★তাওহীদের উপকারিতা

তাওহিদের উপকারিতা
________________
মানুষের একক ও সমষ্টিগত
জীবনে সত্যিকারের তাওহিদ
প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ লাভবান
হবে দারুনভাবে, অতীব সুন্দর ফল
পাবে সার্বিক ক্ষেত্রে। কিছু
কিছু লাভের
কথা নিম্নে আলোচনা করা হল,
১। তাওহিদ তার
অনুসারীকে সৃষ্টির দাসত্ব
থেকে মুক্ত করে আনে। আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কারো কাছে নত
হওয়া থেকে রক্ষা করে।
সৃষ্টি যারা কিছুই
সৃষ্টি করতে পারে না বরং
তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
যাদের কোনো ক্ষমতা নেই।
যারা নিজেদের ভাল-মন্দ,
কল্যাণ-অকল্যাণ কিছুই
করতে পারে না। না তারা মৃত্যু
দেয়ার ক্ষমতা রাখে, না মৃত্যু
থেকে বাঁচানোর। তাওহিদ
মানুষকে সে সব অথর্ব সৃষ্টির
ইবাদত হতে মুক্তি দেয়। তাদের
গোলামী হতে বাঁচিয়ে এক
আল্লাহর দাসত্বে লাগিয়ে দেয়।
যিনি তার রব ও স্রষ্টা। তার
বিবেক-বুদ্ধিকে নানা কুসংস্কার
ও মিথ্যা ধারণা হতে স্বাধীন করে
। অন্যের নিকট নত ও অপমানিত
হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। তার
জীবনকে ফেরাউন জাতীয়
অত্যাচারীদের হাত
হতে রক্ষা করে। বিভিন্ন নেতা,
জিন ও মূর্তি পূজারীর কবল
হতে স্বাধীন করে আনে।
তাইতো পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন
করলে দেখা যায়, মুশরিক নেতৃবৃন্দ
ও অজ্ঞ
সীমা লংঘনকারীরা সর্বদাই
নবীদের দাওয়াতের
বিরোধিতা করেছে। বিশেষত:
আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দাওয়াতের।
কারন, তারা ভালভাবেই বুঝত,
মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
উচ্চারণ করার সাথে সাথেই অন্য
মানুষের গোলামী হতে স্বাধীন
হয়ে যাবে। অত্যাচারের
বেড়া জাল ছিন্ন
করে বাইরে বেরিয়ে আসবে।
তাদের কপাল ঊচুঁ হবে এবং বিশ্ব
জগতের রব এক আল্লাহ ছাড়া কারও
কাছে মাথা নত করবে না।
২। তাওহিদ সঠিক ব্যক্তিত্ব
গড়ে তুলতে সহায়তা করে। মানুষ
এতে সঠিকভাবে জীবন গঠন
করতে পারে এবং সত্যিকারের
দিক নির্দেশনা পায়। তার
লক্ষ্যবস্তুকে নির্দিষ্ট করে দেয়।
কারণ, সে বুঝতে পারে এক আল্লাহ
ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই।
ফলে, তার দিকে গোপনে ও
প্রকাশ্যে মুখ ফিরাতে পারে।
সুখে ও
দুঃখে তাঁকে ডাকতে পারে।
অন্যদিকে মুশরিকদের অন্তর
নানা ধরনের প্রভূ ও উপাস্যের
প্রতি বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে।
ফলে, একবার সে জীবিতদের
দিকে মুখ ঘুরায়, আবার মৃতদের
দিকে । এইকারণেই ইউসুফ আ.
বলেছেনঃঅর্থাৎ, হে আমার জেলের
সাথীদ্বয়, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন
রব ভাল
নাকি মহাপরাক্রমশালী এক
আল্লাহ? (সূরা ইউসুফ, ১২ : ৩৯ আয়াত)।
তাই মুমিন ব্যক্তি এক আল্লাহর
ইবাদত করে। সে জানে তার রব
কি করলে খুশি হবেন, আর
কি করলে নারাজ হবেন। তাই
যে কাজে রব খুশি হন সে কাজ
করতে থাকে, যে কাজে অসন্তুষ্ট হন
তা হতে বিরত থাকে। ফলে তার
অন্তর প্রশান্ত হয়ে যায়। আর
মুশরিক ব্যক্তি নানা উপাস্যের
উপাসনা করে।
কোনোটা তাকে ডানে নিয়ে যায়
, কোনোটা নিয়ে যায় বামে। আর  এ
টানা পড়নে পড়ে সে হয় যায়
কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এতে করে তার
মনে আর কোনো শান্তি থাকে না।
৩। তাওহিদ হচ্ছে মানুষের
জীবনের নিরাপত্তার ভিত্তি।
কারণ, এর দ্বারাই
সে নিরাপত্তা ও শান্তি পায়।
আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না
। তাওহিদ শঙ্কা-ভয়ের সমস্ত দার
বন্ধ করে দেয়। যেমন রিযকের
ভয়, জীবন ও মৃত্যুর ভয়, আত্মীয়-
পরিজনের জীবনের আশঙ্কা
, মানুষের ভয়, জিন-ভূতের ভয়
ইত্যাদি।
একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন
আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই ভয়
করে না। অন্যরা যখন ভয়ের
মধ্যে থাকে তখন
তাকে দেখা যায় সম্পূর্ণ নির্ভীক।
মানুষ যখন
চিন্তা পেরেশানীতে জর্জরিত
থাকে, তখন সে থাকে অবিচলিত।
এ সত্যের প্রতি নির্দেশ
করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন বলেন :অর্থাৎ, যারা ঈমান
এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলম
(শিরক)-এর সাথে সংমিশ্রণ
করেনি, তাদের জন্যই
নিরাপত্তা এবং তারাই
হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আনআম: ৮২ )।
৪। তাওহিদ মানুষের মনের
শক্তির উৎস। তাওহিদ মানুষের
মানসিক শক্তির যোগান দেয় ।
ফলে তার অন্তর আল্লাহ
হতে প্রাপ্তির আশায় ভরে যায়,
তাঁর উপর বিশ্বাস জন্মে এবং তাঁর
উপর ভরসা করে, তাঁর বিচারে মন
খুশি থাকে, তিনি হতে আগত
বিপদে সহ্য ক্ষমতা আসে।
সে শক্তির উপর
ভিত্তি করে সৃষ্টি থেকে সে মুখ
ফিরিয়ে নিতে পারে। নিজ
ঈমানের উপর পাহাড়ের মত অটল
হয়ে যায়। যে কোনো বিপদে পতিত
হলেই মুক্তি পাওয়ার জন্য
আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কখনও
মাজার কিংবা মৃতের
কাছে ফরিয়াদ করতে যায় না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র
নিম্নোক্ত হাদিস তাদের
পাথেয় :অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর
কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য
প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর
কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে।
(তিরমিযি, হাসান সহিহ)।
বিপদ-মুসিবত আসার
সাথে সাথে তারা আল্লাহর
নিম্নোক্ত নির্দেশের উপর আমল
করে :অর্থাৎ, যদি আল্লাহ
তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা
স্পর্শ করেন,
তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী
কেউ নেই। (সূরা আনআম, ৬: ১৭
আয়াত)।
    ৫। তাওহিদ ভ্রাতৃত্ব ও একতার
বন্ধনের মূল। কেননা
, আল্লাহকে ছেড়ে একদল লোক অপর
দলকে প্রভু হিসাবে মান্য
করবে তাওহিদ কখনই এমন অনুমোদন
দেয় না। একের উপর অপরের এ
পর্যয়ের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়
না। কারণ, তাওহিদের
দাবী হচ্ছে ইবাদত হবে একমাত্র
আল্লাহর। সকল মানুষের ইবাদত
পাওয়ার যোগ্যতা একমাত্র তাঁরই
আছে। পৃথিবীর সকল ইবাদতকারীর
মাথার মুকুট হচ্ছেন মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
যাকে আল্লাহ সকলের মধ্য
হতে নির্বাচন করেছেন ।

Author: abdurrakib7377

www.abdurrakib77.wordpress.com

Leave a comment