বীমা কোম্পানিতে চাকুরী করা কি বৈধ?

image

ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করার বিধান:
আমাদের দেশে ইনস্যুরেন্স বা বীমা
কোম্পানিগুলো অধিকাংশই বাণিজ্যিক, যা
সবই প্রতারণা ও সুদ নির্ভর। তাই এ সকল
কোম্পানিতে চাকুরী করা বা তাতে অর্থ লগ্নি
করা হারাম।
আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির
একটি শাখা সংস্থা) এবং সউদী আরবের উচ্চ
উলামা পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে
যে, সব ধরণের বাণিজ্যিক বীমা হারাম। চাই
তা জীবন বীমা হোক বা সম্পদের বীমা হোক।
তার কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
প্রথমত: বাণিজ্যিক জীবন বীমা হচ্ছে এমন
একটি চুক্তি যাতে অর্থের বিনিময় হয়ে
থাকে। কিন্তু তাতে আছে কঠিন ধোঁকার
সম্ভাবনা। কেননা বীমাকারীর পক্ষে চুক্তির
সময় একথা জানা সম্ভব নয় যে, কি পরিমাণ
অর্থ সে প্রদান করবে এবং কি পরিমাণ গ্রহণ
করবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো এক বা দু
কিস্তি অর্থ প্রদান করল এবং তারপরেই কোন
দুর্ঘটনা ঘটল। তখন বীমা কর্তৃপক্ষ শর্ত
অনুযায়ী বিরাট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য
থাকবে। হতে পারে কোন দুর্ঘটনাই ঘটল না।
তখন বীমাকারী সকল কিস্তি পরিশোধ
করতেই থাকবে। অথচ বেঁচে থাকতে সে শেষে
কিছুই পাবে না; তার মৃত্যুর পর তার
ওয়ারিছগণ পাবে।
সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বাই
গারার’বা প্রতারণা ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে
নিষেধ করেছেন।(মুসলিম)
দ্বিতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমা মূলত: এক
ধরণের জুয়া। কেননা এখানে অর্থ আদান-প্রদানে
ঝুঁকি ও প্রতারণার সুযোগ আছে। বিনা অপরাধে
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ আছে আবার বিনা
প্ররিশ্রমে ও বিনিময় ছাড়াই অধিক লাভবান
হওয়ারও সুযোগ আছে। কেননা বীমাকারী কয়েক
কিস্তি দেয়ার পর কোন দুর্ঘটনায় পতিত হল,
তখন কর্তৃপক্ষ বীমার যাবতীয় অর্থ দিতে
বাধ্য থাকবে, ফলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আর যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তবে কর্তৃপক্ষ
বীমার কিস্তির মাধ্যমে লাভবান হতেই
থাকবে। অথচ তাদের এই লাভ বিনিময় ছাড়াই
হচ্ছে। অতএব এখানে যখন অজ্ঞতা সুস্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে তখন তা নিষিদ্ধ জুয়ার পর্যায়ে
পড়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ কুরআনে জুয়াকে হারাম
করেছেন:
ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﺮْﻤَﺨْﻟﺍ
ُﺮِﺴْﻴَﻤْﻟﺍَﻭ ُﺏﺎَﺼْﻧَﺄْﻟﺍَﻭ ُﻡﺎَﻟْﺯَﺄْﻟﺍَﻭ ٌﺲْﺟِﺭ ْﻦِﻣ
ِﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ِﻞَﻤَﻋ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ُﻩﻮُﺒِﻨَﺘْﺟﺎَﻓ
َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং
ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের
অপবিত্র কার্য ব্যতীত অন্য কিছু নয়। অতএব,
এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (মায়েদাঃ ৯০)
তৃতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমায় তাৎক্ষণিক ও
বিলম্বে সুদের ব্যবস্থা আছে। কেননা বীমা
কোম্পানি গ্রাহককে বা তার উত্তরাধিকারকে
বা অনুমোদিত ব্যক্তিকে জমা কৃত অর্থের চেয়ে
বেশী প্রদান করবে, ফলে তা তাৎক্ষণিক সুদের
পর্যায়ভুক্ত গণ্য হবে। আর এই প্রদানটি
নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর
দেয়ার কারণে তা বিলম্ব সুদেরও অন্তর্ভুক্ত
হবে। আর উভয় প্রকার সুদ হারাম।
চতুর্থত: বাণিজ্যিক বীমা নিষিদ্ধ বাজির
অন্তর্ভুক্ত। কেননা উভয় ক্ষেত্রে (বীমা ও
বাজিতে) অজ্ঞতা, ধোঁকা ও জুয়ার সুযোগ আছে।
আর ইসলামের উপকার ও সহযোগিতার উদ্দেশ্য
ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে বাজি ধরাকে
শরীয়ত নিষেধ করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজি ধরার বৈধতাকে
শুধু তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করেছেন।
তিনি বলেন, “উট ও ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা
এবং তীর নিক্ষেপ ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে
বাজী ধরা চলবে না।” (আবু দাউদ)
পঞ্চমত: বাণিজ্যিক বীমার মাধ্যমে অন্যের
সম্পদ বিনিময় ব্যতীত অর্জন করার সুযোগ
আছে। আর বাণিজ্যিক চুক্তিতে বিনিময় ছাড়া
অর্থ উপার্জন হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা
বলেছেন:
ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﻠُﻛْﺄَﺗ ﻻ
ْﻢُﻜَﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ِﻞِﻃﺎَﺒْﻟﺎِﺑ ْﻢُﻜَﻨْﻴَﺑ ﺎَّﻟِﺇ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﺗ
ًﺓَﺭﺎَﺠِﺗ ْﻦَﻋ ٍﺽﺍَﺮَﺗ ْﻢُﻜْﻨِﻣ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ
অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র
তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা
করা হয় তা বৈধ।” (নিসাঃ ২৯)
ষষ্ঠত: বাণিজ্যিক বীমায় এমন কিছু নিয়ম
মেনে চলতে বাধ্য করা হয়, শরীয়তে যা বাধ্য
করা হয়নি। এই চুক্তিতে বীমা কর্তৃপক্ষ থেকে
কোন দুর্ঘটনা আসেনি বা দুর্ঘটনার কোন
কারণও হয়নি, তবু শুধু বামী কারীর সাথে
চুক্তির কারণে ‘দুর্ঘটনা হতে পারে’এমন
অনুমানের ভিত্তিতে বিমাকারীর কিছু অর্থের
বিনিময়ে তাকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এই
জন্য এটা হারাম লেনদেন।
ইসলামী শরীয়ত মানুষকে হালাল ভাবে অর্থ
উপার্জন ও খরচ করতে যেমন আদেশ করেছে,
তেমনি সকল প্রকার হারাম উপার্জনকে বর্জন
করতে কঠোরভাবে তাগিদ দিয়েছে। অন্যতম
হারাম উপার্জন হচ্ছে সুদ, যা বিশেষভাবে এই
বাণিজ্যিক বীমায় প্রদান করা হয়। এই সুদকে
শরীয়ত যেমন হারাম করেছে, তেমনি সুদের
সাথে জড়িত সকলকেই অপরাধী সাব্যস্ত
করেছে। আল্লাহ বলেন, َّﻞَﺣَﺃَﻭ ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻊْﻴَﺒْﻟﺍ
َﻡَّﺮَﺣَﻭ ﺎَﺑِّﺮﻟﺍ “আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল
করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (বাকারাঃ
২৭৫)
ْﻦَﻋ ٍﺮِﺑﺎَﺟ َﻝﺎَﻗ َﻦَﻌَﻟ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﺎَﺑِّﺮﻟﺍ َﻞِﻛﺁ ُﻪَﻠِﻛْﺆُﻣَﻭ
ِﻪْﻳَﺪِﻫﺎَﺷَﻭ ُﻪَﺒِﺗﺎَﻛَﻭ َﻝﺎَﻗَﻭ ْﻢُﻫ ٌﺀﺍَﻮَﺳ
জাবের রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) লা’নত করেছেন তার উপর যে সুদ খায়,
যে সুদ দেয়, যে সুদ লেখে এবং সুদের ব্যাপারে
যারা সাক্ষী থাকে। তারা সকলেই সমান
অপরাধী।” (মুসলিম)
অনুবাদক: আবদুল্লাহ আল কাফী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সউদী আরব

Mohammad Abdur Raquib

Author: abdurrakib7377

www.abdurrakib77.wordpress.com

Leave a comment