ফিতরার সময় ও পরিমাণ

ফিতরার পরিমাণ এবং
ফিতরা আদায় করার সময়কাল

প্রশ্ন:আমরা মরক্কোর একটি সংস্থার সদস্য।
বর্তমানে বার্সেলোনাতে বসবাস করছি।
আমরা সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা
কিভাবে হিসাব করবে?
উত্তর :
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে,
তিনি মুসলমানদের উপর সদকাতুল
ফিতর (ফিতরা) ফরজ করেছেন। আর তা
হল এক স্বা‘ খেজুর বা এক স্বা‘ যব।
মানুষ ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের
হওয়ার আগে তা আদায় করার আদেশ
দিয়েছেন। দুই সহীহ গ্রন্থে (অর্থাৎ
বুখারী ও মুসলিমে) আবু সা‘ঈদ আলখুদরী
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে
তিনি বলেছেন : “আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
সময়ে সদকাতুল ফিতর হিসেবে এক স্বা
খাদ্যদ্রব্য অথবা এক স্বা‘ খেজুর অথবা
এক স্বা‘ যব অথবা এক স্বা‘ কিসমিস
প্রদান করতাম।”[বুখারী (১৪৩৭)]
একদল আলেম এই হাদীসে ব্যবহৃত
‘খাদ্যদ্রব্য’ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলেছেন
যে, তা হল গম। আবার অনেকে এর
ব্যাখ্যায় বলেছেন যে এর উদ্দেশ্য হল
সে দেশের অধিবাসীগণ যা খায় তা গম,
ভুট্টা, পার্ল মিলেট ( pearl millet)
বা এছাড়া অন্য যাই হোক না কেন; এটাই
সঠিক মত। কারণ ফিতরা হচ্ছে-
দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি।
স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য হিসেব বিবেচিত
নয় এমন কিছু দিয়ে হকদারের প্রতি
সহানুভুতি প্রকাশ করা কোন মুসলিমের
উপর ওয়াজিব নয়। এতে কোন সন্দেহ
নেই যে, বর্তমানে চাউল সৌদি আরবের
প্রধান খাদ্য, উত্তম ও মূল্যবান খাদ্য।
চাউল যবের চেয়ে উত্তম; যে যব দিয়ে
ফিতরা দেয়া জায়েয মর্মে হাদীসের
ভাষ্যে সরাসরি উল্লেখ আছে। এর থেকে
জানা গেল যে, চাউল দিয়ে সদকাতুল
ফিতর আদায় করাতে কোন দোষ নেই।
ফিতরার ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে- এক
স্বা‘ খাদ্য প্রদান করা। যে স্বা‘ বা
পাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ব্যবহার করেছেন সে স্বা
অনুযায়ী। সাধারণমাপের দুই হাতের
পরিপূর্ণ চার মুষ্ঠি এক স্বাকে পূর্ণ
করে। যেমনটি আলক্বামূস ও অন্যান্য
আরবী অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেট্রিক পদ্ধতির ওজনে এর পরিমাণ
প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। যদি কোন
মুসলিম চাউল বা দেশীয় কোন
খাদ্যদ্রব্যের এক স্বা‘ দিয়ে ফিতরা
আদায় করেন তবে তা জায়েয হবে; যদিওবা
সে খাদ্যের কথা এই হাদিসে সরাসরি
উল্লেখ না করা হয়ে থাকে? এটাই
আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে বেশি
শক্তিশালী। আর মেট্রিক পদ্ধতির
ওজনের হিসাবে প্রায় ৩ কিলোগ্রাম
দিলেও চলবে।
ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, স্বাধীন-
ক্রীতদাস সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে
ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু
গর্ভস্থিত সন্তানের পক্ষ থেকে ফিতরা
আদায় করা ওয়াজিব নয় মর্মে
আলেমগণের ইজমা (ঐকমত্য) সংঘটিত
হয়েছে। তবে তার পক্ষ থেকেও আদায় করা
হলে সেটা মুস্তাহাব। কারণ উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ ধরনের আমল
সাব্যস্ত আছে।
ফিতরার খাদ্য ঈদের নামাযের আগেই
বন্টন করা ওয়াজিব। ঈদের নামাযের
পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়।
বরঞ্চ ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায়
করে দিলে কোন অসুবিধা নেই। এই
আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল
যে, আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী
ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ শে
রমজান। কারণ রমজান মাস ২৯ দিনও
হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সাহাবীগণ ফিতরা ঈদের
একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন।
ফিতরা প্রদান করার খাত হচ্ছে- ফকির
ও মিসকীন। ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে প্রমাণিত
হয়েছে যে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা হতে
পবিত্রকরণ এবং মিসকীনদের জন্য
খাদ্যের উৎস হিসেবে রোযা
পালনকারীর উপর ফিতরা ফরজ
করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের
আগে তা আদায় করবে তা কবুলযোগ্য
ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে
ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর আদায় করবে
সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য
হবে।” [সুনানে আবু দাউদ (১৬০৯) এবং
আলবানী এ হাদিসটিকে সহীহ আবু দাউদ
গ্রন্থে ‘হাসান’ বলে আখ্যায়িত
করেছেন]
অধিকাংশ আলেমের মতে খাদ্যের বদলে
খাদ্যের মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে
তা আদায় হবে না। দলীলের দিক থেকে
এই মতটি অধিক শুদ্ধ। বরং ওয়াজিব
হলো খাদ্যদ্রব্য থেকে ফিতরা আদায়
করা। যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ আদায়
করেছেন। উম্মতের অধিকাংশ আলেম এ
মতের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। আমরা
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যাতে
তিনি আমাদেরকে ও সকল মুসলমানকে
তাঁর দ্বীনের ফিকাহ (প্রজ্ঞা) দান
করেন, এর উপর অটল অবিচল থাকার
তাওফিক দেন, আমাদের অন্তরসমূহ ও
কাজকর্মকে পরিশুদ্ধ করে দেন। তিনি
তো মহামহিম, পরম করুণাময়।”
সমাপ্ত [মাজমু ফাতাওয়া ইবনে বায
(বিন বাযের ফতোয়া সংকলন)
(১৪/২০০)]
শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ এর মতে
কিলোগ্রামের হিসাবে ফিতরার
পরিমাণ প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। ফতোয়া
বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণও
একই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
(৯/৩৭১)
শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ
চাউল দিয়ে ফিতরা দেয়ার পরিমাণ
নির্ধারণ করেছেন ২১০০ গ্রাম
(অর্থাৎ ২.১কিলোগ্রাম) [ফাতাওয়ায
যাকাত (যাকাত বিষয়ক ফতোয়া
সংকলন), পৃঃ ২৭৪-২৭৬]
ওজন নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই
মতভেদের কারণ হল স্বা‘ হচ্ছে-
পরিমাপের একক, ওজনের একক নয়।
কিন্তু আলেমগণ ওজন দ্বারা হিসাব
নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছেন কারণ
সেটা হিসাব রাখার ক্ষেত্রে বেশি সহজ
ও সুক্ষ্ম। এ কথা সবাই জানে যে, একেক
শস্যদানার ওজন একেক রকম। এর মধ্যে
কোনটি হালকা, কোনটি ভারী এবং
কোনটি মাঝারি ওজনের। বরঞ্চ
একজাতীয় শস্যদানার ওজনও বিভিন্ন
হয়ে থাকে। নতুন ফসলের ওজন পুরাতন
ফসলের চেয়ে বেশি। তাই সতকর্তাবশতঃ
কেউ যদি কিছুটা বেশি আদায় করে তবে
সেটা বেশি নিরাপদ ও উত্তম।
‘আল-মুগনী’ গ্রন্থের খণ্ড- ৪, পৃষ্ঠা-
১৬৮ দেখুন। সেখানে ফসলের যাকাতের
নিসাব উল্লেখ করতে গিয়ে ওজনের এই
হার উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

তাক্বওয়া আল্লাহর ভয়

রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
অনুবাদ: মুহা: আবদুল্লাহ্ আল কাফী |
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী

প্রিয় ভাই! পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে
তাকওয়ার আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাকওয়ার ফলাফল
এবং আল্লাহ্ ভীরু হওয়ার উপায়-উপকরণ
সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। একারণেই
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
যখনই খুতবা শুরু করতেন, তাকওয়া সম্বলিত
আয়াত সমূহ প্রথমে পাঠ করতেন। এথেকে
বুঝা যায় মুসলিম ব্যক্তির জীবনে
তাকওয়ার গুরুত্ব কতটুকু।
তাকওয়ার অর্থ:
ইবনে রজব (রহ:) বলেন,
“তাকওয়া মানে আনুগত্য শীল কর্মের
মাধ্যমে এবং নাফরমানি মূলক বিষয় থেকে
বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্রোধ এবং
শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।”
কুশাইরী (রহ:) বলেন,
“প্রকৃত তাকওয়া হল, শিরক থেকে বেঁচে
থাকা, তারপর অন্যায় ও অশ্লীল বিষয়
পরিত্যাগ করা, অতঃপর সংশয়পূর্ণ বিষয়
থেকে বিরত থাকা, এরপর অনর্থক আজেবাজে
বিষয় বর্জন করা।”
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা:) বলেন,
“তাকওয়া হচ্ছে: আল্লাহ্র আনুগত্য করা-
নাফরমানি না করা, তাঁকে স্মরণ করা- ভুলে
না যাওয়া, তাঁর কৃতজ্ঞতা করা- কুফরী না
করা।”
সাহ্ল বিন আবদুল্লাহ্ বলেন,
“বিশুদ্ধ তাকওয়া হল- ছোট-বড় সব ধরণের
গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা।”
যওবানী বলেন,
“আল্লাহ্ থে কে দূরে রাখবে (তাঁর ক্রোধ ডেকে
নিয়ে আসবে) এমন সকল বিষয় বর্জন করার
নামই তাকওয়া।”
হাসান বাছরী বলেন,
“এই প্রকার (পশমের) ছেঁড়া-ফাটা পোষাকে
তাকওয়ার কিছু নেই। তাকওয়া হচ্ছে এমন
বিষয় যা হৃদয়ে গ্রথিত হয়; আর কর্মের
মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হয়।”
ওমর বিন আবদুল আযীয বলেন:
“দিনে ছিয়াম আদায় এবং রাতে নফল ছালাত
আদায়ই আল্লাহ্র ভয় নয়; বরং প্রকৃত
আল্লাহ্র ভয় হচ্ছে, আল্লাহ্ যা হারাম
করেছেন তা পরিত্যাগ করা, তিনি যা ফরয
করেছেন তা বাস-বায়ন করা। কেউ যদি এর
অতিরিক্ত কিছু করতে পারে তবে সোনায়
সোহাগা।”
প্রকাশ্যে পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নাম
তাকওয়া নয়; বরং গোপন-প্রকাশ্য
সবধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করার
নামই আসল তাকওয়া। যেমন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তুমি যেখানেই থাকনা কেন আল্লাহকে ভয়
কর।” [তিরমিযী]
কোন ব্যক্তির তাকওয়া আছে কি না তা
তিনটি বিষয় দ্বারা  সুস্পষ্ট হয়:
ক) যা এখনো অর্জিত হয়নি সে বিষয়ে
আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখা।
খ) যা পাওয়া গেছে তাতে পূর্ণ সন্তুষ্টি
প্রকাশ করা এবং
গ) যা পাওয়া যায়নি তার প্রতি পূর্ণ।
ছাওরী বলেন, প্রকৃত তাকওয়া হল-
“পাপ ছোট হোক আর বড় হোক তা পরিত্যাগ
কর; এটাই আসল তাকওয়া। সতর্ক হও সেই
ব্যক্তির ন্যায় যে কাঁটা বিছানো পথে
সাবধানতার সাথে চলে।”
পাপ ছোট তাই তাকে তুচ্ছ মনে কর না;
কেননা ছোট ছোট কঙ্কর দ্বারাই গঠিত
হয়েছে বিশাল পাহাড়।
তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপায়:
ফরয-নফল সবধরনের ইবাদত অধিকহারে
করা। আল্লাহ্ বলেন,
ﺎَﻬُّﻳَﺃﺎَﻳ ُﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﺍﻭُﺪُﺒْﻋﺍ
ْﻢُﻜَّﺑَﺭ ﻱِﺬَّﻟﺍ ْﻢُﻜَﻘَﻠَﺧ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍَﻭ
ْﻦِﻣ ْﻢُﻜِﻠْﺒَﻗ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻥﻮُﻘَّﺘَﺗ
“হে লোক সকল তোমরা ইবাদত কর তোমাদের
রবের যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের
পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে
তোমরা তাক্বওয়াবান হতে পার।” [সূরা
বাক্বারা- ২১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
তা‘যীম করা, তাঁর সুন্নতকে বাস্তবায়ন করা,
তা প্রচার-প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা
চালানো, শুধু তাঁর নির্ধারিত পদ্ধতিতেই
আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর নৈকট্য কামনা
করা। তাঁর দ্বীনের মাঝে কোন বিদআতের
অনুপ্রবেশ না ঘটানো।
আর সেই সাথে যাবতীয় পাপাচার থেকে
বিরত থাকা। যেমনটি ত্বলক বিন হাবীব
বলেন, ‘তাকওয়া হল- তুমি আল্লাহ্র
আনুগত্যের কাজ করবে তাঁর নির্দেশিত পথে
এবং আশা করবে আল্লাহ্র প্রতিদানের।
তুমি আল্লাহ্র নাফরমানি ছেড়ে দিবে তাঁর
নূরের ভিত্তিতে এবং আল্লাহ্র শাস্তির
ভয় করবে।
তাকওয়ার ফলাফল:
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর
বান্দাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সুসংবাদ
দিয়েছেন। নির্ধারণ করেছেন তাকওয়ার
জন্য সুন্দর ফলাফল এবং সম্মান জনক
পরিণতি। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
১) দুনিয়া এবং আখেরাতে আনন্দের সুসংবাদ:
আল্লাহ্ বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ ﺍﻮُﻧﺎَﻛَﻭ
،َﻥﻮُﻘَّﺘَﻳ ْﻢُﻬَﻟ ﻯَﺮْﺸُﺒْﻟﺍ ﻲِﻓ
ِﺓﺎَﻴَﺤْﻟﺍ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ﻲِﻓَﻭ
ِﺓَﺮِﺧﺂْﻟﺍ
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাওক্বওয়া অর্জন
করেছে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া
এবং আখেরাতে।” [সূরা ইউনুস- ৬৩-৬৪]
২) সাহায্য ও সহযোগিতার সুসংবাদ:
আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ َﻊَﻣ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍْﻮَﻘَّﺗﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍَﻭ ْﻢُﻫ َﻥﻮُﻨِﺴْﺤُﻣ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের সাথে থাকেন, যারা
আল্লাহ্কে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম
করে।” [সূরা নাহাল- ১২৮]
৩) জ্ঞানার্জনের সুযোগ লাভ: আল্লাহ্
বলেন,
ﺍﻮُﻘَّﺗﺍَﻭ ْﻢُﻜُﻤِّﻠَﻌُﻳَﻭ َﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪَّﻠﻟﺍ
“এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ্
তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন।” [সূরা
বাক্বারা ২৮২]
৪) সত্যের পথ পাওয়া এবং হক্ব ও বাতিলের
মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারা: আল্লাহ্ বলেন,
ﺎَﻬُّﻳَﺃﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ ْﻥِﺇ
ﺍﻮُﻘَّﺘَﺗ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻞَﻌْﺠَﻳ ْﻢُﻜَﻟ
ﺎًﻧﺎَﻗْﺮُﻓ
“তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে; তবে
তিনি তোমাদেরকে (হক ও বাতিলের মাঝে)
পার্থক্য করার তাওফীক দিবেন।” [সূরা
আনফাল- ২৯]
৫) গুনাহ মাফ এবং বিরাট প্রতিদানের
সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন,
ْﻦَﻣَﻭ ِﻖَّﺘَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﺮِّﻔَﻜُﻳ ُﻪْﻨَﻋ
ِﻪِﺗﺎَﺌِّﻴَﺳ ْﻢِﻈْﻌُﻳَﻭ ُﻪَﻟ ﺍًﺮْﺟَﺃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার
পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং বিরাট
প্রতিদানে ভূষিত করবেন।” [সূরা ত্বালাক-
৫]
তিনি আরও বলেন,
ْﻥِﺇَﻭ ﺍﻮُﺤِﻠْﺼُﺗ ﺍﻮُﻘَّﺘَﺗَﻭ َّﻥِﺈَﻓ
َﻪَّﻠﻟﺍ َﻥﺎَﻛ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ
“আর তোমরা যদি নিজেদেরকে সংশোধন করে
নাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, তবে তো আল্লাহ্
ক্ষমাশীল দয়াময়।” [সূরা নিসা- ১২৯]
৬) প্রত্যেক বিষয়ে সহজতা লাভ: আল্লাহ্
বলেন,
ْﻦَﻣَﻭ ِﻖَّﺘَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻞَﻌْﺠَﻳ ُﻪَﻟ ْﻦِﻣ
ِﻩِﺮْﻣَﺃ ﺍًﺮْﺴُﻳ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি
তার প্রতিটি বিষয়কে সহজ করে
দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৪]
৭) দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তি লাভ:
আল্লাহ্ বলেন,
ْﻦَﻣَﻭ ِﻖَّﺘَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻞَﻌْﺠَﻳ ُﻪَﻟ
ﺎًﺟَﺮْﺨَﻣ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি
তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে
দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ২]
৮) কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া জীবিকা লাভ:
আল্লাহ্ বলেন,
ْﻦَﻣَﻭ ِﻖَّﺘَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻞَﻌْﺠَﻳ ُﻪَﻟ
،ﺎًﺟَﺮْﺨَﻣ ُﻪْﻗُﺯْﺮَﻳَﻭ ْﻦِﻣ ُﺚْﻴَﺣ ﺎَﻟ
ُﺐِﺴَﺘْﺤَﻳ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি
তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন।
এবং এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে
ভাবতেও পারে নি।” [সূরা ত্বালাক- ২-৩]
৯) আযাব এবং শাস্তি থেকে মুক্তি: আল্লাহ্
বলেন,
ﻲِّﺠَﻨُﻧ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍْﻮَﻘَّﺗﺍ
“যারা তাকওয়া অর্জন করবে, তাদেরকে আমি
মুক্তি দিব।” [সূরা মারইয়াম- ৭২]
১০) সম্মানিত হওয়ার সনদ: আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ ْﻢُﻜَﻣَﺮْﻛَﺃ َﺪْﻨِﻋ ِﻪَّﻠﻟﺍ
ْﻢُﻛﺎَﻘْﺗَﺃ
“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট
সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে
আল্লাহকে বেশী ভয় করে।” [সূরা হুজুরাত-
১৩]
রাসূল (সাঃ)কে প্রশ্ন করা হল, মানুষের
মাঝে কে সবচাইতে বেশী সম্মানিত? তিনি
বললেন, তাদের মাঝে আল্লাহকে যে বেশী ভয়
করে…।” (বুখারী ও মুসলিম)
১১) ভালবাসার সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ُّﺐِﺤُﻳ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ পরহেযগারদের
ভালবাসেন।” [সূরা তওবা- ৪]
১২) প্রতিদান পাওয়া এবং আমল বিনষ্ট না
হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
ُﻪَّﻧِﺇ ْﻦَﻣ ِﻖَّﺘَﻳ ْﺮِﺒْﺼَﻳَﻭ َّﻥِﺈَﻓ
َﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻟ ُﻊﻴِﻀُﻳ َﺮْﺟَﺃ
َﻦﻴِﻨِﺴْﺤُﻤْﻟﺍ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করবে
এবং ধৈর্য অবলম্বন করবে; নি:সন্দেহে
আল্লাহ্ সৎকর্ম শীলদের প্রতিদান বিনষ্ট
করবেন না।” [সূরা ইউসুফ- ৯০]
১৩) আমল কবুল হওয়া এবং তা প্রত্যাখ্যান
না হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﻞَّﺒَﻘَﺘَﻳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ْﻦِﻣ
َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ
“আল্লাহ্ তো তাক্বওয়াবানদের থেকেই কবুল
করেন।” [সূরা মায়েদা ২৭]
১৪) সফলকাম হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
ﺍﻮُﻘَّﺗﺍَﻭ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ
َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ
“তোমরা আল্লাহ কে ভয় কর, তবে তোমরা
সফলকাম হবে।” [সূরা বাক্বারা- ১৮৯]
১৫) জান্নাত লাভে কামিয়াবী: আল্লাহ্
বলেন,
َّﻥِﺇ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺕﺎَّﻨَﺟ
ٍﻥﻮُﻴُﻋَﻭ
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা জান্নাত এবং
ঝর্ণাধারার মধ্যে থাকবে।” [সূরা
যারিয়াত- ১৫]
রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হল, সর্বাধিক
কোন জিনিস মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবে? তিনি বলেন, “আল্লাহ্ ভীতি এবং
সচ্চরিত্র।” [তিরমিযী]
১৬) নিরাপত্তা এবং সুউচ্চ মর্যাদা:
আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﻡﺎَﻘَﻣ ٍﻦﻴِﻣَﺃ
“নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ সুউচ্চ নিরাপদ
স্থানে থাকবে।” [সূরা দুখান- ৫১]
১৭) সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ:
আল্লাহ্ বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍَﻭ ﺍْﻮَﻘَّﺗﺍ ْﻢُﻬَﻗْﻮَﻓ َﻡْﻮَﻳ
ِﺔَﻣﺎَﻴِﻘْﻟﺍ
“এবং যারা তাকওয়া অর্জন করেছে তারা
কিয়ামত দিবসে তাদের (কাফেরদের) উপরে
অবস্থান করবে।” [সূরা বাক্বারা- ২১২]
১৮) কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ
এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত ও দর্শন লাভের
সৌভাগ্য অর্জন করা: আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺕﺎَّﻨَﺟ
،ٍﺮَﻬَﻧَﻭ ﻲِﻓ ِﺪَﻌْﻘَﻣ ٍﻕْﺪِﺻ َﺪْﻨِﻋ
ٍﻚﻴِﻠَﻣ ٍﺭِﺪَﺘْﻘُﻣ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ ভীরুগণ জান্নাত এবং
নহরের মধ্যে থাকবে। সত্য ও সন্তোষটির
আবাস স্থলে পরাক্রমশালী বাদশাহর
দরবারে।” [সূরা ক্বামার ৫৪/৫৫]
১৯) অন্তর বিশুদ্ধ হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
ُﺀﺎَّﻠِﺧَﺄْﻟﺍ ٍﺬِﺌَﻣْﻮَﻳ ْﻢُﻬُﻀْﻌَﺑ
ٍﺾْﻌَﺒِﻟ ٌّﻭُﺪَﻋ ﺎَّﻟِﺇ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ
“সেদিন (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ ভীরুগণ
ব্যতীত (দুনিয়ার) বন্ধুরা একে অপরের
শত্রু হয়ে যাবে।” [সূরা যুখরুফ- ৬৭]
২০) দ্রুত সতর্ক হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍْﻮَﻘَّﺗﺍ ﺍَﺫِﺇ ْﻢُﻬَّﺴَﻣ
ٌﻒِﺋﺎَﻃ ْﻦِﻣ ِﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ﺍﻭُﺮَّﻛَﺬَﺗ
ﺍَﺫِﺈَﻓ ْﻢُﻫ َﻥﻭُﺮِﺼْﺒُﻣ
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অর্জন করেছে- যখন
তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটে
ততক্ষণাৎ তারা (সতর্ক হয়ে আল্লাহ্কে)
স্মরণ করে, তারপর তারা সুপথ প্রাপ্ত
হয়।” [সূরা আ’রাফ- ২০১]
২১) সুমহান প্রতিদান: আল্লাহ্ বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ﺍﻮُﻨَﺴْﺣَﺃ ْﻢُﻬْﻨِﻣ
ﺍْﻮَﻘَّﺗﺍَﻭ ٌﺮْﺟَﺃ ٌﻢﻴِﻈَﻋ
“তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে এবং
তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে
সুমহান প্রতিদান।” [সূরা আল ইমরান-
১৭২]
২২) চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণা করা:
আল্লাহ্ বলেন,
َّﻥِﺇ ﻲِﻓ ِﻑﺎَﻠِﺘْﺧﺍ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ
ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍَﻭ ﺎَﻣَﻭ َﻖَﻠَﺧ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﻲِﻓ
ِﺕﺍَﻭﺎَﻤَّﺴﻟﺍ ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍَﻭ ٍﺕﺎَﻳﺂَﻟ
ٍﻡْﻮَﻘِﻟ َﻥﻮُﻘَّﺘَﻳ
“নিশ্চয় রাত-দিনের পরিবর্তন এবং
আসমান ও জমিনের মধ্যে আল্লাহ্ যা সৃষ্টি
করেছেন, তার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন
জাতির জন্য যারা আল্লাহ্কে ভয় করে।”
[সূরা ইউনুস- ৬]
২৩) জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ: আল্লাহ্
বলেন,
ﺎَﻬُﺒَّﻨَﺠُﻴَﺳَﻭ ﻰَﻘْﺗَﺄْﻟﺍ
“এবং অচিরেই জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে
আল্লাহ্ ভীরুগণ।” [সূরা লাইল- ১৭]
২৪ ) অফুরান্ত কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া:
আল্লাহ্ বলেন,
ﺍﻭُﺩَّﻭَﺰَﺗَﻭ َّﻥِﺈَﻓ َﺮْﻴَﺧ
ِﺩﺍَّﺰﻟﺍ ﻯَﻮْﻘَّﺘﻟﺍ
“তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর; কেননা
সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ পাথেয় হল তাকওয়া বা
আল্লাহ্ ভীতি।” [সূরা বাক্বারা- ১৯৭]
২৫) পরিণতি সুন্দর হওয়া: আল্লাহ্ বলেন,
ْﺮِﺒْﺻﺎَﻓ َّﻥِﺇ َﺔَﺒِﻗﺎﻌْﻟﺍ
َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻠِﻟ
“অতএব তুমি ধৈর্য অবলম্বন কর, নিশ্চয়
শেষ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা
হূদ- ৪৯]
২৬) আল্লাহ্র বন্ধুত্ব লাভ: আল্লাহ্ বলেন,
ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ُّﻲِﻟَﻭ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤْﻟﺍ
“আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা
জাছিয়া- ১৯]

মাসিক বা ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের জন্যে যে সকল কাজ হারাম

হায়েজ বা ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের জন্য
যে সকল কাজ করা হারাম

গ্রন্থনায়: আবদুল্লাহ আল কাফী
সম্পাদনয়: আব্দুল্লাহিল হাদী

(ক) ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাসে লিপ্ত
হওয়া হারাম:
এ কথার দলীল, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
( َﻚَﻧﻮﻟﺄﺴﻳ ْﻦَﻋ ِﺾْﻴِﺤَﻤْﻟﺍ ْﻞُﻗ َﻮُﻫ ًﻯﺫﺃ ﺍْﻮُﻟِﺰَﺘْﻋﺎَﻓ
َﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ْﻲِﻓ ِﺾْﻴِﺤَﻤْﻟﺍ َّﻦُﻫْﻮُﺑَﺮْﻘَﺗ َﻻَﻭ ﻰَّﺘَﺣ َﻥْﺮُﻬْﻄَﻳ ،
ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻥْﺮَّﻬَﻄَﺗ َّﻦُﻫْﻮُﺗْﺄَﻓ ْﻦِﻣ ُﺚْﻴَﺣ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻢُﻛَﺮَﻣَﺃ َّﻥﺇ،
َﻪﻠﻟﺍ ُّﺐِﺤُﻳ َﻭ َﻦْﻴِﺑﺍَّﻮَّﺘﻟﺍ ُّﺐِﺤُﻳ َﻦْﻳِﺮِّﻬَﻄَﺘُﻤْﻟﺍ )
“আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েজ
সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই
তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে
বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে
লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে
যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন
গমন কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ
তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ
তওবা কারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে
থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাক্বারা-
২২২)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে
গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত
স্ত্রী মিলন সম্পূর্ণ হারাম বা অবৈধ।
অবশ্য এ অবস্থায় যৌনাঙ্গে সঙ্গম ব্যতীত স্ত্রীর
সাথে অন্য কিছু করা হারাম নয়। হাদীসে এরশাদ
হচ্ছে:
( ْﻊَﻨْﺻﺍ َّﻞُﻛ ٍﺀْﻰَﺷ َّﻻﺇ ِﺡَﺎﻜِّﻨﻟﺍ )
“যৌন সঙ্গম ছাড়া তুমি সব কিছু করতে
পার।” (সহীহ্ মুসলিম)
ঋতুস্রাব অবস্থায় যদি কেহ যৌনমিলনে লিপ্ত হয় তবে
তার উপর এই পাপের কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে
যাবে। কাফফারার পরিমাণ হল এক দীনার অথবা অর্ধ
দীনার। এ ক্ষেত্রে দলীল হল- আবু দাউদ বর্ণিত
একটি হাদীস। কোন কোন আলেম হাদীসটিকে দুর্বল
বলেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল, হাদীসটির বর্ণনা
কারীগণ সকলেই নির্ভর যোগ্য। সুতরাং দলীল
হিসেবে উহা গ্রহণযোগ্য।
এই কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হল:
১) ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। (যে হায়য অবস্থায় ইহা
হারাম)
২) স্মরণ থাকা। (ভুল ক্রমে নয়) এবং
৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে সে কাজে লিপ্ত হওয়া। (কারো
জবরদস্তী করার কারণে নয়।)
স্ত্রী যদি উক্ত কাজে স্বামীর অনুগত হয় তবে তারও
উপর উক্ত কাফফারা ওয়াজিব হবে।
(খ) ঋতুবতী মহিলার জন্য নামায-রোযা বৈধ
নয়। আদায় করলেও উহা বিশুদ্ধ হবে না:
এ কথার দলীল রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর বাণী:
… ﺲﻴﻟﺃ ﺖﺿﺎﺣ ﺍﺫﺇ ﻢﻟ ﻞﺼﺗ ﻢﻟﻭ ﺚﻳﺪﺤﻟﺍ…؟ﻢﺼﺗ
“মহিলা কি এমন নয় যে, ঋতুবতী হলে নামায
পড়বে না, রোযা রাখবে না? ” (বুখারী ও
মুসলিম)
পবিত্রতা অর্জনের পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে,
নামাযের কাজা আদায় করতে হবে না। মা আয়েশা (রা:)
বলেন:
“আমরা রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এর যুগে ঋতুবতী হলে রোযার কাজা
আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশিত হতাম। নামাযের
কাযা আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশিত হতাম
না।” (বুখারী ও মুসলিম)
(গ) ঋতুবতীর উপর হারাম-অন্তরায় ব্যতীত
পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা:
আল্লাহ বলেন: ( ُﻪُّﺴَﻤَﻳَﻻ َّﻻﺇ َﻥْﻭُﺮَّﻬَّﻄُﻤْﻟﺍ ) অর্থাৎ
“যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে
(কুরআনকে) স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আমর ইবনে হাযম (রা:) এর নিকট যে পত্র প্রেরণ
করেছিলেন, তাতে লিখেছেন, ( َّﺲَﻤَﻳَﻻ َﻥﺁﺮُﻘْﻟﺍ َّﻻﺇ
ٌﺮِﻫﺎَﻃ) অর্থাৎ “পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেহ কুরআন
স্পর্শ করবে না।” (মুয়াত্তা মালিক)
স্পর্শ করে ঋতুবতীর মুখস্থ কুরআন পড়ার ব্যাপারে
ওলামাদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান। তবে না পড়াই
উচিত। অবশ্য একান্ত প্রয়োজন যেমন- ভুলে যাওয়ার
আশঙ্কা থাকলে মুখস্ত পাঠ করতে পারে।
ঋতুবতীর দু’আ, তাসবীহ্, তাহমীদ, তাহলীল ইত্যাদি
পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।
ঘ) ঋতুবতীর বাইতুল্লাহর তওয়াফ করা হারাম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা
আয়েশা (রা:)কে বলেছিলেন:
( … ْﻲِﻠَﻌْﻓﺎَﻓ ُﻞَﻌْﻔَﻳ َﺎﻣ َّﺝﺎَﺤﻟﺍ َﺮْﻴَﻏ ْﻥﺃ َﻻ ْﻲِﻓْﻮُﻄَﺗ
ِﺖْﻴَﺒْﻟﺎِﺑ ﻰَّﺘَﺣ ْﻱِﺮُﻬْﻄَﺗ )
“হজ্জ সম্পাদনকারী একজন ব্যক্তি যা করে
তুমিও তা করতে থাক। তবে পবিত্রতা অর্জন
পর্যন্ত পবিত্র ঘর কা’বার তওয়াফ থেকে
বিরত থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ঙ) ঋতুবতী মহিলার জন্য মসজিদে অবস্থান
করা নাজায়েজ:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন:
(… َﻻ ْﻲِّﻧﺈﻓ َﺪِﺠـْﺴَﻤْﻟﺍ ُّﻞِﺣُﺃ ٍﺾِﺋَﺎﺤِﻟ َﻻَﻭ ٍﺐُﻨُﺟ )
“কোন ঋতুবতী এবং নাপাক ব্যক্তির জন্য (যার
উপর গোসল ফরয) মসজিদে অবস্থান করা আমি
বৈধ করিনি।” (আবু দাউদ)
তবে মসজিদ থেকে কোন জিনিস নেয়ার দরকার থাকলে
তা নিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) একদা আয়েশা (রা:)কে বললেন:
ْﻲِﻨْﻴِﻟِﻭَﺎﻧ َﺓَﺮْﻤُﺨْﻟﺍ ِﺪِﺠـْﺴَﻤْﻟﺍ ْﻦِﻣ ُﺖﻠُﻘﻓ :ﺖﻟﺎﻗ ، :
,ٌﺾِﺋَﺎﺣ ْﻲِّﻧﺇ :ﻝﺎـﻘﻓ َّﻥﺇ ْﺖـَﺴْﻴَﻟ ِﻚَﺘَﻀْﻴَﺣ ْﻲِﻓ ِﻙِﺪـَﻳ
“মসজিদ থেকে (আমার) চাদরটি এনে দাও।
তিনি বললেন- আমি তো ঋতুবতী? তিনি জবাবে
বললেন: তোমার হাতে তো হায়েয
নেই।” (মুসলিম)
বি: দ্র: নিফাস বা সন্তান প্রসবোত্তর রক্ত
প্রাবাহিত অবস্থায়ও উপরোক্ত বিধান সমূহ
প্রযোজ্য।
আল্লাহই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ

ভূমিকা
নববর্ষ বা New Year’s day – এই শব্দগুলো নতুন
বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব-
অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের
অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ,
সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের
প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে
মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো – এই সবকিছু
কতটা ইসলাম সম্মত? ৮৭ ভাগ মুসলিম যে আল্লাহতে
বিশ্বাসী, সেই আল্লাহ কি মুসলিমদের এইসকল
আচরণে আনন্দ-আপ্লুত হন, না ক্রোধান্বিত হন ?
নববর্ষকে সামনে রেখে এই নিবন্ধে এই বিষয়টি
আলোচিত হয়েছে ।
ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখা
অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণত একটি
জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়।
উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব
পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি,
সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ,
খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন তাদের বিশ্বাসমতে
স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন।
মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫শে মার্চ, এবং তা
পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীস্টীয়
মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী
প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম
দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান
ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো
পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে।
ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব
হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ
হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয়
পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে
প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয়
চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম
ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের
উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব
মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা
আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম]
বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ
সম্পর্কে বলেন:
“উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ
এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট
বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আল-
মায়িদাহ :৪৮]
‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ
নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে
হয়।’ [আল-হাজ্জ্ব :৬৭]
যেমনটি কিবলাহ, সালাত এবং সাওম ইত্যাদি। সেজন্য
তাদের [অমুসলিমদের] উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আর
তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্যে কোন
পার্থক্য নেই। এই উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত
পোষণ করা অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর
এসবের একাংশের সাথে একমত পোষণ করা অর্থ কুফরের
শাখাবিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-অনুষ্ঠানাদি
স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার দ্বারা
ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।…
নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব অনুষ্ঠান পালনে যোগ
দেয়া একজনকে কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর
বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে পাপ।
উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয়
বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ(সা.) ইঙ্গিত
করেছেন, যখন তিনি বলেন :
‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের
ঈদ।’ [বুখারী, মুসলিম]
এছাড়া আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:
“রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন,
তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি
(সা.) বললেন, ‘এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’
তারা বলল, ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো
দিনে উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন,
‘আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম
কিছু দিয়েছেন: ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর
।’ ” [সূনান আবু দাউদ]
এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের
পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া
হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে
নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের
অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা
হয়েছে।
ইসলামের এই যে উৎসব – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা –
এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের
মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয়, এবং
এই বিষয়টি আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা
উচিৎ, যা হচ্ছে:
অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের
দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন,
এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে
অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের
অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি
খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র
বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে
মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে
কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর
কারণে।
অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে
সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের
সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-
অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে
আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে
উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের
উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ
ঘোষণা দিচ্ছেন:
“আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য
কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।” [সূরা যারিয়াত:৫৬]
সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর
বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা
নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার
মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই
মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান,
আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর
প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।
তাইতো দেখা যায় যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা – এ
দুটো উৎসবই নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামের দুটি
স্তম্ভ পালন সম্পন্ন করার প্রাক্কালে। ইসলামের
চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর পরই মুসলিমরা পালন
করে ঈদুল ফিতর, কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ
পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার
ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারীর
জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন – এদিন এজন্য
উৎসবের নয় যে এদিনে আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধ
কিছুটা শিথিল হতে পারে, যেমনটি বহু মুসলিমদের
ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা এই দিনে আল্লাহর আদেশ
নিষেধ ভুলে গিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, বরং
মুসলিমের জীবনে এমন একটি মুহূর্তও নেই, যে মুহূর্তে
তার ওপর আল্লাহর আদেশ নিষেধ শিথিলযোগ্য।
তেমনিভাবে ঈদুল আযহা পালিত হয় ইসলামের পঞ্চম
স্তম্ভ হাজ্জ পালনের প্রাক্কালে। কেননা ৯ই জিলহজ্জ
হচ্ছে ইয়াওমুল আরাফা, এদিনটি আরাফাতের ময়দানে
হাজীদের ক্ষমা লাভের দিন, আর তাই ১০ই জিলহজ্জ
হচ্ছে আনন্দের দিন – ঈদুল আযহা। এমনিভাবে
মুসলিমদের উৎসবের এ দুটো দিন প্রকৃতপক্ষে
আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করার দিন, তাঁর প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন এবং শরীয়তসম্মত বৈধ আনন্দ
উপভোগের দিন – এই উৎসব মুসলিমদের ঈমানের
চেতনার সাথে একই সূত্রে গাঁথা।
নতুন বছরের সাথে মানুষের কল্যাণের সম্পর্ক
নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো
কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব
ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে
কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী
মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ।
ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং
মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান
হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয়
করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর
অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই
দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ
তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ
পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে
এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন
উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ
পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মু্হাররামকে নববর্ষের
সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর(সা.)
মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) আমলে।
এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে
কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-
অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই,
আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিই
বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের
প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে
সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে
অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ
এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ
করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি
মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে
থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে
লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে
গেল। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর
কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য
জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা
দিয়েছেন:
“নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে,
আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর
তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন
সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়িদাহ :৭২]
নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার
সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয় ,
যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ
ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব:
সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে
প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি: শয়তানের পুরোনো
কূটচালের নবায়ন
আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি
ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো
সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের
অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা
আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে
পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে
স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-
বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা
ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের
আয়োজন ইত্যাদি – এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ
অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও
“রাশিফল” প্রকাশ।
এবারে এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে অনুষ্ঠিত মূল কর্মকান্ড
এবং ইসলামে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা
করা যাক:
নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানো:
এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-
পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র, যা
আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে
উঠেছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকেরই
ধর্মের নাম শোনামাত্র গাত্রদাহ সৃষ্টি হলেও
প্রকৃতি-পূজারী আদিম ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নকল
করতে তাদের অন্তরে অসাধারণ পুলক অনুভূত হয়। সূর্য ও
প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন
জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রীস্টপূর্ব ১৪
শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের
উপাসনা চলত। এমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং
মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া
যাবে। খ্রীস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত যীশু
খ্রীস্টের তথাকথিত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরও মূলত
এসেছে রোমক সৌর-পূজারীদের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে,
যীশু খ্রীস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে নয়। ১৯
শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের
প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে
পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-
বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও
ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির
সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে
লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “ক্লাসিকাল
ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:
“আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে
ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের
কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে…”[সূরা
আন নামল :২৪]
নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতা:
নববর্ষের পার্টি বা “উদযাপন আয়োজনের” অন্যতম
আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের
টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে –
পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা
একটা অলিখিত প্রলোভন। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির
মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার
মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের
অশ্লীলতা। নববর্ষের পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের
সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের
সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে। পৃথিবীতে
আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা
পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী।
রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:
“আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন
ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী ও মুসলিম]
সমাজ নারীকে কোন অবস্থায়, কি ভূমিকায়, কি ধরনের
পোশাকে দেখতে চায় – এ বিষয়টি সেই সমাজের ধ্বংস
কিংবা উন্নতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অতীব
গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নারীর বিচরণক্ষেত্র, ভূমিকা
এবং পোশাক এবং পুরুষের সাপেক্ষে তার অবস্থান – এ
সবকিছুই ইসলামে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
নির্দেশ দ্বারা নির্ধারিত, এখানে ব্যক্তিগত বা
সামাজিক প্রথা, হালের ফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত
শালীনতাবোধের কোন গুরুত্বই নেই। যেমন ইসলামে
নারীদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া আছে, আর
তা হচ্ছে এই যে একজন নারীর চেহারা ও হস্তদ্বয়
ছাড়া দেহের অন্য কোন অঙ্গই বহিরাগত পুরুষেরা দেখতে
পারবে না।
বহিরাগত পুরুষ কারা? স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র,
স্বামীদের পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, মুসলিম
নারী, নিজেদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনাহীন
কোন পুরুষ এবং এমন শিশু যাদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে
সংবেদনশীলতা তৈরী হয়নি, তারা বাদে সবাই একজন
নারীর জন্য বহিরাগত। এখানে ব্যক্তিগত
শালীনতাবোধের প্রশ্ন নেই। যেমন কোন নারী যদি
বহিরাগত পুরুষের সামনে চুল উন্মুক্ত রেখে দাবী করে
যে তার এই বেশ যথেষ্ট শালীন, তবে তা
সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য
নয়। কেননা শালীনতা-অশালীনতার সামাজিক
মাপকাঠি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, আর তাই সমাজ
ধীরে ধীরে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ উন্মুক্তকরণকে
অনুমোদন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে
পারে যে, যেখানে বস্তুত দেহের প্রতিটি অঙ্গ নগ্ন
থাকলেও সমাজে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় – যেমনটা
পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে দেখা যায়।
মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ভারতবর্ষে যা শালীন,
বাংলাদেশে হয়ত এখনও সেটা অশালীন – তাহলে
শালীনতার মাপকাঠি কি? সেজন্য ইসলামে এধরনের
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে মানুষের কামনা-বাসনার
ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং তা কুরআন ও হাদীসের
বিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেমনি নারী ও
পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ
কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনা-
ব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে
কবীরাহ গুনাহ, এর পরিণতিতে হাদীসে
আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে। এর
প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে
পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি।
আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন
ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর
শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে
ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা
যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে।
এ সকল কিছু রোধ করার জন্য ইসলামে নারীদেরকে
পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নারী ও পুরুষের
বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করা এবং দৃষ্টি অবনত রাখার
বিধান রাখা হয়েছে। যে সমাজ নারীকে অশালীনতায়
নামিয়ে আনে, সেই সমাজ অশান্তি ও সকল পাপকাজের
কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, কেননা নারীর প্রতি আকর্ষণ
পুরুষের চরিত্রে বিদ্যমান অন্যতম অদম্য এক স্বভাব,
যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সামাজিক সমৃদ্ধির মূলতত্ত্ব।
আর এজন্যই ইসলামে সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের
বাইরে যে কোন প্রকার সৌন্দর্য বা ভালবাসার
প্রদর্শনী ও চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে
শৈথিল্য প্রদর্শনের ফলাফল দেখতে চাইলে পশ্চিমা
বিশ্বের দিকে তাকানোই যথেষ্ট, গোটা বিশ্বে
শান্তি, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার
ঝান্ডাবাহী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয়
মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় । মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সভ্য দেশে মানুষের
ভিতরকার এই পশুকে কে বের করে আনল? অত্যন্ত
নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেও সহজেই বুঝতে পারে যে,
স্রষ্টার বেঁধে দেয়া শালীনতার সীমা যখনই শিথিল
করা শুরু হয়, তখনই মানুষের ভিতরকার পশুটি পরিপুষ্ট
হতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্বের অশালীনতার চিত্রও
কিন্তু একদিনে রচিত হয়নি। সেখানকার সমাজে
নারীরা একদিনেই নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেনি, বরং
ধাপে ধাপে তাদের পোশাকে সংক্ষিপ্ততা ও যৌনতা
এসেছে, আজকে যেমনিভাবে দেহের অংশবিশেষ
প্রদর্শনকারী ও সাজসজ্জা গ্রহণকারী বাঙালি নারী
নিজেকে শালীন বলে দাবী করে, ঠিক একইভাবেই
বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে দেহ উন্মুক্তকরণ শুরু হয়েছিল
তথাকথিত “নির্দোষ” পথে।
নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলন নিয়ে ইসলামের
বিধান আলোচনা করা এই নিবন্ধের আওতা বহির্ভূত,
তবে এ সম্পর্কে মোটামুটি একটা চিত্র ইতিমধ্যেই
তুলে ধরা হয়েছে। এই বিধি-নিষেধের আলোকে
চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নববর্ষের বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে নারীর যে অবাধ উপস্থিতি,
সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং পুরুষের সাথে মেলামেশা
– তা পরিপূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী, তা
কতিপয় মানুষের কাছে যতই লোভনীয় বা
আকর্ষণীয়ই হোক না কেন। এই অনুষ্ঠানগুলো
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের ধ্বংসের পূর্বাভাস
দিচ্ছে। ৩ বছরের বালিকা ধর্ষণ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত
বিদ্যাপীঠে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন,
পিতার সম্মুখে কন্যা এবং স্বামীর সম্মুখে
স্ত্রীর শ্লীলতাহানি – বাংলাদেশের সমাজে
এধরনের বিকৃত ঘটনা সংঘটনের প্রকৃত কারণ ও উৎস
কি? প্রকৃতপক্ষে এর জন্য সেইসব মা-বোনেরা দায়ী
যারা প্রথমবারের মত নিজেদের অবগুন্ঠনকে উন্মুক্ত
করেও নিজেদেরকে শালীন ভাবতে শিখেছে এবং সমাজের
সেইসমস্ত লোকেরা দায়ী, যারা একে প্রগতির প্রতীক
হিসেবে বাহবা দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছে।
ব্যভিচারের প্রতি আহবান জানানো শয়তানের
ক্লাসিকাল ট্রিকগুলোর অপর একটি, যেটাকে
কুরআনে “ফাহিশাহ” শব্দের আওতায় আলোচনা করা
হয়েছে, শয়তানের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ পাক
বলেন:
“হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু
আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক
অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । সে
তো তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজ
[ব্যভিচার, মদ্যপান, হত্যা ইত্যাদি] করতে এবং
আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলতে যা তোমরা জান
না।” [সূরা আল বাকারা :১৬৮-১৬৯]
এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও
উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা
হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা:
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা
অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা।” [সূরা বনী ইসরাঈল:
৩২]
ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা
ও কাজ এই আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পর্দাবিহীন নারীকে
আকর্ষণীয়, প্রগতিশীল, আধুনিক ও অভিজাত বলে মনে
হতে পারে, কেননা, শয়তান পাপকাজকে মানুষের দৃষ্টিতে
শোভনীয় করে তোলে। যেসব মুসলিম ব্যক্তির কাছে
নারীর এই অবাধ সৌন্দর্য প্রদর্শনকে সুখকর বলে মনে
হয়, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য:
ক. ছোট শিশুরা অনেক সময় আগুন স্পর্শ করতে চায়,
কারণ আগুনের রং তাদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু
আগুনের মূল প্রকৃতি জানার পর কেউই আগুন ধরতে চাইবে
না। তেমনি ব্যভিচারকে আকর্ষণীয় মনে হলেও
পৃথিবীতে এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখিরাতে এর
জন্য যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, সেটা স্মরণ করলে
বিষয়টিকে আকর্ষণীয় মনে হবে না।
খ. প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, একজন নারী
যখন নিজের দেহকে উন্মুক্ত করে সজ্জিত হয়ে বহু
পুরুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের মনে যৌন-লালসার
উদ্রেক করে, তখন সেই দৃশ্য দেখে এবং সেই নারীকে
দেখে বহু-পুরুষের মনে যে কামভাবের উদ্রেক হয়, সেকথা
চিন্তা করে এই নারীর বাবার কাছে তার কন্যার
নগ্নতার দৃশ্যটি কি খুব উপভোগ্য হবে? এই নারীর
সন্তানের কাছে তার মায়ের জনসম্মুখে উন্মুক্ততা কি
উপভোগ্য? এই নারীর ভাইয়ের কাছে তার বোনের এই
অবস্থা কি আনন্দদায়ক? এই নারীর স্বামীর নিকট
তার স্ত্রীর এই অবস্থা কি সুখকর? নিশ্চয়ই নয়।
তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি পরনারীর সৌন্দর্য
প্রদর্শনকে পছন্দ করতে পারে? এই পরনারী তো কারও
কন্যা কিংবা কারও মা, কিংবা কারও বোন অথবা কারও
স্ত্রী? এই লোকগুলোর কি পিতৃসুলভ অনুভূতি নেই,
তারা কি সন্তানসুলভ আবেগশূন্য, তাদের বোনের প্রতি
ভ্রাতৃসুলভ স্নেহশূন্য কিংবা স্ত্রীর প্রতি স্বামীসুলভ
অনুভূতিহীন?
নিশ্চয়ই নয়। বরং আপনি-আমি একজন পিতা, সন্তান,
ভাই কিংবা স্বামী হিসেবে যে অনুভূতির অধিকারী,
রাস্তার উন্মুক্ত নারীটির পরিবারও সেই একই
অনুভূতির অধিকারী। তাহলে আমরা আমাদের কন্যা,
মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য যা চাই না, তা
কিভাবে অন্যের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের
জন্য কামনা করতে পারি? তবে কোন ব্যক্তি যদি দাবী
করে যে, সে নিজের কন্যা, মাতা, ভগ্নী বা স্ত্রীকেও
পরপুরুষের যথেচ্ছ লালসার বস্তু হতে দেখে বিচলিত
হয় না, তবে সে তো পশুতুল্য, নরাধম। বরং
অধিকাংশেরই এধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে। তাই
আমাদের উচিৎ অন্তর থেকে এই ব্যভিচারের চর্চাকে
ঘৃণা করা। এই ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে
পারে, যেমনটি নবীজী(সা.) বর্ণনা করেছেন:
“…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা
হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং
পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা
প্রত্যাখ্যান করে।” [বুখারী ও মুসলিম]
দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই
মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে,
তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের
কর্তব্য সে সকল স্থান থেকে শতহস্ত দূরে থাকা, যে
সকল স্থানে দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার ব্যভিচারের
সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।
সঙ্গীত ও বাদ্য:
নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে
সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত
নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ – একথা পূর্বের আলোচনা থেকেই
স্পষ্ট। সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে
নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন
বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর
অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব
হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া,
এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা
করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য
হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার
ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে
সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া
অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল
লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে
মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট
গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল
লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো
কূটচালের একটি, আল্লাহ এ কথা কুরআনে স্পষ্ট করে
দিয়েছেন:
“এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে পার পর্যায়ক্রমে বোকা
বানাও তোমার গলার স্বরের সাহায্যে, … ” [সূরা
বনী ইসরাঈল :৬৪]
যে কোন আওয়াজ, যা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে
আহবান জানায়, তার সবই এই আয়াতে বর্ণিত
আওয়াজের অন্তর্ভুক্ত। [তফসীর ইবন কাসীর]
আল্লাহ আরও বলেন:
“এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা
আল্লাহর পথ থেকে [মানুষকে] বিচ্যুত করার জন্য কোন
জ্ঞান ছাড়াই অনর্থক কথাকে ক্রয় করে, এবং একে ঠাট্টা
হিসেবে গ্রহণ করে, এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক
শাস্তি।” [সূরা লোকমান :৬]
রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন:
“আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা
ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ এবং
বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান
করবে।” [বুখারী]
এছাড়াও এ ধরনের অনর্থক ও পাপপূর্ণ অনুষ্ঠান
সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে কুরআনের অন্যান্য
আয়াতে এবং আল্লাহর রাসূলের হাদীসে।
যে সকল মুসলিমদের মধ্যে ঈমান এখনও অবশিষ্ট
রয়েছে, তাদের উচিৎ এসবকিছুকে সর্বাত্মকভাবে
পরিত্যাগ করা।
আমাদের করণীয়
সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত
যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে
নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী
বিষয় রয়েছে:
১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও
সংগীত
২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং
কাজ
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে,
নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম
সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা
চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ
প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু
দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে:
– এ বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে
আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয়
অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
– যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা
ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে
অধীনস্থদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা।
যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই
নির্দেশ জারি করতে পারেন যে, তার
প্রতিষ্ঠানে নববর্ষকে উপলক্ষ করে কোন
ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হবে না, নববর্ষ
উপলক্ষে কেউ বিশেষ পোশাক পরতে পারবে না
কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবে না।
– মসজিদের ইমামগণ এ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে
সচেতন করবেন ও বিরত থাকার উপদেশ দেবেন।
– পরিবারের প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত
করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা
অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন
অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। (এটুকু ইনশা’আল্লাহ্
চাইলে সবাই/অনেকেই করতে পারবেন)
– এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তার
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী
ও পরিবারের মানুষকে উপদেশ দেবেন এবং
নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া
থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও
শান্তি বর্ষিত হোক নবী(সা.)-এঁর ওপর, তাঁর
পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
“এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের
দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান ও
জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের
জন্য।” [সূরা আলে-ইমরান:১৩৩]

আল্লাহ যাদের দিকে তাকাবেন না

সংকলনঃ দাওয়াহ অফিস, রাওদা, রিয়াদ। |
অনুবাদঃ শেইখ আব্দুর রাকীব মাদানী

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু
আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মাবাদঃ
এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিয়ামত দিবসে
দয়াময় আল্লাহর সুদৃষ্টি থেকে বঞ্ছিত থাকবে,
তিনি তাদের দিকে তাকাবেন না আর না তাদের
প্রতি সুনজর দিবেন। তাদের সংখ্যা অনেক।
[আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন
আমাদেরকে এই বঞ্ছিতের অনিষ্ট থেকে
হেফাযতে রাখেন, এর কারণ থেকে দূরে রাখেন
এবং সেই বঞ্ছিত সম্প্রদায় থেকেও দূরে
রাখেন।]
১-যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ও
শপথকে সামান্য বিনিময়ে বিক্রয় করেঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নিশ্চয় যারা
আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের
শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা
আখেরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ
কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না,
তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের
পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [আল্ ইমরান/৭৭]
এই আয়াতে মিথ্যা কসম করা হারাম এর
প্রমাণ রয়েছে, যা মানুষ সামান্য পর্থিব
লাভের জন্যে করে থাকে। উলামাগণ এই কসম
কে আল্ ইয়ামীন আল্ গামূস বা ডুবানোর কসম
আখ্যা দিয়েছেন কারণ; তা এই কসমকারীকে
পাপে ডুবায় অতঃপর জাহান্নামে। [আল্লাহই
আশ্রয়দাতা]
২- গিঁটের (টাখনুর) নিচে বস্ত্র
পরিধানকারী।
৩-মিথ্যা কসম দিয়ে পণ্য বিক্রয়কারী।
৪- কারো উপকার করে তাকে উপকারের খোটা
দাতা।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “
তিন প্রকার এমন লোক রয়েছে, যাদের সাথে
আল্লাহ কথা বলবেন না আর না কেয়ামতের দিন
তাদের দিকে দেখবেন আর না তাদের পবিত্র
করবেন বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন
শাস্তি”। আমি (আবু হুরাইরা) বললামঃ
আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? ওরা তো
ক্ষতিগ্রস্ত! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “গিঁটের বা টাখনুর
নিচে কাপড় পরিধানকারী, ব্যবসার সামগ্রী
মিথ্যা কসম দিয়ে বিক্রয়কারী এবং কাউকে
কিছু দান করার পর তার খোটা দাতা” ।
[মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৪]
গিঁটের নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধানকারী
হচ্ছে, সেই ব্যক্তি যে তার লুঙ্গি ও কাপড়
এত ঝুলিয়ে পরে যে তার দুই গিঁটের নিচে চলে
যায়। যদি সে অহংকার স্বরূপ এমন করে,
তাহলে তার জন্য উপরোক্ত শাস্তির ঘোষণা
কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেনঃ “আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না যে,
তার লুঙ্গি অহংকার স্বরূপ ঝুলিয়ে পরে”।
[বুখারী, নং৫৭৮৩/ মুসলিম] আর যে অহংকার
স্বরূপ নয় বরং এমনি ঝুলিয়ে পরে, তাহলে
তার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর এই বাণী প্রযোজ্যঃ “লুঙ্গির
যতটা গিঁটের নিচে থাকবে, ততটা জাহান্নামে
যাবে”। [বুখারী,নং৫৭৮৭ ] এই ভাবে
হাদীসগুলির মাঝে সমন্বয় সাধন হবে।
আল্লাহই বেশী জানেন।
পর্দার উদ্দেশ্যে মহিলাদের এক গজ ঝুলিয়ে
পরা বৈধ কিন্তু এর বেশী করবে না।
আর মিথ্যা শপথ করে সামগ্রী বিক্রয়কারী
হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে মহান আল্লাহকে
তুচ্ছকারী। তাই সে (আল্লাহার কসম দিয়ে)
মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লোকদের নিকট পণ্য
বিক্রি করে।
আর খোটাদাতা হচ্ছে, যে দান করার পর খোটা
দেয়।
৫- যে মুসাফিরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত
পানি থেকে বাধা দেয়।
৬-যে পার্থিব লাভের আশায় কোন মুসলিম
রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বায়আত (অঙ্গীকার)
করে।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তিন প্রকারের লোকের সাথে মহান আল্লাহ
কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন না, না তাদের
দিকে তাকাবেন আর না তাদের পবিত্র করবেন;
বরং তাদের জন্য রয়েছে শক্ত আযাব। ঐ
ব্যক্তি যার নিকট র্নিজন প্রান্তরে
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও
মুসাফিরকে তা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ
করে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে
আমার অতিরিক্ত (রহমত) থেকে বঞ্ছিত
করবো, যেমন তুমি তোমার বিনা পরিশ্রমে
অর্জিত অতিরিক্ত পানি থেকে বঞ্ছিত
কেরেছ এবং সেই ব্যক্তি যে আসরের পর কোন
ব্যক্তিকে তার সামগ্রী বিক্রয় করে।
আল্লাহর কসম খেয়ে বলে আমি এটা এই এই
দামে ক্রয় করেছি। ক্রেতা তার কথা সত্য মনে
করে তার কাছ থেকে পণ্য খরিদ করে অথচ সে
সত্য নয়। আর সেই ব্যক্তি যে কোন মুসলিম
ইমামের (রাষ্ট্রপরিচালকের) হাতে কেবল
পার্থিব উদ্দেশ্যেই বাইআত (অঙ্গীকার)
করলো; সে যা চায় যদি তাকে তা দেওয়া হয়
তো অঙ্গীকার পূরণ করে, আর না দিলে ভঙ্গ
করে। [বুখারী, নং ৭২১২/ মুসলিম, ঈমান
অধ্যায়, নং২৯৭]
মরুভূমীতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি
থেকে মুসাফিরকে বাধাদানকারীকে আল্লাহ তার
কৃত কর্ম অনুযায়ী বদলা দিবেন। তার কাছে
প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা আছে তার তুলনায়
আল্লাহর রহমত ও ফযলের প্রয়োজন অনেক
বেশী। আর যে দুনিয়া পাবার আশায় ইমামের
হাতে বাইআত করে, সে যেন এই অঙ্গীকারকে
পার্থিব উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়।
আর ইসলামের মূল বিধান শাষকের আনুগত্ব
করা, তাকে সদুপদেশ দেওয়া, সাহায্য করা এবং
ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ
করা, এসবের অবজ্ঞা করে। সে মুসলিম শাষক ও
ইমামদের প্রতারনাকারী স্পষ্ট
ক্ষতিগ্রস্ত।
৭-বৃদ্ধ ব্যভিচারী।
৮-মিথ্যুক বাদশাহ।
৯-অহংকারী দরিদ্র।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “
আল্লাহ তাআ’লা কেয়ামত দিবসে তিন শ্রেণীর
লোকের সাথে কথা বলবেন না, আর না তাদের
পবিত্র করবেন, না তাদের দিকে রহমতের
দৃষ্টি দিবেন, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক
শাস্তিঃ বৃদ্ধ যেনাকারী, মিথ্যুক রাজা এবং
অহংকারী দরিদ্র”। [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়,
নং২৯৬]
বিশেষ করে এদের সম্পর্কে উক্ত শাস্তির
কারণ বর্ণনায় কাযী ইয়ায বলেনঃ “তাদের
প্রত্যেকে উক্ত পাপ থেকে দূরে থাকার পরেও তা
করে। যদিও কোনো পাপীর পাপের অজুহাত
গ্রহণীয় নয়, কিন্তু একথা বলা যেতে পারে
যে, উক্ত পাপ করার ক্ষেত্রে তাদের অতীব
প্রয়োজন ছিল না আর না তাদের সচরাচর
স্বাভাবিক কোনো অন্য কারণ ছিল। তা
সত্ত্বেও তাদের উক্ত পাপে লিপ্ত হওয়াটা
যেন আল্লাহর অধিকারকে তুচ্ছ মনে করা,
বিরোধিতা করা এবং অন্য কোন কারণ নয়
বরং স্রেফ পাপ করার উদ্দেশ্যেই তা করা”।
১০- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।
১১- নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য
অবলম্বণকারীনি।
১২-দাইযূস।
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলঅইহি
ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ তিন প্রকার লোকের
দিকে আল্লাহ তাআ’লা কিয়ামতের দিনে
দৃষ্টিপাত করবেন নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য,
পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারীনি মহিলা এবং
দাইয়ূস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে
নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত
এবং অনুদানের পর খোটাদাতা” [মুসনাদ আহমদ,
নং ৬১১/নাসাঈ]
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের বিষয়টি
স্পষ্ট, কারণ আল্লাহ তাআ’লা পিতা-মাতার
অধিকারকে মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি নিজ
অধিকারকে তাদের অধিকারের সাথে সংযুক্ত
করেছেন এবং তাদের উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহার
করার আদেশ করেছেন; যদিও তারা কাফের হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেনঃ “ পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর
সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর
অসন্তুষ্টি”। [তিরমিযী, নং ১৯৬২,
আলবানী সহীহ বলেছেন]
পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি বলতে সেই
মহিলাকে বুঝায় যে, পোষাক-পরিধানে, চাল-
চলনে, কাজে-কর্মে এবং কথার শুরে পুরূষের
অনুকরণ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বণকারী
পুরূষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি
মহিলাদের প্রতি অভিষাপ করেছেন”।
[বুখারী]
আর দাইয়ূস হচ্ছে, যে নিজ পরিবারে
অশ্লীলতা প্রশ্রয় দেয়, তাদের সম্ভ্রম
রক্ষায় আত্মসম্মানী নয়, সে মানবিকতাহীন,
অপুরুষত্ব, অসুস্থ মস্তিষ্ক এবং দুর্বল
ঈমানের অধিকারী। তার তুলনা অনেকটা
শুকরের মত, যে নিজ সম্ভ্রম রক্ষা করে না।
তাই ঐ সকল লোককে সতর্ক থাকা উচিৎ যারা
নিজ পরিবারে এবং তার দায়িত্বে থাকা
লোকদের মাঝে অশ্লীলতা বা অশ্লীলতার
উপকরণ প্রশ্রয় দেয়। যেমন বাড়িতে এমন
টিভি চ্যানেল রাখা যা যৌনতা উষ্কে দেয়
এবং অশ্লীলতা বৃদ্ধি করে।
১৩- যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করেঃ
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা সেই
ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না যে,
পুরুষের সাথে সঙ্গম করে কিংবা স্ত্রীর
পায়ুপথে সঙ্গম করে”। [তিরিমিযী,
নং১১৭৬ আলবানী সহীহ বলেছেন]
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“সে অভিশপ্ত যে স্ত্রীর পায়ু পথে সঙ্গম
করে”। [আহমদ, আবু দাউদ, নং ২১৬২/ আলবানী
সহীহ বলেছেন]

রমজানের রোজাকে কেন্দ্র করে আমরা যে সকল ভুল গুলো করে থাকি

১. রামাদানকে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠান
মনে করাঃ
আমাদের অনেকের কাছে রামাদান তাঁর
আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে
একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানের রূপ লাভ
করেছে। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
‘zombie’র মত উপোস থাকি শুধুমাত্র
আমাদের আশেপাশের সবাই রোজা রাখে বলে।
আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের
অন্তর ও আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ
থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য…. আমরা দু’আ
করতে ভুলে যাই, ভুলে যাই আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাইতে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে
আমাদেরকে মুক্তি দান করতে।
নিশ্চিতভাবে আমরা পানাহার থেকে বিরত
থাকি কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই!
যদিও আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহ্ ঐ
ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার নিকট
রামাদান আসল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ হল
না, এবং আমি বললাম, আমিন। তারপর
তিনি বললেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির নাকও
মাটিতে ঘষুন যে জীবদ্দশায় তার
পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ
হতে দেখল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার
অধিকার রাখল না তাদের সেবা করার
মাধ্যমে আর আমি বললাম, আমিন।
অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির
নাক মাটিতে ঘষুন যার উপস্থিতিতে যখন
আপনার নাম উচ্চারণ করা হয় তখন সে
আপনার প্রতি সালাম বর্ষণ করে না আর
আমি বললাম, আমিন।”(তিরমিযী, আহমাদ,
এবং অন্যান্য_আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত)
২. পানাহারের ব্যাপারে অতিমাত্রায় চাপে
থাকাঃ
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, রামাদান মাসের
পুরোটাই খাবার ঘিরে  আবর্তিত হয়।
সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য
ইবাদাতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া বদলে
আমরা পুরোটা দিন কেবল পরিকল্পনা
প্রণয়ন, রান্নাবান্না, কেনাকাটা এবং
খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করে কাটাই।
আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরোটা জুড়েই
থাকে ‘খাওয়া-দাওয়া’।
যার দরূন আমরা উপোস থাকার মাসকে
ভোজের মাসে পরিণত করেছি। ইফতারের
সময়ে আমাদের টেবিলের অবস্থা দেখার মত!
পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং
পানীয়ে পরিপূর্ণ। পক্ষান্তরে, আমরা
রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি, আর
এভাবে আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির
অনুসরণ বাড়তে থাকে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ
করার শিক্ষালাভ করার বদলে। এটাও
একধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন।
“…..তোমরা খাও এবং পান করো, এবং
কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্
তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ
করেন না ।”(সূরা আ’রাফঃ৩১)
৩. সারা দিন রান্না করে কাটানোঃ
কতিপয় বোন(হয় স্বেচ্ছায় নতুবা স্বামীর
চাপে) সারা দিন ও সারা রাত ধরে
রান্নাবান্না করতে থাকেন, তার ফলে দিনের
শেষে তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে
এশার সালাত পড়তে পারেন না, তাহাজ্জুদ
কিংবা কুরআন তিলাওয়াত তো দূরে থাক! এই
মাস হল মাগফিরাত এবং মুক্তিপ্রাপ্তির
মাস। সুতরাং, চলুন আমরা চুলা বন্ধ করে
নিজেদের ঈমানের প্রতি মনযোগী হই।
৪. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়াঃ
আমাদের কিছুসংখ্যক সেহরীর সময়ে
নিজেদেরকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ
পর্যন্ত ভরাক্রান্ত করে তুলি, কারণ আমরা
মনে করি সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না
করার এটাই একমাত্র পথ, আর কিছুসংখ্যক
রয়েছেন যারা ইফতারের সময় এমনভাবে
খান যাতে মনে হয় আগামীকাল বলে কিছুই
নেই, সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই
মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যাহোক,
এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ।
পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আদম সন্তান তার
উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এত
খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের
পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো
খাবারই যথেষ্ট। যদি তোমাদেরকে উদর
পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার
দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর
অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ
করো।”(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী
কর্তৃক সহীহ্কৃত)
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে
আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে
দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং
অন্তরকে বধির করে ফেলে।
ইমাম আহমদকে একবার জিজ্ঞেস করা
হয়েছিলঃ “উদরপূর্ণ অবস্থায় একজন
মানুষ কি তার হৃদয়ে কোমলতা ও বিনয়
অনুভব করে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ
“আমার মনে হয় না।”
৫. সারা দিন ঘুমিয়ে কাটানোঃ
রামাদান মাস হচ্ছে অত্যন্ত মূল্যবান সময়,
এতটাই মূল্যবান যে মহান আল্লাহ্ পাক একে
‘আইয়্যামুম মাদুদাত’(একটি নির্দিষ্ট
সংখ্যক দিবস) হিসেবে আখ্যায়িত
করেছেন। আমাদের অনুধাবন করার পূর্বেই
এই মাগফিরাত ও মুক্তির মাস শেষ হয়ে
যাবে। আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত এই
পবিত্র মাসের প্রতিটি মূহুর্ত আল্লাহর
ইবাদাতে কাটানোর, যাতে করে আমরা এই
মাসের সর্বোচ্চ সওয়াব হাসিল করতে
পারি। যাহোক, আমাদের কিছুসংখ্যক
রামাদানের দিনগুলি ভিডিও গেমস্ খেলে
অতিবাহিত করে, অথবা জঘন্যতম হল
টিভি দেখা, ছবি দেখা এমনকি গান শোনা
পর্যন্ত। সুবহানাল্লাহ্!!! আল্লাহকে মান্য
করার চেষ্টা করা হয় তাঁকে অমান্য করার
মাধ্যমে!
৬. রোজা রাখা অথচ খারাপ কাজ বর্জন না
করাঃ
আমাদের কিছু সংখ্যক রোজা রাখে কিন্তু
তারা মিথ্যাচার, অভিশাপপ্রদান,
মারামারি, গীবত ইত্যাদি বর্জন করে না
এবং কিছুসংখ্যক রোজা রাখার উদ্দেশ্য
কেবলমাত্র পানাহার থেকে বিরত নয় বরং
আল্লাহর প্রতি তাকওয়া(পরহেজগারী)
অর্জন অনুধাবন না করে রোজা রাখে কিন্তু
তারা প্রতারণা, চুরি, হারাম চুক্তি
সম্পাদন, লটারির টিকেট ক্রয়, মদ
বিক্রি, যিনা ইত্যাদিসহ যাবতীয়
অননুমোদিত কর্মকান্ড বর্জন করে না।
“হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো!
তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে
যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের
পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা
তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”(সূরা
বাকারাঃ১৮৩)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা
কথা বলা ও এর ওপর আমল করা বর্জন করে
না ও মূর্খতা পরিহার করে না, তার
পানাহার হতে বিরত থেকে উপবাস করা
আল্লাহর নিকট প্রয়োজন নেই।”(বুখারী)
৭. ধূমপানঃ
ধূমপান ইসলামে বর্জনীয় সেটা রামাদান
মাসেই হোক বা এর বাইরে হোক, কারণ এটা
“আল-খাবিছ্’(খারাপ কাজ) এর একটি। এবং
এটা যাবতীয় ধূমপানের সামগ্রী
অন্তভূর্ক্ত করে যেমনঃ সিগার, সিগারেট,
পাইপ, শিশা, হুক্কা ইত্যাদি।
“……….তাদের জন্য যাবতীয় পাক
জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসসমূহকে
তাদের ওপর হারাম ঘোষণা
করে………..”(সূরাআ’রাফঃ১৫৭)
এটা শুধু যে ধূমপায়ী তার জন্য ক্ষতিকর-
তা নয়, বরং তার আশেপাশে যারা রয়েছে
তাদের জন্যও ক্ষতিকর। এটা কারো অর্থ
অপচয়ের জন্য একটি মাধ্যমও বটে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কোনো ধরনের
ক্ষতিসাধন করা যাবে না কিংবা
ক্ষতিসাধন বিনিময়ও করা যাবে না।”
এই হাদীস বিশেষত রামাদানের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য এবং এটা সাওমকে বাতিল করে
দেয়।(ফতওয়া-ইবনে উছাইমিন)
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন
৮. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়াঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “সেহরী খাও, কারণ
এটার মধ্যে বরকত রয়েছে।”(বুখারী,
মুসলিম)
এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ “আমাদের সাওম
আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে
প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী
গ্রহণ।”(মুসলিম)
৯. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ
করে দেওয়াঃ
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের
১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের
জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ
ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃ “এটা বিদ’আত
ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি
সুন্নাহে নেই। বরং সুন্নাহ হল তার
উল্টোটা করা। আল্লাহ প্রত্যুষের আগ
পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান
করেছেনঃ “আর আহার কর ও পান কর
যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা
থেকে স্পষ্ট হয়।”(সূরা বাকারাঃ১৮৭)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আহার কর ও
পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম
এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে
প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না।”
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের
দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের
অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া। এটা
ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী
আচরণ। আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যারা
উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস
হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা
ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন
করে তারা ধ্বংস হয়েছে।”(মুসলিম)
১০. সেহরী না খাওয়ায় সাওম পালন না
করাঃ
আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা
সাওম পালন করে না এই ভয়ে যে সেহরী
খাওয়া হয় নি।যাহোক, এটা এক ধরনের
স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালোবাসা ও
কাপুরূষতা। এ আর এমন কি ব্যাপার যে
সামান্য কয়েক মুঠো খাবার খাওয়া বাদ হয়ে
যায়? এমন না যে এর কারণে আমরা মারা
যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর
প্রতি আনুগত্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
১১. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর
উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়েদুআউচ্চারণ করা
শরীয়ত সম্মত নয়। ইফতার এবং সেহরির
যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর
ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত
হয় সেগুলো বিদআত। ইফতার অথবা
সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ
হাদিস এ নেই। এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে
নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে।
১২. রোযা ভাঙতে দেরি করাঃ
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের
আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান
শেষ হলে রোযা ভাঙেন। সূর্য অস্ত যাবার
পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে রোযা ভাঙা
সুন্নাহ সম্মত। আনাস(রাঃ)
বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন।(মুসলিম)
১৩. ইফতার বেশি খেতে গিয়ে মাগরিবের
নামায জামাআত ধরতে না পারাঃ
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার
নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে
মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা। এটা
একেবারেই অনুচিত। রাসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর
মুখে দিয়ে ইফতার ভেঙে অতঃপর মাগরিবের
নামাজ এর জন্য চলে যেতেন। নামাজ শেষ
করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও
কিছু খেতে পারি।
১৪. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে
দেওয়াঃ
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা
ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে
থাকে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)বলেন,“তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ
ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- ১)একজন পিতার
দুয়া, ২)রোযাদার ব্যক্তির দুয়া,
৩)মুসাফিরের নামাজ”।(বায়হাকি)
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার
পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত
থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা
আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল
হওয়া ?
১৫. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পরাঃ
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না
পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না। রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)বলেছেন,“সালাত(নামাজ) হচ্ছে
ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী”।
(মুসলিম)
আসলে শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) না
পরলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না।
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)বলেন,“যে আসরের সালাত পরেনা,
তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে
যায়।”(বুখারি)
১৬. রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব না পরা
কবীরা গুনাহ।
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন
অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা
সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন
তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে
এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর,
পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র,
ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত
বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা
নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ,
তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য
প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন
সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে
পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই
আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা
সফলকাম হও।”(আন-নুরঃ ৩১)
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও
কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে
বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ
নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা
হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম
দয়ালু।”(আল-আহযাবঃ ৫৯)
সুতরাং রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
অবশ্যই সিয়াম পালনের পুরস্কার হতে দূরে
সরিয়ে দেয় যদিও এটি সিয়াম ভঙ্গ
করেনা।
১৭. পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য
রোযা না রাখা
পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে
রোযা না রাখা  শরীয়ত সম্মত নয়। সকালে
পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময়
থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে
পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল
লক্ষ্য।পড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি
আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার
মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি,
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ
করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন।
“……আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার
জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।এবং তাকে
তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক
দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা
করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ
তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর
জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে
রেখেছেন।”(আত-তালাকঃ ২-৩)
১৮. স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে রোযা
রাখা
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোযা রাখা উচিত
নয়। এটি অন্যতম একটি বড় ভুল যা আমরা
করে থাকি। সিয়াম পালন করার একমাত্র
উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন। যদি স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে
কেউ রোযা রাখে তাহলে তা শিরকের(ছোট
শিরক বা শিরকুল আসগার) আকার ধারন
করতে পারে।
১৯. তারাবীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা
নিয়ে মতবিরোধঃ
তারাবীর নামাযের কোন নির্দিষ্ট
সংখ্যক রাকাআত নেই। আট এবং বিশ
রাকাআত-এ দুটোই শরীয়ত সম্মত। শেখ
ইবনে উথাইমিন বলেন,“এগারো কিংবা
তেইশ রাকাআতের কোনটিকে নির্দিষ্ট
করে অপরটি বাতিল করা অনুচিত।কারন
বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ,সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর।”
২০. নির্দিষ্টভাবে শুধু ২৭ রমযানের
রাতকে লাইলাতুল ক্বাদর মনে করে ইবাদত
করাঃ
আমরা অনেকেই কেবল ২৭ রমযান রাতে
লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করে
থাকি,কিন্তু অন্যান্য বিজোড় রাতগুলিকে
প্রাধান্য দেইনা। অথচ রাসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“রমযানের
শেষ দশ রাত্রির বিজোড় রাতগুলিতে
লাইলাতুল ক্বাদর তালাশ কর।”(বুখারি ও
মুসলিম)
২১. ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের
শেষাংশ অবহেলায় পালন করা
আমরা অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি(নতুন কাপড়
কেনা,খাবারের আয়োজন করা,মার্কেটে
ঘোরাঘুরি করা)নিতে গিয়ে রমযানের শেষ
দশ দিন অবহেলায় পালন করি(ঠিকমত
ঈবাদত না করা এবং লাইলাতুল ক্বাদরের
তালাশ না করা)। রাসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)রমযানের শেষ দশ
দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময়
নিমগ্ন থাকতেন,কেনাকাটি করায় ব্যস্ত
থাকতেন না। রমযান শুরু হবার আগেই
আমাদের কেনাকাটি শেষ করা উচিৎ।
আয়শা (রাঃ)হতে বর্ণিত,“যখন রমযানের
শেষ দশক শুরু হত রাসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)লুঙ্গি শক্ত করে
বাঁধতেন(অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত
থাকতেন,স্ত্রীদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া
থেকে বিরত থাকতেন),রাত্রি জাগরণ
করতেন এবং তাঁর পরিবারকে জাগিয়ে
তুলতেন।”(বুখারী,মুসলিম)
২২. ইফতার পার্টির আয়োজন করা
যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব
আছে এবং এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা
হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক
ইফতার পার্টির আয়োজন করে
থাকেন,যেখানে হিজাববিহীন নারীদের
আগমন থেকে শুরু করে অশ্লীল নাচ-গান,
নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা,তারাবিহ এর
নামাজ ছেঁড়ে দেওয়া- এ সবই হয়ে থাকে
যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ।
কুরআনের আলো ডটকম

কুরআনে মানুষ সৃষ্টির ধাপ সমূহ

কুরআন শরীফ মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর
নিয়ে আলোচনা করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
অর্থাৎ, আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির
সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক
সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি
শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর
জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই
মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর
অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে
একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা
কতই না কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪)
আরবী ” َﺔَﻘَﻠَﻌْﻟﺍ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ
রয়েছে।
১. জোক
২. সংযুক্ত জিনিস
৩. রক্তপিন্ড
আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই
তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই।
নিচের ১ নং ছবিতে সেটা স্পষ্ট। (মানবদেহের
প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) এ
অবস্থায় জোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত
ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। (কুরআন-
হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও
অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৬)
দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত
জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ
ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। (২নং ও ৩ নং
চিত্র দ্রষ্টব্য)
তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড”
অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা
ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই
দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত
বর্তমান থাকে।(কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের
প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৭ ও ৩৮) (৪র্থ
চিত্র দ্রষ্টব্য)
এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত
হয় না। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম
সংস্করণ,পৃষ্ঠা-৬৫) সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা
রক্তপিন্ডের মতই।
চিত্র-১
চিত্রে জোক ও মানব ভ্রুনকে একই রকম দেখা যাচ্ছে।
(জোকের ছবিটি কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের
প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য, গ্রন্থের ৩৭ নং পৃষ্ঠা থেকে
নেয়া হয়েছে যা হিলমান ও অন্যান্যদের প্রণিত
“পুর্ণাংগ মৌলিক জীব” গ্রন্থ থেকে সংশোধিত হয়েছে
এবং মানব দেহের চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম
সংস্করণ, ৭৩ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-২
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে উক্ত ভ্রুনটি মায়ের গর্ভের
সাথে লেপ্টে রয়েছে। (চিত্রটি “মানবদেহের
প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-৩
এ চিত্রে দেখা যাচ্ছে B চিহ্নিত ভ্রুনটি মাতৃগর্ভে
লেপ্টে আছে। এর বয়স মাত্র ১৫ দিন। আয়তন-০.৬
মি.মি. (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৩য়
সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে যা সংকলিত
হয়েছে লেসন এন্ড লেসনের হিস্টোলজী গ্রন্থ থেকে
গৃহীত হয়েছে)
চিত্র-৪
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে ভ্রুন ও তার আবরণকে প্রচুর
রক্ত থাকার কারণে রক্ত পিন্ডের মতই দেখাচ্ছে।
(চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৫
পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের
বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে।
কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর
হল-” ًﺔَﻐْﻀُﻣ” (মুদগাহ)। ًﺔَﻐْﻀُﻣ হল চর্বিত দ্রব্য।
যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর
তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে
পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায়
সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের
প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) (৫ ও ৬ নং চিত্র
দ্রষ্টব্য)
আজ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপসহ অত্যাধুনিক
সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে
এগুলো আবিস্কার করেছে কুরআন নাযিল হওয়ার দেড়
হাজার বছর পর। তাহলে, এত কিছু জানা মুহাম্মদ
(সাঃ)এর জন্য কেমন করে সম্ভব ঐ সময়ে যখন এ সবের
কিছুই আবিস্কৃত হয়নি?
চিত্র-৫
এই চিত্রটি ২৮ দিন বয়সের (মুদগাহ স্তরের) ভ্রুনের
চিত্র। উক্ত চিত্রটি দাত দ্বারা চর্বিত লোবানের
মতই দেখাচ্ছে।(চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম
সংস্করণ, ৭২ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-৬
চিত্রে চর্বিত লোবান ও ভ্রুনের চিত্র উপস্থাপিত
হয়েছে। আমরা উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই।
উপরের চিত্র A তে আমরা ভ্রুনের গায়ে দাতের মত
চিহ্ন এবং চিত্র B তে চর্বিত লোবান দেখতে
পাচ্ছি।
১৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই
বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে
জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান
রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ
দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন
যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি
সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা
ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-
মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯)
আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ
ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের
লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা
বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি
আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক
কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি
পেয়েছে।
কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো
বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের
প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের
অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন
হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের
বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের
উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার
শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার
পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড
এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি
ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু
আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল
সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত
সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের
প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের
সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ
বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ
(সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল
বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত
বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে
যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।
(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক
ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত)
এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ
দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব
দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।”
প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও
হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার
বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে
ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও
বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।
বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও
হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে
বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে।
এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও
খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর
গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি
স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন
নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই
জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম
শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে
তা জানার সুযোগ ছিল না।
এখানে এসে শুধু একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য ফলাফলে
আসা যায় যে, এসমস্ত জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে
এসেছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। কারণ,
তিনি ছিলেন নিরক্ষর তার এগুলো জানার কথা ছিল
না। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে তার মত নিরক্ষর
লোককে যে ট্রেনিং দেয়া হবে তাও ছিল অসম্ভব।
(ভিডিও ডকুমেন্টারী “হাজিজি হিয়াল হাকীকাত”
থেকে)
অনুবাদ : মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ
সম্পাদনা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

স্বামীর ভালোবাসার পরশে বদলে গেল স্ত্রীর জীবন

নাম তার আব্দুল ওয়াহ্হাব। আমেরিকান এক
মুসলমান। কয়েকদিন পূর্বে বিয়ে করেছেন।
স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলেছেন এক
ষোড়শী যুবতীকে। যুবতীর নাম রাইহানা।
যুবতী বেশ সুন্দরী। অনিন্দ্য সুন্দরী। ওর
বাইরের রূপটা যে কোনো পুরুষকে মুগ্ধ করলেও
ভিতরটা তার ঘোর অন্ধকারে ঢাকা। কারণ
ইসলামের আলো এখনো তার অন্তর জগতে প্রবেশ
করেনি। কালেমায়ে শাহদাত পড়ে মুসলমান
হয়নি। ধর্মে ছিল সে খৃস্টান। আর এ
অবস্থায়ই নববধূ হয়ে চলে আসে জনাব আব্দুল
ওয়াহ্হাবের স্ত্রী হয়ে।
রাইহানা ইসলাম গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত আব্দুল
ওয়াহ্হাব সাহেবকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন
হতে হয়েছে। মোকাবেলা করতে হয়েছে মারাত্মক
পরিস্থিতির। পাঠকবৃন্দ! চলুন, জনাব আব্দুল
ওয়াহ্হাব সাহেবের মুখ থেকেই তাদের কাহিনীটা
হৃদয়ঙ্গম করি। সেই সাথে নিজেরা শিক্ষা
গ্রহণ করে তদানুযায়ী নিজেদের জীবনকে ঢেলে
সাজাতে চেষ্টা করি।
জনাব আব্দুল ওয়াহ্হাব সাহেব বলেন, রাইহানাকে
বিয়ে করার সময় আমি ছিলাম নামে মুসলমান।
ইসলামী বিধি-বিধান পালনের কোনো গুরুত্ব
আমার মধ্যে ছিল না। তাই সেগুলো রীতিমত
পালনও করতাম না। এমনকি কোনো খৃস্টান
মেয়ের সাথে কোনো মুসলমান ছেলের বিয়ে
সহীহ হয় না একথাটিও আমার জানা ছিল না।
রাইহানার অবস্থাও ছিল আমার মতো। সেও তার
ধর্মের প্রতি আন্তরিক ছিল না। বরং বলা
যায়, ধর্ম কিংবা ধর্মীয় বিধি-বিধান
পালনের ব্যাপারে তার কোনো মনোযোগই ছিল
না। আমি অবশ্য মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতাম।
নামাজ পড়তাম। কিন্তু সে কখনো চার্চে যেতো
না।
কিছুদিন পর আমাদের একটা সন্তান হলো।
তখন আমি সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায়
বিভোর হলাম। ভাবলাম, আমি ও আমার স্ত্রী
যদি একই ধর্মের অনুসারী না হতে পারি, তবে
সন্তান বড় হয়ে কোন্ ধর্মের অনুসারী হবে।
তাই আমি রাইহানাকে মসজিদে যাওয়ার দাওয়াত
দিলাম। কিন্তু আমার দাওয়াত সে স্পষ্ট ভাষায়
কেবল অস্বীকারই করল না, উল্টো চার্চে যেতে
শুরু করল। এমনকি এটি একটি অলিখিত
নিয়মই হয়ে গেল যে, তাকে আমি যখনই
মসজিদে যাওয়ার কথা বলি তখনই সে চার্চে
ছুটে যায়।
এবার আমার বোধদোয় হলো। আমি ভাবলাম,
আমি মুসলমান, আমার স্ত্রী খৃস্টান। হায়, এ
আমাদের কেমন জিন্দেগী? মুসলমানের ঘরে
খৃস্টান বউ! তাছাড়া এতদিন তো অবস্থাটা এমন
ছিল যে, সে চার্চে যেত না। কিন্তু এখন? এখন
তো সে চার্চেও যায়!
আমি বিষয়টি নিয়ে খুব ফিকির করলাম।
তাকে মুসলমান বানানোর জন্য কী কৌশল
অবলম্বন করা যায়, এ নিয়ে গভীর চিন্তায়
মগ্ন হলাম। অবশেষে তাকে এই প্রস্তাব দিলাম
যে, চলো এক রবিবারে আমরা উভয়ে চার্চে
যাবো, আর আরেক রবিবারে যাব মসজিদে। সে
খানিকটা চিন্তা করে আমার প্রস্তাবে রাজী
হয়ে গেল। এই প্রস্তাব দ্বারা আমার উদ্দেশ্য
ছিল, আমি চাছিলাম যে কোনোভাবে ইসলামের
পরিচয় তার সামনে প্রকাশিত হোক। সে
ইসলামের কাছে আসুক।
আমি যখন আমার স্ত্রীকে মুসলমান বানানোর
ফিকির করছিলাম তখন আমার মাঝেও আত্ম
সচেতনতা সৃষ্টি হলো। আমি মনে মনে নিজকে
ধিক্কার দিয়ে বললাম, আমি কেমন ঈমানদার
যে, মুসলমান হয়েও ইসলামী বিধি-বিধান
ঠিকমত পালন করি না? ইসলামের রঙে রঙিন
হই না? তাছাড়া আমি নিজে ইসলাম পালন না
করে, আরেকজনকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তা
কতটুকুই বা কার্যকর হবে? না, আমাকে আর এভাবে
চললে হবে না। আমাকে পুরোপুরি মুসলমান হতে
হবে। আমলদার হতে হবে। ইসলামের যাবতীয়
বিধান একশ ভাগ পালন করতে হবে। তখন হয়তো
আমার স্ত্রীকে আর ইসলাম গ্রহণের জন্য
পীড়াপীড়ি করতে হবে না। কারণ সে যখন তার
স্বামীর মধ্যে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য
অবলোকন করবে, অতি সহজে তখন ইসলামের
প্রকৃতরূপ তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠবে।
ফলে তখন সে নিজেই ইসলামের প্রতি আগ্রহী
হবে এবং আল্লাহ চাহেত ইসলামের সুশীতল
ছায়ায় আশ্রয়ও নিবে।
যে কথা সে কাজ। সেদিন থেকে আমি আমার জীবন
বদলাতে শুরু করলাম। আলেম-উলামাদের
সান্নিধ্যে যেতে লাগলাম। একান্ত নিষ্ঠার
সাথে পালন করতে লাগলাম, ইসলামের যাবতীয়
বিধি-বিধান। প্রত্যেক কথা ও কাজে অনুসরণ
করতে লাগলাম, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত। ঘরে
বাইরে সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে
চলতে লাগলাম। মোট কথা ইসলামী আচার-
আচরণে রাঙিয়ে তুললাম আমার জীবনের
প্রতিটি অঙ্গন।
আমি যখন ধর্মের প্রতিটি বিধান একান্ত
নিষ্ঠার সাথে পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে
পড়লাম, তখন আমি মনের মধ্যে এমন এক
প্রশান্তি অনুভব করলাম, যা কেবল অনুভব করা
যায়, অন্যকে বলে বুঝানো যায় না। আর সে
প্রশান্তি ছুঁয়ে গেল রাইহানার কোমল
হৃদয়কেও। দেখা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই সে
ইসলামী আচার-আচরণ ও সভ্যতার সাথে
পরিচিত হয়ে ওঠে। দুর্বল হয়ে পড়ে ইসলামের
প্রতি। তাছাড়া ঘরে ইসলামী পরিবেশ, আর
মসজিদ থেকে ইসলাম সম্পর্কে মূল্যবান
আলোচনা শ্রবন এ দুই বস্তু ইসলামের প্রতি
তার দুর্বলতা ও আগ্রহকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে
তুলে। ফলে বেশিদিন আমাকে অপো করতে হয়নি।
ইসলামের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে একদিন সে
কালিমায়ে শাহাদত পড়ে মুসলমান যায়।
আলহামদুলিল্লাহ।
আরো খুশি ও শুকরিয়ার ব্যাপার হলো, ইসলাম
গ্রহণের পর রাইহানা আশ্চর্য রকমভাবে বদলে
যায়। মুসলমান হয়ে ইসলামকে সে গ্রহণ করে
প্রাণখুলে, পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও ভালোবাসার
সাথে। সে তার জীবনের প্রতিটি কাজকে
ইসলামের রঙে রঙিন করে তুলতে প্রয়াসী হয়ে
ওঠে। পর্দা করতে শুরু করে। তাও আবার
অসম্পূর্ণ পর্দা নয়। অর্থাৎ মুখ কিংবা চোখ
বের করা ‘ফ্যাশনী পর্দা’ নয়। রাইহানা
প্রায়ই বলে, মুসলমানের ঘরে জন্ম হওয়া
সত্ত্বেও মুসলিম নারীরা কেন পর্দা করে না?
আর করলেও কেন পুরোপুরি করে না? কেন তারা
ইসলামী কায়দায় মাথা ঢাকে না?। কেন তারা
শরীরটা ঢেকে সৌন্দর্যের উৎস ‘মুখখানা’
খোলা রাখে? তাদের কি কোনো অনুভূতি নেই?
তারা কি বুঝে না যে, মুখ কিংবা চোখ খোলা
রেখে পর্দা করলে পর্দার বিধান সম্পূর্ণরূপে
পালিত হয় না? তবে কি তারা আল্লাহকে ভয়
করে না? তাদের কি চিন্তা নেই যে, উত্তমরূপে
পর্দার বিধান পালন না করলে মৃত্যুর পর কঠিন
শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে তাদেরকে? এমনকি
দুনিয়াতেও সম্মুখীন হতে পারে নানাবিধ
পেরেশানীর? তাছাড়া ইসলামী পোষাক তো
নারীর ব্যক্তিত্ব বাড়িয়ে তোলে। তার
মর্যাদাকে বিকশিত করে। আহা! ওরা না বুঝেই
অন্যদের রঙ চড়াতে চাচ্ছে নিজেদের গায়ে!
ইসলামের প্রতি রাইহানার বিশ্বাস ছিল পরম
শাণিত। ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামী
শিক্ষার প্রতি তার ঝোঁক অতিমাত্রায় বেড়ে
যায়। সে এখন অন্য ধর্মের কোনো বই-পুস্তক
পড়ে না। বরং ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বই-পুস্তক
এনে দেওয়ার জন্য আমাকে সে বারবার অনুরোধ
জানাতে থাকে। আমিও সানন্দে দেশের বিভিন্ন
নামকরা লাইব্রেরীগুলো খোঁজে ইসলামের
বিভিন্ন দিক নিয়ে নামকরা লেখকদের লেখা
বই-পুস্তক কিনে ওর হাতে তুলে দেই। এসব বই
হাতে পেয়ে রাইহানা যেমন আনন্দিত হয়,
তেমনি দারুণ পুলকিত হই আমিও। কারণ, আমি
তো এমনটিই চাচ্ছিলাম। বড় কথা হলো,
ইসলাম সম্পর্কে রাইহানা যা-ই জানতো, যা-ই
শিখতো তার উপরই সে আমল শুরু করে দিত। আর
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতো আপনার প্রতি আমি
চিরকৃতজ্ঞ। আপনার পরশ পেয়েই আমি এ
পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি। আল্লাহ পাক আপনাকে
উত্তম প্রতিদান দান করুন।
সন্তানের ব্যাপারে রাইহানার বক্তব্য ছিল
অসম্ভব স্বচ্ছ। সে তার সন্তানকে ইসলামী
স্কুলেই পড়াবে এ যেন তার কঠিন প্রতিজ্ঞা।
তার কথা হলো ইসলামী শিক্ষা ছাড়া কেউ
পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারে না। সে প্রায়ই
বলত, পার্থিব শিায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা
পরবর্তিকালে পুষিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু
ধর্মীয় শিায় কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা আর
পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আব্দুল ওয়াহ্হাব সাহেব ও
রাইহানার দাম্পত্য জীবন আজ পরম আনন্দের,
পরম সুখের। ইসলামের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় তারা
লাভ করে অপূর্ব প্রশান্তি। ইসলাম ধর্ম জানা
ও মানার মধ্যে যে এত শান্তি আছে, এত সুখ আছে
তা যদি তারা আরো আগে জানতো, আরো আগে
বুঝতো, তবে শান্তি-সুখের এই সুন্দরতম
জীবনকে আরো আগেই তারা গ্রহণ করত।
হে আল্লাহ! ওরা যে কথাটি বুঝতে পেরেছিল,
দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি বসন্ত পেরিয়ে
যাওয়ার পর সে কথাটি আমাদেরকে বুঝার এবং সে
অনুপাতে জীবন যাপন করার তাওফীক দাও আজই
এখন থেকেই। আমীন।

পর্দা রক্ষা করার উদ্দেশ্য যৌন কামনা রোধ করা নয়

ইসলামে হিজাবের বিধান আরোপের কারণ
যৌন কামনা রোধ করা নয়
প্রশ্ন: আপনাদের ধর্ম বা সংস্কৃতিতে
নারীদের যে আবরণ পরতে হয় আমি সে
ব্যাপারে জানতে আগ্রহী। এই পোশাক আমাদের
খ্রিষ্টানদের কাছে সত্যিই খুব অসার মনে
হয়। কারণ এটি এমন ইঙ্গিত করে যেন
একজন নারী ভাবে সে এই পোশাক না পরলে
প্রতিটা পুরুষ তাকে কামনা করবে। আরও
ইঙ্গিত করে যে সৌন্দর্যের কারণে আপনার
ধর্মের বা সংস্কৃতির অনুসারী কোন নারীর
ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে বিশ্বাস করা যায় না।
কারণ আপনি মনে করছেন যে আপনাকে কামনা
করা হবে। কিন্তু কেউ সুন্দর হতেই পারে; তাই
বলে প্রতিটা পুরুষ তাকে কামনা করবে এমন
তো নয়। আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু
আলোকপাত করতে পারেন? আমি আপনাকে সত্য
করেই বলব আমি যখন এই পোশাক পরা কোন
নারীকে দেখি আমার মনে হয়, “কত অসার
তুমি?” উত্তরের জন্য আপনাকে আগেই ধন্যবাদ
দিয়ে রাখছি।
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রথমেই আমরা আপনাকে আপনার অকপটতা,
সুস্পষ্ট প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তর খোঁজার
জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা আশা করি
নিচে যে সামান্য কিছু কথা আমরা তুলে ধরব
এর মাঝে আপনি আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন।
আমরা উত্তরের শুরুতে আপনাকে একটা প্রশ্ন
করতে চাই, যার উত্তর আপনাকে দিতে হবে এবং
তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
আপনার কাছে পরিষ্কার হবে। আমাদের প্রশ্ন
হচ্ছে- আপনি কি মনে করেন যদি একজন
নারী তার সমস্ত কাপড় খুলে লন্ডন বা
প্যারিসের মার্কেটগুলোতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে
ঘুরে বেড়ায় তাহলে আপনি সেটা মেনে নিবেন
অথবা সেখানকার কর্তৃপক্ষ বা আইন তাকে সেটা
করতে দিবে?
আমরা মনে করি, খুব সম্ভবত আপনার উত্তর
হবে- না, আপনি তা মেনে নিবেন না। বিশেষ
করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা
একদমই অনুমোদন করবে না। এটা সে দেশে
বসবাসরত সবাই জানে।
যদি আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে আপনাকে
জিজ্ঞেস করি, যদি সে তার শরীরের
নিম্নাংশের বিশেষ অঙ্গটা আবৃত করে
শরীরের উর্ধ্বাংশ খোলা রেখে শপিং এ বের
হয়? আমাদের মনে হয় আপনি এবারও একমত
হবেন যে, এমন ব্যবহার অভদ্রতা ও
অসম্মানজনক এবং প্রচলিত আদবের লঙ্ঘন।
এখন যারা স্থুলভাবে নিজেদের প্রকাশ করে
তাদের কথা ছাড়ুন; আপনার কি মনে হয় যদি
একজন নারী তার ঘুমের পোশাক পরে রাস্তায়
বা লোকালয়ে আসে…?
সম্ভবত আপনি জানেন যে পশ্চিমা দেশে যারা
সাঁতারের পোশাক পরে লোকালয়ে আসে তাদের
বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের আপত্তি জানানোর
অধিকার আছে এবং কোম্পানির ম্যানেজার বা
অফিসের কর্মকর্তার কর্মক্ষেত্রে নারী
কর্মচারীকে খোলামেলা, উস্কানিমূলক
পোশাক পরা প্রতিহত করার অধিকার আছে
এবং প্রচলিত, শালীন পোশাক পরা তাদের
জন্য বাধ্যতামূলক।
এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- আপনি কি মনে
করেন এসব দেশ, মানুষ, প্রতিষ্ঠান, আইন ও
রীতি-নীতি আপনার কথা অনুযায়ী অসার ও
তারা যৌনতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে? অথবা
আপনি কি মনে করেন তারা ঘৃণ্য
অন্যায়কারী; যাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের
স্বাধীনতা হরণ করা এবং এমন কাজ যৌনতায়
মত্ত হয়ে থাকা মানুষ ছাড়া আর কারও পক্ষে
করা সম্ভব না? আপনি কি মনে করেন যদি
একজন নারী তার বুক কিংবা বিশেষ অঙ্গ
খোলা রাখে অথবা সাতারের পোশাকে লোকালয়ে
আসে তাহলে সমস্ত পুরুষ তাকে কামনা করবে
অথবা তাকে পতিতা মনে করবে কিংবা ভাববে সে
তাদেরকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে?
আপনি যদি বলেন, এই দুইটা দৃশ্যের মাঝে
পার্থক্য আছে- লোকালয়ে নগ্নতা নিঃসন্দেহে
অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু চুল আর মুখ খোলা
রাখা উস্কানিমূলক নয়; বরং স্বাভাবিক
ব্যাপার। আর এটাতে আইনও লঙ্ঘন হয় না।
তাহলে আমরা আপনাকে বলবঃ আমি আর আপনি
নির্ধারণ করার কে শরীরের কোন অংশ
উন্মুক্ত রাখা যাবে, আর কোন অংশ উন্মুক্ত
রাখা যাবে না? আপনি কেন চাইছেন আপনার
নির্ধারিত সীমা আমরা মেনে নিব, যেখানে
আপনি ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী নির্ধারিত
সীমা মেনে নিতে রাজি নন?
অধিকন্তু, কেন একটা নির্দিষ্ট সমাজ যেমন
ধরুন পশ্চিমা সমাজ নির্ধারণ করবে কোনটা
অন্যদের জন্য মানানসই; আর কোনটা
মানানসই নয়?
আপনি যদি মনে করেন প্রকাশ্যে নগ্নতা ও
স্বল্প পোশাক পরা নিষিদ্ধ করা মানে আপনি
আপনার প্রশ্নে যা যা বলেছেন তা না, তাহলে
আমরা আপনাকে বলব যে আমরা মুসলিমরা
বিশ্বাস করি শালীন পোশাক হচ্ছে এই
হিজাব যা মুসলিম নারীদের পরতে দেখে
আপনি তাদেরকে “অসার” বলে অভিযুক্ত
করছেন।
কেন আপনি হিজাব পরাকে শালীনতা হিসেবে
দেখছেন না? নাকি আপনি মনে করছেন এটি
সাধারণ রুচি, আদব ও নৈতিকতা বিরুদ্ধ?
যদি তা মনে করেন থাকেন তাহলে আপনি
নিজের বা নিজ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্য
সমাজ বা মানুষকে বিচারের মানদণ্ড মনে
করছেন কেন?
কেন আপনি এই বিষয়ে আমাদের
দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করে আপনার দেয়া
শালীনতার ব্যাখ্যা মেনে নিতে বলছেন?
একজন নারী যদি তার উরু বা পেট খোলা রাখে
তাহলে সেটা কি শালীনতা? নাকি তার
শুধুমাত্র নিজের হাত আর পা উন্মুক্ত রাখার
মাঝেই একে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত? এই
বিষয়ে আপনার দিকনির্দেশনা কি? আপনার
কি অধিকার আছে সমস্ত মানবতাকে আপনার
নিজস্ব ধারণা মেনে নিতে বাধ্য করার?
এটা কি সাদা মানুষদের অবশিষ্ট “অধিকার”?
অথবা এভাবেও বলতে পারি এটা কি শুভ্র বা
স্বর্ণকেশী নারীর পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ
করা ও পৃথিবীর ধ্যান-ধারণা, রীতি, আদব
আর রুচিকে নির্ধারণ করার একক পন্থা?
কেন আপনি কুমারী মেরী (আঃ)-কে “অসার”
বলেন না? প্রশ্নে আপনি যে কারণ দেখিয়েছেন
সে অনুযায়ী তো তিনিও অসার। আপনি
জানেন যে তিনি এক ধরণের হিজাব পরতেন।
তিনি কি আপনার ব্যাখ্যা অনুযায়ী
শালীনতাকে যৌনতার সাথে সম্পর্কিত কিছু
ভেবেছিলেন?
কেন গির্জার মহিলারা গির্জার কাজকর্মের
সময় ও প্রার্থনার সময় তাদের চুল ঢেকে
রাখে?
প্রার্থনারত অবস্থা আর প্রার্থনার বাহিরের
অবস্থার মাঝে পার্থক্য কি? যদি প্রার্থনার
সময় হিজাব করলে ভক্তি আর বিশ্বাস বাড়ে,
তাহলে কেন একজন নারী প্রার্থনার বাইরে
তার ভক্তি আর বিশ্বাসের একাংশকে সরিয়ে
রাখবে?
কোরিন্থীয়দের প্রতি দূত পল প্রথম
এপিস্টলে যা বলেছেন তার প্রতি কেন আপনি
অসারতার অভিযোগ আনেন না? তিনি
বলেছিলেন:
“কিন্তু যে স্ত্রীলোক মাথা না ঢেকে
প্রার্থনা করে বা ভাববাণী পড়ে সে তার
নিজের মাথার অপমান করে — এটি সে
স্ত্রীলোকের মাথা ন্যাড়া করে ফেলার তুল্য।
স্ত্রীলোক যদি তার মাথা না ঢাকে সে যেন
তার মাথার চুল কেটে ফেলল। কিন্তু
স্ত্রীলোকের পক্ষে যদি চুল কেটে ফেলা বা
মাথা ন্যাড়া করা লজ্জার বিষয় হয় তবে সে
তার মাথা ঢেকে রাখুক।
আবার পুরুষ মানুষের মাথা ঢেকে রাখা উচিত
নয়। কারণ সে ঈশ্বরের স্বরূপ ও মহিমা
প্রতিফলন করে। কিন্তু স্ত্রীলোক হলো
পুরুষের মহিমা।
কারণ স্ত্রীলোক থেকে পুরুষের সৃষ্টি হয়নি;
কিন্তু পুরুষ থেকেই স্ত্রীলোক এসেছে।
স্ত্রীলোকের জন্য পুরুষের সৃষ্টি হয়নি;
কিন্তু পুরুষের জন্য স্ত্রীলোকের সৃষ্টি
হয়েছে।
এ কারণে এবং স্বর্গদূতগণের জন্য অধীনতার
চিহ্ন হিসেবে একজন স্ত্রীলোক তার মাথা
ঢেকে রাখবে।” [১ করিন্থীয়ানস ১১:৫-১০ –
নতুন আন্তর্জাতিক সংস্করণ]
টিমোথির প্রতি পলের প্রথম এপিস্টলে
বলা হয়েছে-
“অনুরূপভাবে আমি চাই নারীরা যেন ভদ্রভাবে
ও যুক্তিযুক্তভাবে উপযুক্ত পোশাক পরে তাদের
সজ্জিত করে। তারা যেন নিজেদের শৌখিন
খোঁপা করা চুলে বা সোনা মুক্তোর গহনায় বা
দামী পোশাকে না সাজে।
কিন্তু সৎকাজের অলঙ্কারে তাদের সেজে থাকা
উচিত। যে নারী নিজেকে ঈশ্বরভক্ত বলে
পরিচয় দেয় তার এভাবেই সাজা উচিত।
নারীরা সম্পূর্ণ বশ্যতাপূর্বক নীরবে নতনম্র
হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করুক।
আমি কোন নারীকে শিক্ষা দিতে অথবা কোন
পুরুষের ওপরে কর্তৃত্ব করতে দিই না; বরং
নারী নীরব থাকুক।”[১ টিমোথি ২:৯-১২ –
নতুন আন্তর্জাতিক সংস্করণ]
উপরন্তু, একজন নারীর শালীনতা ও
সদাচারের চিহ্ন হিসাবে বাইবেলে নিকাব
(মানে যা দিয়ে মুখ ঢাকা হয়) এর কথাও
উল্লেখ করা হয়েছে।
জেনেসিসে বলা হয়েছে :
“একদিন সন্ধ্যায় ধ্যান করার জন্য ইসহাক
একান্তে নির্জন প্রান্তরে বেড়াতে
গিয়েছিলেন। ইসহাক চোখ তুলে দেখলেন যে
দূর থেকে উটের সারি আসছে। রিবিকাও
ইসহাককে দেখতে পেলেন। তখন সে উটের পিঠ
থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল। ভৃত্যকে জিজ্ঞেস
করল, “কে ঐ তরুণ মাঠের মধ্যে দিয়ে আমাদের
দিকে এগিয়ে আসছে?”
ভৃত্য উত্তর দিল, “ঐ আমার মনিবের পুত্র।”
শুনে রিবিকা ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢেকে
নিল।” [জেনেসিস ২৪:৬৩-৬৬ – নতুন
আন্তর্জাতিক সংস্করণ]
আমাদের পক্ষে এখানে এর চেয়ে বেশি উদ্ধৃতি
দেয়া সম্ভব নয়। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের
গবেষণা রয়েছে। আপনি সেসব খুঁজে পড়ে দেখতে
পারেন।
আমরা আপনার সাথে শুধু যুক্তিতর্ক দিয়ে,
নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে এবং আলোচনা-
সমালোচনার একটি স্বচ্ছ ভিত্তি থেকে
বিষয়টি পর্যালোচনা করার চেষ্টা করছি।
“অসারতার” অভিযোগ আমরা করতে চাই না।
একজন প্রতিপক্ষের জন্য এমন দাবী করা খুব
সহজ। আর যে কেউ এমন দাবী খণ্ডন করতে
সক্ষম।
আমরা আপনাকে নিশ্চিত করছি যে ইসলামী
শরিয়তে হিজাব বাধ্যতামূলক এ কারণে নয়
যে, যেসব নারী হিজাব পরে না তারা সবাই
চরিত্রহীন। অথবা এ কারণে নয় যে, হিজাব
না পরলে সমস্ত পুরুষ একজন নারীর দিকে
খারাপ দৃষ্টিতে বা কু মতলবে তাকাবে।
ইসলামী সমাজ মানুষকে পরিবারে, রাস্তায়,
স্কুলে, মসজিদে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব জায়গায়
সৎকর্মশীল ও ধার্মিক হতে শেখায়। বাস্তব
সত্য হচ্ছে ইসলামের অনেক অনুশাসন মানুষকে
সদ্ব্যবহার, ভদ্রতা, সচ্চরিত্রতা ও নম্রতার
প্রতি এতটাই উদ্বুদ্ধ করে যে এটা বহু
মানুষকে অনৈতিক কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে।
তবে যে কোন বিধান আরোপের ক্ষেত্রে ইসলাম
শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দিকটাই দেখে না;
বরং সংখ্যায় কম হলেও সমাজে যে কিছু
অপরাধী রয়েছে সেটাও বিবেচনায় রাখে। যেন
সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সুস্থ
জীবনধারা নিশ্চিত করা যায় এবং সংখ্যালঘু
মানুষ অনৈতিকতার বিস্তার ঘটিয়ে তাদের
জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে না পারে। ঠিক
যেমনভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ যদি
বিকৃত মনের মানুষদের, সমকামীদের আর
স্ট্রিপ ক্লাবের খদ্দেরদের রাস্তায় বা
লোকালয়ে কোন বাধা না দিয়ে তাদের যা খুশি
করতে দেয়, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা
করতে পারছেন সেইসব সমাজের পরিণতি কি
হতে পারে!!
এখানে আমরা আরও একটা উদ্ধৃতি উল্লেখ
করতে চাই যেখানে বলা হয়েছে কোন নারীর
নিকাব (যা দিয়ে মুখ ঢাকা হয়) তা অপসারণ
করে তার চেহারা অনাবৃত করার চেষ্টা করা এক
ধরণের অপকর্ম।
ড্যানিয়েল বইয়ের ক্যাথলিক সংস্করণে বলা
হয়েছে-
“এখন, সুজানা ছিল খুব মার্জিত ও সুন্দরী
এক রমণী। যেহেতু সে অবগুণ্ঠিত ছিল,
দুর্বৃত্তরা তার অবগুণ্ঠন সরাতে আদেশ দিল
যেন তারা চোখ দিয়ে তার সৌন্দর্য আস্বাদন
করতে পারে।”
[ড্যানিয়েল ১৩:৩০-৩১ – নিউ রিভাইসড
স্ট্যান্ডার্ড এডিশন]
কোন মন্তব্য নেই!
সবশেষে, আমরা আপনাকে নারীদের নিরাপত্তা
সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলোর প্রতি নজর
দেয়ার অনুরোধ করছি। এ পরিসংখ্যান থেকে
নারীর উপর নানা রকম আক্রমণ যেমন-
ধর্ষণের যে সংখ্যা আপনি পাবেন সেটা
রীতিমত আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
আমেরিকার যৌন আক্রমণ বিরোধী সবচেয়ে
বড় সংস্থা RAINN (Rape, Abuse and
Incest National Network) এর তথ্য
অনুযায়ী আমেরিকাতে প্রতি দুই মিনিটে
একটা যৌন আক্রমণের ঘটনা ঘটে। যার অর্থ
হচ্ছে- বছরে যৌন আক্রমণের ২০৭,৭৫৪টা
ঘটনা ঘটে। এই সংখ্যাটা ব্যাপক এবং এর
কারণ ও প্রতিকার খোঁজার জন্য আন্তরিক
প্রচেষ্টা দরকার। আপনি রিপোর্টটা এখানে
পাবেন
http://rainn.org/get-information/
statistics/frequency-of-sexual-assault
আমরা যদি বৈবাহিক বিশ্বাসঘাতকতা, অবৈধ
সন্তান, বিবাহবিচ্ছেদ, অতি-নিকট
আত্মীয়ের মধ্যে যৌন সঙ্গমের পরিসংখ্যান
দেখি, তাহলে আমরা এমন অনেক ঘটনা খুঁজে পাব
যা ঘটেছে নারীদের যথাযথ পোশাক না পরার
কারণে এবং মহান আল্লাহ কুরআনে যে সীমা
নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা অতিক্রম করার
কারণে এবং এই নির্দেশগুলো ওল্ড ও নিউ
টেস্টামেন্টের ছাপানো সংস্করণেও পাওয়া
যাবে যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি।
আমরা আশা করব উপরে যা আলোচনা করা হল
আপনি তা ভেবে দেখবেন। পরবর্তীতে কোন
সময় আমরা মুসলিম নারীদের হিজাব
পরিধানে উদ্বুদ্ধকারী কারণসমূহ এবং এই
টুকরো কাপড়ের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক
প্রভাবের ব্যাপারে আরও আলোচনা করার
প্রয়াশ পাব।
এই আলোচনাতে আমাদের যুক্তিগুলো যদি
আপনার মনপুত হয় তাহলে আমরা ইসলাম
সম্পর্কে আপনার অনুসন্ধিৎসু সব প্রশ্ন ও
আন্তরিক স্পৃহাকে স্বাগত জানাই।
আল্লাহই ভালো জানেন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

আমাদের নিকট দুনিয়া ও পার্থিব জীবনের গুরুত্ব কতটুকু?

দুনিয়ার হাকীকত কি এ বিষয়ে অনেক কথা আমাদের
মধ্যে প্রচলিত আছে। তবে এ বিষয়ে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন আমাদের যে ধারণা বা জ্ঞান
দিয়েছেন, তাই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ও
গ্রহণযোগ্য। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
নিজেই এ জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক; তার
চেয়ে অধিক জানার অধিকার আর কারো হতে পারে
না। তিনিই সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে কুরআনে
করীমের বিভিন্ন জায়গায় মানবজাতিকে বুঝান।
> আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ
করেন,তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া
কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক
গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে
আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল
বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ
দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ
বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত
হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর
পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার
জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।
[সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২০]
> আরো বলেন,
মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির
ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-
রূপা, চিিহ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যখেত।
এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী। আর
আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তন
স্থল। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪]
>মহান আল্লাহ আরো বলেন,
আর আপনি তাদের জন্য পেশ করুন দুনিয়ার
জীবনের উপমা: তা পানির মত, যা আমি আসমান
থেকে বর্ষণ করেছি। অতঃপর তার সাথে মিশ্রিত
হয় জমিনের উদ্ভিদ। ফলে তা পরিণত হয় এমন
শুকনো গুঁড়ায়, বাতাস যাকে উড়িয়ে নেয়। আর
আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা কাহাফ,
আয়াত: ৪৫]
>আল্লাহু রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
নিশ্চয় দুনিয়ার জীবনের তুলনা তো পানির ন্যায়
যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি, অতঃপর তার
সাথে জমিনের উদ্ভিদের মিশ্রণ ঘটে, যা মানুষ ও
চতুষ্পদ জন্তু ভোগ করে। অবশেষে যখন জমিন
শোভিত ও সজ্জিত হয় এবং তার অধিবাসীরা মনে
করে জমিনে উৎপন্ন ফসল করায়ত্ত করতে তারা
সক্ষম, তখন তাতে রাতে কিংবা দিনে আমার আদেশ
চলে আসে। অতঃপর আমি সেগুলোকে বানিয়ে দেই
কর্তিত ফসল, মনে হয় গতকালও এখানে কিছু ছিল
না। এভাবে আমি চিন্তাশীল লোকদের জন্য
নিদর্শনসমূহ বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করি”। [সূরা
ইউনুস, আয়াত: ২৪]
>মহান আল্লাহ বলেন,
আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর
কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখিরাতের নিবাসই হল
প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত”। [সূরা আল-
আনকাবুত, আয়াত: ৬৪]
এব্যাপারে প্রসিদ্ধ একটি হাদিস,
মুস্তাওরাদ ইবনে সাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺎَﻣ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ﻲﻓ ﺓﺮﺧﻵﺍ ﺎَّﻟﺇ ُﻞْﺜِﻣ ُﻞﻌﺠَﻳ ﺎَﻣ
ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ُﻪﻌﺒﺻُﺃ ِّﻢَﻴْﻟﺍ ﻲﻓ ﺮُﻈﻨﻴَﻠَﻓ ُﻊِﺟْﺮَﺗ ﺎَﻤﺑ »
“দুনিয়ার জীবন দৃষ্টান্ত আখিরাতের জীবনের
তুলনায় এমন, যেমন তোমাদের কেউ অকুল সমুদ্রে
একটি আঙ্গুল রাখল, তারপর তা তুলে ফেলল, তখন
তার আঙ্গুলের সাথে যতটুকু পানি উঠে আসে দুনিয়ার
জীবনও আখিরাতের তুলনায় তার মত। সে যেন
চিন্তা করে দেখে সমুদ্রের পানির তুলনায় তার
আঙ্গুলের সাথে উঠে আসা পানির পরিমাণ কতটুকু”।