ্য করা
যায়। কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে
পুরাপুরিভাবে বশে আনা সম্ভব নয়। এজন্য
পুরুষকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদেরকে
সর্বদা সদুপদেশ প্রদান করতে হবে। তাই
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ْﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ َﻲِﺿَﺭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ،ُﻪْﻨَﻋ :َﻝﺎَﻗ
َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ
‏«ﺍﻮُﺻْﻮَﺘْﺳﺍ ،ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎِﺑ َّﻥِﺈَﻓ َﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ
ْﺖَﻘِﻠُﺧ ْﻦِﻣ ،ٍﻊَﻠِﺿ َّﻥِﺇَﻭ َﺝَﻮْﻋَﺃ ٍﺀْﻲَﺷ ﻲِﻓ
ِﻊَﻠِّﻀﻟﺍ ،ُﻩَﻼْﻋَﺃ ْﻥِﺈَﻓ َﺖْﺒَﻫَﺫ ُﻪُﻤﻴِﻘُﺗ
،ُﻪَﺗْﺮَﺴَﻛ ْﻥِﺇَﻭ ُﻪَﺘْﻛَﺮَﺗ ْﻢَﻟ ْﻝَﺰَﻳ ،َﺝَﻮْﻋَﺃ
ﺍﻮُﺻْﻮَﺘْﺳﺎَﻓ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎِﺑ‏»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা
নারীদেরকে উত্তম উপদেশ দিবে । কেননা
নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি
করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে
উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা । তুমি যদি তা
সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে
ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব
সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে । কাজেই
নারীদের সাথে কল্যাণ করার উপদেশ গ্রহণ
কর” ।[13]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ْﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ ،َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ :َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻢَّﻠَﺳَﻭ ‏« َّﻥِﺇ َﺓَﺃْﺮَﻤْﻟﺍ
ْﺖَﻘِﻠُﺧ ْﻦِﻣ ٍﻊَﻠِﺿ ْﻦَﻟ َﻢﻴِﻘَﺘْﺴَﺗ َﻚَﻟ ﻰَﻠَﻋ
،ٍﺔَﻘﻳِﺮَﻃ ِﻥِﺈَﻓ َﺖْﻌَﺘْﻤَﺘْﺳﺍ ﺎَﻬِﺑ َﺖْﻌَﺘْﻤَﺘْﺳﺍ
ﺎَﻬِﺑ ﺎَﻬِﺑَﻭ ،ٌﺝَﻮِﻋ ْﻥِﺇَﻭ َﺖْﺒَﻫَﺫ ،ﺎَﻬُﻤﻴِﻘُﺗ
ﺎَﻬَﺗْﺮَﺴَﻛ ﺎَﻬُﻗﺎَﻠَﻃ ﺎَﻫُﺮْﺴَﻛَﻭ ‏»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নারীকে সৃষ্টি
করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। তোমার
পছন্দমত পথে সে কখনই সোজা হয়ে চলবে
না। তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও
তো এই বক্র অবস্থাতেই উপকৃত হও। কিন্তু
এই বক্রতা সোজা করতে গেলে তাকে
ভেঙ্গে দিবে। আর ভেঙ্গে দেওয়া মানেই
তাকে তালাক প্রদান করা” ।[14]
নারীদের মধ্যে কোনো কোনো
ক্ষেত্রে বক্রতা থাকলেই যে তাকে
প্রত্যাখ্যান করতে হবে এমন নয়; বরং তার
মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয়
হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই
রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা
আপনি জানেনই না। এজন্যই আল্লাহ্
তা‘আলা বলেছেন,
َّﻦُﻫﻭُﺮِﺷﺎَﻋَﻭ﴿ ِۚﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ﻥِﺈَﻓ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻫِﺮَﻛ ٰٓﻰَﺴَﻌَﻓ ﻥَﺃ ْﺍﻮُﻫَﺮۡﻜَﺗ ﺎٗٔۡﻴَﺷ
َﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ ﺍٗﺮﻴِﺜَﻛ ١٩
﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٩ ‏]
“আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে
বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে
অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে,
তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর
আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন”।
[সূরা আন-নিসা: ১৯]
অতঃএব, স্ত্রীর নিকট থেকে কোনো
বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ
পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত
করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, তাঁর
শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও
গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে
সতর্ক করবে। কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর
মধ্যে অবাধ্যতা, হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র
লক্ষ্য করা যায়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি
মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ
ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন
করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। কুরআনুল
কারীম এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি
সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে । মহান
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﭐ َﻥﻮُﻣَّٰﻮَﻗ ﻰَﻠَﻋ ِﺀٓﺎَﺴِّﻨﻟﭐ ﺎَﻤِﺑ
َﻞَّﻀَﻓ ُﻪَّﻠﻟﭐ ۡﻢُﻬَﻀۡﻌَﺑ ٰﻰَﻠَﻋ ٖﺾۡﻌَﺑ ٓﺎَﻤِﺑَﻭ
ْﺍﻮُﻘَﻔﻧَﺃ ۡﻦِﻣ ۚۡﻢِﻬِﻟَٰﻮۡﻣَﺃ ُﺖَٰﺤِﻠَّٰﺼﻟﭑَﻓ ٌﺖَٰﺘِﻨَٰﻗ
ٞﺖَٰﻈِﻔَٰﺣ ِﺐۡﻴَﻐۡﻠِّﻟ ﺎَﻤِﺑ َﻆِﻔَﺣ ُۚﻪَّﻠﻟﭐ ﻲِﺘَّٰﻟﭐَﻭ
َﻥﻮُﻓﺎَﺨَﺗ َّﻦُﻫَﺯﻮُﺸُﻧ َّﻦُﻫﻮُﻈِﻌَﻓ َّﻦُﻫﻭُﺮُﺠۡﻫﭐَﻭ ﻲِﻓ
ِﻊِﺟﺎَﻀَﻤۡﻟﭐ َّۖﻦُﻫﻮُﺑِﺮۡﺿﭐَﻭ ۡﻥِﺈَﻓ ۡﻢُﻜَﻨۡﻌَﻃَﺃ ﺎَﻠَﻓ
ْﺍﻮُﻐۡﺒَﺗ َّﻦِﻬۡﻴَﻠَﻋ ۗﺎًﻠﻴِﺒَﺳ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﺎَﻛ
ﺍٗﺮﻴِﺒَﻛ ﺎّٗﻴِﻠَﻋ ٣٤ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ٣٤‏]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ
কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর
অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু
তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে।
সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন ।
আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর
তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায়
তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু)
প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের
আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে
কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়
আল্লাহ সমুন্নত মহান”। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]
এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন
করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা
হয়েছে তা নিম্নরূপ:
প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে: উপদেশ দেওয়া: এ
সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে,
তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে,
বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম
সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী
যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ
বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন
ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায়
কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে
পারে না। স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য
কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে
উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা
অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায়
না ।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: বিছানায় পরিত্যাগ
করাঃ একই বিছানায় তার থেকে
আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে,
তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে
রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে
দেওয়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ আয়াতে নির্দেশিত
বিছানায় পরিত্যাগ করার ব্যাখ্যায়
বলেছেন,
ْﻦَﻋ ِﻢﻴِﻜَﺣ ِﻦْﺑ َﺔَﻳِﻭﺎَﻌُﻣ ،ِّﻱِﺮْﻴَﺸُﻘْﻟﺍ ْﻦَﻋ
،ِﻪﻴِﺑَﺃ :َﻝﺎَﻗ :ُﺖْﻠُﻗ ﺎَﻳ َﻝﻮُﺳَﺭ ،ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣ
ُّﻖَﺣ ِﺔَﺟْﻭَﺯ ﺎَﻧِﺪَﺣَﺃ ،؟ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻝﺎَﻗ ‏« ْﻥَﺃ
ﺎَﻬَﻤِﻌْﻄُﺗ ﺍَﺫِﺇ ،َﺖْﻤِﻌَﻃ ﺎَﻫَﻮُﺴْﻜَﺗَﻭ ﺍَﺫِﺇ
،َﺖْﻴَﺴَﺘْﻛﺍ ِﻭَﺃ ،َﺖْﺒَﺴَﺘْﻛﺍ ﺎَﻟَﻭ ِﺏِﺮْﻀَﺗ
،َﻪْﺟَﻮْﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ ،ْﺢِّﺒَﻘُﺗ ﺎَﻟَﻭ ْﺮُﺠْﻬَﺗ ﺎَّﻟِﺇ ﻲِﻓ
ِﺖْﻴَﺒْﻟﺍ‏»
হাকীম ইবন মু‘আবিয়া রহ. তাঁর পিতা
হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি
জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্!
স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক?
তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও
(স্ত্রী) খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান
করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর
তার (স্ত্রীর) চেহারার উপর মারবে না
এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর
তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না” ।
[15]
‘বিছানায় আলাদা করে রাখা’র অর্থ
সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ই বন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তার সাথে তার
বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তার সাথে
সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে
শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস
বলেন, ‘তার সাথে স্বাভাবিক কথা ছাড়া
আর কিছু বলবে না।’ [16]
ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের
উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি
যদি স্ত্রীর ভালোবাসা থাকে তাহলে এ
অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয় ও কষ্টকর
হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু
ভালোবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা
থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল
থাকবে- সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে
না।’ [17]
সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু
না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা
হচ্ছে:
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রহার করাঃ এটি
হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্ বলেন,
َّﻦُﻫﻮُﺑِﺮْﺿﺍَﻭ ‘এবং তাদেরকে প্রহার
করবে।’ এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর
রহ. বলেন, ‘যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা
রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ
সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে
হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে।
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের
ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻮُﻘَّﺗﺎَﻓ َﻪﻠﻟﺍ ﻲِﻓ ،ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ْﻢُﻜَّﻧِﺈَﻓ
َّﻦُﻫﻮُﻤُﺗْﺬَﺧَﺃ ِﻥﺎَﻣَﺄِﺑ ،ِﻪﻠﻟﺍ ْﻢُﺘْﻠَﻠْﺤَﺘْﺳﺍَﻭ
َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ ِﺔَﻤِﻠَﻜِﺑ ،ِﻪﻠﻟﺍ ْﻢُﻜَﻟَﻭ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻥَﺃ
ﺎَﻟ َﻦْﺌِﻃﻮُﻳ ْﻢُﻜَﺷُﺮُﻓ ﺍًﺪَﺣَﺃ ،ُﻪَﻧﻮُﻫَﺮْﻜَﺗ ْﻥِﺈَﻓ
َﻦْﻠَﻌَﻓ َﻚِﻟَﺫ َّﻦُﻫﻮُﺑِﺮْﺿﺎَﻓ ﺎًﺑْﺮَﺿ َﺮْﻴَﻏ ،ٍﺡِّﺮَﺒُﻣ
َّﻦُﻬَﻟَﻭ ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ َّﻦُﻬُﻗْﺯِﺭ َّﻦُﻬُﺗَﻮْﺴِﻛَﻭ
ِﻑﻭُﺮْﻌَﻤْﻟﺎِﺑ ‏»
“তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর
আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ ।
আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা
তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো।
তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে,
তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে
প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা
পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ
লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে,
তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন
কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর
তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা
সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-
পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।” [18]
হাসান বাসরী রহ. এই প্রহারের
ব্যাখ্যায় বলেন, প্রহার যেন এমন না হয় যার
কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা
শরীর ফুলে-ফুটে যায়। ‘আত্বা রহ. বলেন,
ইবন আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার
কিরূপ হবে? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক বা
অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে।
(তাফসীরে কুরতুবী) ।
অন্য হাদীসে প্রহারের ক্ষেত্রে
হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার
করতে নিষেধ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলব, একজন আদর্শ স্বামী
হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতি করতে
চাইলে পারিবারিক জীবনে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আদর্শই আপনার আদর্শ হতে হবে। আপনি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের মত স্ত্রীকে
ভালোবাসলেই আপনার স্ত্রী নিজেকে
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত
একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে কবুল করুন।
আমীন।
[1] ইবন মাযাহ: হাদীস নং ১৯৭৭,
তিরমিযী: হাদীস নং ৩৮৯৫।
[2] বুখারী, হাদীস নং ৬০৩৯।
[3] মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ২৪৭৪৯, সহীহ
ইবন হিব্বান: হাদীস নং ৫৬৭৬-৫৬৭৭।
[4] বুখারী, হাদীস নং ২৭৩১।
[5] বুখারী, হাদীস নং ৫২২৮, মুসলিম,
হাদীস নং ২৪৩৯।
[6] মুসলিম, হাদীস নং ৩০০।
[7] নাসায়ী, হাদীস নং ৮৮৯৪, মুসনাদে
আহমদ, হাদীস নং ২৪১১৯।
[8] বুখারী: হাদীস নং ৩৩১, মুসলিম: হাদীস
নং ১৪৬৮।
[9] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৫।
[10] সহীহ ইবন হিব্বান: হাদীস নং ৫৯৫০।
[11] মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭৩।
[12] বুখারী, হাদীস নং ৫১৮৯, মুসলিম,
হাদীস নং ২৪৪৮, নাসায়ী: হাদীস নং
৯০৮৯।
[13] বুখারী: হাদীস নং ৩৩১, মুসলিম:
হাদীস নং ১৪৬৮।
[14] মুসলিম: হাদীস নং ১৪৬৮।
[15] আবু দাউদ: হাদীস নং ২১৪২।
[16] তাফসীর ইবন কাসীর, সূরা নিসার ৩৪
নং আয়াতের তাফসীর।
[17] তাফসীরে কুরতুবী, সূরা নিসার ৩৪ নং
আয়াতের তাফসীর।
[18] মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।
___________________________________________
______________________________________
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল আযহারী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের
স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ
আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” (সুরা
আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।)
স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের
পোশাকের মতো। পোশাক যেমন
আমাদের ইজ্জত-আব্রু হেফাজত করে ও
আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, স্বামী-
স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। আমাদের
কারো পোশাক যদি কখনো ময়লা হয়ে
সেটা যেমন আমরা একেবারে ফেলে না
দিয়ে যত্ন করে পরিষ্কার করি, ঠিক
তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর কারো কোন
ত্রুটি থাকলে সেই কারনে তার পুরোটাই
খারাপ, তার সাথে আর ভালো ব্যবহার
করা যাবে না, এমন না। বরং, স্বামী-
স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু
হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে
সাহায্য করবে – তাহলেই সম্ভব একটা
সুখী পরিবার গড়ে তোলা।
► স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা –
এটা যেমন সুখী পরিবার গঠনের
অপরিহার্য শর্ত, আমাদের এটাও মনে
রাখতে হবে, এটা একটা সৃষ্টিকর্তার
আদেশ – যা মানতে আমরা সকলেই বাধ্য!
• “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে
জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে
অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক
জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ
তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ
রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ১৯।)
• “পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার
রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও
অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম
অনুযায়ী। কিন্তু, নারীরদের ওপর পুরুষদের
কর্তৃত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে
পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।” (সুরা আল-
বাক্বারাহঃ ২২৮।)
পুরুষদের মাঝে অনেকেই আছে – নামায
রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের ব্যপারে
তারা অগ্রগামী, বাইরের লোকদের
সাথে খুব সাধু, মানুষের মাঝে নিজদের
সুনাম ধরে রাখার জন্য, নিজের নাম
ভালো রাখার জন্য সদা ততপর – কিন্তু
ঘরে আসলে তাদের মুখোশ খুলে ‘আসল
চেহারা’ বেরিয়ে আসে! পুরুষদের
অনেকেই নিজ ঘরের মানুষদের সাথেই
ভালো আচরণ করেনা, তাদের হক্ক
ঠিকমতো আদায় করেনা – যদিও বাইরের
মানুষেরা তাকে ভালো, সদাচরণকারী ও
পরোপকারী বলেই জানে। আশচর্যের
ব্যপার হচ্ছে, বাইরের মানুষের কাছে
যেই লোকটি সবচেয়ে ভালো, তার
নিজের স্ত্রীর কাছে সেই লোকটি
সবচাইতে খারাপ। বিবাহিত ভাইদের
অনেকে নিজদের স্ত্রী ও সন্তানদের
সাথেও ভালো আচরণ করেন না, অনেকে
নিজদের স্ত্রীদেরকে মানুষই মনে করেন
না, তাদের একটু ভুল-ত্রুটি দেখতে
পেলেই বাঘের মতো চার্জ করে বসেন।
নিঃসন্দেহে এইটা মারাত্বক রকমের ভুল
ও চরিত্রের সাংঘাতিক ত্রুটি যা একজন
অনেক ইবাদতকারী বান্দাকেও খুব
সহজেই জাহান্নামের অতল গহবরে প্রবেশ
করিয়ে দেবে – আল্লাহর কাছে আশ্রয়
চাচ্ছি।
• আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করেন,
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে
বাচতে চান, তাহলে জেনে রাখুনঃ
স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে,
তাদের হক্ক নষ্ট করে, তাদের সাথে
অন্যায় ও জুলুম অত্যাচার করে আপনি
জাহান্নামে যাবেন। স্ত্রীদের সাথে
খারাপ আচরণ ও জুলুম করার কারণে কোন
স্ত্রী যদি তার স্বামীকে খারাপ বলে
মনে করে, তাহলে আপনি যতই ইবাদত
করে থাকেন না কেনো, আল্লাহর কাছেও
আপনি খারাপ বলে গণ্য হবেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র
সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে
উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে
উত্তম।” (তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ,
সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪।)
অন্য হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক
মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে
যাবে।” (ইবনে মাযাহ, তিরমিযী ও
হাকেম।)
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতী হওয়ার
জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য উভয়ের
ভালো হওয়ার সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন
আছে!
স্ত্রীদের প্রতি দয়া ও কোমলতা
প্রদর্শন করা এবং হিংস্রতা থেকে
দূরে থাকা
দুনিয়ার কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নয়।
আপনার স্ত্রীও একজন মানুষ, তারা কোন
রোবট নয় সুতরাং আপনি যেমন ভুল করতে
পারেন, আপনার স্ত্রীও ভুল করতে পারে।
আপনি নিজে চিন্তা করুন, আপনি দিনে-
রাতে উঠতে বসতে কত ভুল করছেন কিন্তু
আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করছেন ও সুযোগ
দিচ্ছেন – তাহলে আপনি কেনো অন্য
আরেকজনের সূক্ষ্ম ভুলকে পাহাড় সমান
বানাচ্ছেন? স্ত্রীদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা
করতে শিখুন, তাদেরকে উত্তম ভাষায়
উপদেশ দিন, নিজে ভালো হয়ে তার
সামনে সুন্দর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরুন।
এতে করে যেমন আপনি নিজে
মানসিকভাবে শান্তি পাবেন, স্ত্রী
আপনার কটু কথার অত্যাচার থেকে
রেহাই পাবে – এবং এইরকম ভালো আচরণ
ও কোমলতার অভ্যাসের বিনিময়ে আশা
করা যায় আপনার স্ত্রীর কোন ভুল থাকলে
সে সংশোধন করতে আগ্রহী হবে।
পক্ষান্তরে আপনি যদি কোমলতা না
দেখান, সামান্য ব্যপার নিয়ে স্ত্রীর
সাথে বাধাবাধি করেন তাহলে জেনে
রাখুন – এতে হিতে বিপরীত হবে। বেশি
সমালোচনা দুনিয়ার সবচাইতে ভালো
মানুষটাকেও খারাপ বানিয়ে দেয়, এতে
তার মাঝে খারাপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়,
ফলে সে নিজের ভুল সংশোধন না করে
উলটো বেকে বসে। এইজন্য রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পুরুষদেরকে খুব বেশি নসীহত করেছেন
তাঁর উম্মতদেরকে, তারা যাতে করে
তাদের স্ত্রীদের জন্য কল্যানকামী হয়,
তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।
আ’মর ইবনুল আহ্ওয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি
বিদায় হাজ্জে রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে উপস্থিত
ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান
করেন এবং ওয়াজ-নসীহত করেন। এরপর
তিনি বলেনঃ
“তোমরা নারীদের সাথে উত্তম
ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। কেননা
তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ আছে। এর
অধিক তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব নাই
যে, তারা যদি প্রকাশ্য অশ্লীলতায়
লিপ্ত হয়, সত্যিই যদি তারা তাই
(প্রকাশ্য অশ্লীলতা) করে, তবে তোমরা
তাদেরকে পৃথক বিছানায় রাখবে এবং
আহত হয় না এরূপ হাল্কা মারধর করবে।
অতঃপর তারা তোমাদের অনুগত হয়ে
গেলে তাদের উপর আর বাড়াবাড়ি করো
না। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন
অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও
তাদের অধিকার আছে। তোমাদের
স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই
যে, তারা তোমাদের শয্যা তোমাদের
অপছন্দনীয় লোকদের দ্বারা মাড়াবে না
এবং তোমাদের অপছন্দনীয়
লোকেদেরকে তোমাদের ঘরে
প্রবেশানুমতি দিবে না। সাবধান!
তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে,
তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও
সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি
শোভনীয় আচরণ করবে।” (সুনানু ইবনে
মাজাহ্, নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়ঃ ১৮৫১,
তিরমিযী ১১৬৩, হাদীসটি হাসান সহীহ,
ইরওয়াহ ১৯৯৭-২০২০।)
আপনি নিজে আল্লাহকে মানেন না,
আপনার চরিত্র যদি ফেরাউনের মতো হয়
তাহলে আপনি কি করে আশা করেন
আপনার স্ত্রী আসিয়ার (আঃ) এর মতো
উত্তম হবে? আপনি মুহা’ম্মাদ সাঃ এর
আদর্শকে অনুসরণ করুন – তাহলে আপনি
আশা করতে পারেন আপনার স্ত্রী
খাদিজাহ (রাঃ), আয়িশাহ (রাঃ) এর
মতো হবে।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোনদিন নিজের
স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেনি নি,
তাদেরকে গালি দেন নি – অন্যায়ভাবে
কটু কথা বলে তাদেরকে কষ্ট দেন নি।
বরং, তিনি কোমলতা প্রদর্শনের জন্য
কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন।
হাদীসগুলো দেখুনঃ
• আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ “আমার কাছ থেকে
মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা
গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে
পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা
হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে
ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব
তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে
ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর
যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকা হতেই
থাকবে। অতএব, নারীদের সাথে ভালো
ব্যবহার কর।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ
মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীনঃ ২৭৩।)
• আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এক বর্ণনায়
এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয়
আল্লাহ দয়ালু, তিনি কোমলতাকে পছন্দ
করেন। তিনি কোমলতার বিপরীতে দেন
যা তিনি সহিংসতার বিপরীতে দেন না,
কোমলতা ব্যতীত অন্য কিছুর বিপরীতে
দেন না।” (সহীহ মুসলিম।)
• আয়েশা (রাযি:) থেকে আরেকটি
হাদিসে এসেছে, নবী কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ কোমলতাপূর্ণ,
তিনি সকল বিষয়ে কোমলতাকে পছন্দ
করেন।” (বুখারি ও মুসলিম।)
• জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি:) থেকে
এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
“যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হল
তাকে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা
হল।” (সহীহ মুসলিম।)
• ইমাম আহমদ আয়েশা (রাযি:) হতে
বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে
খেতাব করে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি
কোমলতা অবলম্বন করো; কেননা আল্লাহ
তাআলা যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ
চান তখন তাদেরকে কোমলতার পথ
দেখান, অন্য এক বর্ণনা মতে- আল্লাহ যখন
কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি
তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ
ঘটান।” (মুসনাদে আহমদ।)
দুনিয়াবাসীর মাঝে আপনার স্ত্রী ও
পরিবারের লোকজনই আপনার কোমলতা
পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবীদার।
সর্বশেষ, আপনি যদি আপনার ঘরের
নারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন –
আপনার পরকাল নষ্ট হবে, সাথে সাথে
আপনি দুনিয়ার জীবনে থার্ডক্লাস
নিম্নশ্রেণীর পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ
“শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের
প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা
অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের
আচরণও হয় অসম্মানজনক।” সুনানে আত-
তিরমিযী।