ঝড় তুফান, ভূমিকম্প এগুলো কি আল্লাহর আযাব- গজব নাকি প্রকৃতির খেয়াল?

ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প এগুলো কি আল্লাহর আযাব- গজব নাকি প্রকৃতির খেয়াল?
_________________________

(অতঃপর) তারা যখন শাস্তিকে মেঘরূপে তাদের
উপত্যকা অভিমুখী দেখল, তখন বলল, এ তো
মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দেবে। বরং এটা সেই
বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটা
বায়ু এতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
তার পালনকর্তার আদেশে সে সব কিছুকে ধ্বংস
করে দেবে। অতঃপর তারা ভোর বেলায় এমন হয়ে
গেল যে, তাদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই
দৃষ্টিগোচর হল না। আমি অপরাধী
সম্প্রদায়কে এমনিভাবে শাস্তি দিয়ে থাকি।
সুরা আহকাফ।
“আদ ও সামুদ গোত্র মহাপ্রলয়কে মিথ্যা
বলেছিল। অতঃপর সমুদ গোত্রকে ধ্বংস করা
হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা। এবং
আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড
ঝঞ্জাবায়ূ, যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন
তাদের উপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত
অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা
অসার খর্জুর কান্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে
রয়েছে।
আপনি তাদের কোন অস্তিত্ব দেখতে পান কি?
ফেরাউন, তাঁর পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া
বস্তিবাসীরা গুরুতর পাপ করেছিল।
তারা তাদের পালনকর্তার রসূলকে অমান্য
করেছিল। ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরহস্তে
পাকড়াও করলেন।
যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি
তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহণ
করিয়েছিলাম।
যাতে এ ঘটনা তোমাদের জন্যে স্মৃতির বিষয়
এবং কান এটাকে উপদেশ গ্রহণের উপযোগী রূপে
গ্রহণ করে।
যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র
ফুৎকার
এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও
চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে,
সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও
আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে
তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে।
তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না।
অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে
বলবেঃ নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ।
আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন
হতে হবে।
অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে,
সুউচ্চ জান্নাতে।
তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে।
বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার
প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি
সহকারে।
যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে
বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া
হতো।
আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব!
হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত।
আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না।
আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।
ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ ধর একে গলায় বেড়ি
পড়িয়ে দাও,
অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।
অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ
এক শিকলে।
নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না।
এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত
না।
অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোন সুহূদ
নাই।
এবং কোন খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ
ব্যতীত।
গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না। সুরা হাক্কাহ।

মুক্তিপ্রাপ্ত দল কারা

শুধুমাত্র নামে মুসলিম
হওয়াই যথেষ্ঠ না, বরং
ঈমান ও আমলের দিকে থেকে
সঠিক মুসলিম হলেই নাজাত
পাওয়া যাবে। অনেক মুসলমান
থাকবে যারা সালাত-সাওম
করবে, কিন্তু ভ্রান্ত আক্বীদাহ বা দলের
অনুসারী হয়ে মৃত্যুবরণ করার কারণে
জাহান্নামের গর্তে প্রবেশ করবে, আল্লাহর
কাছে পানাহ চাই। সুতরাং, পথভ্রষ্ট
হওয়া থেকে বাঁচার জন্যে
নবী সাল্লাল্লাহু আ ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ এবং
তাঁর সাহাবাদের আদর্শকে
আঁকড়ে ধরতে হবে এবং, নেক
সুরতে শয়তানের ধোঁকা এবং
পথভ্রষ্ট আলেম ও দ্বাইয়ীদের ব্যপারে সর্বদাই
সতর্ক থাকতে হবে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “জেন রাখ! নিশ্চয়ই
তোমাদের পূর্বে ছিল যারা ছিলো (ইয়াহুদী এবং
খ্রীস্টানরা) তারা ৭২টি দলে বিভক্ত
হয়েছিল, এবং
নিশ্চয়ই আমার এই উম্মত
(মুসলমানেরা) ৭৩টি দলে
বিভক্ত হবে। এদের মাঝে
প্রত্যেকটি দল জাহান্নামে
যাবে, শুধুমাত্র একট দল ছাড়া। ”
সাহাবারা (রাঃ) জিজ্ঞেসা
করলেন, “ ইয়া রাসূলুল্লাহ,
(মুক্তিপ্রাপ্ত) সেই দল কোনটি? ”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, “আজকে
আমি এবং আমার সাহাবীরা
যার উপরে আছি, সেই পথের
উপর যারা থাকবে (তারাই
মুক্তি পাবে)। ” [তিরমিজী ও আবু
দাউদ,মিশকাত হাদীস নং- ১৬৩]
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
বলেছেন, “ক্বিয়ামাত আসা পর্যন্ত
আমার উম্মাতের একটা দল
সর্বদাই (হক্কের উপর)
বিজয়ী থাকবে। আর তারাই
হচ্ছে বিজয়ী।” সহীহ বুখারীঃ তাওহীদ
প্রকাশনীঃ ৭৩১১, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৬৮০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮১৩।
ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিতঃ
আমাদের জন্য নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দাগ
টানলেন। তারপর বললেন: এটা আল্লাহর সোজা
(সঠিক) রাস্তা। তারপর তার ডানে ও বামে আরো
কিছু দাগ টানলেন। তারপর বললেনঃ এ
রাস্তাগুলোর সবকটিতে শয়তান বসে
মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে। এরপর কুরআন
থেকে পাঠ করলেন: আর এটি তো আমার
সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর
এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা
তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ
দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।
(আহমদ, নাসাঈ, হাকেম। সহিহ)।
মুসলিমদের মাঝে বিভিন্ন
দল ও তরীকার মাঝে
একটিমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল তাবেয়ীদের যুগ
থেকে আজ
পর্যন্ত যেই নামে পরিচিত
হয়ে আসছেঃ
১. আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআ ’ত বা সংক্ষেপে ‘সুন্নী’
২. ফিরকাতুন-নাযিয়াহ –
নাজাতপ্রাপ্ত দল
৩. আত-ত্বাইয়িফাতুল
মানসুরাহ – সাহায্যপ্রাপ্ত দল
৪. আহলুল হাদীস – ক্বুরান ও
হাদীসের অনুসারী দল
এই সবগুলো নাম দিয়ে একই
দল বা জামাআ ’তকে উদ্দেশ্য
করা হয়, আর তারাই হচ্ছে
বিশ্বাস, কথা ও কর্মের দিক
থেকে প্রকৃত ইসলামের
অনুসারী, যেই ইসলাম এর
দাওয়াত নিয়ে আজ থেকে
প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে
নবী সাল্লাল্লাহু আ ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে
এসেছিলেন। আল্লাহর কাছে
দুয়া করি, তিনি যেন
আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর
আনীত প্রকৃত দ্বীনের
অনুসারী নাজাতপ্রাপ্ত দলের
অন্তর্ভুক্ত অবস্থান আমাদেরকে মৃত্যু দান করেন,
আমিন।

সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ ও ছিয়াম পালন

সারা বিশ্বে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ
পালন নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের
বিভিন্ন স্থানে একশ্রেণীর মানুষের
মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় লক্ষ্য করা
যাচ্ছে। ইতিপূর্বে ১৯৮৬ সালের
১১-১৬ অক্টোবর ওআইসির অঙ্গ
সংগঠন ‘ইসলামী ফিকহ একাডেমী’
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে এ
ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করলেও এখনও পর্যন্ত ওআইসি
কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
পারেনি। কারণ এ বিতর্কিত
সিদ্ধান্তটি ছিল কেবলই
যুক্তিনির্ভর; শরী‘আত কিংবা
বাস্তবতার নিরিখে এর কোন ভিত্তি
নেই। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে
যেহেতু এ নিয়ে গুঞ্জরণ সৃষ্টি হয়েছে,
তাই শারঈ দৃষ্টিকোণ এবং বাস্তবতার
নিরিখে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা
প্রয়োজন।
মূলতঃ শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি
আমরা লক্ষ্য করি তাহলে স্পষ্টতই
বোঝা যায় যে, কুরআন ও হাদীছে মাস
গণনার জন্য চাঁদ দেখার যে নির্দেশনা
এসেছে তা স্থানিক তথা একটি
নির্দিষ্ট জনসমষ্টির জন্য
প্রযোজ্য, যাদের উপর চন্দ্র উদিত
হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস
(রামাযান) পাবে, সে যেন ছিয়াম রাখে’
(বাকারাহ ২/১৮৫) । রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে ছিয়াম রাখ
এবং চাঁদ দেখে ছিয়াম ভঙ্গ কর’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/১৯৭০) । যদি হাদীছে বর্ণিত এই
নির্দেশটি স্থানিক না হয়ে সমগ্র
বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য হ’ত, তাহ’লে
চাঁদের সর্বপশ্চিমের উদয়স্থল তথা
বর্তমান আমেরিকা মহাদেশকে অথবা
পৃথিবীর মধ্যস্থল হিসাবে
সঊদীআরবকে শরী‘আতে মানদন্ড
হিসাবে গ্রহণ করা হ’ত এবং সেখানে
চাঁদ দেখা মাত্রই সমগ্র বিশ্বে একই
সাথে ছিয়াম ও ঈদ পালনের জন্য
নির্দেশ দেয়া হত। কিন্তু কুরআন ও
হাদীছের কোথাও এর প্রমাণ পাওয়া
যায় না। বরং তাৎপর্যপূর্ণভাবে
কুরআনের ভাষাটি এসেছে এভাবে যে,
‘যারা এ মাস পাবে’ অর্থাৎ সকলেই নয়,
বরং তারাই যারা চাঁদ দেখতে পাবে
(হাদীছের ব্যাখ্যা থেকে যা আরো
সুস্পষ্ট হয়)। অতএব রামাযানে ছিয়াম
রাখা ও রামাযান শেষে ঈদ পালন করার
সাথে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির চাঁদ
দেখা শর্ত। এটাই আরবী মাস বা
চন্দ্রমাস নির্ণয়ের চিরাচরিত ও
স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতি। আধুনিক যুগে
স্যাটেলাইট আবিষ্কারের পূর্বে এ নিয়ে
কখনও সেভাবে প্রশ্ন উঠেনি। মূলতঃ
চন্দ্র ও সূর্য একই নিয়মে পৃথিবীর
চতুর্পার্শ্বে ঘূর্ণায়মান। চন্দ্র হ’ল
মাসের সময় নির্ধারক, আর সূর্য হল
দিনের সময় নির্ধারক। কোন স্থানে
সূর্য উদয়ের সাথে সাথে যেমন দিনের
শুরু হয়, তেমনি অমাবস্যার পর চন্দ্র
উদয়ের সাথে সাথে মাসের শুরু হয়।
এটাই স্বতঃসিদ্ধ প্রাকৃতিক রীতি।
এভাবেই চন্দ্র ও সূর্য প্রকৃতির অমোঘ
নিয়মে একে অপরের সাথে
অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এক্ষণে ছিয়াম
ও ঈদ পালনে এই প্রাকৃতিক চক্রকে
(Natural cycle) অস্বীকার করা যেমন
অবৈজ্ঞানিক, তেমনই অজ্ঞতার
পরিচায়ক। নিম্নে এ বিষয়ে
ভিন্নমত পোষণকারীদের কিছু প্রমাণ
ও যুক্তি খন্ডন করা হ’ল-
(১) যারা বর্তমানে একই দিনে ছিয়াম
ও ঈদ পালনের দাবী তুলেছেন তারা
একটি হাদীছ প্রমাণ হিসাবে পেশ
করতে চান যে, দু’জন ন্যায়পরায়ণ
ব্যক্তি চাঁদ দেখার সাক্ষী দিলে রাসূল
(ছাঃ) ছিয়াম পালন ও তা ভঙ্গ করার
নির্দেশ দিয়েছেন।[1] অতএব আধুনিক
মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের কোন
স্থানে চাঁদ দেখার খবর পেলেই তা
সমগ্র বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য হবে।
এক্ষণে উক্ত সাক্ষ্য দুনিয়ার সকল
মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে কি-না? এ
ব্যাপারে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত
যুক্তিকে পদদলিত করে ছাহাবায়ে
কেরামের আমলকে অগ্রাধিকার দেয়াই
যথার্থ হবে। কুরাইব (রাঃ) বর্ণিত
আছারে এসেছে যে, তিনি সিরিয়ায়
রামাযানের ছিয়াম রেখে মাস শেষে
মদীনায় ফিরে এখানকার ছিয়ামের
সাথে এক দিন কমবেশ দেখতে পান। এ
বিষয়ে ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করা হ’লে তিনি বলেন যে, সিরিয়ার
আমীর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর গৃহীত
ছিয়ামের তারিখ মদীনায় প্রযোজ্য
নয়। কেননা ওখানে তোমরা শুক্রবার
সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছ। অতএব আমরা
ছিয়াম চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না ঈদের
চাঁদ দেখতে পাব’। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
আমরা ৩০ দিন পূর্ণ করব। তাঁকে বলা
হ’ল: মু‘আবিয়ার চাঁদ দেখা ও ছিয়াম
রাখা কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?
তিনি বললেন, না। এভাবেই রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দান
করেছেন।[2] ইমাম নববী বলেন, এ
হাদীছ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এক
শহরের চন্দ্র দর্শন অন্য শহরে
প্রযোজ্য নয় অধিক দূরত্বের কারণে।
[3]
উল্লেখ্য যে, সিরিয়া মদীনা থেকে
উত্তর-পশ্চিমে এক মাসের পথ এবং
প্রায় ৭০০ মাইল দুরত্বে অবস্থিত।
সময়ের পার্থক্য ১৪ মিনিট ৪০
সেকেন্ড। সম্ভবতঃ সে কারণেই সেখানে
মদীনার একদিন পূর্বে চাঁদ দেখা
গিয়েছিল। মিশকাতের ভাষ্যকার
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৩২২-১৪১৪
হিঃ/ ১৯০৪-১৯৯৪ খৃঃ) বলেন,
‘পশ্চিম দিগন্তে ভূপৃষ্ঠ থেকে
নবচন্দ্রের উদয়কালের উচ্চতার
আধুনিক হিসাব মতে পশ্চিম অঞ্চলে
চাঁদ দেখা গেলে পশ্চিমাঞ্চলসহ সেখান
থেকে অন্যূন ৫৬০ মাইল দূরত্বে
পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ঐ চাঁদ
গণ্য হবে। আর যদি পূর্বাঞ্চলে চাঁদ
দেখা যায়, তাহ’লে পশ্চিমাঞ্চলের
অনুরূপ দূরত্বের অধিবাসীদের জন্য
উক্ত চাঁদ গণ্য হবে’।[4] সর্বাধুনিক
জ্যোতির্বিজ্ঞানের উক্ত হিসাব মতে
মক্কা শরীফে চাঁদ দেখা অঞ্চলের
দেশসমূহের ৫৬০ মাইল পর্যন্ত উক্ত
চাঁদ দেখা যাওয়া সম্ভব এবং উক্ত
দূরত্বের অধিবাসীগণ উক্ত চাঁদের
হিসাবে ছিয়াম ও ঈদ পালন করতে
পারেন। উল্লেখ্য যে, এই মাইলের
হিসাব সরাসরি আকাশ পথের মাইল,
সড়ক পথের মাইল নয়।
অতএব বুঝা গেল, দু’জন মুসলিমের
সাক্ষ্য ঐ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ যে অঞ্চলে একই দিনে চাঁদ
দেখা সম্ভব। যারা উক্ত ছহীহ আছারকে
উপেক্ষা করে দু’জন মুসলিমের
সাক্ষীকে দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য
প্রযোজ্য মনে করেন, তাদের উদ্দেশ্যে
বলব, সঊদী আরবের পশ্চিমেও তো
অনেক দেশ রয়েছে, যে দেশগুলোতে সঊদী
আরবের পূর্বে চাঁদ দেখা যায়। যেমন এ
বছর (২০১৩ইং) উত্তর আমেরিকাতে ৮
জুলাই দিবাগত রাতে চাঁদ দেখা গেছে
এবং ৯ জুলাই (মঙ্গলবার) প্রথম
ছিয়াম পালিত হয়েছে। তাহ’লে সঊদী
আরবকে কেন আপনারা মানদন্ড হিসাবে
গণ্য করছেন? চাঁদ তো পশ্চিমে
সর্বপ্রথম উদিত হয় আমেরিকা
মহাদেশে? আপনাদের এই দ্বিমুখী
নীতিই কি আপনাদের দাবীর অসারতা
প্রমাণে  যথেষ্ট নয়?
(২) ‘রাসূল (ছাঃ)-এর আমল’ শিরোনাম
দিয়ে কয়েকটি হাদীছ উপস্থাপন করা
হয়ে থাকে যে, রাসূল (ছাঃ) মধ্যাহ্নের
পর কয়েকজন মরুবাসী বেদুঈনের কাছে
শাওয়ালের চাঁদ দেখার সংবাদ পেলেন
এবং তৎক্ষণাৎ ছাহাবীদেরকে ছিয়াম
ভঙ্গ করতে বললেন ও পরদিন ঈদের
ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন।[5]
কিন্তু এই হাদীছগুলিতে সারাবিশ্বে
একদিনে ছিয়াম ও ঈদ পালনের পক্ষে
দলীল গ্রহণের সুযোগ কোথায়? কেননা
রাসূল (ছাঃ) যাদের কাছে সংবাদ
পেয়েছিলেন তারা দূরবর্তী কোন স্থান
থেকে আগমন করে নি; বরং মদীনা বা
মদীনার পার্শ্ববর্তী কোন স্থান
থেকেই এসেছিল। কেননা মাত্র
একদিনের ব্যবধানে কোন ব্যক্তি বা
কাফেলার জন্য খুব বেশী দূরত্ব থেকে
আগমন করা সম্ভব ছিল না। অতএব এই
হাদীছগুলির বাস্তবতা এটাই যে,
মদীনার লোকালয়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন
থাকার কারণে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীরা
চাঁদ দেখতে পাননি। কিন্তু
পার্শ্ববর্তী মরুভূমির মানুষ আকাশ
পরিষ্কার থাকায় তা দেখতে পেয়েছিল।
তাই তাদের সংবাদ রাসূল (ছাঃ) আমলে
নিয়েছিলেন এবং ছিয়াম ভঙ্গ
করেছিলেন। এ বিষয়টি ইবনে মাজাহর
হাদীছেও স্পষ্টভাবে এসেছে। যেমন
আনাস বিন মালেক (রাঃ) তাঁর আনসারী
ছাহাবী চাচাদের উদ্ধৃত করে বর্ণনা
করেছেন যে, َﻲِﻤْﻏُﺃ ﺎَﻨْﻴَﻠَﻋ ُﻝَﻼِﻫ
ٍﻝﺍَّﻮَﺷ ﺎًﻣﺎَﻴِﺻ ﺎَﻨْﺤَﺒْﺻَﺄَﻓ َﺀﺎَﺠَﻓ ٌﺐْﻛَﺭ
অর্থাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চাঁদ
আমাদের কাছে অস্পষ্ট ছিল। তাই
আমরা ছিয়াম রেখেছিলাম। অতঃপর
একটি কাফেলা আগমন করল…।[6]
সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর এই আমল একই
দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালনের পক্ষে
কোনই প্রমাণ বহন করে না।
(৩) ছিয়াম ফরযের আয়াতটি বর্ণনার
পরই আল্লাহ যেমন বলেছেন, ْﻦَﻤَﻓ َﺪِﻬَﺷ
ُﻢُﻜْﻨِﻣ َﺮْﻬَّﺸﻟﺍ ُﻪْﻤُﺼَﻴْﻠَﻓ ‘তোমাদের
মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রামাযান)
পাবে, সে যেন ছিয়াম রাখে’ (বাকারাহ
২/১৮৫) । তেমনিভাবে দু’টি আয়াত
পরেই বলেছেন, ﺍﻮُﻠُﻛَﻭ ﺍﻮُﺑَﺮْﺷﺍَﻭ
ﻰَّﺘَﺣ َﻦَّﻴَﺒَﺘَﻳ ُﻢُﻜَﻟ ُﻂْﻴَﺨْﻟﺍ ُﺾَﻴْﺑَﺄْﻟﺍ
َﻦِﻣ ِﻂْﻴَﺨْﻟﺍ ِﺩَﻮْﺳَﺄْﻟﺍ َﻦِﻣ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ َّﻢُﺛ
ﺍﻮُّﻤِﺗَﺃ َﻡﺎَﻴِّﺼﻟﺍ ﻰَﻟِﺇ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ
‘তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির
কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্র রেখা
প্রতিভাত না হয়। অতঃপর তোমরা
রাত্রি পর্যন্ত ছিয়াম পূর্ণ কর’
(বাকারাহ ২/১৮৭) । উপরোক্ত
আয়াতদ্বয়ের প্রথম আয়াতটি চন্দ্রের
সাথে সম্পৃক্ত, আর পরেরটি সূর্যের
সাথে। এক্ষণে প্রথমটি অনুসরণ করা
হবে আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী, আর
পরেরটি অনুসরণ করা হবে স্থানীয়
সময় মোতাবেক, এটা কি স্পষ্টতই
দ্বিমুখিতা নয়?
(৪) এ বিষয়ে আরো যুক্তি দাঁড় করানো
হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের
শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে
বলেছেন। অতএব একই দিনে ছিয়াম
আরম্ভ না করলে দেখা যাবে, যেদিন
সঊদী আরবে বেজোড় রাত, সেদিন
বাংলাদেশে জোড় রাত। এক্ষণে
লাইলাতুল কদর কোন দেশের বেজোড় রাত
অনুযায়ী হবে? উত্তরে বলব, হে
বিবেকবান মুসলিম ভাই! যদি আপনার
যুক্তি মেনে নেয়া হয়, তাহ’লে আমরা
যখন সঊদী আরবের অনুসরণে লাইলাতুল
কদর পালন করব, তখন কিছু দেশে যেমন
রাত থাকবে, তেমন কিছু দেশে দিনও
থাকবে। তাহ’লে কি তারা সে সময়
লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) পালন না
করে নাহারুল কদর (কদরের দিন) পালন
করবে? বেজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল
কদর অনুসন্ধান সম্পর্কিত হাদীছটির
ব্যাখ্যা যদি এভাবেই করা হয়, তাহলে
এই হাদীছের ব্যাখ্যা কি হবে? যেখানে
বলা হয়েছে, ُﻝِﺰْﻨَﻳ ﺎَﻨُّﺑَﺭ َﻙَﺭﺎَﺒَﺗ
ﻰَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ َّﻞُﻛ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ﻰَﻟِﺇ ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ
ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ َﻦﻴِﺣ ﻰَﻘْﺒَﻳ ُﺚُﻠُﺛ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ
ُﺮِﺧﻵﺍ ُﻝﻮُﻘَﻳ ْﻦَﻣ َﺐﻴِﺠَﺘْﺳَﺄَﻓ ﻰِﻧﻮُﻋْﺪَﻳ
ُﻪَﻟ ْﻦَﻣ ﻰِﻨُﻟَﺄْﺴَﻳ ُﻪَﻴِﻄْﻋُﺄَﻓ ْﻦَﻣ
ﻰِﻧُﺮِﻔْﻐَﺘْﺴَﻳ َﺮِﻔْﻏَﺄَﻓ ُﻪَﻟ ‘আল্লাহ
প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে নিম্ন
আকাশে অবতরণ করেন এবং ফজর
পর্যন্ত বান্দাদের প্রতি আহবান
জানিয়ে বলেন, আছ কি কোন
আহবানকারী, আমি তার আহবানে সাড়া
দেব। আছ কি কেউ সাহায্য
প্রার্থনাকারী, আমি তাকে তা দিব।
আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী,
আমি তাকে ক্ষমা করব’।[7] কেননা
বিশ্বপরিমন্ডলের ভৌগলিক অবস্থান
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ২৪ ঘণ্টার
প্রতিটি মুহূর্তেই কোন না কোন দেশে
শেষ রাত্রি উপস্থিত হচ্ছে। তার
অর্থ কি এই যে আল্লাহ সর্বদাই
দুনিয়ার আসমানে অবস্থান করছেন?
বর্তমানে লাইলাতুল কদরের ব্যাখ্যা
যেভাবে করা হচ্ছে, অত্র হাদীছের
অনুরূপ ব্যাখ্যা দাঁড় করালে আল্লাহ
তা‘আলার জন্য সর্বদা দুনিয়াবী
আসমানে অবস্থান করাই কি
অপরিহার্য হয়ে যায় না?
(নাউযুবিল্লাহি) মূলতঃ আল্লাহ
তা‘আলা দিন-রাত্রির দুনিয়াবী
হিসাবের ঊর্ধ্বে। তাই হাদীছটির
বাস্তবতা সম্পর্কে একমাত্র তিনিই
জানেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুধুই
মূর্খতা। আমরা কেবল শরী‘আতের
নির্দেশ পালনে আদিষ্ট।
(৫) এছাড়াও আরো একটি যুক্তি পেশ
করা হয় যে, সঊদী আরবের সাথে
বাংলাদেশের মাত্র ৩ ঘণ্টা সময়ের
পার্থক্য থাকার কারণে পূর্ণ এক দিন
পার্থক্য হবে কেন? উত্তরে বলব, ৩
ঘণ্টা কেন, ৩ সেকেন্ডের আগ-পিছের
কারণেও তো একটি দিনের ব্যবধান
হতে পারে। যেমন একই সময়ে দু’টি
শিশু জন্মগ্রহণ করল, একটি
বাংলাদেশে এবং অপরটি সঊদী আরবে।
বাংলাদেশে সময় তখন সন্ধ্যা ৭টা এবং
আর সঊদী আরবে সময় তখন বিকাল
৪টা। এখন প্রশণ হ’ল, একই সময়ে
জন্মগ্রহণ করা শিশু দু’টির আক্বীকা
কি একই দিনে হবে, না দুই দিনে হবে?
এর উত্তর হ’ল, অবশ্যই দুই দিনে।
কারণ সঊদী আরবে বিকেল ৪টায় জন্ম
গ্রহণ করা শিশুর ৭ম দিন আর
বাংলাদেশে সন্ধ্যা ৭টায় জন্ম গ্রহণ
করা শিশুর ৭ম দিন একই দিনে হবে
না। বরং সঊদী শিশুর ৭ম দিন হবে
বাংলাদেশী শিশুর ৬ষ্ঠ দিন। এক্ষণে
একই সময়ে জন্মগ্রহণ করা দুই শিশুর
আক্বীকা যদি দু’দিনে হ’তে পারে,
তাহলে ৩ ঘণ্টা সময়ের পার্থক্যের
কারণে ১ দিন কি পার্থক্য হতে পারে
না? এই সমাধান বের করার জন্য কেবল
সুস্থ বিবেকই যথেষ্ট। আল্লাহ সকলকে
বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!
(৬) বর্তমানে বেশকিছু দেশ ছিয়াম
পালন করে সঊদী আরবে উদিত চাঁদের
অনুসরণে। আমাদের দেশের
দক্ষিণাঞ্চলেও অনেক আগে থেকে কিছু
কিছু গ্রামে সঊদী আরবকে অনুসরণ করা
হয়। এখন প্রশ্ন হ’ল, শরীআতে এমন
কোন ইঙ্গিত কি রয়েছে যে, সঊদী
আরবের চাঁদই সারাবিশ্বের জন্য
মানদন্ড হবে? তাহলে কিসের
ভিত্তিতে সঊদী আরবকে মানদন্ড
হিসাবে গ্রহণ করা হল? ‘চাঁদ দেখে
ছিয়াম রাখ, চাঁদ দেখে ছিয়াম ছাড়’
হাদীছটির দূরবর্তী ব্যাখ্যা দাঁড়
করালেও তো সঊদী আরব নয়; বরং
সর্বপশ্চিমের ভূখন্ড আমেরিকার
আলাস্কা প্রদেশকে অনুসরণ করতে হয়।
সর্বোপরি ইসলাম একটি সহজ-সরল
প্রাকৃতিক ধর্ম। সর্বযুগে সর্বাবস্থায়
এর বিধান সমানভাবে কার্যকর।
বর্তমানে স্যাটেলাইটের যুগ আসার
কারণে একই দিনে একই সময়ে ছিয়াম
ও ঈদ পালনের কথাটি জোরেশোরে
উঠছে। কিন্তু একশত বছর পূর্বেও
যখন স্যাটেলাইট ছিল না, তখনকার
অনারব মুসলিম সমাজ কি তাহ’লে
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা লাভে বঞ্চিত
হয়েছিল? তারা কি বিগত ১৩০০ বছর
ধরে ছিয়াম নিষিদ্ধের দিন তথা
ঈদের দিনে ছিয়াম রাখতে বাধ্য
হয়েছিল কেবলমাত্র প্রযুক্তি জ্ঞানের
অভাবে? স্বাভাবিক যুক্তিবোধ কি এটা
কোনক্রমে সায় দেয়? এমনকি আধুনিক
স্যাটেলাইটের যুগেও কি সর্বত্র
সঠিক সময়ে সংবাদ পাওয়া সম্ভব? এর
সাথে জড়িত সমস্যাগুলো চিন্তা করলে
আদৌ সম্ভব নয়। যেমন-
ক. আমেরিকায় (জিএমটি-৬) চাঁদ
উঠেছে কি না তা জানতে কোরিয়ার
(জিএমটি+৯) মুসলমানদের অপেক্ষা
করতে হবে অন্ততঃ ১৫ ঘণ্টা। অর্থাৎ
আমেরিকায় সন্ধ্যা ৬-টায় উদিত হওয়া
চাঁদের সংবাদ কোরিয়ার মুসলমানরা
পাবে স্থানীয় সময় পরদিন দুপুর
১১টায়। এমতাবস্থায় তারা ‘একই দিনে
ছিয়াম ও ঈদ’ উদযাপনের মূলনীতি
অনুসারে উক্ত ছিয়ামটি আদায় করবে
কিভাবে, আর কিভাবেই বা সেদিনের
তারাবীহ পড়বে? আরও পূর্বের দেশ
নিউজিল্যান্ডের সাথে আমেরিকার
সর্বপশ্চিম তথা আলাস্কার সময়ের
পার্থক্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা। তাহ’লে
আমেরিকার চাঁদ ওঠার খবর
নিউজিল্যান্ডবাসী পাবে পরদিন
রাতে। তাহলে তাদের উপায় কি হবে?
এমনকি বাংলাদেশেও আমেরিকার চাঁদ
উঠার সংবাদ জানতে অপেক্ষা করতে হবে
পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত। অর্থাৎ
সেই একই ঘটনা। তারা সেদিনের
ছিয়ামও পাবে না, তারাবীহও পাবে না।
খ. ধরা যাক বাংলাদেশের চট্টগ্রামে
সাহারীর ৫ মিনিট পূর্বে খবর আসল
যে, আমেরিকায় চাঁদ উঠেছে।
এমতাবস্থায় চট্টগ্রামবাসী কোনক্রমে
হয়ত সাহারী সম্পন্ন করল, কিন্তু
রাজশাহীবাসী যাদের ব্যবধান
চট্টগ্রাম থেকে ১৩ মিনিট তারা কি
করবে? একই দেশে অবস্থান করেও তারা
আর ছিয়াম রাখতে পারবে না। তাহলে
একই দেশে কিছু লোক ছিয়াম রাখবে,
কিছু লোক রাখবে না-ভাবুন তো কেমন
বিদঘুটে অবস্থা তৈরী হবে?
গ. কেবল চাঁদ দেখাই তো শেষ কথা নয়,
প্রকৃতই চাঁদ দেখা গেছে কিনা তা
সাব্যস্ত হতে হবে একটি দায়িত্বশীল
কমিটির মাধ্যমে। এটাও যথেষ্ট
জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। যেমন
বাংলাদেশে কয়েক বছর পূর্বে হাতিয়ার
একটি চরে কেউ একজন চাঁদ দেখতে পেলে
সারা দেশে প্রচার হ’ল, অথচ চাঁদ দেখা
কমিটি তা গ্রহণযোগ্য মনে না করায়
চাঁদ দেখা যায়নি বলে রেডিও-টিভিতে
ঘোষণা করা হয়েছিল। এ নিয়ে যথেষ্ট
সমস্যা তৈরী হয়েছিল সে বছর।
বাংলাদেশের মত ছোট দেশে যদি চাঁদ
দেখা নিয়ে সমন্বয়ের এমন অভাব হয়,
তবে সারা বিশ্ব পরিসরে বিষয়টি কত
জটিল হতে পারে চিন্তা করা যায়?
সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে
স্বভাবধর্ম ইসলামে কি এইরূপ
জটিলতার কোন অবকাশ আছে? ইসলাম
কি এমন বাস্তবতাবিবর্জিত ধর্ম?
কখনই নয়; বরং এই অযৌক্তিক
বিতর্ক একশ্রেণীর কল্পনাবিলাসী
মস্তিষ্কের অপরিপক্ক চিন্তাধারা
বৈ কিছুই নয়। এটুকু বোঝার জন্য
বড়মাপের বিশেষজ্ঞ হওয়ারও প্রয়োজন
নেই। তাই অর্থহীন যুক্তি পরিত্যাগ
করে কুরআন ও হাদীছের সহজ-সরল
জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করাই কাম্য।
সূর্য, চন্দ্র উভয়কেই সৃষ্টি করা
হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে, যার অন্যতম
হ’ল সময় ও দিনের হিসাব গণনা।
প্রত্যেক এলাকার মানুষ স্ব স্ব
স্থানীয় সময় মোতাবেক চন্দ্র মাস
গণনা শুরু করবে- এটাই অনাদিকাল থেকে
সুপরিচিত বিষয়, যেমনভাবে সৌরদিন
সূর্যের স্থানীয় অবস্থান মোতাবেক
নির্ধারিত হয়। এর বাইরে মানুষকে
তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছুই
চাপিয়ে দেয়া হয় নি। আল্লাহ বলেন,
‘তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময়
এবং চন্দ্রকে আলোকময় এবং তার জন্য
নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল,
যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা
এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো
অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন।
জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি
আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা
করেন’ (ইউনুস ৫) । সুতরাং এ নিয়ে
বিতর্কের কোন অবকাশ নেই।
পরিশেষে এ ব্যাপারে শায়খ উছায়মীন
(রহঃ)-এর বক্তব্য এবং রাবেতা আলমে
ইসলামীর ‘ইসলামী ফিকহ
একাডেমী’র ফৎওয়া উদ্ধৃত করে এ
আলোচনা শেষ করছি। শায়খ উছায়মীন
(রহঃ) বলেন, ‘ভৌগলিক হিসাবে এটা
অসম্ভব। কেননা ভূগোলবিদদের নিকট
চাঁদের উদয়স্থল বিভিন্ন হয়,
যেমনটি ইবনে তায়মিয়া উল্লেখ
করেছেন। যুক্তির নিরিখে এই
বিভিন্নতা থেকেই স্পষ্ট প্রতিভাত
হয় যে, প্রতিটি শহরের জন্য হুকুম
ভিন্ন ভিন্ন হবে।
আর এ ব্যাপারে শারঈ দলীল হ’ল
আল্লাহ বলেন, ْﻦَﻤَﻓ َﺪِﻬَﺷ ُﻢُﻜْﻨِﻣ
َﺮْﻬَّﺸﻟﺍ ُﻪْﻤُﺼَﻴْﻠَﻓ ‘তোমাদের মধ্যে যে
ব্যক্তি এ মাস (রামাযান) পাবে, সে
যেন ছিয়াম রাখে’ (বাকারাহ ২/১৮৫) ।
যদি দেখা যায় পৃথিবীর প্রান্ত
সীমানার দেশগুলো এ মাস পায়নি অথচ
মক্কাবাসীরা ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে,
এমতাবস্থায় আয়াতের হুকুমটি কিভাবে
তাদের উপর আরোপ করা যেতে পারে,
যারা এখনও পর্যন্ত মাসটি পায়নি?
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ﺍﻮُﻣﻮُﺻ
ِﻪِﺘَﻳْﺅُﺮِﻟ ﺍﻭُﺮِﻄْﻓَﺃَﻭ ِﻪِﺘَﻳْﺅُﺮِﻟ‏[8 ]
সুতরাং উদাহরণস্বরূপ যদি
মক্কাবাসীরা চাঁদ দেখে, তবে তার
ভিত্তিতে কিভাবে আমরা
পাকিস্তানবাসী কিংবা তার
পূর্বদিকের রাষ্ট্রসমূহের
অধিবাসীদের উপর ছিয়াম চাপিয়ে
দিতে পারি, অথচ আমরা জানি যে
তাদের আকাশে আদতে চাঁদ উদিতই
হয়নি? অথচ রাসূল (ছাঃ) চাঁদ দেখাকে
ছিয়ামের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।
আর যুক্তিভিত্তিক দলীল হ’ল, আমরা
জানি যে ভূপৃষ্ঠের পশ্চিম প্রান্তের
আগে পূর্ব প্রান্তে প্রভাতরেখা উদিত
হয়। সুতরাং প্রাচ্যের আকাশে
প্রভাতরেখা উদিত হলেই কি আমরা
পশ্চিম প্রান্তের মানুষ সাহারী ছেড়ে
দেব, অথচ পশ্চিমে এখনও রাত
অবশিষ্ট আছে? এর উত্তর হ’ল, না।
তেমনিভাবে প্রাচ্যের আকাশে যখন
সূর্য অস্তগামী হয়, তখন কি আমরা
ইফতার করা শুরু করব, অথচ আমরা
তখনও দিবাভাগেই রয়েছি? এর উত্তর
হ’ল, না। সুতরাং হুকুমের ক্ষেত্রে চাঁদ
ও সূর্য সম্পূর্ণ একই। চন্দ্রের হিসাব
হয় মাসিক, আর সূর্যের হিসাব হয়
দৈনিক।…অতএব যুক্তি ও দলীলের
নিরীখে ছিয়াম ও ইফতারের ক্ষেত্রে
প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা বিধান
হবে। যার সম্পর্ক হবে বাহ্যিক
আলামত বা চিহ্ন দ্বারা, যা আল্লাহ্
তা‘আলা কুরআনে এবং নবী (ছাঃ) তাঁর
সুন্নাতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর
তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষ করা এবং সূর্য
বা ফজর প্রত্যক্ষ করা। মানুষ যে
এলাকায় থাকবে সে এলাকায় চাঁদ দেখার
উপর নির্ভর করে ছিয়াম ভঙ্গ করবে।
[9]
‘রাবেতা আলমে ইসলামী’র ‘ইসলামী
ফিকহ একাডেমী’ ১৯৮১ সালে তাদের
প্রকাশিত এক ফৎওয়ায় উল্লেখ করেছে
যে, ‘ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন
যে, ‘তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত
ছিয়াম রেখ না এবং চাঁদ না দেখে
ছিয়াম ভঙ্গ করো না। আর যদি আকাশ
মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে গণনা করে
(ত্রিশ দিন) পূর্ণ কর’।[10]
এই হাদীছটির সাথে একটি সাবাব
(কারণ) সংযুক্ত করা হয়েছে অর্থাৎ
চন্দ্র দর্শন। সুতরাং হতে পারে যে
মক্কা, মদীনায় চাঁদ দেখা গেলেও অন্য
দেশে তা দেখা যায় নি। সেক্ষেত্রে অন্য
দেশের অধিবাসীদেরকে দিনের আলো
অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় তৎক্ষণাৎ
কিভাবে ছিয়াম পালন বা ছিয়াম
ভঙ্গের নির্দেশ দেয়া যেতে পারে?
প্রত্যেক মাযহাবের আলেমরাই বলেছেন
যে, উদয়স্থলের বিভিন্নতা বহু
আলেমের নিকট গ্রহণযোগ্য। ইবনে
আব্দিল বার এ ব্যাপারে ইজমা‘ উল্লেখ
করেছেন যে, দূরবর্তী শহরসমূহ থেকে
একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না; যেমন
খোরাসান ও স্পেনের মধ্যকার দূরত্ব।
তাই প্রতিটি দেশ বা শহরের জন্য
ভিন্ন ভিন্ন হুকুম। তাছাড়া চার
মাযহাবের বহু কিতাবে শারঈ দলীলের
ভিত্তিতে উদয়স্থলের ভিন্নতাকে
গ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে।
আর যুক্তির ক্ষেত্রে বলা যায় যে,
উদয়স্থলের বিভিন্নতার ব্যাপারে
কোন আলেমের মধ্যেই মতানৈক্য নেই।
কেননা এটা একটা দৃশ্যমান ব্যাপার।
ছালাতের নির্ধারিত সময়সহ
শরীআতের অনেক হুকুম এর আলোকেই
নির্ধারিত হয়েছে। তাই সার্বিক
পর্যবেক্ষণে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে
পারি যে, উদয়স্থলের বিভিন্নতা
একটি বাস্তব বিষয়। সুতরাং এর
আলোকে ‘ইসলামী ফিকহ কমিটি’
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে,
সারাবিশ্বব্যাপী একই দিনে ছিয়াম ও
ঈদ পালনের আহবান জানানোর কোন
প্রয়োজন নেই। কেননা এই ঐক্যের
উপর মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নির্ভর
করে না, যেমনটি কোন কোন প্রস্তাবক
দাবী করে থাকেন। বরং মুসলিম
দেশসমূহের দারুল ইফতা ও বিচার
বিভাগের উপরই চাঁদ দেখার বিষয়টি
ছেড়ে দেয়া উত্তম। এতেই মুসলিম
উম্মাহর জন্য অধিকতর কল্যাণ
নিহিত রয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে
ঐক্য আসতে পারে কেবলমাত্র জীবনের
সর্বক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের উপর
আমল করার ব্যাপারে ঐক্যমত হওয়ার
মাধ্যমে।[11]
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়টি
অনুধাবন করার তাওফীক দান করুন।
আমীন!
[1]. নাসাঈ হা/২১১৬ ।
[2]. তিরমিযী হা/৫৫৯; আবুদাঊদ
হা/২০৪৪ ।
[3]. মির‘আত ৬/৪২৮ হা/১৯৮৯-এর
ব্যাখ্যা।
[4]. মির‘আত ৬/৪২৯, হা/১৯৮৯-এর
ব্যাখ্যা।
[5]. আবুদাউদ হা/১১৫৭, ২৩৩৯,
মিশকাত হা/১৪৫০ ।
[6]. ইবনে মাজাহ হা/১৬৫৩ ।
[7]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম
হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩ ।
[8]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত
হা/১৯৭০ ।
[9]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃঃ
৪৫১।
[10]. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত
হা/১৯৬৯ ।
[11]. ইসলামী ফিকহ একাডেমী (১২
ফেব্রুয়ারী ১৯৮১ইং, ৪র্থ বৈঠক, ৭ম
সিদ্ধান্ত, ﻲﻓ ﻥﺎﻴﺑ ﺪﻴﺣﻮﺗ ﺔﻠﻫﻷﺍ
ﻦﻣ ﻪﻣﺪﻋ ); রাবেতা আলমে ইসলামী,
জেদ্দা, সঊদী আরব ।

দ্বীন ধ্বংস করে তিন শ্রেণীর লোকেরা

দ্বীন ধ্বংস করে তিনজন
______________________
(ক) যিয়াদ বিন হুদায়ের (রাঃ) বলেন, আমাকে
একদিন হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) বললেন, তুমি
কি জানো কোন বস্তু ইসলামকে ধ্বংস করে? আমি
বললাম, না। তিনি বললেন, ইসলামকে
ধ্বংস করে তিনটি বস্ত্ত :
(১) আলেমের পদস্খলন
(২) আল্লাহর কিতাব
নিয়ে মুনাফিকদের ঝগড়া এবং
(৩)পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসন’।[1]
(খ) খ্যাতনামা তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক
(১১৮-১৮১ হিঃ) বলেন, ﻭَﻫَﻞْ
ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﺃَﻓْﺴَﺪَ ﺍﻟْﻤُﻠُﻮْﻙُ +
ﺳُﻮْﺀٍ ﻭَﺃَﺣْﺒَﺎﺭُ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧُﻬَﺎ؟ ‘দ্বীনকে
ধ্বংস করে মাত্র তিনজন : অত্যাচারী
শাসকবর্গ, দুষ্টমতি আলেমরা ও ছূফী
পীর-মাশায়েখরা’।
প্রথমোক্ত লোকদের সামনে ইসলামী
শরী‘আত ও রাজনীতি সাংঘর্ষিক হলে তারা
রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেয় ও শরী‘আতকে
দূরে ঠেলে দেয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা
তাদের রায়- ক্বিয়াস ও যুক্তির সঙ্গে শরী‘আত
সাংঘর্ষিক হলে নিজেদের রায়কে অগ্রাধিকার
দেয় এবং হারামকে হালাল
করে। তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা তাদের কথিত
কাশ্ফ ও রুচির বিরোধী হ’লে শরী‘আতের
প্রকাশ্য হুকুম ত্যাগ করে ও
কাশফকে অগ্রাধিকার দেয়।[2]
সূত্রঃ
[1]. দারেমী হা/২১৪, সনদ ছহীহ;
মিশকাত হা/২৬৯; ঐ, বঙ্গানুবাদ
হা/২৫১।
[2]. শরহ আক্বীদা ত্বাহাভিয়া (বৈরূত
ছাপা : ১৪০৪/১৯৮৪) ২০৪ পৃঃ।

ভালোবাসার গল্প

image

মেয়েটির প্লে লিস্টে আজ কোন গান খুঁজে পাওয়া
যায় না,
অথচ একটা সময় ছিল যখন নতুন বের হওয়া
প্রতিটি গান,ব্যান্ডের গান তার প্লে লিস্টে
জায়গা করে নিত.. হয়ত গান শুনতে শুনতে রাত
ভোর হত।
আর আজ সে জায়গা দখল করেছে কোন
তেলাওয়াত,অথবা সুরবিহীন স্রষ্টার প্রশংসা
গীতি।
.
মেয়েটি আজ বাইরে যেতে তৈরী হয়ে যায় ১০
মিনিটে,সকল দিবস-উৎসবকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে একটা রঙেই নিজেকে আড়ালে রাখে…।
কালো সে রঙ।
অথচ একটা সময় এই বাইরে যাওয়া নিয়ে
কাটিয়ে দিত ঘন্টার পর ঘন্টা,ড্রেসের রঙ
পছন্দ করতে করতে কাটিয়ে দিত কয়েকটা
দিন।।
.
ঘুমটা বড় পছন্দ ছিল মেয়েটির।এক ঘুমেই সেই
সকাল ৮ টা।
আর আজকাল মাঝরাতেই ঘুম ভেঙে যায়
মেয়েটির।শেষরাতের ঘুমটুকু ও বিসর্জন
দেয়,সঁপে দেয় নিজেকে…. রবের কাছে।।
.
মেয়েটি আজকাল গেট টুগেদার গুলো এড়িয়ে
চলে।যদিও স্কুল জীবনের পরিচিতরা,হয়ত
মনে ও পড়ে অনেক।
কিন্তু এই অতিরিক্ত বিলাসিতা,ছবি তোলার
অস্বভাবিক প্রতিযোগিতা,ছেলে মেয়ের অবাধ
মেলামেশা তাকে বাধা দেয়।।।
এখন দূরে রাখতেই ভালোবাসে সে নিজেকে।।
.
হয়ত কাউকে ভেবেছিল জীবনের খুউব আপন
কেউ,ভেবেছিল তাকে ছাড়া চলবেই না।
আজ তার থেকেই অনেক দূরে সরে এসেছে,শত কষ্ট
সত্বেও… শুধু মাত্র তার রবের তৈরি করে দেয়া
হালাল-হারামের বিধানটুকু মানতে।
.
আজকাল প্রতিনিয়ত ক্লাসে বকা শুনে
সে,শুধুমাত্র নেকাবের কারণে।এর কোন কারণ
খুঁজে পায় না সে।।বুঝেনা সে নেক্বাব তার
জ্ঞানার্জনে কেমন বাধা??
.
সামনে দুটি পথ – হয় নেকাব ছাড় নয় কলেজ
ছাড়।
মেয়েটি বেছে নিয়েছে,তার সত্বার ধারক… তার
পর্দাকে।
.
.
কি বলবে তুমি একে??
এক্সট্রিমিজম??নাকি গোয়াড়??নাকি
অসামাজিক??
.
আমি বলব ভালোবাসা।।
রবের জন্য ভালোবাসা।।
যে তার রবকে ভালো বাসতে পেরেছে তার আর কি
লাগে!!!!
এত ত্যাগ ও তার কাছে কিছু না।
.
সত্যিই কিচ্ছু না।।।
.
এর চাইতেও বড় কিছু যে তার জন্য আছে,যার
মোহে এত ত্যাগ।.
.
“হে প্রশান্ত আত্মা ছুটে চল তোমার রবের
দিকে, এমন অবস্থায় যখন তুমি নিজের
পরিণতিতে সন্তুষ্ট আর তোমার রব তোমার
প্রতি সন্তুষ্ট।শামিল হও আমার নেক
বান্দাদের মাঝে।প্রবেশ কর জান্নাতে” (সূরা
ফজর:২৮-৩০)
.
হয়ত মেয়েটি আপনি হয়ত আপনার পাশের
কেউ,হয়ত সংখ্যায় খুব কম।
তবু বলুন– রবকে ভালোবাসার যে প্রশান্তি তার
মাঝে আছে তা কি অন্য কারো মাঝে পাবেন??
এই ত্যাগেই সাহস লাগে,সাহস লাগে সব ত্যাগ
করে রবের কাছে আসতে।।।
.
# কাছে_আসার_সাহসী_গল্প
# আল্লাহর_কাছে_আসার_গল্প
# মাহজাবিন_আফরিন ,